প্যাথলজি- ২০২১
তৃতীয় বর্ষ। বিষয় কোড- ৩০৬ সময়- ৩ ঘন্টা পূর্ণমান- ৭৫
[দ্রষ্টব্য: সকল প্রশ্নের মান সমান। যে কোন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দাও।।
১.(ক) প্যাথলজির সংজ্ঞা দাও। ইহার প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর।
(খ) তরুণ প্রদাহের কারণ ও প্রধান চিহ্নগুলো লিখ।
(গ) তরুণ ও পুরাতন প্রদাহের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ কর।
---
১.(ক) প্যাথলজির সংজ্ঞা দাও। ইহার প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর।
সংজ্ঞা:
প্যাথলজি হলো চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি শাখা যা রোগের কারণ, প্রকৃতি, কার্যপ্রক্রিয়া এবং রোগজনিত শারীরিক পরিবর্তনসমূহ নিয়ে আলোচনা করে।
প্যাথলজির প্রয়োজনীয়তা:
1. রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে।
2. রোগের কারণ ও কার্যপ্রক্রিয়া বোঝা যায়।
3. সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা করতে সহায়তা করে।
4. গবেষণায় সহায়ক ভূমিকা রাখে।
5. রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখে।
---
১.(খ) তরুণ প্রদাহের কারণ ও প্রধান চিহ্নগুলো লিখ।
তরুণ প্রদাহের কারণসমূহ:
1. সংক্রমণ (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাংগাস)
2. শারীরিক আঘাত বা ট্রমা
3. রাসায়নিক পদার্থ বা বিষাক্ত উপাদান
4.তাপমাত্রার পরিবর্তন (অত্যধিক গরম বা ঠান্ডা)
5. ইমিউন প্রতিক্রিয়া বা অটোইমিউন অবস্থা
প্রধান চিহ্নগুলো (Cardinal signs):
1. কার্যক্ষমতা হ্রাস
2. লালচে ভাব
3. উষ্ণতা বৃদ্ধি
4. (স্ফীতি বা ফোলা
5. ব্যথা
---
১.(গ) তরুণ ও পুরাতন প্রদাহের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ কর।
ক্র. তরুণপ্রদাহ(Acute Inflammation) পুরাতন প্রদাহ (Chronic Inflammation)
১ হঠাৎ শুরু হয় ধীরে ধীরে শুরু হয়
২ স্বল্প সময় স্থায়ী হয় দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয়
৩ প্রধানত নিউট্রোফিল কোষ থাকে প্রধানত লিম্ফোসাইট, প্লাজমা সেল ও ম্যাক্রোফেজ থাকে
৪ লক্ষণ তীব্র ও স্পষ্ট লক্ষণ ধীর এবং কম তীব্র
৫ দ্রুত আরোগ্য বা পুঁজ গঠন হয় টিস্যু ক্ষয়, ফাইব্রোসিস বা গ্র্যানুলোমা তৈরি হয়।
---
২। (ক) শকের সংজ্ঞা ও শ্রেণিবিভাগ কর।
(খ) হাইপোভলমিক শকের কারণ ও লক্ষণ লিখ।
(গ) শকের জটিলতাসমূহ বর্ণনা কর।
-------
২.(ক) শকের সংজ্ঞা ও শ্রেণিবিভাগ কর।
শকের সংজ্ঞা:
শক (Shock) হলো একটি জীবনঘাতী শারীরবৃত্তীয় অবস্থা, যেখানে টিস্যু ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহ ও অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হয়, ফলে কোষীয় কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়।
শকের শ্রেণিবিভাগ:
1. হাইপোভলমিক শক (Hypovolemic shock) – রক্ত বা তরলের পরিমাণ হ্রাসজনিত শক।
2. কার্ডিওজেনিক শক (Cardiogenic shock) – হৃদপিণ্ডের পাম্পিং ক্ষমতা হ্রাস পেলে।
3. ডিস্ট্রিবিউটিভ শক (Distributive shock) – রক্তনালীর অতিরিক্ত প্রসারণজনিত। যেমন:
🔹সেপ্টিক শক
🔹অ্যানাফাইল্যাকটিক শক
🔹নিউরোজেনিক শক
4. অবস্ট্রাকটিভ শক (Obstructive shock) – রক্তপ্রবাহে বাধা পড়লে হয় (যেমন: পালমোনারি এম্বোলিজম)।
---
২.(খ) হাইপোভলমিক শকের কারণ ও লক্ষণ লিখ।
কারণসমূহ:
1. অতিরিক্ত রক্তপাত (আঘাত, অপারেশন, অভ্যন্তরীণ রক্তপাত)।
2. অতিরিক্ত তরলপান হ্রাস (ডায়রিয়া, বমি, জ্বরে ঘাম)
3. বার্ন/দাহজনিত তরল হারানো
4. ডায়ুরেটিক ওষুধের অপব্যবহার
5. অতিরিক্ত মূত্রত্যাগ (ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস)
লক্ষণসমূহ:
1. দ্রুত ও দুর্বল পালস
2. রক্তচাপ হ্রাস (হাইপোটেনশন)
3. শুষ্ক মুখ ও ঠোঁট
4. ত্বক শীতল, ক্ল্যামি ও ফ্যাকাসে
5. মূর্ছা, বিভ্রান্তি বা অচেতনতা।
---
২.(গ) শকের জটিলতাসমূহ বর্ণনা কর।
1. Multiple Organ Dysfunction Syndrome (MODS): একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যায়।
2. কিডনি বিকল (Acute Renal Failure): পর্যাপ্ত রক্ত না পাওয়ায় কিডনি কাজ বন্ধ করে দেয়।
3. ফুসফুসীয় জটিলতা (ARDS): তীব্র শ্বাসকষ্ট এবং অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দেয়।
4. কার্ডিয়াক অ্যারেথমিয়া: হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে পড়ে।
5. মস্তিষ্কে অক্সিজেন স্বল্পতা: স্নায়বিক সমস্যা, বিভ্রান্তি বা কোমা হতে পারে।
6. মৃত্যু: চিকিৎসা বিলম্ব হলে মৃত্যু ঘটতে পারে।
---
৩। (ক) সেপটিসিমিয়ার কারণ উল্লেখ কব।
(খ) উন্ড হিলিং এর ফ্যাক্টর ও জটিলতা কি?
(গ) গ্যাংগ্রিনের সংজ্ঞা ও কারণ লিখ।
-------
৩.(ক) সেপটিসিমিয়ার কারণ উল্লেখ কর।
সেপটিসিমিয়া (Septicemia) হলো রক্তে জীবাণুর উপস্থিতি ও তার দ্বারা সৃষ্ট বিষক্রিয়ার কারণে সারা শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া।
কারণসমূহ:
1. ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ – বিশেষ করে গ্রাম-নেগেটিভ ও গ্রাম-পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া
2. মূত্রনালির সংক্রমণ (UTI) – পাইলোনেফ্রাইটিসসহ
3. শ্বাসনালির সংক্রমণ – নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস
4. আন্ত্রিক সংক্রমণ – টাইফয়েড, কলেরা ইত্যাদি
5. পোস্ট-অপারেটিভ সংক্রমণ – অস্ত্রোপচারের পর ক্ষতস্থানে সংক্রমণ
6. আঘাতজনিত সংক্রমণ – খোলা ক্ষত বা ইনজুরি
---
৩.(খ) উন্ড হিলিং এর ফ্যাক্টর ও জটিলতা কী?
উন্ড হিলিং (Wound Healing) বা ক্ষত নিরাময় প্রক্রিয়া বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উপাদানের উপর নির্ভর করে।
প্রভাবিতকারী ফ্যাক্টরসমূহ:
1. বয়স (বৃদ্ধ বয়সে ধীরগতি)
2. পুষ্টির অবস্থা (প্রোটিন, ভিটামিন C, জিঙ্ক প্রয়োজন)
3. সংক্রমণ (ইনফেকশন থাকলে নিরাময় ব্যাহত হয়)
4. রক্ত সরবরাহ (কম হলে সেল রিজেনারেশন কমে)
5. ডায়াবেটিস মেলিটাস
6. ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ
জটিলতাসমূহ:
1. ক্ষতস্থানে ইনফেকশন
2. ক্ষত ধীরে নিরাময় হওয়া (Delayed healing)
3. কেলয়েড বা হাইপারট্রফিক স্কার
4. ক্ষত ফাটে যাওয়া (Wound dehiscence)
5. ক্রনিক ঘা বা আলসার
---
৩.(গ) গ্যাংগ্রিনের সংজ্ঞা ও কারণ লিখ।
সংজ্ঞা:
গ্যাংগ্রিন (Gangrene) হলো শরীরের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে টিস্যু মরে যাওয়া বা পচে যাওয়ার অবস্থা।
কারণসমূহ:
1. রক্ত সরবরাহ বন্ধ হওয়া (Peripheral artery disease)
2. সংক্রমণ (বিশেষ করে ক্লস্ট্রিডিয়াম প্রজাতির জীবাণু)
3. ডায়াবেটিস মেলিটাস
4. আঘাত বা ট্রমা (চাপা পড়া, রক্তক্ষরণ)
5. ফ্রস্টবাইট বা অতিরিক্ত ঠান্ডায় টিস্যু ড্যামেজ
6. থ্রম্বোসিস বা এম্বোলিজম – রক্তনালিতে জমাট বাঁধা রক্ত
---
৪। (ক) ম্যালেরিয়া প্যারাসাইটের জীবন-চক্র দেখাও।
(খ) এন্টামিবা হিসস্টোলাইটিকার জীবন-চক্র বর্ণনা কর।
(গ) সিফিলিস জীবাণুর নাম ও প্যাথজেনিসিটি লিখ।
--------
৪.(ক) ম্যালেরিয়া প্যারাসাইটের জীবন-চক্র দেখাও।
ম্যালেরিয়ার প্যারাসাইট: Plasmodium spp. (Plasmodium vivax, P. falciparum, P. malariae, P. ovale)
মাধ্যম: স্ত্রী Anopheles মশা
জীবন-চক্রের ধাপসমূহ:
1. স্পোরোজোয়াইট পর্যায়: স্ত্রী Anopheles মশার কামড়ে স্পোরোজোয়াইট রক্তে প্রবেশ করে।
2. লিভার পর্যায়: স্পোরোজোয়াইট লিভারে গিয়ে মেরোজোয়াইটে পরিণত হয়।
3. রক্ত পর্যায়: মেরোজোয়াইট RBC-তে ঢুকে ট্রফোজোয়াইট → শিজোন্ট → মেরোজোয়াইট হয় এবং RBC ভেঙে দিয়ে জ্বর সৃষ্টি করে।
4. গ্যামেটোসাইট তৈরি: কিছু মেরোজোয়াইট গ্যামেটোসাইট তৈরি করে।
5. মশার অন্ত্রে যৌন প্রজনন: মশা যখন আবার কামড় দেয়, তখন গ্যামেটোসাইট মশার দেহে গিয়ে জাইগোট → ওওসিস্ট → স্পোরোজোয়াইট হয়।
6. নতুন সংক্রমণের জন্য মশার লালা গ্রন্থিতে স্পোরোজোয়াইট তৈরি হয়।
---
৪.(খ) এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকার জীবন-চক্র বর্ণনা কর।
জীবাণু: Entamoeba histolytica
রোগ: আমিবিক ডিসেন্ট্রি
জীবনচক্রের ধাপ:
1. সংক্রমণের উৎস: দূষিত পানি বা খাদ্যের মাধ্যমে সিস্ট (cyst) শরীরে প্রবেশ করে।
2. সিস্টের সক্রিয়তা: ইনটেস্টাইনে গিয়ে এক্সসাইস্টেশন হয়ে ট্রফোজোয়াইটে পরিণত হয়।
3. টিস্যু আক্রমণ: ট্রফোজোয়াইট বৃহদান্ত্রে গিয়ে মিউকোসা ধ্বংস করে, ঘা সৃষ্টি করে ও রক্তমিশ্রিত মল তৈরি করে।
4. নতুন সিস্ট তৈরি: কিছু ট্রফোজোয়াইট আবার সিস্টে পরিণত হয়ে মলের সাথে নির্গত হয়।
5. সংক্রমণ ছড়ানো: পরিবেশে এই সিস্ট আবার অন্য ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে নতুন সংক্রমণ সৃষ্টি করে।
---
৪.(গ) সিফিলিস জীবাণুর নাম ও প্যাথজেনিসিটি লিখ।
জীবাণুর নাম: Treponema pallidum
বৈশিষ্ট্য:
এটি একটি সর্পিলাকার (spirochete) ব্যাকটেরিয়া।
গ্রাম-নেগেটিভ, মাইক্রোইয়ারোপাইল।
প্যাথজেনিসিটি (রোগ সৃষ্টির ধাপ):
1. প্রাথমিক স্তর (Primary stage):
সংক্রমণস্থলে চ্যানক্র (chancre) নামে একটি ব্যথাহীন ঘা সৃষ্টি হয়।
2. সেকেন্ডারি স্তর (Secondary stage):
ত্বকে ফুসকুড়ি, জ্বর, গলা ব্যথা, লিম্ফগ্রন্থি ফোলা হয়।
3. ল্যাটেন্ট স্তর (Latent stage):
উপসর্গহীন কিন্তু জীবাণু রয়ে যায়।
4. টারশিয়ারি স্তর (Tertiary stage):
হার্ট, মস্তিষ্ক ও স্নায়ু আক্রান্ত হয়, গামা (Gumma) তৈরি হতে পারে।
---
৫। (ক) কার্বাংকল কি? ইহার কারণ লিখ।
(খ) ফ্যাগোসাইটোসিসের সংজ্ঞা ও ধাপসমূহ লিখ।
(গ) ইনফার্কশনের সংজ্ঞা ও কারণ লিখ।
-----------
৫.(ক) কার্বাংকল কী? ইহার কারণ লিখ।
কার্বাংকল (Carbuncle):
এটি হলো ত্বকের গভীর ও সংযুক্ত ফোঁড়ার একটি সংক্রমণ, যা অনেকগুলো ফারানকেল (boils) একত্র হয়ে গঠিত হয়।
এটি সাধারণত চামড়ার নিচে পুঁজযুক্ত প্রদাহ তৈরি করে এবং অনেক ছিদ্র দিয়ে পুঁজ বের হয়।
কারণসমূহ:
1. Staphylococcus aureus ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ
2. দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
3. ডায়াবেটিস মেলিটাস
4. ত্বকে আঘাত বা ঘর্ষণ
5. অপরিষ্কার ও ঘামযুক্ত পরিবেশ
6. অপর্যাপ্ত ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি
---
৫.(খ) ফ্যাগোসাইটোসিসের সংজ্ঞা ও ধাপসমূহ লিখ।
সংজ্ঞা:
ফ্যাগোসাইটোসিস হলো একধরনের প্রতিরক্ষা প্রক্রিয়া যেখানে শ্বেত রক্তকণিকা বা ফ্যাগোসাইট বাহ্যিক জীবাণু বা কণাকে গিলে ফেলে ও ধ্বংস করে।
ধাপসমূহ:
1. চেনেমোট্যাক্সিস (Chemotaxis): জীবাণু বা ক্ষতিকর কণার প্রতি ফ্যাগোসাইট আকৃষ্ট হয়।
2. অ্যাডহেশন (Adhesion): ফ্যাগোসাইট জীবাণুর গায়ে লেগে থাকে।
3. ইনজেশন (Ingestion): ফ্যাগোসাইট জীবাণুকে গিলে নেয় এবং ফ্যাগোসোম গঠন করে।
4. ডাইজেশন (Digestion): লাইসোজোমের এনজাইম জীবাণু ধ্বংস করে।
5. এক্সোসাইটোসিস (Exocytosis): অপচনযোগ্য অংশ বাইরে বের করে দেওয়া হয়।
---
৫.(গ) ইনফার্কশনের সংজ্ঞা ও কারণ লিখ।
সংজ্ঞা:
ইনফার্কশন (Infarction) হলো শরীরের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়ে টিস্যু মারা যাওয়া বা নেক্রোসিস হওয়া।
কারণসমূহ:
1. থ্রম্বোসিস (Thrombosis): রক্তনালীতে জমাট বাঁধা রক্ত
2. এম্বোলিজম (Embolism): ভাসমান জমাট রক্ত বা চর্বি প্লাগ
3. রক্তনালীর সংকোচন বা বন্ধ হওয়া (স্পাজম বা আঘাতের কারণে)
4. অক্সিজেন স্বল্পতা: রক্তে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না থাকলে
5. আর্টেরি অবরোধ: অ্যাথেরোসক্লেরোসিস বা চর্বি জমার ফলে,
উদাহরণ:হার্ট অ্যাটাক (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন),স্ট্রোক (সেরিব্রাল ইনফার্কশন)
---
৬। (ক) সেল ইনজুরি কি? ইহার কারণ উল্লেখ কর।
(খ) হাইপারপ্লাসিয়া ও মেটাপ্লাসিয়ার মধ্যে পার্থক্য লিখ।
(গ) ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের বৈশিষ্ট্য লিখ।
------
৬.(ক) সেল ইনজুরি কী? ইহার কারণ উল্লেখ কর।
সেল ইনজুরি (Cell injury):
কোষের স্বাভাবিক গঠন ও কার্যকারিতা যখন কোনো বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন তাকে সেল ইনজুরি বলা হয়।
এটি রিভার্সিবল (পুনরুদ্ধারযোগ্য) অথবা ইরিভার্সিবল (অপুনরুদ্ধারযোগ্য) হতে পারে।
কারণসমূহ:
1. অক্সিজেনের অভাব (Hypoxia): যেমন—আর্থারিয়াল ব্লক
2. রাসায়নিক পদার্থ ও ঔষধ: বিষাক্ত পদার্থ, অ্যালকোহল
3. ভৌত কারণ: তাপ, ঠান্ডা, রেডিয়েশন
4. জীবাণু সংক্রমণ: ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাংগাস
5. ইমিউন প্রতিক্রিয়া: অটোইমিউন ডিজিজ
6. জিনগত ও মেটাবলিক ব্যাধি
---
৬.(খ) হাইপারপ্লাসিয়া ও মেটাপ্লাসিয়ার মধ্যে পার্থক্য লিখ।
বিষয় হাইপারপ্লাসিয়া (Hyperplasia) মেটাপ্লাসিয়া (Metaplasia)
১ কোষসংখ্যা বৃদ্ধি পায় কোষের ধরন পরিবর্তিত হয়
২ অঙ্গের আকার বড় হয় কোষের কাজ ও গঠন পরিবর্তিত হয়
৩ স্বাভাবিক কোষই বৃদ্ধি পায় এক প্রকার কোষ অন্য প্রকার কোষে রূপান্তরিত হয়
৪ হরমোন বা ক্ষতিপূরণের ফলে ঘটে দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনার কারণে ঘটে
৫. উদাহরণ, প্রস্থেট হাইপারপ্লাসিয়া উদাহরণ, ব্রঙ্কাসে স্কোয়ামাস মেটাপ্লাসিয়া
---
৬.(গ) ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের বৈশিষ্ট্য লিখ।
ম্যালিগন্যান্ট টিউমার (Malignant tumor):
এটি একটি ক্যান্সার জাতীয় টিউমার যা শরীরে দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং আশপাশের টিস্যু ধ্বংস করতে পারে।
বৈশিষ্ট্যসমূহ:
1. দ্রুত ও অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন।
2. সীমা অস্বচ্ছ ও অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি।
3. আশপাশের টিস্যুতে অনুপ্রবেশ (Invasion)।
4. রক্ত বা লসিকা পথে ছড়িয়ে পড়া (Metastasis)।
5. কোষের আকার ও গঠন অস্বাভাবিক (Anaplasia)।
6. রোগীর দেহে দুর্বলতা, রক্তাল্পতা ও ওজন হ্রাস সৃষ্টি করে।
7. পুনরায় ফিরে আসার (Recurrence) প্রবণতা বেশি।
---
৭। (ক) ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
(খ) পাঁচটি করে আরএনএ ও ডিএনএ ভাইরাসের নাম লিখ।
(গ) ভাইরাস ও ফ্যাংগাসের পাঁচটি পার্থক্য উল্লেখ কর।
---------
৭.(ক) ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
1. ভাইরাস হলো অকোষীয় (Acellular) একপ্রকার অতিক্ষুদ্র জীব।
2. এরা জীবিত ও অজীবের মধ্যবর্তী অবস্থানে থাকে।
3. ভাইরাস শুধুমাত্র জীব কোষের ভিতরে বংশবৃদ্ধি করতে পারে (Obligate intracellular parasite)।
4. এদের দেহে কেবলমাত্র একটি নিউক্লিক অ্যাসিড থাকে—RNA বা DNA (কখনোই দুটো একসাথে নয়)।
5. ভাইরাসের দেহ সাধারণত প্রোটিন কোট (capsid) দিয়ে আবৃত থাকে।
6. ভাইরাস অ্যান্টিবায়োটিকে ধ্বংস হয় না; এদের জন্য অ্যান্টিভাইরাল ও ভ্যাকসিন ব্যবহৃত হয়।
7. এরা নির্দিষ্ট হোস্ট বা কোষে সংক্রমণ ঘটায়।
---
৭.(খ) পাঁচটি করে RNA ও DNA ভাইরাসের নাম লিখ।
RNA ভাইরাস:
1. ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস2. করোনাভাইরাস3. হেপাটাইটিস C ভাইরাস (HCV)4. রাবিস ভাইরাস5. রেট্রোভাইরাস (যেমন: HIV)
DNA ভাইরাস:
1. হেপাটাইটিস B ভাইরাস (HBV)2. হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV)3. হেপারিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস (HSV)4. ভ্যারিসেলা জোস্টার ভাইরাস (VZV)5. অ্যাডেনো-ভাইরাস
---
৭.(গ) ভাইরাস ও ফাংগাসের মধ্যে পাঁচটি পার্থক্য উল্লেখ কর।
ক্র. ভাইরাস ফাংগাস
১ অকোষীয় (Acellular)। কোষীয় (Cellular)।
২ কেবল RNA বা DNA থাকে। DNA, RNA উভয়ই থাকে।
৩ একমাত্র জীব কোষে বংশবৃদ্ধি করে। কোষ বিভাজনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে।
৪ অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ করে না। কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ প্রয়োগ হয়।
৫ অত্যন্ত ক্ষুদ্র, ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে দেখা যায় । সাধারণ মাইক্রোস্কোপে অনেক সময় দেখা যায়।
---
৮। সংক্ষেপে লিখঃ
(ক) মেটাপ্লাসিয়া,
(খ) টিউবারকুলিন টেস্ট,
(গ) পারপিউরা,
(ঘ) হাইপারসেনসিটিভিটি,
(ঙ) ইস্কিমিয়া।
--------
৮.(ক) মেটাপ্লাসিয়া (Metaplasia)
1. মেটাপ্লাসিয়া হলো এক ধরনের রিভার্সিবল কোষীয় পরিবর্তন।2.এতে এক প্রকার পরিপক্ব কোষ অন্য প্রকার পরিপক্ব কোষে পরিবর্তিত হয়।3. সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী উত্তেজনা বা ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে হয়।4. এটি শরীরের প্রতিরক্ষামূলক প্রক্রিয়া হলেও, দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।5. উদাহরণ: ব্রঙ্কাসের কলামে নার্মাল সিলিয়েটেড কোষ স্কোয়ামাস কোষে পরিবর্তিত হওয়া (ধূমপানকারীর ক্ষেত্রে)।
---
৮.(খ) টিউবারকুলিন টেস্ট (Tuberculin Test)
1. এটি টিবি (TB) সংক্রমণ নির্ণয়ের একটি ত্বক পরীক্ষা।2. Mantoux test নামেও পরিচিত।3. PPD (Purified Protein Derivative) নামক উপাদান ত্বকের নিচে ইনজেকশন দেওয়া হয়।4. ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে স্থানটি লালচে ও ফুলে উঠলে পজিটিভ ধরা হয়।5. পজিটিভ ফলাফল TB সংক্রমণ, সংক্রমণের ইতিহাস বা BCG টিকার প্রতিক্রিয়া নির্দেশ করে।
---
৮.(গ) পারপিউরা (Purpura)
1. পারপিউরা হলো ত্বকের নিচে ছোট রক্তক্ষরণজনিত অবস্থায় বেগুনি দাগ বা ছোপ পড়া।2. এটি ক্যাপিলারি ভঙ্গুরতা বা প্লেটলেট অস্বাভাবিকতার কারণে হয়।3. দাগগুলো চেপে ধরলে মিলিয়ে যায় না।4. বিভিন্ন রোগ যেমন থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া, ভাস্কুলাইটিস, স্কার্ভি-তে দেখা যায়।5. আকারে পিটেকিয়া (<3mm), পারপিউরা (3–10mm), ও একিমোসিস (>10mm) আলাদা হয়।
---
৮.(ঘ) হাইপারসেনসিটিভিটি (Hypersensitivity)
1. এটি হলো অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক ইমিউন প্রতিক্রিয়া, যা দেহের ক্ষতি করে।2. এটি চার প্রকার: টাইপ I (অ্যালার্জিক), টাইপ II (সাইটোটক্সিক), টাইপ III (ইমিউন কমপ্লেক্স), টাইপ IV (ডিলেইড টাইপ)।3. সাধারণ অ্যালার্জি, হাঁপানি, অটোইমিউন ডিজিজ এতে অন্তর্ভুক্ত।4. অ্যান্টিজেনের সংস্পর্শে দেহের অতিসংবেদনশীলতা সৃষ্টি হয়।5. চিকিৎসায় অ্যান্টিহিস্টামিন, স্টেরয়েড ইত্যাদি ব্যবহার হয়।
---
৮.(ঙ) ইস্কিমিয়া (Ischemia)
1. ইস্কিমিয়া হলো কোনো অঙ্গ বা টিস্যুতে রক্ত সরবরাহ আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া।2. এতে অক্সিজেন ও পুষ্টি অভাবজনিত কোষীয় ক্ষতি হয়।3. সাধারণত ধমনী বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে হয় (থ্রম্বোসিস, অ্যাথেরোসক্লেরোসিস)।4. ইস্কিমিয়ার ফলে পেইন, ফাংশনাল লস ও নেক্রোসিস হতে পারে।5. উদাহরণ: করোনারি ইস্কিমিয়া → হার্ট অ্যাটাক।
-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ
বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি,
ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা
প্রভাষক,
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ।
আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।
>Share by:
Make a comments as guest/by name or from your facebook:
Make a comment by facebook: