সকাল বেলা পেনিস ইরেকশন না হওয়ার কারণ কি কি?
সকাল বেলা পুরুষদের পেনিসে স্বাভাবিকভাবে ইরেকশন হওয়া (যাকে বলে "Nocturnal Penile Tumescence (NPT)" বা "সকালের ইরেকশন")—এটি একজন সুস্থ পুরুষের যৌনস্বাস্থ্যের একটি স্বাভাবিক চিহ্ন। তবে যখন এটা নিয়মিতভাবে না হয়, তখন এটি বিভিন্ন কারণ নির্দেশ করতে পারে।
সকাল বেলা পেনিস ইরেকশন না হওয়ার সাধারণ কারণসমূহ:
১. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ:
দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা বা বিষণ্ণতা এই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে।
২. হরমোনজনিত সমস্যা (Testosterone এর ঘাটতি):
পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে সকালে ইরেকশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এটি বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই কমতে থাকে।
৩. ডায়াবেটিস বা হরমোন সংক্রান্ত রোগ:
ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ডিসঅর্ডার বা অন্য হরমোনাল সমস্যা স্নায়ু ও রক্তপ্রবাহে প্রভাব ফেলে।
৪. রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা (Vascular insufficiency):
হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের কারণে লিঙ্গে রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে ইরেকশন হয় না।
৫. ধূমপান, মদ্যপান ও ড্রাগ সেবন:
এইসব বদভ্যাস ধীরে ধীরে স্নায়ু ও রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করে।
৬. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
যেমন: অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, স্নায়ুবিষয়ক ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকারী কিছু ওষুধ।
৭. ঘুমের গুণমান খারাপ হওয়া:
যদি গভীর ঘুম না হয় বা ঘুমে বারবার বিঘ্ন ঘটে, তাহলে "REM sleep" পর্যায় কম হয়, যেখানে সাধারণত এই ধরনের ইরেকশন হয়।
৮. বয়সজনিত পরিবর্তন:
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া দুর্বল হতে পারে, তবে এটা ধীরে ধীরে ঘটে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
যদি কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে নিয়মিত সকালে ইরেকশন না হয় এবং এর পাশাপাশি যৌন আকাঙ্ক্ষা বা কার্যক্ষমতায় সমস্যা দেখা দেয়।
যদি আপনার ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা অন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগ থাকে।
করণীয়:
মানসিক চাপ কমান (যোগব্যায়াম, মেডিটেশন)পর্যাপ্ত ঘুম নিনস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুনপ্রয়োজনে একজন ইউরোলজিস্ট বা এন্ডোক্রিনোলজিস্ট এর পরামর্শ নিন।
প্রয়োজনে আপনি চাইলে কিছু প্রাথমিক টেস্টের পরামর্শও নিতে পারেন, যেমন:
Serum Testosterone (morning sample)Fasting Blood SugarLipid ProfileSleep Quality Assessment
সকাল বেলা লিঙ্গে ইরেকশন না হওয়া যদি নিয়মিত হয়ে থাকে, তবে এটি দেহে শারীরিক, মানসিক বা হরমোনজনিত সমস্যা ইঙ্গিত করতে পারে। তবে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব, এবং কিছু নিয়মিত অভ্যাস অনুসরণ করলে আপনি আবার স্বাভাবিক ইরেকশনের অভিজ্ঞতা পেতে পারেন।
সকাল বেলা ইরেকশন বাড়ানোর ও যৌনস্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়
১. পর্যাপ্ত ও গভীর ঘুম (7-8 ঘন্টা)
ইরেকশন সাধারণত REM sleep পর্যায়ে হয়। যদি পর্যাপ্ত ঘুম না হয় বা ঘুমের গুণমান খারাপ হয়, তাহলে ইরেকশন হয় না।
করণীয়:
প্রতিদিন এক সময়ে ঘুমাতে যান।মোবাইল, টিভি বন্ধ করে ঘুমাতে যান।ঘুমের আগে চা-কফি, মোবাইল স্ক্রিন এড়িয়ে চলুন।
২. মানসিক চাপ কমানো
টেনশন, দুশ্চিন্তা বা বিষণ্নতা লিবিডো ও ইরেকশন কমিয়ে দেয়।
করণীয়:
মেডিটেশন, প্রার্থনা, ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন।হতাশাজনক চিন্তা এড়িয়ে চলুন।প্রয়োজন হলে সাইকোথেরাপি বা কাউন্সেলিং করুন।
৩. শারীরিক ব্যায়াম (Daily 30-45 মিনিট)
ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং স্ট্রেস কমায়, যা ইরেকশনে সাহায্য করে।
করণীয়:
হালকা দৌড়, হাঁটা, স্কোয়াট, পুশআপ, যোগব্যায়াম।
৪. স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ
রক্ত চলাচল ও হরমোন স্বাভাবিক রাখতে ভালো খাবার দরকার।
খেতে পারেন:
🥚 ডিম, 🥜 বাদাম, 🐟 মাছ, 🥬 শাকসবজি
🍌 কলা, 🍉 তরমুজ (L-Citrulline থাকে যা ইরেকশন উন্নত করে)
🫒 অলিভ অয়েল, রসুন, পেঁয়াজ
এড়িয়ে চলুন:
বেশি চিনি, জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত লবণ।
৫. ধূমপান ও অ্যালকোহল বন্ধ করুন
এগুলো রক্তনালী সংকুচিত করে ও হরমোন ব্যাহত করে ইরেকশন কমিয়ে দেয়।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন (BMI অনুযায়ী)
স্থূলতা (obesity) টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয়, যা ইরেকশন কমায়।
৭. টেস্টোস্টেরনের মাত্রা ঠিক আছে কিনা তা জানুন
সকালে রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে পারেন:
Serum Testosterone (8–10 AM এ)
যদি হরমোন কমে থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৮. PE Exercises বা Kegel Exercise
পেলভিক ফ্লোর মাংসপেশি মজবুত করলে ইরেকশন নিয়ন্ত্রণ ও শক্তি বাড়ে।
উদাহরণ:
প্রস্রাব আটকে রাখার মতো অনুভব করে কয়েক সেকেন্ড শক্ত করে রাখুন → আবার ছাড়ুন। দিনে ৩ বার ১০-১৫ বার করে করুন।
যদি এই সব নিয়ম মেনে চলেও ইরেকশন না আসে?
তাহলে নিচের পরীক্ষাগুলো করার পরামর্শ দেওয়া হয়:
টেস্ট কেন দরকার
Serum Testosterone হরমোন ঠিক আছে কিনা।
Fasting Blood Sugar ডায়াবেটিস আছে কিনা।
Lipid Profile রক্তনালীতে সমস্যা কিনা।
Sleep Study ঘুমের গুণমান যাচাই।
TSH / Prolactin হরমোন ভারসাম্য ঠিক আছে কিনা।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
কয়েক মাস ধরে সকালে ইরেকশন না হয়যৌন ইচ্ছা বা পারফরম্যান্সে হঠাৎ পতনহতাশা বা ক্লান্তি সব সময় লেগে থাকে
> চিকিৎসক যাদের দেখাতে পারেন:
ইউরোলজিস্ট (লিঙ্গের সমস্যা)এন্ডোক্রিনোলজিস্ট (হরমোন)সাইকিয়াট্রিস্ট (মানসিক সমস্যা)
হোমিওপ্যাথিক সমর্থন (সহায়ক মাত্রায়, কারণ অনুসারে)
> হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মূলনীতি
হোমিওপ্যাথিতে রোগের সার্বিক লক্ষণাবলি ও মানসিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে ঔষধ নির্বাচন করা হয় — শুধুমাত্র শারীরিক উপসর্গ নয়।
গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ঔষধসমূহ (Patient-specific remedy)
1. Agnus Castus
লিঙ্গ ঠান্ডা, অনুভূতিহীন, কামেচ্ছা একেবারে নেই।
বার্ধক্য বয়সে, অতিরিক্ত হস্তমৈথুন বা যৌনজীবনের অপব্যবহারে ক্ষয়।
2. Caladium Seguinum
যৌন উত্তেজনা থাকে কিন্তু ইরেকশন হয় না।
মানসিক উত্তেজনা থাকলেও শারীরিক প্রতিক্রিয়া আসে না।
3. Lycopodium
নিজেকে অক্ষম মনে করা, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি।
সন্ধ্যার পর দুর্বলতা, ডানদিকে সমস্যা বেশি।
তরুণ বয়সে অতিরিক্ত যৌন জীবনের অপব্যবহার।
4. Selenium
সামান্য চিন্তা বা কল্পনায় বীর্যপাত।
ইরেকশন দুর্বল, মন থিতু নয়, দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
5. Nuphar Luteum
যৌন ইচ্ছা একেবারে অনুপস্থিত।
ঠাণ্ডা প্রকৃতির ব্যক্তি, শারীরিক উত্তেজনার প্রতি উদাসীন।
6. Phosphoric Acid
দুশ্চিন্তা ও মানসিক কষ্টের কারণে ধীরে ধীরে যৌন দুর্বলতা।
মনমরা, শক্তিহীনতা, অবসাদগ্রস্ত।
7. Staphysagria
লজ্জাবনত, আবেগপ্রবণ, দমনকৃত কামনা।
লুকিয়ে হস্তমৈথুন করার অভ্যাস, পরে দুর্বলতা।
আরো হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন আছে, লেখা বড় হয়ে যাওয়ার কারনে আর দেওয়া হল ন।
সহযোগী চিকিৎসা পরামর্শ:
রক্তে Testosterone লেভেল পরিমাপ করা উচিত।ঘুম পর্যাপ্ত হচ্ছে কি না খেয়াল রাখুন।অতিরিক্ত চিন্তা বা মানসিক চাপ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।ধূমপান, অ্যালকোহল ত্যাগ করুন।নিয়মিত ব্যায়াম, প্রানায়াম, যোগা অত্যন্ত উপকারী।
উপসংহার:
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় একক ঔষধ নির্বাচন করতে হয় রোগীর পূর্ণ ইতিহাস অনুযায়ী (Totality of Symptoms)। তাই morning erection-এর অভাব একা দেখে ওষুধ নির্বাচন করলে ভুল হতে পারে।
তাই একজন রেজিস্টার্ড কৃত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক এর নিকট থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ
বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি,
ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা
প্রভাষক,
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ।
আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।
>Share by:
Make a comments as guest/by name or from your facebook:
Make a comment by facebook: