নিকোলা টেসলা এমন একজন বিজ্ঞানী ছিলেন, যিনি ভবিষ্যৎকে অনেক আগে থেকে দেখতে পেরেছিলেন। তার ধারণাগুলো আজও বিশ্বকে প্রভাবিত করছে।
নিকোলা টেসলা বৈদ্যুতিক শক্তি, চুম্বকত্ব এবং তারবিহীন যোগাযোগে এমন সব কাজ করেছেন যা আধুনিক যুগের প্রযুক্তির ভিত্তি গড়ে তুলেছে।
তেমনি,
ডাক্তার স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এমন একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানী ছিলেন তিনিও ভবিষ্যৎতের
চিকিৎসা বিজ্ঞানকে অনেক আগে থেকে দেখতে পেরেছিলেন।
ডাক্তার ফ্রেড্রিক্স স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এর হোমিওপ্যাথি একটি বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে রোগীকে নিরাময় করতে কিছু নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা হয়।
হোমিওপ্যাথির মূল নিয়ম ও নীতিগুলো হলো:
১. সাদৃশ্য নিয়ম (Law of Similars):
"Similia Similibus Curentur": অর্থাৎ, যে উপাদান সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে কোনো উপসর্গ সৃষ্টি করে, সেই উপাদানই অসুস্থ ব্যক্তির মধ্যে ওই উপসর্গ দূর করতে পারে।
২. একক ঔষধের নিয়ম (Single Remedy):
এক সময়ে কেবলমাত্র একটি ওষুধই রোগীকে দেওয়া উচিত। একাধিক ওষুধ মিশ্রিত করলে এর কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
৩. ক্ষুদ্র মাত্রার নিয়ম (Minimum Dose):
রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় সবচেয়ে ছোট মাত্রার ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যা রোগ নিরাময়ের জন্য যথেষ্ট। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
৪. সম্পূর্ণতা নীতি (Individualization):
রোগীর শারীরিক, মানসিক এবং আবেগজনিত লক্ষণ বুঝে ওষুধ নির্ধারণ করা হয়। একই রোগের জন্য ভিন্ন রোগীদের ক্ষেত্রে ভিন্ন ওষুধ লাগতে পারে।
৫. ঔষধ পরীক্ষার নিয়ম (Drug Proving):
প্রতিটি হোমিওপ্যাথিক ওষুধের কার্যকারিতা এবং উপসর্গ সুস্থ ব্যক্তির ওপর পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়।
৬. জীবনী শক্তি (Vital Force):
হোমিওপ্যাথি বিশ্বাস করে যে, আমাদের দেহে এক প্রাকৃতিক শক্তি আছে যা রোগ প্রতিরোধ করে। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ এই জীবনী শক্তিকে উদ্দীপ্ত করে।
৭. ধৈর্য নীতি (Wait and Watch):
ওষুধ দেওয়ার পর রোগীর শরীর কিভাবে প্রতিক্রিয়া করছে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। রোগীর লক্ষণ পরিবর্তন হলে ওষুধ পরিবর্তন বা পুনরায় ডোজ দেওয়া হয়।
৮. দীর্ঘমেয়াদি এবং সুষম চিকিৎসা:
রোগের মূল কারণ খুঁজে বের করে সেটি নিরাময়ের চেষ্টা করা হয়, শুধুমাত্র উপসর্গ দূর করার নয়। এটি ধীরে ধীরে দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতা নিশ্চিত করে।
৯. পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন চিকিৎসা:
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সাধারণত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন, কারণ এতে প্রাকৃতিক উপাদান অত্যন্ত ক্ষুদ্রমাত্রায় ব্যবহার করা হয়।
১০. অতিরিক্ত ওষুধ নিষিদ্ধ:
একই সময়ে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বা অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার সাথে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ গ্রহণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডাক্তার স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এর কোথায় তাদের মিল।
নিকোলা টেসলা এবং ডা. ফ্রেড্রিক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান দুইজনই মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। যদিও তাদের কাজের ক্ষেত্র ভিন্ন—টেসলা বিদ্যুৎ ও প্রযুক্তি এবং হ্যানিম্যান চিকিৎসা বিজ্ঞানে—তবুও তাদের মধ্যে কিছু মিল পাওয়া যায়।
১. অভিনব চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি:
নিকোলা টেসলা: তিনি প্রচলিত ধারণা থেকে সরে গিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছেন, যেমন: এসি কারেন্ট এবং টেসলা কয়েল।
ডা. হ্যানিম্যান: তিনি প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি (এলোপ্যাথি) পরিত্যাগ করে হোমিওপ্যাথির মতো নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির প্রবর্তন করেন।
২. বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার প্রতি আগ্রহ:
টেসলা তার আবিষ্কারগুলি বাস্তব প্রয়োগে পরীক্ষা করে দেখতেন এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতেন।
হ্যানিম্যান নিজেই হোমিওপ্যাথির বিভিন্ন ওষুধের প্রভাব পরীক্ষা করে (প্রুভিং) কার্যকারিতা প্রমাণ করেন।
৩. মানব কল্যাণে কাজ:
টেসলার উদ্দেশ্য ছিল সস্তায় এবং সহজলভ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করে মানবজাতিকে উন্নত করা।
হ্যানিম্যান রোগীদের আরোগ্য দেওয়ার মাধ্যমে মানবজাতিকে কষ্টমুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছেন।
৪. প্রাথমিকভাবে অবমূল্যায়ন:
টেসলা তার জীবদ্দশায় অনেক সম্মান পেলেও তার বহু চিন্তা ও আবিষ্কার সময়মতো স্বীকৃতি পায়নি।
হ্যানিম্যানও হোমিওপ্যাথি প্রবর্তনের সময় প্রচলিত চিকিৎসাবিদদের কাছ থেকে বিরোধিতার সম্মুখীন হন।
৫. সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা:
টেসলা অসাধারণ সৃজনশীল ছিলেন এবং একাধিক যুগান্তকারী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন।
হ্যানিম্যান চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও উপায় উদ্ভাবন করেছেন যা যুগান্তকারী ছিল।
দুজনের কাজই তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে।
-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ
বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি,
ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা
প্রভাষক,
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ।
আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।
>Share by:
Make a comments as guest/by name or from your facebook:
Make a comment by facebook: