চর্ম রোগে হোমিওপ্যাথিক ফিলোসফি, হোমিওপ্যাথিক অর্গানন অফ মেডিসিন এবং হোমিওপ্যাথিক ক্রনিক ডিজিজ অনুযায়ী বিস্তারিত আলোচনা।

চর্মরোগে হোমিওপ্যাথিক ফিলোসফি, অর্গানন অফ মেডিসিন ও ক্রনিক ডিজিজ অনুযায়ী নোট আকারে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. হোমিওপ্যাথিক ফিলোসফি অনুযায়ী চর্মরোগ : 

চর্মরোগ কেবল বাহ্যিক লক্ষণ নয়, এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ বিকৃতির বহিঃপ্রকাশ।

মূল সমস্যা সাধারণত মিয়াজম (Psora, Sycosis, Syphilis) থেকে উদ্ভূত।

বাহ্যিক প্রলেপ (মলম) ব্যবহার করলে রোগ দমন হয়, নির্মূল হয় না।

সত্যিকারের নিরাময়ের জন্য জীবনশক্তি (Vital Force) কে সুষমভাবে পরিচালনা করতে হবে।

২. অর্গানন অফ মেডিসিন অনুযায়ী বিশ্লেষণ : 

 এফোরিজম §5: রোগীর মানসিক, শারীরিক, পারিবারিক ইতিহাস সংগ্রহ করতে হবে।

এফোরিজম §6: রোগের “Totality of symptoms” নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

এফোরিজম §153:  সবচেয়ে স্বতন্ত্র ও লক্ষণপূর্ণ উপসর্গকে গুরুত্ব দিতে হবে।

এফোরিজম §203-204:  বাহ্যিক ওষুধ রোগ দমন করে, প্রকৃত নিরাময় আনে না।

এফোরিজম §205:  একসাথে দুটি ওষুধ নয়, একটিমাত্র উপযুক্ত রেমেডি প্রয়োগ করতে হবে।

অর্থাৎ অর্গানন মতে, চর্মরোগ কোনোভাবেই বাহ্যিক প্রলেপে সারানো উচিত নয়। এটি একটি ‘ইন্টারনাল কনফ্লিক্ট’ এর বহিঃপ্রকাশ।




৩. ক্রনিক ডিজিজ অনুযায়ী ব্যাখ্যা :

“ক্রনিক ডিজিজ” বই অনুসারে চর্মরোগ:

হ্যানেম্যান তাঁর "The Chronic Diseases: Their Nature and Cure" গ্রন্থে চর্মরোগকে Psoric Miasm-এর বাহ্যিক রূপ হিসেবে দেখেছেন।

Psora – মূল মিয়াজম:

দাদ, একজিমা, এলার্জি, খুসকি, চুলকানি ইত্যাদি চর্মরোগ মূলত সোরিক বিকৃতি।

বাহ্যিক উপশম বা মলম দিলে এই Psora আরও গভীরে গিয়ে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, বাত ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

Psora: খুশকি, চুলকানি, শুষ্কতা, স্ক্যাবি ইত্যাদি।

Sycosis: ভেজা ফুসকুড়ি, ওয়ার্ট, নিঃসরণযুক্ত একজিমা ইত্যাদি।

Syphilis: ঘা, ধ্বংসাত্মক চর্মরোগ, চামড়া উঠে যাওয়া ইত্যাদি।

বাহ্যিক চিকিৎসায় রোগ চাপা পড়ে গিয়ে গুরুতর অসুখ দেখা দেয় (যেমন: অ্যাজমা, আর্থ্রাইটিস)।


৪. হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ধাপ :

1. কেস টেকিং: রোগীর শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক ইতিহাস সংগ্রহ।

2. মিয়াজম বিশ্লেষণ: কোন মিয়াজম সক্রিয় তা নির্ধারণ।

3. রেমেডি নির্বাচন: সিমিলিমাম (সর্বাধিক উপযুক্ত ওষুধ) নির্ধারণ।

4. পটেন্সি ও রিপিটেশন: রোগীর শক্তি অনুযায়ী পটেন্সি নির্ধারণ।

5. পর্যবেক্ষণ: প্রতিক্রিয়া বুঝে প্রয়োজন অনুযায়ী পুনরায় প্রয়োগ।


৫. গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ (চর্মরোগে):

Sulphur: খুসকি, একজিমা, চুলকানি, পুরনো চর্মরোগ।

Graphites: আঠালো নিঃসরণযুক্ত একজিমা, ফাটাফাটি ত্বক।

Psorinum: গ্রীষ্মকালীন খুশকি, বারবার চর্মরোগে আক্রান্ত রোগী।

Mezereum: তীব্র চুলকানি ও ফুসকুড়ি।

Arsenicum Album: জ্বালাপোড়া সহকারে চর্মরোগ।

৬. উপসংহার

হোমিওপ্যাথিতে চর্মরোগকে একক লক্ষণ নয়, সম্পূর্ণ রোগীর বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হয়।

বাহ্যিক চিকিৎসা নয়, মায়াজম ভিওিক চিকিৎসা ও সঠিক কেস টেকিং এর মাধ্যমে রোগ নিরাময় সম্ভব।

Treat the patient, not the disease” — এই নীতিতেই প্রকৃত নিরাময় সম্ভব।

 

-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ
বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি, 
ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা    
প্রভাষক, 
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ। 

আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। 

>Share by:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন