৫. কৃমি (Worms)
প্রশ্ন-১৪.২৭। কৃমি কি?
উত্তর: কৃমিঃ কৃমি বা ওয়ামর্স হইল বিভিন্ন শ্রেণীর বা বিভিন্ন জাতির পরজীবি। এইসব পরাঙ্গপুষ্ট কীট মানবদেহ আশ্রয় করিয়া বাঁচিয়া থাকে। ইহারা সাধারণতঃ অস্ত্র ও মলদ্বারে থাকে।
প্রশ্ন-১৪.২৮। বাংলাদেশের কয়েকটি কমন কৃমির নাম এবং উহাদের বজ্ঞানিক নাম লিখ।
উত্তর: বাংলাদেশের কয়েকটি কমন কৃমি এবং উহাদের বৈজ্ঞানিক নাম নিম্নে দেওয়া হইল।
বাংলাদেশের কমন কৃমির নাম
১। গোলকৃমি বা কেঁচোকৃমি (Round worm)
বৈজ্ঞানিক নাম :
১। (ক) অ্যাসবেরিস লুমব্রিকয়ডিস।
(খ) অকজিউরিস ভার্মিকিউলারিস ।
২। বক্রকৃমি (Hook worm)
বৈজ্ঞানিক নাম :
(ক) অ্যানকাইলোস্টোমা ডুওডেন্যালি।
(খ) নিকেটর আমেরিকানাস।
৩। মূত্রকৃমি (Thread worm)
বৈজ্ঞানিক নাম :
৩। এন্টেরোবিয়াস ভার্মিকুলারিস
৪। ফিতাকৃমি (Tape worm)
বৈজ্ঞানিক নাম :
(ক) টিনিয়া স্যাজিনাটা।(খ) টিনিয়া সোলিয়াম।(গ) টিনিয়া মিডিও ক্যানিলেটা।(ঘ) ব্রথরিও কেফোলাস লেটাস।
৫। গুঁড়া কৃমি (whip worm)
বৈজ্ঞানিক নাম :
(ক)। ট্রাইচুরিস ট্রাইচুরা।
প্রশ্ন-১৪.২৯। আমাদের দেশে কৃমির আক্রমণ বেশী কেন?
উত্তর: আমাদের দেশে কৃমির আক্রমণের কারণসমূহ—
1. অধিকাংশ লোক অশিক্ষিত, ফলে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব রয়েছে।
2. স্বাস্থ্য ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব।
3. নোংরা ও দূষিত পরিবেশে বসবাস।
4. পয়ঃনিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা না থাকা।
5. যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়।
6. উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের প্রবণতা, যা পরিবেশকে দূষিত করে।
7. মাঠ, ঘাট ও গোচারণ ভূমিতে মল ও আবর্জনা ফেলার কারণে কৃমির ডিম ছড়িয়ে পড়ে।
8. এসব দূষিত স্থানে কাজ করা, খালি পায়ে চলাফেরা বা খাওয়া-দাওয়া করলে কৃমির ডিম দেহে প্রবেশ করে।
প্রশ্ন-১৪.৩০। আমাদের দেশে কৃমির আক্রমণকে কি ভাবে প্রতিরোধ করা যাইতে পারে?
উত্তর: কৃমির আক্রমণ প্রতিরোধের উপায়—
1. জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করা।
2. সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।
3. পয়ঃনিষ্কাশনের সুব্যবস্থা করা।
4. যত্রতত্র পায়খানা ও প্রস্রাব না করা।
5. মলমূত্র মাঠে-ঘাটে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ত্যাগের অভ্যাস গড়ে তোলা।
6. বিশেষত গ্রামাঞ্চলে স্যানিটারি পায়খানার ব্যবস্থা করা।
7. খালি পায়ে মাঠে বা দূষিত স্থানে ভ্রমণ না করা।
8. পায়খানা করার পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া।
9. খাবার গ্রহণের আগে হাত-মুখ ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধোয়া।
10. হাতের নখ বড় না হতে দেওয়া।
প্রশ্ন-১৪.৩১। সাধারণতঃ পায়খানায় বা মলে কোন কোন কৃমি (Worm) পাওয়া যায়?
উত্তর: পায়খানার মধ্যে নিম্নলিখিত পোকা (Worm) পাওয়া যায়!
১। অ্যাসকেবিস লুমব্রিকয়ডিস বা কেঁচোকৃমি।
২। অ্যানকাইলোস্টোমা ডুওডেন্যালি বা বক্রকৃমি।
৩। এন্টেরোবিয়াস ভার্সিকুলারিস বা সূত্রকৃমি।
৪। ট্রাইচুরিস ট্রাইচুরা বা গুঁড়া কৃমি।
গোলকৃমি বা কেঁচোকৃমি
(Round worm)
প্রশ্ন-১৪.৩২। গোলকৃমি বা কেঁচোকৃমি বা রাউন্ডওয়ার্মের বৈশিষ্ট্য লিখ।
উওর : নিচে গোলকৃমি বা কেঁচোকৃমি (রাউন্ডওয়ার্ম) এর বৈশিষ্ট্যসমূহ পয়েন্ট আকারে দেওয়া হলো:
গোলকৃমির বৈশিষ্ট্য:
1. আকৃতি ও গঠন: দেখতে কেঁচোর মতো লম্বা, গোল এবং উভয় প্রান্ত সরু।
2. রঙ: রক্ত-হলুদ বা লালচে রঙের হয়ে থাকে।
3. দৈর্ঘ্য: সাধারণত ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা হয়।
4. পুরুত্ব: পেনসিলের মতো মোটা।
5. আবাসস্থল: মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রে বাস করে।
6. বৈজ্ঞানিক নাম: Ascaris lumbricoides।
7. সংখ্যা: একজনের অন্ত্রে একসঙ্গে ৪-৫টি থেকে শুরু করে ১৫-২০টি পর্যন্ত কৃমি থাকতে পারে।
8. প্রজনন: স্ত্রী কৃমি অন্ত্রে ডিম পাড়ে, যা মলের মাধ্যমে বাইরে আসে।
9. সংক্রমণ: ডিম মাটি বা খাদ্য-দ্রব্যে থেকে নতুন দেহে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়।
10. প্রভাব: পুষ্টিহীনতা, পেটব্যথা, বমি, দুর্বলতা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে।
এই বৈশিষ্ট্যগুলোর মাধ্যমে গোলকৃমিকে সহজে শনাক্ত ও বোঝা যায়।
প্রশ্ন-১৪.৩২: গোলকৃমি বা কেঁচোকৃমি বা রাউন্ডওয়ার্মের বর্ণনা দাও।
উত্তর:
গোলকৃমি বা কেঁচোকৃমি, যা রাউন্ডওয়ার্ম নামে পরিচিত, এটি একটি বড় আকারের পরজীবী কৃমি। দেখতে কেঁচোর মতো লম্বা ও গোলাকার। এর রঙ সাধারণত রক্ত-হলুদ বা লালচে হয়ে থাকে।
এই কৃমির বৈজ্ঞানিক নাম হলো Ascaris lumbricoides। সাধারণত মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রে (small intestine) বাস করে। বাংলাদেশের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের মাঝে এই কৃমির উপস্থিতি বেশি দেখা যায়।
একজন মানুষের অন্ত্রে একসঙ্গে ৪-৫টি থেকে শুরু করে ১৫-২০টি পর্যন্ত গোলকৃমি বাস করতে পারে। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং মোটা পেনসিলের মতো।
গোলকৃমির উভয় প্রান্ত সরু হয়ে থাকে। স্ত্রী কৃমি মানুষের অন্ত্রে ডিম পাড়ে, যা মলের মাধ্যমে বাইরে নির্গত হয়ে পরিবেশ দূষণ করে এবং অন্য মানুষের দেহে প্রবেশের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটায়।
এই কৃমি শিশুদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যহানির একটি বড় কারণ।
প্রশ্ন-১৪.৩৩: গোলকৃমি বা কেঁচোকৃমির জীবনচক্র লিখ।
উত্তর (বিস্তৃত):
গোলকৃমি বা কেঁচোকৃমি (Ascaris lumbricoides) একটি পরজীবী কৃমি, যা সাধারণত মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রে (small intestine) বাস করে এবং সেখান থেকে খাদ্য গ্রহণ করে বেঁচে থাকে।
১. ডিম পাড়া:
স্ত্রী গোলকৃমি প্রতিদিন হাজার হাজার ডিম পাড়ে, যা মানুষের মলের সঙ্গে দেহের বাইরে বেরিয়ে আসে। এই ডিমগুলো সাধারণ মাটিতে পড়ে থাকে এবং বিশেষ করে নোংরা বা দূষিত পরিবেশে দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে।
২. ডিমের পরিণতি ও সংক্রমণ:
এই ডিম যদি মল-মূত্র দূষিত পানি বা খাদ্যের সঙ্গে মিশে যায়, তবে তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যেমন: পুকুর, কূপ বা ডোবার পানি যদি ডিম দ্বারা দূষিত হয় এবং সেই পানি কেউ পান করে;
অথবা সেই পানিতে ধরা মাছ যদি ভালোভাবে রান্না না করে খাওয়া হয়— তাহলে কৃমির ডিম মানুষের পাকস্থলীতে প্রবেশ করে।
৩. কৃমির বেড়ে ওঠা:
মানুষের পাকস্থলীতে ঢোকার পর পাচক রসের সাহায্যে ডিমের শক্ত খোলস ফেটে যায় এবং ভিতর থেকে ছোট কৃমি বা লার্ভা বের হয়।
