🌿 বাচচা হওয়ার পর মায়েদের মোটা হয়ে যাওয়ার কারন সমুহ এবং তার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা।

বেবি হওয়ার পর অনেক নারী শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় পড়েন। এটি একটি সাধারণ বিষয়, তবে এর পেছনে বেশ কিছু কারণ এবং শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া কাজ করে। নিচে এর প্রধান কারণগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. হরমোনের পরিবর্তন

গর্ভধারণ এবং সন্তান জন্মদানের পর নারীর শরীরে উল্লেখযোগ্য হরমোনজনিত পরিবর্তন ঘটে।

এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন: 

গর্ভধারণের সময় এই হরমোনগুলোর মাত্রা বেড়ে যায়। সন্তান হওয়ার পর এদের মাত্রা হঠাৎ কমে যায়, যা বিপাকক্রিয়া ধীর করে এবং ফ্যাট জমতে সহায়তা করে।

করটিসল: 

স্ট্রেস হরমোন করটিসলও বাচ্চার যত্ন নেওয়ার চাপের কারণে বাড়তে পারে, যা অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা তৈরি করে।

২. শরীরের মেটাবলিজমে পরিবর্তন

গর্ভাবস্থার সময় বিপাকের গতি বৃদ্ধি পায় এবং শরীর বেশি ক্যালোরি সংরক্ষণ করতে থাকে। সন্তান হওয়ার পর এই প্রক্রিয়া কিছুটা ধীর হয়ে যায়, ফলে খাওয়া-দাওয়া একই থাকলেও ওজন বাড়তে পারে।

৩. পুষ্টির চাহিদা এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন

গর্ভাবস্থার সময় অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের অভ্যাস সন্তান হওয়ার পরও অব্যাহত থাকে।

নতুন মায়েরা অনেক সময় রাতে ঘুমাতে না পারার কারণে ক্ষুধা বাড়ায় এবং সঠিক সময়ে খাবার খেতে পারেন না। ফলে অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড বা প্রসেসড খাবার খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।

৪. শারীরিক কার্যকলাপ কমে যাওয়া

সন্তান হওয়ার পর নারীদের সময়ের অভাব ঘটে এবং তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে শারীরিক পরিশ্রম কমে যায়।

ঘরে বসে শিশুর যত্ন নেওয়া বা স্তন্যপান করানোর কারণে সক্রিয় থাকার সুযোগ সীমিত হয়।

৫. স্তন্যপান করানোর প্রভাব

স্তন্যপান করানো ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করলেও কিছু নারীর ক্ষেত্রে এই সময় খাবারের চাহিদা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।

৬. ঘুমের অভাব

রাতে বাচ্চার কান্না বা খাওয়ানোর জন্য ঘুমের ঘাটতি ওজন বৃদ্ধির একটি বড় কারণ।

ঘুম কম হলে শরীরে ঘ্রেলিন (ক্ষুধা হরমোন) বেড়ে যায় এবং লেপ্টিন (ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন) কমে যায়, যা অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা তৈরি করে।

৭. মানসিক চাপ এবং বিষণ্নতা

সন্তান জন্মের পর নারীরা অনেক সময় পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনে ভোগেন। বিষণ্নতা বা মানসিক চাপ থেকে অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ওজন বাড়ায়।

"স্ট্রেস ইটিং" বা মানসিক চাপ কমাতে বেশি খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

৮. জেনেটিক বা পারিবারিক কারণ

অনেক সময় শরীরের ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা পারিবারিকভাবে পাওয়া যায়।

যদি পরিবারের অন্য সদস্যদের ওজন বৃদ্ধির ইতিহাস থাকে, তবে সন্তান হওয়ার পর এই প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।

কীভাবে এই সমস্যা সামলানো যায়?

১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলা।

২. নিয়মিত ব্যায়াম: হালকা যোগ ব্যায়াম, হাঁটা বা হোম-ওয়ার্কআউট।

৩. পর্যাপ্ত ঘুম: যতটা সম্ভব পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করা।

৪. মনোযোগ দেওয়া: মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া।

৫. হরমোন পরীক্ষা: ওজন বৃদ্ধি খুব বেশি হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে হরমোনের অবস্থা পরীক্ষা করা।

আপনার যদি আরও বিস্তারিত কোনো প্রশ্ন থাকে বা নির্দিষ্ট সমস্যার জন্য পরামর্শ চান, জানাতে পারেন মোবাইল নং - ০১৭১১৮০৪৬৯৭।

এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

বেবি হওয়ার পর মায়ের ওজন বৃদ্ধি হোমিওপ্যাথিতে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

হোমিওপ্যাথি ব্যক্তি বিশেষের শারীরিক, মানসিক ও পারিশপারিক অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসা প্রদান করে। 

ওজন বৃদ্ধি শুধুমাত্র একটি লক্ষণ; এর অন্তর্নিহিত কারণ নির্ণয় করে সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।

বিশেষ পরামর্শ

উপসর্গ ও ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থা অনুযায়ী সঠিক ওষুধ বেছে নিতে একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথের পরামর্শ নিন। 

নোট : ভুল ডোজ বা ওষুধ প্রয়োগে আশানুরূপ ফল নাও পেতে পারেন।

আপনার নির্দিষ্ট লক্ষণ জানালে আরও নির্দিষ্টভাবে সাহায্য করতে পারব।

-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ

বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি, 

ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা    

প্রভাষক, 

ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ। 

আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।