এই লার্ভা রক্তনালীর মাধ্যমে যকৃত, হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসে ভ্রমণ করে। তারপর এটি গলায় উঠে আসে এবং গিলে ফেলা হলে আবার ক্ষুদ্রান্ত্রে ফিরে যায়।
৪. পরিপক্বতা ও পুনরায় ডিম পাড়া:
ক্ষুদ্রান্ত্রে ফিরে এসে কৃমিগুলো বড় হতে থাকে এবং পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। পুরুষ ও স্ত্রী কৃমির মিলনে আবার ডিম উৎপন্ন হয়।
এরপর সেই ডিম মলের সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে যায় এবং আবার সংক্রমণের জন্য প্রস্তুত হয়।
সারসংক্ষেপে জীবনচক্রের ধাপসমূহ:
1. ক্ষুদ্রান্ত্রে কৃমির বাস ও স্ত্রী কৃমির ডিম পাড়া
2. ডিম মলের সঙ্গে দেহ থেকে বাইরে বের হওয়া
3. ডিমের দূষিত পানি/খাদ্যের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ
4. ডিম ফেটে ছোট কৃমির জন্ম ও শরীরে ভ্রমণ
5. পুনরায় ক্ষুদ্রান্ত্রে ফিরে পরিপক্বতা লাভ
6. নতুন ডিম উৎপন্ন এবং পুনরায় বাহিরে যাওয়া
এইভাবে কেঁচোকৃমির জীবনচক্র মানবদেহে বারবার সংক্রমণ ঘটায়, বিশেষত যদি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করা হয়।
এজন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা এই সংক্রমণ প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন-১৪.৩৪। গোলকৃমি বা কেঁচো কৃমির লক্ষণ বা ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
উত্তর:
গোলকৃমি বা কেঁচোকৃমি মানবদেহে পরজীবী হিসেবে বাস করে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে। নিচে এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো দেওয়া হলো:
গোলকৃমি সংক্রমণের লক্ষণসমূহ:
1. পেট ফাঁপা ও পেটব্যথা
2. ঘন ঘন বমি বমি ভাব বা বমি
3. ঘুমের মধ্যে দাঁত কিড়মিড় করা
4. ঘুমন্ত অবস্থায় হঠাৎ চমকে ওঠা
5. নাক ও গুহ্যদ্বারে চুলকানি অনুভব হওয়া
6. শরীর শীর্ণ বা দুর্বল হয়ে পড়া
7. পায়খানায় আম মিশ্রিত পানির মতো মল ত্যাগ
8. পেটের পীড়া বা খাদ্যনালীর মোচড়
9. আমাশয় বা পাতলা পায়খানা
10. খিঁচুনি বা শরীর ঝাঁকুনি দেওয়া
11. হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট
12. মৃগী জাতীয় উপসর্গ (স্নায়বিক সমস্যা)
13. মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা বা পানি পড়া
14. শ্বাস-প্রশ্বাসে দুর্গন্ধ
15. খাবারের প্রতি কখনো অতি আগ্রহ (ক্ষুধা বৃদ্ধি), আবার কখনো ক্ষুধামান্দ্য (ক্ষুধা নাশ)
সংক্ষেপে বলা যায়, গোলকৃমি শিশু ও বড়দের দেহে প্রবেশ করলে পরিপাকতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র ও শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
প্রশ্ন-১৪.৩৫। গোলকৃমি বা কেঁচো কৃমির ল্যাবরেটরী ডায়াগনোসিস লিখ।
উত্তর:
গোলকৃমি বা কেঁচোকৃমির সংক্রমণ নিশ্চিত করার জন্য নিম্নলিখিত ল্যাবরেটরি পরীক্ষাগুলি করা হয়:
১. মল পরীক্ষা (Stool Examination):
মল পরীক্ষায় গোলাকৃতি বা ডিম্বাকৃতির ডিম পাওয়া যায়, যার আকার প্রায় ৪৫–৬০ মাইক্রোন ব্যাসার্ধ।
এই ডিম্ব সাধারণত ৪ প্রকারের হয়ে থাকে:
1. ম্যামিলেটেড কোটসহ নিষিক্ত ডিম্ব
2. ম্যামিলেটেড কোটবিহীন নিষিক্ত ডিম্ব
3. ম্যামিলেটেড কোটসহ অনিষিক্ত ডিম্ব
4. অন্যান্য অপরিণত ডিম্ব
এছাড়াও, কখনও কখনও মলে অপরিণত কৃমি বা পূর্ণাঙ্গ গোলকৃমির দেহাংশ দেখা যেতে পারে।
২. কফ পরীক্ষা (Sputum Examination):
কৃমির জীবনচক্রের একটি পর্যায়ে লার্ভা ফুসফুসে চলে আসে।
তাই, কফ পরীক্ষায় (especially during larval migration) লার্ভা পাওয়া যেতে পারে।
উপসংহার:
গোলকৃমি সংক্রমণ নির্ণয়ের জন্য প্রধানতম উপায় হলো মল পরীক্ষা। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কফ পরীক্ষাও সহায়ক হতে পারে। সঠিক ও সময়মতো পরীক্ষা করলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ সম্ভব হয়।
প্রশ্ন-১৪.৩৬। কেঁচো কৃমি বা গোলকৃমির প্যাথজেনিসিটি বা রোগ উৎপাদন ক্ষমতা লিখ।
উত্তর:
গোলকৃমি বা কেঁচোকৃমি মানবদেহে বিভিন্ন উপায়ে রোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম। এদের উপস্থিতি ও গতিবিধির ফলে দেহে শারীরিক জটিলতা ও প্রদাহজনিত সমস্যা দেখা দেয়। নিচে এদের রোগ উৎপাদন ক্ষমতা বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো:
১. শ্বাসনালীর প্রতিবন্ধকতা:
এই কৃমিগুলি কখনও কখনও পেটের ভিতরে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে মুখ, নাক বা মলদ্বার দিয়ে বাহির হয়ে আসে।
নাক বা মুখ দিয়ে বের হলে শ্বাসনালীতে অবরোধ সৃষ্টি করে, যা শ্বাসকষ্ট বা জীবনঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
২. পিত্তনালীতে সংক্রমণ:
কৃমি অনেক সময় পিত্তনালীতে (bile duct) ঢুকে পড়ে, ফলে সেখানকার স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়।
এর ফলে জণ্ডিস (painless jaundice) বা কামলা রোগের সৃষ্টি হয় এবং তীব্র ব্যথা হতে পারে।
৩. অন্ত্রে ছিদ্র করে প্রদাহ:
কিছু ক্ষেত্রে এই কৃমি গ্যাস্ট্রিক বা ডিওডেনাল আলসারের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটিতে (পেটের ভেতরের পর্দায়) পৌঁছে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
এটি পারিটোনাইটিস নামক জটিল রোগের কারণ হতে পারে।
৪. খাদ্যনালী বন্ধ করে সংকট:
যদি দেহে অনেক সংখ্যক গোলকৃমি একত্রে অবস্থান করে, তবে তারা আন্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা (intestinal obstruction) সৃষ্টি করতে পারে।
এতে পেট ব্যথা, বমি, কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেট ফেঁপে যাওয়া ইত্যাদি তীব্র সমস্যা দেখা দিতে পারে।
উপসংহার:
গোলকৃমি শুধু সাধারণ পেটের সমস্যা নয়, বরং তা জটিল ও বিপজ্জনক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য সময়মতো চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
প্রশ্ন-১৪.৩৭। কেঁচোকৃমির জটিলতা লিখ।
উত্তর: জটিলতা :
গোলকৃমি বা কেঁচোকৃমি সংক্রমণে দেহে নানা ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য এটি মারাত্মক হতে পারে। নিচে এর প্রধান জটিলতাগুলি দেওয়া হলো:
১। শিশুদের দুর্বলতা:
ছোট শিশুদের পেটে কৃমি হলে তারা খুব দুর্বল হয়ে পড়ে, স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
২। রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া):
দীর্ঘমেয়াদে কৃমি সংক্রমণ রক্তশূন্যতা সৃষ্টি করে, কারণ কৃমি দেহের পুষ্টি শোষণ করে নেয়।
৩। শ্বাসনালীর প্রতিবন্ধকতা:
কিছু ক্ষেত্রে কৃমি মুখ দিয়ে উঠে গিয়ে ফ্যারিংস (গলাবন্ধনী) পেরিয়ে শ্বাসনালীতে ঢুকে যায়, ফলে শ্বাসকষ্ট বা শ্বাসরোধজনিত মারাত্মক জটিলতা দেখা দেয়, যা শিশুর জন্য বিপজ্জনক।
৪। পরিণতদের উপসর্গ:
বড়দের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কৃমি থাকলে দেখা যেতে পারে:
মাথা ঘোরা।অতিরিক্ত দুর্বলতা।বমি বমি ভাব।কাজকর্মে অনিচ্ছা।বুক ধড়ফড় করা (palpitation)।
উপসংহার:
কেঁচোকৃমি সাধারণ সমস্যা মনে হলেও যথাযথ চিকিৎসা না করলে এটি জীবনহানিকর জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ অপরিহার্য।
৫. (খ) সুতা কৃমি
(Thread worm)
প্রশ্ন-১৪.৩৮। সুতা কৃমির বর্ণনা দাও।
সুতা কৃমি (Pinworm)
১. পরিচিতি:
সুতা কৃমি দেখতে খুব সরু ও ছোট হয়।এগুলো সুতার মতো হওয়ায় একে "সুতা কৃমি" বলা হয়।অগ্রভাগে ছোট আলপিনের মাথার মতো গুটিকা আকৃতি থাকায় একে Pinworm বলা হয়।
২. আকার:
স্ত্রী কৃমির দৈর্ঘ্য প্রায় ১ সেন্টিমিটার (সেঃমিঃ)।পুরুষ কৃমির দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৫ সেন্টিমিটার (সেঃমিঃ)।
৩. গঠনগত বৈশিষ্ট্য:
পুরুষ কৃমির পিছনের অংশ সরু ও সোজা।স্ত্রী কৃমির পিছনের অংশ কিছুটা কোঁকড়ানো বা বাঁকানো থাকে।
৪. অবস্থান:
এই কৃমিগুলি সাধারণত সিকামে (large intestine-এর একটি অংশ) বসবাস করে।
৫. প্রজনন ও উপসর্গ:
ডিম পাড়ার সময় স্ত্রী কৃমি মলদ্বার এলাকায় চলে আসে।ফলে মলদ্বারে চুলকানি হয়, যা একটি সাধারণ উপসর্গ।
প্রশ্ন-১৪.৩৯। সুতা কৃমির জীবন চক্র লিখ।
উত্তর: জীবন চক্র:
সুতা কৃমির জীবন চক্র (Life Cycle of Pinworm)
১. বাসস্থান:
সুতা কৃমি সাধারণত ক্ষুদ্রান্ত্রের জেজুনাম, সিগময়েড কলন অথবা এপেন্ডিক্সে বাস করে।
২. ডিম পাড়া:
স্ত্রী কৃমি রেকটাম দিয়ে নেমে মলদ্বারের বাইরে ডিম পাড়ার জন্য আসে।
এই সময় মলদ্বারে তীব্র চুলকানি হয়।
৩. সংক্রমণের পথ:
রোগী চুলকানির কারণে আঙুল দিয়ে ঘষে এবং অনেক সময় কৃমিকে বের করার চেষ্টা করে।
এতে কৃমি থেঁতলে গিয়ে শত শত ডিম আঙুলে লেগে যায়।
৪. ডিমের সংক্রমণ:
ডিমগুলো এতই ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না।
ডিমযুক্ত আঙুল মুখে গেলে, অথবা খাদ্যের সাথে পেটের মধ্যে প্রবেশ করলে সংক্রমণ ঘটে।
৫. বংশবিস্তার:
পেটে গিয়ে ডিম থেকে শিশু কৃমি ফোটে।
এই কৃমি ১৫ দিনের মধ্যে পরিপক্ব হয়ে আবার মলদ্বারে ডিম পাড়তে শুরু করে।
৬. পুনঃসংক্রমণ:
একই পদ্ধতিতে আবার নতুন করে সংক্রমণ ঘটে।
এভাবেই সুতা কৃমির জীবনচক্র অব্যাহত থাকে।
*****
প্রশ্ন-১৪.৪০। সুতা কৃমির লক্ষণ লিখ।
সুতা কৃমির লক্ষণ (Symptoms of Pinworm Infection)
১. মলদ্বার চুলকানি:
ডিম পাড়ার সময় কৃমি রেকটামে এসে মলদ্বারের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করে, ফলেঅসহ্য চুলকানি হয়।মলদ্বারে কুটকুটে অনুভূতি হয়।রাত্রে চুলকানির পরিমাণ বাড়ে।
২. মেয়েশিশুদের বিশেষ উপসর্গ:
অনেক সময় কৃমি অজ্ঞাতে যোনীতে প্রবেশ করে।ফলে চুলকানি, জ্বালাপোড়া ও উপদাহ সৃষ্টি হয়।যোনীতে ঘা, পুঁজ পড়া, লাল হয়ে ফোলা দেখা যায়।এতে ভালভো-ভ্যাজাইনাইটিস (Vulvo-vaginitis) রোগ হতে পারে।
৩. পেটের সমস্যা:
উদরাময় (পাতলা পায়খানা) হতে পারে।আমাশয় (ডায়াসেন্ট্রি)-এর লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
৪. জটিলতা:
কিছু ক্ষেত্রে কৃমি এপেন্ডিক্সে প্রবেশ করে।এর ফলে এপেন্ডিসাইটিস হতে পারে।
****
প্রশ্ন-১৪.৪১। সুতা কৃমির প্যাথজেনিটিসি (প্যাথলজি) বা রোগ উৎপাদন ক্ষমতা লিখ।
উওর:
সুতা কৃমির প্যাথোজেনেসিস / রোগ উৎপাদন ক্ষমতা (Pathogenesis of Pinworm) :
১. যোনী ও বাহ্যাঙ্গে সংক্রমণ (External & Genital Infection in Girls):
স্ত্রী কৃমি ডিম পাড়ার জন্য মলদ্বারের বাইরে আসে, এবং অনেক সময় যোনীপথে প্রবেশ করে।এর ফলে যোনীর ভিতরে সৃষ্টি হয়:
তীব্র চুলকানি ও জ্বালাপোড়া,উপদাহ (inflammation)ঘা ও পুঁজলাল হয়ে ফুলে ওঠা
এসব কারণে Vulvovaginitis (ভালভো-ভ্যাজাইনাইটিস ) নামক সংক্রমণ দেখা দেয়, যা বালিকাদের মধ্যে খুবই যন্ত্রণাদায়ক।
২. পরিপাকতন্ত্রে প্রভাব (Effects on Gastrointestinal System):
দীর্ঘ সময় কৃমি অন্ত্রে অবস্থান করলে এবং সংখ্যায় বেশি হলে দেখা দিতে পারে:
উদরাময় (diarrhoea)
আমাশয় (dysentery)
অন্ত্রে কৃমির চলাচলের ফলে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লিতে জ্বালা ও সংবেদন সৃষ্টি হয়।
৩. এপেন্ডিক্স সংক্রমণ (Appendix Involvement):
কোনো কোনো ক্ষেত্রে কৃমি এপেন্ডিক্সে প্রবেশ করে।
এতে স্থানীয় প্রদাহ (local inflammation) শুরু হয়, যা থেকে Appendicitis হতে পারে।
এটি একটি গুরুতর জটিলতা, যা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনও সৃষ্টি করতে পারে।
৪. স্নায়বিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব (Neurological & Psychological Effects):
চুলকানির কারণে রাত্রে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
শিশুদের মধ্যে দেখা যায়:
চঞ্চলতা
মনোযোগের অভাব
বিরক্তি ও অস্থিরতা
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ও ক্ষুধামান্দ্য
৫. পুনঃসংক্রমণ ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সংক্রমণ:
আঙুল দিয়ে চুলকানোর ফলে ডিম লেগে যায় এবং হাত না ধুয়ে খাবার খাওয়ায় নিজেই আবার সংক্রমিত হয় (auto-infection)।
একই সাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও আক্রান্ত হতে পারেন।
সংক্ষেপে:
সুতা কৃমি একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পরজীবী যা শুধু মলদ্বারেই নয়, যোনী, অন্ত্র এবং এপেন্ডিক্সেও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এটি মানসিক এবং সামাজিক দিক থেকেও শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই যথাযথ চিকিৎসা ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
*****-
প্রশ্ন-১৪.৪২। সুতা কৃমির ল্যাবরেটরী ডায়াগনোসিস লিখ।
উত্তর: ল্যবরেটরী ডায়াগনোসিস:
সুতা কৃমির ল্যাবরেটরি ডায়াগনোসিস (Laboratory Diagnosis of Pinworm)
১. মল পরীক্ষা (Stool Examination):
মলের মধ্যে সুতা কৃমির ডিম পাওয়া যেতে পারে।ডিমের আকার প্রায় ২০ × ৫০ মাইক্রন।যদিও সবসময় মলে ডিম না-ও পাওয়া যেতে পারে, তবে বিশেষত সকালের প্রথম মল পরীক্ষা করলে সম্ভাবনা বেশি।
২. মলদ্বার ও আশেপাশের অংশ পরীক্ষা (Perianal Swab):
মলদ্বারের চারপাশের ময়লা বা ত্বকের অংশ পরীক্ষা করা হয় (Scotch Tape Test)।এছাড়া নখের নিচের ময়লা (বিশেষ করে শিশুদের) পরীক্ষা করলেও ডিম পাওয়া যেতে পারে।এই পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর এবং সুতা কৃমি সনাক্তে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য।
৩. রক্ত পরীক্ষা (Blood Test):
আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে ইয়োসিনোফিলের পরিমাণ বৃদ্ধি (Eosinophilia) লক্ষ্য করা যায়।এটি শরীরে পরজীবী সংক্রমণের একটি সাধারণ প্রতিক্রিয়া।
******
৫. (গ) বক্র কৃমি
(Hook worm)
প্রশ্ন-১৪.৪৩। বক্রকৃমি বা হুক ওয়ার্ম কাহাকে বলে? বক্র কৃমির বহিরাকৃতির বর্ণনা দাও।
উত্তর: বক্রকৃমি বা হুক ওয়ার্ম (Hookworm)
বৈজ্ঞানিক নাম:
Ancylostoma duodenale (আরেকটি সাধারণ প্রজাতি হলো Necator americanus)
সংজ্ঞা:
বক্রকৃমি হলো একধরনের অন্ত্রপরজীবী (intestinal parasite) যা মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রে বাস করে ও রক্ত শোষণ করে। এদের শরীরের সম্মুখ অংশ হুক বা বড়শির মতো বাঁকানো থাকায় এদের "হুক ওয়ার্ম" বা "বক্রকৃমি" বলা হয়। এরা নেমাটোড (Nematoda) শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
বহিরাকৃতির বর্ণনা:
১. আকৃতি ও গঠন:
বক্রকৃমি আকারে ছোট, দেহের সামনের অংশ হুক বা বড়শির মতো বাঁকানো।
পুরুষ কৃমির দৈর্ঘ্য প্রায় ৮-১১ মিমি
স্ত্রী কৃমির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০-১৩ মিমি
২. মুখের গঠন:
মুখে সাধারণত চারটি দাঁত থাকে, যেগুলো বড়শির মতো বাঁকানো।
এই দাঁতের সাহায্যে কৃমিটি ক্ষুদ্রান্ত্রের দেয়ালে আটকে থাকে।
3. রং ও গঠন:
এরা সাদা বা হালকা লালচে রঙের হয়। দেহ সরু, নলাকার ও খোলামেলা খালি চোখে দেখা কঠিন।
4. প্রজনন ক্ষমতা:
স্ত্রী বক্রকৃমি প্রতিদিন প্রায় ১০,০০০ থেকে ৩০,০০০ ডিম দিতে সক্ষম। এসব ডিম মল দ্বারা বাহিরে আসে।
প্রশ্ন-১৪.৪৪। বক্রকৃমি বা হুক ওয়ার্মের প্রকার ভেদ লিখ।
উওর : বক্রকৃমি প্রধানত দুই প্রকার, যথা:
১. অ্যানকাইলোস্টোমা ডুওডেনালে (Ancylostoma duodenale):
এই প্রজাতির কৃমির মুখে সরু ও ধারালো দাঁত থাকে।
দাঁতগুলি বড়শির মতো বাঁকানো, যেগুলোর সাহায্যে এরা অন্ত্রের প্রাচীরে আটকে থাকে।
২. নিকেটর আমেরিকানাস (Necator americanus):
এদের মুখে প্লেটের মতো চ্যাপ্টা দাঁত থাকে।
দাঁত অপেক্ষাকৃত চওড়া ও সমতল আকারের।
প্রশ্ন-১৪.৪৫। বক্রকৃমি বা হুক ওয়ার্মের জীবন চক্র লিখ।
উত্তর:
বক্রকৃমির জীবনচক্র অনেক পর্যায়ে বিভক্ত এবং এটি পরজীবী হিসেবে মানুষের শরীরের মধ্যেই সম্পূর্ণ হয়। এর জীবনচক্র নিম্নরূপ:
১. ডিম পাড়া:
বক্রকৃমি মানবদেহের ক্ষুদ্রান্ত্রে বাস করে এবং প্রতিনিয়ত ডিম পাড়ে।
এই ডিমসমূহ মলের মাধ্যমে বাহিরে নির্গত হয়।
২. ডিম থেকে লার্ভা সৃষ্টি:
মলযুক্ত মাটিতে অনুকূল পরিবেশে (আর্দ্রতা ও উষ্ণতা) ডিম ফুটে ১ থেকে ২ দিনের মধ্যে লার্ভা (শুক্রকীট বা Rhaditiform larva) জন্ম নেয়।
এই লার্ভা প্রাথমিকভাবে মাটিতে খাদ্য সংগ্রহ করে এবং প্রায় ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সংক্রামক অবস্থায় (Filariform larva) পরিণত হয়।
৩. সংক্রমণ পর্যায়:
সংক্রামক লার্ভাগুলি মাটির উপর, ঘাস, শাক-সবজি বা ভেজা পরিবেশে অবস্থান করে।
যখন মানুষ খালি পায়ে হাঁটে বা হাতে মাটি স্পর্শ করে, তখন এই লার্ভা ত্বক ভেদ করে শরীরে প্রবেশ করে।
৪. শরীরের অভ্যন্তরে স্থানান্তর:
চর্ম ভেদ করে শরীরে প্রবেশ করার পর লার্ভাগুলি রক্তনালীর মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছে।
এরপর শ্বাসনালীর মাধ্যমে গলায় উঠে, এবং গিলে ফেলা হলে ক্ষুদ্রান্ত্রে পৌঁছায়।
৫. পূর্ণাঙ্গ কৃমিতে পরিণত হওয়া:
ক্ষুদ্রান্ত্রে পৌঁছে লার্ভাগুলি পূর্ণাঙ্গ বক্রকৃমিতে পরিণত হয় এবং পুনরায় ডিম পাড়া শুরু করে।
বিস্তার ও সংক্রমণ:
যেসব ব্যক্তির দেহে বক্রকৃমি থাকে, তাদের মলের মাধ্যমে ডিম নির্গত হয়ে পরিবেশে ছড়ায়।
অনেক সময় বাহকের শরীরে কোনো সুস্পষ্ট লক্ষণ না থাকলেও, তারা রোগ ছড়ানোর উৎস হিসেবে কাজ করে।
উপসংহার:
এইভাবে বক্রকৃমি তার জীবনচক্র সম্পূর্ণ করে এবং একজনের শরীর থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে সংক্রমিত হয়ে থাকে। সঠিক স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন না থাকলে এই চক্র বারবার পুনরাবৃত্তি হয়।
প্রশ্ন-১৪.৪৬। বক্রকৃমি বা হুক ওয়ার্ম রোগের লক্ষণ লিখ।
উত্তর:
বক্রকৃমি সংক্রমণে দেহে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
১. চর্মের লক্ষণ:
পায়ে সূক্ষ্ম গর্ত সৃষ্টি হয়।
প্রবেশস্থলে তীব্র চুলকানি অনুভূত হয়।
২. রক্তশূন্যতা (Anemia):
কৃমি অন্ত্রে রক্ত শোষণ করায় রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে।
৩. বর্ণ পরিবর্তন:
সারা শরীর ফ্যাকাশে ও সাদাটে দেখায়।
চোখ ও মুখ ফ্যাকাশে হয়।
দেহ পাণ্ডুবর্ণ ধারণ করে।
4. শারীরিক দুর্বলতা:
বুক ধড়ফড় করে (হৃদকম্পন বৃদ্ধি পায়)।
দেহ শীর্ণ ও শুকিয়ে যায়।
৫. শোথ (ফোলাভাব):
পা, মুখ এবং কখনও কখনও পেট ফোলা দেখা যায়।
৬. জিভের পরিবর্তন:
জিভ মোটা, সাদা এবং লেপাবৃত হয়।
ৃ
৭. শিশুদের ক্ষেত্রে:
শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।
গুপ্ত অঙ্গ (যেমন: যৌনাঙ্গ) ছোট থেকে যায় এবং সেখানে লোম গজায় না।
৮. পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা:
হজম শক্তি কমে যায় (পরিপাক দুর্বল হয়)।
ক্ষুধা মন্দা দেখা দিতে পারে।
প্রশ্ন-১৪,৪৭। বক্রকৃমি বা হুক ওয়ার্মের প্যাথজেনিসিটি বা রোগ উৎপাদন ক্ষমতা লিখ।
উত্তর:
হুক ওয়ার্ম বা বক্রকৃমির রোগ উৎপাদন ক্ষমতা (Pathogenicity) খুবই বেশি। এরা শরীরে লার্ভা ও পরিণত উভয় অবস্থাতেই বিভিন্ন উপসর্গ ও রোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম। এদের রোগ উৎপাদনের ক্ষমতা নিম্নরূপ:
১. চর্মে উপসর্গ (Larval Skin Penetration):
লার্ভা চর্ম ভেদ করে শরীরে প্রবেশ করে।প্রবেশস্থলে প্যাপুলা (papule) জাতীয় ক্ষুদ্র ফুসকুড়ি বা উদ্ভেদ দেখা যায়।তীব্র চুলকানি ও অস্বস্তি অনুভূত হয়।
২. অন্ত্রে ক্ষত সৃষ্টি (Intestinal Mucosa Damage):
পরিণত কৃমি ক্ষুদ্রান্ত্রের মিউকাস মেমব্রেন কেটে ফেলে।এতে ছোট ছোট গোলাকৃতির রক্তস্খলন ছিদ্র (hemorrhagic lesions) তৈরি হয়।
৩. রক্তশূন্যতা (Anemia):
কৃমি সরাসরি রক্ত শোষণ করে।রক্তস্খলন ছিদ্র থেকে অতিরিক্ত রক্ত নিঃসরণও ঘটে।ফলে ধীরে ধীরে শরীরে গভীর রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
৪. ফুসফুসে ক্ষতি (Pulmonary Effects):
রক্তনালী হয়ে ফুসফুসে পৌঁছানো লার্ভা সেখানে ব্রংকাইটিস সৃষ্টি করতে পারে।কখনও নিউমোনিয়া-জাতীয় উপসর্গ দেখা যায়।
উপসংহার:
বক্রকৃমির সংক্রমণ শরীরের চর্ম, অন্ত্র এবং শ্বাসতন্ত্রের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর ফলে রক্তস্বল্পতা ছাড়াও অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
*****
প্রশ্ন-১৪.৪৮। হুক ওয়ার্ম বা বক্রকৃমি কি ভাবে রক্ত হীনতা বা এনিমিয়া সৃষ্টি করে?
উত্তর:
হুক ওয়ার্ম সংক্রমণে রক্তহীনতা (Anemia) সৃষ্টি হওয়ার প্রক্রিয়াটি নিচের ধাপগুলোর মাধ্যমে ঘটে:
১. রক্ত শোষণ:
পরিপক্ব (পূর্ণাঙ্গ) হুক ওয়ার্ম মানবদেহের রক্তনালী থেকে সরাসরি রক্ত শোষণ করে।প্রতিদিন প্রতিটি কৃমি ০.০৩–০.৩ মি.লি. রক্ত শোষণ করতে পারে।
২. আন্ত্রিক ক্ষত সৃষ্টি:
কৃমি ক্ষুদ্রান্ত্রের মিউকাস মেমব্রেন কেটে গোলাকৃতির রক্তস্খলন ছিদ্র তৈরি করে।এসব ক্ষতস্থল থেকে অবিরত রক্ত নিঃসরণ ঘটে।
3. পুষ্টিকর উপাদান শোষণ:
কৃমি খাদ্যের পুষ্টিকর অংশ (যেমন: আয়রন ও প্রোটিন) শোষণ করে ফেলে।ফলে শরীরের পুষ্টি হ্রাস পায়, যা রক্ত তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে।
৪. রোগীর লক্ষণ:
দীর্ঘদিন রক্তক্ষরণ ও পুষ্টির ঘাটতির ফলে দেখা যায়:
শারীরিক শীর্ণতামুখমণ্ডল ও চোখ ফ্যাকাশে হওয়াত্বকে পাণ্ডু বর্ণদুর্বলতা ও অবসাদ।
উপসংহার:
হুক ওয়ার্মের কারণে রক্ত শোষণ ও রক্তস্খলনের মাধ্যমে দেহে ধীরে ধীরে তীব্র রক্তহীনতা সৃষ্টি হয়, যা রোগীর স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
***----****
প্রশ্ন-১৪.৪৯। বক্রকৃমি বা হুক ওয়ার্মের ল্যাবরেটরী ডায়াগনোসিস লিখ।
উত্তর:
ল্যাবরেটরী ডায়াগনোসিস :
হুক ওয়ার্ম সংক্রমণ নির্ণয়ের জন্য নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলো করা হয়:
১. রক্ত পরীক্ষা (Blood Test):
ইওসিনোফিল (Eosinophil) এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় — সাধারণত ২০% থেকে ৬০% পর্যন্ত।
লিউকোসাইট (Leukocyte) সংখ্যা সাধারণত স্বাভাবিক থাকে।
হিমোগ্লোবিন কমে যায়, যা রক্তশূন্যতার ইঙ্গিত দেয়।
২. মল পরীক্ষা (Stool Examination):
মলে হুক ওয়ার্মের ডিম (ova) দেখা যায়।ডিমগুলো ডিম্বাকৃতি বা গোলাকৃতি হয়।ডিম্বাণু ও ডিমের আবরণের মাঝে স্বচ্ছ ফাঁকা অঞ্চল দেখা যায়।
3. কফ পরীক্ষা (Sputum Examination):
সংক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় ফুসফুসে অবস্থানকারী লার্ভা কফে উপস্থিত থাকতে পারে।কফ পরীক্ষা করে হুক ওয়ার্মের লার্ভা শনাক্ত করা যায়।
উপসংহার:
রক্ত, মল এবং কফ পরীক্ষা করে হুক ওয়ার্ম সংক্রমণ নির্ণয় করা যায়। যথাযথ ল্যাবরেটরি পরীক্ষা রোগ সনাক্তকরণ ও চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
*--*------
প্রশ্ন-১৪.৫০। বক্রকৃমি বা হুক ওয়ার্মের প্রতিকার বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা লিখ।
উত্তর:
হুক ওয়ার্মের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য নিচের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত:
১. খালি পায়ে চলাফেরা না করা:
লার্ভা মাটি থেকে চামড়া ভেদ করে দেহে প্রবেশ করতে পারে, তাই খালি পায়ে চলাফেরা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা উচিত।
২. মলমূত্র নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা:
যেখানে-সেখানে মাঠে, ঝোপে বা খোলা স্থানে মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাস বন্ধ করতে হবে।
প্রত্যেকের জন্য স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা:
শৌচকর্মের পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে।
শিশুদের স্বাস্থ্যবিধি শেখাতে হবে।
৪. বাসা-বাড়ি পরিষ্কার রাখা:
পায়খানা, রান্নাঘর ও আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
৫. সুন্দরভাবে রান্না ও খাবার রাখা:
সবজি ও ফল ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে।
খাবার ঢেকে রাখা উচিত, যেনো তাতে ধুলা-মাটি বা কৃমির ডিম না পড়ে
৬. সাধারণ সচেতনতা বৃদ্ধি:
জনগণের মধ্যে হুক ওয়ার্ম সংক্রমণ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা দরকার।
উপসংহার:
পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, খালি পায়ে না হাঁটা এবং শৌচাগারের ব্যবহার নিশ্চিত করলেই হুক ওয়ার্মের সংক্রমণ সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
'প্রশ্ন-১৪.৫১। হুক ওয়ার্মের জটিলতা লিখ।
উত্তর: জটিলতাঃ
১। অতি দুর্বলতা ও রক্ত শূণ্যতার ফলে অনেক সময় রোগীর মধ্যে ঘুম ঘুম ভাব ও মুর্ছাভাব দেখা দেয়।
২। অনেক সময় হাত, পা, পেট ফুলিয়া রোগীর মরণাপন্ন দশা হয়।
৩। পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটিতে পানিজমিয়া উদরী রোগ সৃষ্টি হয়।
***********১@
প্রশ্ন-১৪.৫২। ফিতাকৃমি বা টেপ ওয়ার্ম কি? ইহার বহিরা আকৃতি বর্ণনা দাও।
উত্তর:
ফিতাকৃমি বা টেপ ওয়ার্ম:
ফিতাকৃমি এক প্রকার পরজীবী কৃমি, যাহারা মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রে বাস করে।ইহাদের দেহ লম্বা, চ্যাপটা ও ফিতার মতোদেখতে।সাধারণত গাদাভাবে (হালকা সাদা বা হালকা বাদামি) রঙের হয়।
বহিরাকৃতি:
1. ফিতাকৃমির দেহ ফিতার মতো দীর্ঘ ও পাতলা।2. মাথার দিক সরু এবং লেজের দিক মোটা।3. মাথায় নৌকার নোঙরের মতো কাঁটা (hooks) থাকে।4. মাথায় ৪টি চোষক (sucker) থাকে, যেগুলোর সাহায্যে অন্ত্রের দেয়ালে আঁকড়ে ধরে থাকে।5. দেহ অনেকগুলো খণ্ড বা খণ্ডিত অংশ (segments/proglottids) দিয়ে গঠিত।6. লেজের দিকের খণ্ডগুলি ক্রমশ বড় হয় এবং পূর্ণবিকশিত হয়ে একসময় খসে পড়ে।7. প্রতিটি পূর্ণ খণ্ডে অসংখ্য ডিম থাকে।8. ইহা উভলিঙ্গ প্রাণী — অর্থাৎ একই দেহে পুরুষ ও স্ত্রী প্রজনন অঙ্গ থাকে।
প্রশ্ন-১৪.৫৩। ফিতা কৃমির প্রকার ভেদ লিখ।
উত্তর:
ফিতাকৃমি প্রধানত নিম্নলিখিত প্রকারের হয়ে থাকে:
1. টিনিয়া স্যাজিনাটা (Taenia saginata) – গরুর দেহ থেকে মানুষে আসে।
2. টিনিয়া সোলিয়াম (Taenia solium) – শুকরের দেহ থেকে মানুষে আসে।
3. টিনিয়া মিডিয়োক্যানেলাটা (Taenia mediocanellata) – এটি অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত প্রকার।
4. ডিফথেলোবোথ্রিয়াম ল্যাটাম (Diphyllobothrium latum) –মিঠা পানির মাছ থেকে মানুষে আসে, একে "ফিশ টেপওয়ার্ম" বলা হয়।
📌 বিশেষ তথ্য: বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে টিনিয়া স্যাজিনাটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
প্রশ্ন-১৪.৫৪। ফিতা কৃমি বা টেপ ওয়ার্মের জীবণ চক্র লিখ।
উত্তর:
ফিতাকৃমি (Taenia saginata)-এর জীবনচক্র নিম্নরূপ:
1. প্রাপ্তবয়স্ক ফিতাকৃমি মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রে বাস করে এবং ডিম বা খণ্ডাংশ (proglottid) তৈরি করে।
2. এই খণ্ডাংশ মলের (মলত্যাগের সময়) সাথে বাহিরে আসে এবং ভূমিতে পড়ে।
3. প্রতিটি খণ্ডাংশ দেখতে লাউয়ের বিচির মতো এবং নিজে নিজে চলতে পারে।
4. এই খণ্ডাংশে থাকে বহু ডিম, যা পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।
5. গরু বা ছাগল যখন ঘাস খাওয়ার সময় এই ডিমযুক্ত খণ্ডাংশ খেয়ে ফেলে, তখন:
ডিমগুলো তাদের অন্ত্রে প্রবেশ করে,
অন্ত্রের দেয়াল ভেদ করে ঘাড়ের মাংসে (muscles) গিয়েএ বসতি গড়ে তোলে।
সেখানে larva (বাচ্চা কৃমি) অবস্থায় অবস্থান করে — একে বলে cysticercus।
6. মানুষ যখন অপর্যাপ্তভাবে রান্না করা বা কাঁচা গরুর মাংস খায়, তখন সেই larva মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
7. লার্ভা মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রে গিয়ে পরিপূর্ণ ফিতাকৃমিতে পরিণত হয়।
8. একটি মানুষের দেহে সাধারণত একটি মাত্র পূর্ণবিকশিত ফিতাকৃমি থাকে, তবে এর দেহ অনেক খণ্ডে বিভক্ত থাকে।
9. প্রতিটি খণ্ডে পুরুষ ও স্ত্রী প্রজনন অঙ্গ থাকে — অর্থাৎ এটি উভলিঙ্গ (hermaphrodite) প্রাণী।
10. এরপর আবার ডিম উৎপাদন করে, এবং জীবনচক্র পুনরায় শুরু হয়।
প্রশ্ন-১৪.৫৫। ফিতা কৃমি বা টেপ ওয়ার্মের লক্ষণ লিখ।
উত্তর:
ফিতাকৃমি দেহে থাকলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে:
1. শরীরে এলার্জি বা আমবাত (চুলকানিসহ লাল চাকা) দেখা দেয়।
2. পায়খানার সাথে কৃমির খণ্ডাংশ (টুকরা) বের হয়।
3. বমি বা বমি বমি ভাব হতে পারে।
4. পেটের পীড়া বা অস্বস্তি অনুভূত হয়।
5. বুক ধড়ফড় করে, হৃদকম্পন বেড়ে যায়।
6. মাঝে মাঝে মূর্ছা (অজ্ঞান হওয়া) বা ফিট (ঝাঁকুনি) হতে পারে।
7. ক্ষুধা বাড়ে বা কমে যায় — কিছু রোগীর অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগে।
8. ওজন কমে যেতে পারে, যদিও খাওয়া স্বাভাবিক থাকে।
9. পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
10. দুর্বলতা ও অবসাদ অনুভূত হয়।
11. মলদ্বারে চুলকানি হতে পারে।
12. কিছু ক্ষেত্রে রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) হতে পারে।
প্রশ্ন-১৪.৫৬। ফিতাকৃমি বা টেপ ওয়ার্মের প্যাথজেনিসিটি বা রোগ উৎপাদন ক্ষমতা লিখ।
উত্তর:
ফিতাকৃমি (Taenia species)-এর দ্বারা দেহে যেসব রোগ বা উপসর্গ সৃষ্টি হয়, তা নিম্নরূপ:
1. উদর পীড়া বা পেট ফোলা অনুভব হয়।
2. উদরাময় (ডায়রিয়া) হতে পারে।
3. বমি বা বমি বমি ভাব দেখা দেয়।
4. ক্ষুধা বাড়ে বা কমে যায় — খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম দেখা দেয়।
5. শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে ক্লান্তি ও অবসাদ তৈরি হয়।
6. ওজন হ্রাস পায়, যদিও খাদ্য গ্রহণ স্বাভাবিক থাকে।
7. পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
8. ইওসিনোফিলের পরিমাণ ১০% থেকে ৬০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় (Eosinophilia) — এটি রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে।
9. অন্ত্রে জ্বালা ও প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
10. দীর্ঘমেয়াদে কৃমির উপস্থিতি অ্যানিমিয়া (রক্তস্বল্পতা) সৃষ্টি করতে পারে।
11. মস্তিষ্কে যদি লার্ভা পৌঁছে যায় (Cysticercosis), তাহলে ফিট, মাথাব্যথা, ঝাঁকুনি, স্নায়বিক সমস্যা হতে পারে (Taenia solium ক্ষেত্রে)।
প্রশ্ন-১৪.৫৭। ফিতা কৃমি বা টেপ ওয়ার্মের ল্যাবরেটরী ডায়াগনোসিস লিখ।
উত্তর: ল্যাবরেটরী ডায়াগনোসিস:
ফিতাকৃমি সংক্রমণ শনাক্ত করার জন্য নিম্নলিখিত ল্যাবরেটরি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়:
✅ ১. মল পরীক্ষা (Stool Examination):
মলে ফিতাকৃমির ডিম ও খণ্ডাংশ (proglottids) দেখা যায়।
ডিম দেখতে হয় হালকা বাদামী রঙের এবং মোটামুটি গোলাকৃতির।
ডিমের উপরের আবরণে রেডিয়াল দাগ বা striations থাকে।
অনেক সময় মুভিং প্রোগ্লটিডস (চলমান খণ্ডাংশ)ও দেখা যায়।
সংক্রমণ নিশ্চিত করতে তিনদিন ধরে তিনটি নমুনা পরীক্ষা করা ভালো।
✅ ২. রক্ত পরীক্ষা (Blood Test):
ইওসিনোফিল (Eosinophil) সংখ্যা বৃদ্ধি পায় — সাধারণত ১০% থেকে ৬০% পর্যন্ত হতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণে হালকা অ্যানিমিয়া (Anemia) দেখা দিতে পারে।
✅ ৩. চেহারা ও উপসর্গ মূল্যায়ন:
রোগীর ওজন হ্রাস, ক্ষুধা পরিবর্তন, পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি ইত্যাদি উপসর্গের ভিত্তিতেও সন্দেহ করা হয়।
✅ ৪. প্রয়োজন অনুযায়ী ইমেজিং টেস্ট (বিশেষ ক্ষেত্রে):
যদি স্নায়বিক লক্ষণ দেখা দেয় (বিশেষ করে Taenia solium), তাহলে MRI/CT scan করে মস্তিষ্কে লার্ভা আছে কিনা দেখা হয়।
প্রশ্ন-১৪.৫৮। ফিতা কৃমির জটিলতা লিখ।
উত্তর: জটিলতাঃ
ফিতাকৃমি (Tape worm) দীর্ঘদিন দেহে থাকলে নিচের জটিলতাসমূহ দেখা দিতে পারে:
1. পায়খানার সঙ্গে রক্তপাত হতে পারে, বিশেষ করে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণে।
2. শিশুদের মধ্যে তীব্র দুর্বলতা ও রক্তশূন্যতা (Anemia) দেখা দেয়।
3. পুষ্টিহীনতা (Malnutrition) দেখা দেয় — কারণ কৃমি দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণ করে নেয়।
4. মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, বমি বমি ভাব ও বুক ধড়ফড় অনুভূত হতে পারে।
5. অনেক সময় কৃমি গলা দিয়ে উঠে এসে শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে, ফলে শ্বাসকষ্ট হয়ে মারাত্মক অবস্থা দেখা দেয় (বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে)।
6. তীব্র পেট ব্যথা ও অন্ত্রে অবরোধ (intestinal obstruction) হতে পারে যদি কৃমির সংখ্যা খুব বেশি হয়।
7. Taenia solium সংক্রমণে লার্ভা মস্তিষ্কে পৌঁছালে নিউরোসিস্টিসারকোসিস (neurocysticercosis) হয়, যার ফলে:
ফিট/মূর্ছা (Epileptic seizure),স্মৃতিভ্রংশ,মাথাব্যথা,এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
8. পিত্তনালী বা অ্যাপেন্ডিক্সে কৃমি ঢুকলে সেগুলোর প্রদাহ (inflammation) সৃষ্টি হতে পারে।
9. দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
৬. গোদ বা ফাইলেরিয়াসিস
(Filariasis)
প্রশ্ন-১৪.৫৯। ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ রোগ কি?
উত্তর: ফাইলেরিয়াসিস: উসেরেরিয়া ব্যানক্র্যাফটি নামক এক জাতীয় প্যারাসাইট হইতে মানুষের শরীরে তৈরী হয় হাজার হাজার মাইক্রোফাইলেবিয়া। এক জাতীয় কিউলেক্সমশকী এই সব রোগের কীটদের বহন করে। এই জাতীয় প্যারাসাইট সংক্রমিত হইয়া জ্বর, নাসিকা গ্রন্থি প্রদাহ, নাসিকা প্রণালীর অবরোধ সহ নিম্নাঙ্গের ফোলা প্রভৃতি রোগ আত্ম প্রকাশ করে। ইহারই নাম গোদ বা ফাইলেরিয়াসিস।
প্রশ্ন-১৪.৬০। মাইক্রোফাইলেরিয়ার জীবন চক্র লিখ।
উত্তর: জীবণ চক্র: ফাইলেরিয়া জীবাণুর স্ত্রী পুরুষ একত্রে আক্রমণ চালায়। ইহারা আক্রান্ত ব্যক্তির জননেন্দ্রিয়, অস্ত্র, স্তন, হাত পা, নাসিকা প্রণালী এবং গ্রন্থি মধ্যে অবস্থান করিয়া ধীরে ধীরে বংশবৃদ্ধি করে। কিছুকাল অবস্থানের পর স্ত্রী জীবাণু বহু সংখ্যক ডিম প্রসব করে। ইহাদের কতক গুলি গ্রন্থি মধ্যে ধবংস হয় কিন্তু অধিকাংশই রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করিয়া ফুসফুস, কিডনী, যকৃত, ও প্লীহার রক্ত প্রণালীতে অবস্থান করে। রাত্রে রক্তের মধ্যে বহুল সংখ্যায় আগমন করে এবং দিনের বেলায় আবার প্রস্থান করে। এই অবস্থায় স্ত্রী জাতীয় কিউলেক্স মশা দংশন করিলে ডিমগুলি তার পাকাশয়ে প্রবেশ করে এবং সেখান হইতে বুকের মাংসপেশীতে আশ্রয় গ্রহণ করে। ১০/১২ দিনে তাহাদের বৃদ্ধি ও রূপান্তর শেষ হইলে তাহারা ১/১০ ইঞ্চি লম্বা কীটে পরিণত হইয়া মশার গুঁড়ে প্রবেশ করে এবং দংশনের দ্বারা মানব দেহে প্রবেশ করিয়া নাসিকা প্রনালীতে ৬মাসে আবার ডিম প্রসব করে। এই ভাবে ইহাদের জীবণচক্র চলিতে থাকে।
প্রশ্ন-১৪.৬১। ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ রোগের লক্ষণাবলী লিখ।
উত্তর: ফাইলেরিয়াসিসের লক্ষণাবলী: অনেকেই আগে ভাবিতেন যে
ফাইলেরিয়া হইলেই বোধ হয় পা খুব ফুলিয়া উঠিবে এবং গোদ হইবে। এই ধারনা ঠিক নয়। নারীদের গোদের সংখ্যা বেশী হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে ২৫% লোকের পা ফুলে, বাকী সব ক্ষেত্রেই তাহাদের যৌনাঙ্গ ও অণ্ডকোষ আক্রান্ত হয় এবং ফুলিয়া বড় আকার ধারণ করে। এই রোগের লক্ষণাবলী নিম্নে প্রদত্ত হইল।
১। সাধারণতঃ নিম্নাঙ্গ এবং বাহ্য জননেন্দ্রিয়ের লসিকা গুন্থি গুলি আক্রান্ত হয়।
দেহের যে কোন স্থানের লসিকা নালীর প্রদাহ, সাধারণতঃ মধ্য রাত্রিতে জ্বর আরম্ভইয। জ্বরের তাপমাত্রা ১০২হইতে ১০৫ ডিগ্রী পর্যন্ত হইতে পারে।
২। জ্বর আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রদাহ চলিয়া যায়। ২/৩ দিন থাকিয়া জ্বর ছাড়িয়া যায় এবং কিছু দিন পর পর আসিতে থাকে। পুণঃ পুনঃ আক্রমণে তন্তু বৃদ্ধি হইয়া আক্রান্ত স্থল চিরস্থায়ী রূপে বৃদ্ধি লাভ করে।
৩। পদযুগল অন্ডকোষ, বাহুদ্বয়, স্তন, যোনীকপাট প্রভৃতির নালিকা গুলি ফুলিয়া উঠিতে পারে ও বিকৃতির সৃষ্টি হয়।
*৪। পদযুগল স্ফীত হইলে গোদ, অণ্ডকোষ স্ফীত হইলে কোরন্ড বলে।
৫। অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় জ্বরের তাপমাত্রা বিশেষ ভাবে বৃদ্ধি পায়।
৬। জ্বরের সঙ্গে মাথা ধরা, বমি বমি ভাব, প্রলাপ, অক্ষুধা প্রভৃতি বর্তমান থাকে।
৭। ফোলাস্থান টিপিলে সেই জায়গাটা বসিয়া যায়।
৮। অণ্ডকোষ স্ফীত হয়, প্রদাহ হয় ও রস নির্গত হয়। মাইক্রোফাইলেরিয়া বড় হইয়া লসিকানালী অবরূদ্ধ করে এবং ইহার ফলেই শরীরে শোথভাব দেখা দেয়।
প্রশ্ন-১৪.৬২। ফাইলেরিয়াসিস বা গোদরোগের কারণ লিখ।
উত্তর: ফাইলেরিয়াসিসের কারণ:
১। উসেরেরিয়াল ব্যানক্র্যাফটি নামক এক প্রকার সূক্ষ্ম রক্তের কীট হইল এই রোগের মূল কারণ। ইহারা এত সূক্ষ্ম যে সাধারণ চোখে দেখা যায় না।
২। স্ত্রী জাতীয় কিউলেক্স মশার দংশনের ফলে মাইক্রোফাইলেরিয়া মানুষের রক্তে যায় এবং রোগ সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন-১৪.৬৩। ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ রোগের প্যাথলজি লিখ।
উত্তর: প্যাথলজি: এই রোগে রক্তে ইউসিনোফিলের আধিক্য দেখা যায়।
মাইক্রোফাইলেরিয়া বড় হইয়া লসিকা নালী রূদ্ধ করিয়া দেয় এবং ইহার ফলেই দেহে স্ফীতি দেখা দেয়। লসিকার অবরোধ অবস্থা বহুদিন স্থায়ী হইলে সেখানে নূতন তত্ত্ব সংযোগের ফলে এই শোথ চির স্থায়ী হইয়া গোদ, কোরন্ড ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে। মূত্রাশয়ে লসিকানালী অবরূদ্ধ হইলে লসিকানালীর অভ্যন্তরস্থ দুগ্ধ বৎ পদার্থ মূত্রাশয়ে পড়ে এবং দুগ্ধবৎসূত্রে নির্গত হয়। লসিকা নালীর প্রদাহে হাত পা ও দেহের অন্যান্য স্থান লাল হইতে দেখা যায়।
প্রশ্ন-১৪.৬৪। ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ রোগের ল্যাবরেটরী ডায়াগনোসিস লিখ।
উত্তর: ল্যাবরেটরী ডায়াগনোসিস: রোগীর রক্ত পরীক্ষা করিলে মাইক্রোফাইলেরিয়া ধরা পড়ে। জ্বরের আক্রমণ প্রকৃতি ও মধ্যরাত্রে সংগৃহীত রক্তে ফাইলেরিয়ার ডিম আবিষ্কার দ্বারা সহজেই রোগ নির্ণয় করা যায়। শিরার রক্তের সঙ্গে ২% ফরমালিন মিশাইয়া সারা রাত্রি রাখিয়া এবং উহার তলানী পরীক্ষা করিলে লোফলারস মিথিলিন ব্লু স্টেইনসহ পরীক্ষা করিলে ফাইলেরিয়া সুস্পষ্ট ধরা পড়ে।
৭. জিয়ার ডিয়া
(Giardia)
প্রশ্ন-১৪.৬৫। জিয়ার ডিয়ার, সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
উত্তর: জিয়ার ডিয়া: একধবনের অতি ক্ষুদ্র পরজীবির আক্রমন হইতে এই - রোগ হইয়া থাকে। ইহাদের নাম Giardia Lumbricoides পরজীবি।এই জীবাণুরা ক্ষুদ্রান্ত্র, সিকাম এবং কোলনের মধ্যে বাসা বাঁধে এবং ইহাদের দ্বারা উদরাময়, আমাশয় জাতীয় রোগ সৃষ্টি হইয়া থাকে।
বর্ণনা: দুইটি অবস্থায় ইহাদেরকে পাওয়া যায়। যথা-
১। সিস্ট (Cyst form)
২। ট্রপোজয়েট (Tropho zoite Form)
সিস্ট: সিস্টের আকার ডিমের মত। ইহাতে লম্বা দুইটি এক্সোটাইল আছে। এক্সেটাইট বরাবর ফাইব্রিন অবস্থান করে। ইহাতে চারটির মত নিউক্লিয়াস দেখা যায়।
ট্রপোজয়েট: ইহারা গোলাকৃতির এবং দুইটি নিউক্লিয়ার বিশিষ্ট। দেখিতে অনেকটা টেনিস বা ব্যাডিমিন্টনের র্যাকেটের ন্যায়। ট্রপোজয়েটের দুইদিকে নিউক্লিয়াসদ্বয় অবস্থান করে। ৮টি ফ্লাজেলার সাহায্যে প্রাণীটি চলাচল করিতে সক্ষম।
প্রশ্ন-১৪.৬৬। জিয়ার ডিয়ার আকার ও আকৃতির বর্ণনা দাও।
উত্তর: আকার ও আকৃতি: ইহারা ডিম্বাকার, লম্বায় ১২-১২ মাইক্রন, চওড়ায় ৮ মাইক্রন। ইহাদের অভ্যন্তরীন অঙ্গ নিম্নরূপ:
১। কোষপ্রাচীর: ইহাদের কোষ প্রাচীর পুরু ও আলোয় চকচক করে।
২। কেন্দ্রক: ইহাদের ২-৪ টা কেন্দ্রক থাকে। ইহারা দুইদিকে সমসংখ্যায় অথবা একদিকে জড় হয়।
৩। ফ্লাজেলা: ফ্লাজেলার ও এক্সোস্টাইলের ধবংস বিশেষ সিস্টের দেহে লম্বালম্বি ভাবে জুড়িয়া থাকে। এক্সোটাইল গাঢ় ভাবে রঞ্জিত হয়।
৪। হুকলেট: দুই হইতে চারটি বক্রাকার বস্তু উপস্থিত থাকে।
৫। সাইটোপ্লাজম: ইহারা সূক্ষ্ম দানাদার ও কোষ প্রাচীর হইতে পৃথক।
প্রশ্ন-১৪.৬৭। জিয়ার ডিয়ার জীবণ চক্র লিখ।
উত্তর: জীবন চক্র: জিয়ার ডিয়ায় আক্রান্ত হইলে রোগীর মলের সহিত এই
জীবাণুদের সিস্ট পাওয়া যায়। সিস্টই রোগ উৎপাদন করিয়া থাকে। কাঁচা খাবার, কাঁচা ফল, শাক শব্জী, কাঁচা মাছ মাংস বা পুরাতন বাসী খাবার, 'দূষিত পানি প্রভৃতি খাদ্যের মাধ্যমে মানুষের পেটে প্রবেশ করে। ইহারা পাকস্থলী, অস্ত্র, লিভার, পিত্ত কোন প্রভৃতি অঞ্চলে বাসা বাঁধে। এই সব অংশের-রসের মাধ্যমে ইহারা জীবন যাপন করিয়া থাকে। ক্ষুদ্রান্ত্রে পৌঁছাইয়া ইহারা ট্রফোজয়েটে রূপান্তরিত হয়। লম্বালম্বি দ্বিভাজিত হইয়া দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পায়। পরিেেশষে ইহারা পুনরায় খাদ্যনালীর শেষভাগে সিস্টে রূপান্তরিত হয় যাহা পায়খানার মাধ্যমে দেহের বাহিরে আসিয়া খাদ্য ও পানিকে দূষিত করে। এই দূষিত খাদ্য ও পানীয়ের মাধ্যমে ইহারা পুনরায় দেহে প্রবেশ করে। মলের মধ্যে কদাচিৎ ট্রফোজয়েট পাওয়া যায়। এইভাবেই ইহাদের জীবনচক্র চলিতে থাকে।
প্রশ্ন-১৪.৬৮। জিয়ার ডিয়ার- প্যাথজেনিসিটি বা রোগ উৎপাদন ক্ষমতা বা
লক্ষণাবলী লিখ।
উত্তর: প্যাথজেনিসিটি: মৃদু আক্রমণে সামান্য পেটের গোলমাল ছাড়া আর কিছুই হয়না। উগ্রভাবে আক্রমণ হইলে উদরাময় দেখাদেয় এমনকি বার বার উদরাময় হইতে থাকে। সারা দিনে ৭/৮ বার পাতলা, জলবৎমল বা আমজড়িত হলুদ বর্ণের মল নির্গত হয়। অনেক সময় মল কাদাকাদা, আমযুক্ত ও তাহাতে ফেনা লক্ষিত হয়। ক্ষুধামান্দ্য, পেটে ভুটভাট করা, পেটের গোলমাল থাকার জন্য রোগী ক্রমে দুর্বল ও রক্তহীন হয়, ফ্যাকাশে দেখায়। প্রায়ই পেটে বায়ু হয়, পেট ফোলা থাকে, ঘনঘন বায়ু নিম্নগামী হয়। আক্রমনের সময় পেট ব্যথা, গা বমি বমি ভাব, ক্ষুধা হীনতা প্রভৃতি থাকে।
প্রশ্ন-১৪.৬৯। জিয়ার ডিয়ার জটিলতা লিখ।
উত্তর: জটিলতাঃ
১। নিয়মিত রোগে ভুগিতে ভুগিতে রোগী অতিশয় দুর্বল ও কর্মহীন হইয়া পড়ে।
২। বুক ধড়ফড় করা, রক্তহীনতা, দেহ জীর্ণশীর্ণ হওয়া প্রভৃতি দেখা দেয়।
৩। ক্রমাগত ভুগিতে ভুগিতে গ্যাষ্ট্রিক আলসার বা ডিওডেনাল আলচার বা আন্ত্রিক আলসার হইতে পারে।
৪। হার্টের অতি দুর্বলতা হইতে পরে লো প্রেসার দেখা দেয়।
৫.। দীর্ঘ দিন অচিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ঘটিতে পারে।
প্রশ্ন-১৪.৭০। জিয়ার ডিয়ার ল্যাবরেটরী ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয় পদ্ধতি লিখ।
উত্তর: ল্যাবরেটরী ডায়াগনোসিস: ঘনঘন উদরাময় ও আলসার হইতে
থাকিলে মল পরীক্ষা করানো দরকার। মলে জিয়ার ডিয়ার কীটাণু বা সিস্টের উপস্থিতি হইতে রোগ নির্ণয় করা হয়। স্যালাইন ও আয়োডিন পদ্ধতি দ্বারা এই পরীক্ষা করা যায়।
কাজী সাইফ উদদীন আহমেদ
Tags:
3rdYear-Pathology
>Share by:
Make a comments as guest/by name or from your facebook:
Make a comment by facebook: