যখন প্রদাহ কারী জীবাণু বা অন্য পদার্থ সম্পূর্ণ পরাজিত বা পর্যুদস্ত হয় তখনই ক্ষতস্থানের সংস্কারের কাজ আরম্ভ হয়।'কলার পচনের ফলে নষ্ট স্থান সৃষ্ট ফাঁক যখন গ্রানুলেশন কলা ও তন্ত্র দ্বারা পুরন হইয়া স্কার সৃষ্টি হয় তখন তাহাকে রিপেয়ারিং বলে। এই ক্ষেত্রে নূতনকলা পূর্বের কলা হইতে সম্পূর্ণ আলাদা।
কলাতে (Tissue) যে পরিবর্তন ঘটে ও প্রদাহ ক্ষরণ সৃষ্টি হয় তাহা যে পদ্ধতি দ্বারা অপসারিত হয় ও প্রদাহ দ্বারা সৃষ্ট কলার ফাঁক নূতন স্বাভাবিক কলা দ্বারা পুরন হয় তাহাকে হিলিং বলে।
১। কলার পচনের ফলে সৃষ্টি ফাঁক রিপেয়ার হয়।২ । রিপেয়ারে নূতন সৃষ্ট কলা পূর্বের 'কলা হইতে পৃথক।৩। ইহা গ্রানুলেশন কলা ও তন্ত্র প্রাচুর্য দ্বারা পূরণ হয়।৪। ইহাতে প্রধান বিষয় হইল স্কার সৃষ্টি হওয়া।৫। রিপেয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ।
১। নেক্রোসিসের ফলে সৃষ্ট ফাঁক হিলিং হয়।২। হিলিং এ নূতন সৃষ্ট কলা পূর্বের কলার সদৃশ।৩। ইহা স্বাভাবিক কলা দ্বারা পুরন হয়।৪। স্কার সৃষ্টি হওয়া ইহাতে প্রধান বিষয় নয়।৫। হিলিং প্রক্রিয়াটি জটিল।
১) ক্যাপিলারীর এনডোথেলিয়ামের সংখ্যা বৃদ্ধি।২) ফাইব্রোরাস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি।৩) কোষ বিভাজন দ্রুত।৪) কোলাজেনের তলানি পড়া।৫) কলার রিজেনারেশান।৬) রাসায়নিক পদ্ধতির পরিবর্তন।
১) প্রাথমিক ভাবে রক্ত জমাট বাঁধা।২) প্রদাহ।৩) ডিমোলিশান।৪) ক্ষতের সংকোচন।৫) গ্রানুলেশন জাতীয় কলা গঠন।৬) স্কার সংগঠন।
যথাঃ (১) প্রাথমিক হিলিং
(২) মাধ্যমিক হিলিং।
কোন প্রকার আঘাত বা প্রদাহের ফলে যেখানে ক্ষতের ফাঁক খুব সামান্য, পরিষ্কার ক্ষতের কিনারা সুস্পষ্ট, রক্তপাত খুব কম, ক্ষরণের পরিমানও অল্প ও প্রদাহহীন, সে ক্ষেত্রে ক্ষতের পাশ হইতে কোষ বৃদ্ধির ফলে ফাঁক পুরন হয়। এই পদ্ধতির নাম প্রাথমিক হিলিং।
যখন কোনো আঘাত, সংক্রমণ বা প্রদাহের কারণে কোষ নষ্ট হয়ে ক্ষত (wound) সৃষ্টি হয় এবং ক্ষতের প্রান্ত একত্রিত হয়ে সরাসরি পূরণ সম্ভব হয় না, তখন ক্ষতের নিচ থেকে গ্রানুলেশন টিস্যু (granulation tissue) গঠিত হয়ে ধীরে ধীরে ক্ষতস্থান পূরণ হয়। এই প্রক্রিয়াকে মাধ্যমিক হিলিং বলা হয়।
i) সংক্রমিত হওয়া।ii) কোলয়েড সৃষ্টি হওয়া।iii) সিকেট্রাইজেশন।iv) ফাটিয়া যাওয়ার আশংকা।v) পিগমেন্টেশন বা তদ্ভরন্জন হওয়া।
রিপেয়ার এবং ক্ষত নিরাময়ের
সদ্য আঘাতে প্রথম ওষুধ।ব্যথা, ফোলা ও অভ্যন্তরীণ রক্তপাত রোধে কার্যকর।রক্ত জমাট বাধা ও ব্রুইজ দূর করে দ্রুত হিলিংয়ে সহায়তা করে।মনে হয় যেন বিছানা শক্ত বা শরীর থেঁতলে গেছে।
কাটা-ছেঁড়া, পচে যাওয়া বা ইনফেকটেড ক্ষতের জন্য অত্যন্ত উপকারী।ক্ষতের উপরিভাগে প্রয়োগযোগ্য (টিংচার/লোশন) এবং অভ্যন্তরীণভাবে ব্যবহৃত হয়।পুঁজযুক্ত ক্ষতের নিরাময়ে গতি আনে ও ইনফেকশন প্রতিরোধ করে।
স্নায়ু সংবেদী আঘাত বা কাটা ক্ষতের জন্য।আঘাতস্থানে টান, তীব্র যন্ত্রণা বা অবশভাব অনুভব হলে এটি উপকারী।বিশেষ করে আঙুল, নখ, মেরুদণ্ড ও স্নায়ু যুক্ত স্থান।
অস্ত্রোপচারের পর বা গভীর কাটায় ক্ষতের জন্য।ক্ষতের প্রান্তে জ্বালা, টান বা চুলকানি থাকলে ব্যবহৃত হয়।বিশেষ করে যখন ক্ষতটিতে ব্যথার চেয়ে ‘খচখচে’ অনুভূতি বেশি হয়।
হাড় ভাঙা বা গভীর আঘাত পরবর্তী ক্ষত নিরাময়ের জন্য।হাড় ও নরম টিস্যুর পুনর্গঠনে সাহায্য করে।Arnica পরে ব্যবহার করলে কার্যকরতা বাড়ে।
পুরাতন ক্ষত, পুঁজ তৈরি ও স্লো হিলিং হলে ব্যবহৃত হয়।শরীর থেকে ফোঁড়া বা পুঁজ বের করে দেয়।রোগীর যদি শরীর দুর্বল ও ঠান্ডা প্রকৃতির হয়, এটি বিশেষ উপকারী।
সংক্রমিত ক্ষত বা পুঁজ পড়া শুরু হয়েছে এমন ক্ষেত্রে কার্যকর।ব্যথা, ফোলা ও ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়ক।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাদ্য (বিশেষ করে প্রোটিন, ভিটামিন C, জিঙ্ক) গ্রহণ।
ক্ষত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
প্রয়োজনে হোমিওপ্যাথিক অ্যান্টিসেপ্টিক ব্যবহার।
অস্ত্রোপচারের পর মূল ওষুধ।ক্ষতস্থানে খচখচে বা চাপধরনের ব্যথা থাকে।দাগ দীর্ঘদিন স্থায়ী হওয়ার প্রবণতা থাকলে উপকারী।
ইনফেকশন প্রতিরোধে কার্যকর।ক্ষত দ্রুত শুকাতে ও দাগ কমাতে সহায়তা করে।বাহ্যিকভাবে টিংচার হিসেবে ব্যবহার করলে উপকার বেশি।
অস্ত্রোপচারের পরের ব্যথা, রক্তপাত বা ফোলার জন্য।
শরীর যেন থেঁতলে গেছে এমন অনুভূতি থাকলে।
স্নায়ুতে কাটা বা টান লাগা থাকলে।
বিশেষ করে মেরুদণ্ড বা স্নায়ুসম্পৃক্ত স্থানে সার্জারি হলে উপকারী।
পুঁজযুক্ত পুরনো ক্ষত।ক্ষত থেকে ফোঁড়া বা বিদেশী বস্তু বের করার ক্ষমতা রাখে।ধীরগতির হিলিং-এ বিশেষ কার্যকর।
ঘন হলুদ পুঁজ পড়ে এমন ক্ষত।ক্ষত নিরাময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে সহায়ক।
ক্ষতস্থানে আঠালো রস বা নিঃসরণ থাকলে।
মোটা ত্বক, গাঢ় রঙের ক্ষতচিহ্নসহ ধীরে নিরাময় হলে।
দীর্ঘস্থায়ী, বারবার ফিরে আসা ক্ষত।
ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
ক্ষত সহজে শুকায় না বা সংক্রমিত হয়ে যায়।
রক্ত সঞ্চালন কম থাকায় নিরাময় ধীরগতির হয়।
মাঝে মাঝে গ্যাংগ্রিনের ঝুঁকিও দেখা দেয়।
ক্ষত দ্রুত নিরাময়ে সহায়ক ও ইনফেকশন রোধে কার্যকর।
বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণভাবে দেওয়া হয়।
ক্ষতস্থানে পুঁজ, দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত বা টিস্যু গলে যাওয়া লক্ষণে উপকারী।
সংক্রমিত ক্ষত, যেখানে স্পর্শে তীব্র ব্যথা হয়।
গ্যাংগ্রিনের পূর্বাভাস থাকলে ব্যবহৃত হয়।
ক্ষত থেকে দুর্গন্ধ বের হলে, পোড়া পোড়া ব্যথা থাকলে।
দুর্বলতা, অনিদ্রা ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত রোগীদের জন্য উপযোগী।
ডায়াবেটিস জনিত দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত, যেখানে সাধারণ চিকিৎসায় ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
ত্বক: ত্বকের যে কোন ক্ষত অতি সহজেই মাটি, ময়লা, দুষিত বাতাস বা জীবাণু বাহী কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে আসিলে ত্বকের ক্ষতে জীবাণুর উপস্থিতি ঘটিতে পারে।
শ্বাস প্রশ্বাস: ভাইরাস জনিত পীড়ায় রোগ জীবাণু হাঁচি, কাশি প্রভৃতির দ্বারা ছড়াইতে পারে, ধুলিকনার সাহায্যে বাতাসের দ্বারা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে সুস্থ দেহে প্রবেশ করে এবং রোগের সংক্রমন ঘটে।
জীবাণু দ্বারা দুষিত খাদ্য ও পানিয়: রোগবাহী কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে বা মাছি দ্বারা খাদ্য দূষিত হইতে পারে। দূষিত খাদ্য ও পানীয় গ্রহনের ফলে রোগ- জীবানু সংক্রমিত হয়।
ত্বকের ছিদ্র দ্বারা: কীটপতঙ্গ দংশনের ফলে, সংক্রামিত সিরিঞ্জ দ্বারা সূঁচ প্রয়োগের ফলে অর্থাৎ ত্বকের ছিদ্র মাধ্যমেও নানা প্রকারে রোগ জীবাণু বিস্তার লাভকরে।
জীবাণু সংক্রমন (Infection)হো
মিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও মেডিসিন।
সংক্রমণের শুরুতে ব্যবহৃত হয়হঠাৎ করে উচ্চ জ্বর, মুখ লাল, চোখ লাল, স্পর্শে অতিসংবেদনশীলগলা ব্যথা বা টনসিল সংক্রমণে ভালো কাজ করে
সংক্রমণ যদি হঠাৎ ঠান্ডা বা ভয় পাওয়ার পর শুরু হয়উদ্বিগ্নতা, ঘন ঘন নাড়ি, শুকনো তৃষ্ণা সহ জ্বর
খাদ্যে বিষক্রিয়াজনিত সংক্রমণপাতলা পায়খানা, বমি, দুর্বলতা, ঠান্ডা লাগা, অনিরাপত্তা বোধ
ফোঁড়া বা পুঁজযুক্ত সংক্রমণব্যথা খুব তীব্র, একটু ঠান্ডা হাওয়াতেও কষ্টঘাম বেশি, পচা গোশতের গন্ধ
টনসিল, দাঁতের সংক্রমণ বা মাড়ির পুঁজলালা বেশি পড়ে, মুখে দুর্গন্ধরাতের বেলায় উপসর্গ বাড়ে
রক্ত সংক্রমণ বা সেপসিসে সহায়করোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
জীবাণুজনিত জ্বর, যদি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন মনে হয়দেহে পুঁজ, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব বা ঘা
টক্সিমিয়া (Toxemia) হলো এমন একটি অবস্থায়, যেখানে জীবিত ব্যাকটেরিয়া শরীরের কোনো নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে টক্সিন বা অন্তবিষ (Exotoxin) উৎপন্ন করে, এবং সেই বিষ রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন টিস্যু ও অঙ্গে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, যদিও জীবাণু নিজে রক্তে উপস্থিত থাকে না।
টক্সিমিয়া সাধারণত তখন ঘটে, যখন কোনো ব্যাকটেরিয়া শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে সংক্রমণ ঘটায় এবং সেখান থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ (toxins) নিঃসরণ করে। এই বিষ রক্তস্রোতে প্রবেশ করে শরীরের দূরবর্তী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পৌঁছে নানা রোগ-লক্ষণ তৈরি করে। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, রক্তে জীবাণু উপস্থিত না থাকলেও তাদের উৎপাদিত বিষ রক্তে বিদ্যমান থাকে।
টিটেনাস (Tetanus) রোগে Clostridium tetani নামক ব্যাকটেরিয়া ক্ষতস্থানে অবস্থান করে tetanospasmin নামক শক্তিশালী টক্সিন নিঃসরণ করে। এই টক্সিন রক্তের মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রে পৌঁছে টিটেনাস টক্সিমিয়া সৃষ্টি করে, যদিও জীবাণু নিজে রক্তে থাকে না।
উচ্চ জ্বরমাথা ব্যথাক্লান্তি ও দুর্বলতাঅজ্ঞানতা বা ঘোর ভাবপেশিতে ব্যথা বা খিচুনিস্নায়বিক বা মানসিক পরিবর্তনবমি বমি ভাব বা বমি
মৃতজ বা পচা জীবাণু থেকে তৈরি ওষুধরক্তে বিষক্রিয়া হলে, সেপটিক অবস্থায়উচ্চ জ্বর, কাঁপুনি ও দুর্ভেদ্য দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম
টাইফয়েড জাতীয় টক্সিমিয়ারোগী বিভ্রান্ত থাকে, নিজের শরীর ছড়িয়ে আছে মনে হয়মুখে দুর্গন্ধ ও কালচে লাল জিহ্বা
বিষক্রিয়াজনিত দুর্বলতা, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তাপাতলা, দুর্গন্ধযুক্ত, আগুন জ্বালানো প্রকৃতির ডায়রিয়ারোগী বারবার পানি চায়, কিন্তু অল্প অল্প করে খায়
রক্তে সংক্রমণ ও বিষক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণফোড়া, ইনফেকশন বা বিষক্রিয়া সংক্রান্ত লক্ষণেরোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক
গা গরম অথচ চাদর সহ্য করতে না পারাবাম পাশে বেশি সমস্যা, বিষক্রিয়া বা পচন জাতীয় রোগেস্নায়বিক উত্তেজনা ও বিষাক্ত উপসর্গ
রোগের পরবর্তী সময়ে যখন বিষক্রিয়া শরীরে জমে থাকেত্বকে সমস্যা, তীব্র জ্বালাভাব, গরম সহ্য করতে না পারা
লক্ষণানুসারে ঔষধ নির্বাচন (Individualization),রোগীর সম্পূর্ণ মানসিক ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায়,মিনিমাম ডোজ এবং সিমিলিমাম সূত্র অনুসরণ করে চিকিৎসা প্রদান,
সেপটিসেমিয়া (Septicemia) বা রক্তদূষণ হলো এমন একটি রোগাবস্থা, যেখানে জীবাণু বা তার উৎপন্ন টক্সিনসমূহ রক্তে প্রবেশ করে রক্তকে বিষাক্ত করে তোলে এবং সারা দেহে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় জীবাণু রক্তে বংশবিস্তার করে এবং শরীরের অনাক্রম্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দেয়।
সেপটিসেমিয়া সাধারণত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়। উল্লেখযোগ্য জীবাণুগুলো হলো:স্ট্রেপটোকক্কাস (Streptococcus)স্ট্যাফাইলোকক্কাস (Staphylococcus)ই. কোলাই (E. coli)ক্লেপসিয়েলা, পসিউডোমোনাস প্রভৃতি গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া।
উচ্চমাত্রার জ্বর, কম্পনসহচরম দুর্বলতা ও শারীরিক অসুস্থতামাথাব্যথা ও বমি বমি ভাবদ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দনরক্তচাপ হ্রাসবিভ্রান্তি বা অচেতনতাজিহ্বা শুষ্ক হওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়াপেট ফাঁপা এবং ত্বকে দাগ বা পেটিকিয়া
যথা: ১। মৃদু সেপ্টিসিমিয়া
২। স্যাপ্রিমিয়া
৩। প্রোগ্রেসিভ সেপ্টিসিমিয়া।
একজন রোগীর পায়ের ক্ষত দীর্ঘদিন ধরে পচন ধরেছিল। সময়মতো চিকিৎসা না করায় সেই পচন থেকে জীবাণু রক্তে প্রবেশ করে। কয়েকদিন পর রোগী জ্বরে আক্রান্ত হয়, শরীর কাঁপতে থাকে, শ্বাসকষ্ট হয়, বিভ্রান্তি দেখা দেয় এবং চেতনা হারিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে পরীক্ষা করে দেখা যায়, তার রক্তে স্ট্যাফাইলোকক্কাস জীবাণু রয়েছে — এটি একটি সেপটিসেমিয়ার উদাহরণ।
সেপটিসেমিয়া একটি গুরুতর ও প্রাণঘাতী সংক্রামক অবস্থা। হোমিওপ্যাথিতে রোগীর শারীরিক লক্ষণ, মানসিক অবস্থা ও সামগ্রিক প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে ওষুধ নির্বাচন করা হয়। তীব্র অবস্থায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার পাশাপাশি আধুনিক চিকিৎসা নেওয়াও জরুরি হতে পারে।
এটি সেপটিসেমিয়ার প্রধান ঔষধ।পচা মাংসের গন্ধযুক্ত ঘাম বা নিঃসরণ থাকলেউচ্চ জ্বর, কম্প, দুর্বলতা, বিভ্রান্তিশরীরে ব্যথা, পালস ও তাপমাত্রার অমিল
প্রচণ্ড দুর্বলতা, উদ্বেগ, বিশ্রামহীনতাঘন ঘন ঠান্ডা ও গরম লাগাশরীর থেকে দুর্গন্ধযুক্ত নিঃসরণ
রক্তের বিষক্রিয়ায় উপযুক্তগলার আশেপাশে অস্বস্তি, গলায় ঢোক গিলতে কষ্টরোগী কথা বলতে চায়, উত্তেজিত প্রকৃতি
সেপটিক অবস্থায় যেসব রোগী ঘোরের মধ্যে থাকেমুখে দুর্গন্ধ, জিহ্বা বাদামী, শরীর ভারী মনে হয়
সেপটিক শকে ব্যবহার হয়ঠান্ডা, শুকনো ত্বক, অথচ রোগী ঠান্ডা চায়
শ্বাসকষ্ট, চেতনা হ্রাস, ঠান্ডা শরীররক্তচাপ একেবারে কমে গেলে বা ধকলজনিত অবস্থা
সাপুরেশন (Suppuration) হলো একটি প্রদাহজনিত প্রক্রিয়া, যার ফলে আক্রান্ত স্থানে জীবাণুর সংক্রমণে বিপুল পরিমাণ শ্বেত রক্তকণিকা (Leukocytes) জমা হয়ে মৃত কোষ, জীবিত ও মৃত ব্যাকটেরিয়া এবং সজ্জারস (exudate)-সহ এক ধরনের ঘন, সাদা, হলদেটে বা সবুজাভ তরল পদার্থ গঠিত হয়, যাকে পূজ বা পুঁজ বলা হয়।
Staphylococcus aureusStreptococcus pyogenesNeisseria gonorrhoeaeNeisseria meningitidis
একজন রোগীর হাতে কাটা ঘা-তে জীবাণু সংক্রমণ হলে প্রথমে সেখানে লালচে ফোলাভাব ও ব্যথা দেখা দেয়। কয়েকদিন পর সেই স্থানে হলদেটে সাদা ঘন তরল পদার্থ (পুঁজ) জমা হতে থাকে। পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেখানে Staphylococcus aureus জীবাণুর উপস্থিতি রয়েছে। এই অবস্থাটি সাপুরেশনের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ, যেখানে জীবাণুর আক্রমণে শ্বেত কণিকার উপস্থিতি, টিসু ধ্বংস ও তরলীকরণের মাধ্যমে পুঁজ সৃষ্টি হয়েছে।
সাপুরেশনের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা রোগীর লক্ষণ, পুঁজের প্রকৃতি, অবস্থান, ব্যথার ধরণ, সময় অনুযায়ী বৃদ্ধি বা উপশম ইত্যাদি বিবেচনায় নির্ধারিত হয়। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ আলোচনা করা হলো যেগুলো সাপুরেশন বা পুঁজ গঠন ও নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়:
এটি সাপুরেশনের প্রধান ওষুধ।পুঁজ ফাটার আগেই অত্যন্ত সংবেদনশীলতা ও তীব্র ব্যথা থাকে।সামান্য ঠান্ডা লাগলেও ব্যথা বাড়ে।রোগী চাদর মুড়ি দিয়ে গরম থাকতে চায়।ফোঁড়া বা ঘায়ে পুঁজ হওয়ার আগেই প্রয়োগ করলে দ্রুত উপশম হয়।
পুঁজকে পরিপক্ব করে নিষ্কাশনে সহায়তা করে।পুঁজ তৈরি হয় কিন্তু বের হয় না—এমন ক্ষেত্রে কার্যকর।দীর্ঘস্থায়ী ফোঁড়া, অ্যাবসেস বা ফিস্টুলাতে কার্যকর।ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না।
ফোঁড়ায় প্রচণ্ড ব্যথা ও পুঁজের গন্ধযুক্ত নিঃসরণ।মুখে লালা জমে, জিহ্বায় ছাপ পড়ে, গন্ধযুক্ত ঘাম হয়।ইনফ্লেমেশন থেকে পুঁজ হওয়ার মাঝামাঝি সময় ব্যবহার উপযোগী।
হলদে ঘন ও ঘনঘনে পুঁজ হলে ভালো কাজ করে।ফোঁড়া ফেটে গেলেও দীর্ঘদিন পুঁজ পড়তে থাকলে এটি প্রয়োগ হয়।
ফোঁড়াকে খুব দ্রুত পেকে ফাটাতে সাহায্য করে।এটি "homeopathic knife" নামে পরিচিত।গভীর ফোঁড়া বা অ্যাবসেসে খুব ভালো কাজ করে।
পুঁজ জমে ফুলে ওঠা, যেখানে ব্যথা বাঁ দিক থেকে ডান দিকে যায়।ঘা ফেটে গেলে আরাম পাওয়া যায়।
আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার রাখা।প্রয়োজনে গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে।অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণে ধৌত করা।পুঁজ জমে ব্যথা বেশি হলে ফোঁড়া ফাটাতে হতে পারে (Surgical drainage) – তবে হোমিওপ্যাথিতে তা অনেক সময় এড়ানো সম্ভব।
এবসেস বা ফোঁড়া হলো শরীরের কোনো কঠিন বা গভীর টিস্যুতে জীবাণুজনিত প্রদাহের ফলে শ্বেত রক্তকণিকা, মৃত কোষ, জীবাণু এবং কোষ নিঃসৃত তরল পদার্থ দ্বারা পূর্ণ এক ধরনের পুঁজপূর্ণ গহ্বর। এটি একটি স্থানীয় সংক্রমণজনিত পুঁজ সঞ্চয়ের অবস্থা।
১. প্রদাহজনিত কারণে জীবাণু সংক্রমণের ফলে আক্রান্ত স্থানে বিপুল পরিমাণ শ্বেত রক্তকণিকা (WBC) জমা হয়।
২. এই শ্বেত কণিকা, মৃত ও জীবিত জীবাণু, কোষের অবশেষ এবং রস নিঃসরণ মিলে পুঁজ গঠিত হয়।
৩. সাধারণত, -স্ট্যাফাইলোকক্কাস (Staphylococcus),স্ট্রেপটোকক্কাস (Streptococcus),গনোকক্কাস (Gonococcus)প্রভৃতি পায়োজেনিক জীবাণুর আক্রমণে এবসেস তৈরি হয়।
পায়োজেনিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট এবসেস।অধিকাংশ সাধারণ ফোঁড়া এই শ্রেণীতে পড়ে।
সংক্রমিত পুঁজ রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে একাধিক এবসেস তৈরি করে।এটি সেপসিস বা পাইইমিয়া অবস্থায় দেখা যায়।
টিউবারকুলার জীবাণু (Mycobacterium tuberculosis) দ্বারা সৃষ্ট এবসেস।সাধারণ এবসেসের মত তাপ, লালভাব বা তীব্র ব্যথা থাকে না বলে একে “কোল্ড এবসেস” বলা হয়।
পূর্ববর্তী সংক্রমণ বা ফোঁড়ার অপর্যাপ্ত চিকিৎসার ফলে অবশিষ্ট টিস্যুতে পুনরায় সংক্রমণজনিত এবসেস সৃষ্টি হতে পারে।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ,পুঁজ গঠনের প্রক্রিয়া দ্রুত করা (if needed),ফোঁড়া পরিপক্ব হলে তা ভেঙে পুঁজ নিঃসরণে সহায়তা করা,এবং পরবর্তীতে টিস্যু রিপেয়ার ও রিকারেন্স প্রতিরোধ করা।
ফোঁড়া যদি অত্যন্ত স্পর্শকাতর, ব্যথাযুক্ত ও ঠান্ডা বাতাসে সংবেদনশীল হয়।পুঁজ গঠনের পূর্বেই ফোঁড়া ফেটে যায় এমন প্রবণতা।ফোঁড়া দ্রুত পেকে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে খুব কার্যকর।ব্যথা সুঁচ ফোটার মতো, এবং উষ্ণ প্রয়োগে আরাম লাগে।
ফোঁড়া প্রাথমিক স্তরে যখন লালচে, গরম ও স্পর্শে ব্যথাযুক্ত হয়।হঠাৎ আরম্ভ হওয়া প্রদাহ এবং ধমনীসদৃশ স্পন্দন থাকলে এটি উপকারী।
পরিপক্ব ফোঁড়া যেটি সহজে ফাটছে না, অথবা বারবার হয়ে যাচ্ছে।পুঁজ বের করে দেওয়ার জন্য উপযুক্ত।দীর্ঘস্থায়ী বা পুরনো এবসেসে অত্যন্ত কার্যকর।
যখন এবসেস থেকে পুঁজ নিঃসরণ হয় এবং দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব থাকে।রাতে ঘেমে যাওয়া, মুখে লালা পড়া—এই লক্ষণ থাকলে উপযুক্ত।
"Homeopathic knife" বলা হয় একে।ফোঁড়া দ্রুত পাকিয়ে ফাটিয়ে পুঁজ বের করতে কার্যকর।শুরুতেই প্রয়োগ করলে অপারেশনের দরকার হয় না অনেক সময়।
ফোঁড়া বাঁদিকে হলে, স্পর্শ সহ্য করতে না পারলে।পুরাতন বা বেগুনী রঙের এবসেসের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
যদি এবসেস ফেটে গিয়ে পুঁজ বের হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে নির্গমন চলতে থাকে।Yellow, thick, creamy pus—এর ক্ষেত্রে উপকারী।
লোম ফোঁড়া (Boil বা Furuncle) হলো ত্বকের লোমকূপ ও তার আশেপাশের টিস্যুতে স্ট্যাফাইলোকক্কাল ইনফেকশনের কারণে সৃষ্ট একটি পুঁজপূর্ণ প্রদাহযুক্ত ফোঁড়া।
লোম ফোঁড়া সাধারণত Staphylococcus aureus ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। ব্যাকটেরিয়া লোমকূপে প্রবেশ করে Folliculitis সৃষ্টি করে, যা পরে গভীরতর প্রদাহে রূপ নিয়ে ফারাঙ্কল (Furuncle) সৃষ্টি করে। একাধিক ফারাঙ্কল একত্রে হলে কারবাঙ্কল (Carbuncle) গঠিত হতে পারে।
রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে, যেমন ডায়াবেটিস মেলিটাস বা অপুষ্টিতে, এই ধরনের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
আক্রান্ত স্থানে ব্যথাযুক্ত, লাল, ফোলা ও উষ্ণ প্রদাহফোঁড়ার কেন্দ্রে পুঁজ সৃষ্টির প্রবণতামাঝে মাঝে একাধিক পুঁজপূর্ণ ছিদ্র দেখা যায়ফোঁড়া ফেটে গেলে পুঁজ নির্গত হয় এবং উপশম ঘটেশরীরের ঘাড়, মুখ, পশ্চাৎদেশ বা উরুতে বেশি দেখা যায়জ্বর ও লিম্ফনোড ফুলে যাওয়ার মতো সাধারণ উপসর্গও থাকতে পারে
ফোঁড়ার মধ্যে প্রচণ্ড ব্যথা এবং সংবেদনশীলতাসামান্য ঠাণ্ডা বা বাতাসে ব্যথা বেড়ে যায়পুঁজ দ্রুত বের করতে সাহায্য করেফোঁড়া ফুটে যাওয়ার পূর্বাবস্থায় খুব কার্যকর
বারবার ফোঁড়া হওয়া (Recurrent Boils)শরীর পুঁজ বের করতে অক্ষম হলেদীর্ঘস্থায়ী বা গভীর ফোঁড়ার জন্যপুঁজ বের করে আনার জন্য উপযোগী
ফোঁড়া শুরুর অবস্থায়, যখন লালচে, গরম ও ফুলে থাকেস্পর্শ করলে ব্যথা হয়জ্বর থাকলে এই ওষুধ উপকারী
রাতের বেলা ফোঁড়ার ব্যথা বেড়ে যায়অতিরিক্ত ঘাম ও মুখে দুর্গন্ধপুঁজযুক্ত ও সান্দ্র নির্গমন
ফোঁড়া বারবার ফিরে আসেব্যথা জ্বালাপোড়া জাতীয়রোগী খুব দুর্বল ও উদ্বিগ্ন
প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে খ্যাতফোঁড়া ফুটে যাওয়ার সময় ও পরবর্তী ইনফেকশন ঠেকাতে কার্যকরঅপারেশন এড়াতে ব্যবহার করা হয় অনেক ক্ষেত্রে।
আক্রান্ত জায়গা পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখুনফোঁড়ায় হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুনপুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুনবারবার হলে ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো অভ্যন্তরীণ সমস্যার খোঁজ করুন।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগীর লক্ষণভিত্তিক ও ব্যক্তিগত প্রবণতা অনুযায়ী ওষুধ নির্বাচন করা হয়। লিম্ফেঞ্জাইটিসে প্রদাহ, ব্যথা, জ্বর এবং লসিকাগ্রন্থির ফোলাভাব প্রধান লক্ষণ। নিচে কিছু কার্যকর হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দেওয়া হলো:
তীব্র প্রদাহ, রক্তিমভাব, তাপ ও স্পর্শে ব্যথাযুক্ত অবস্থায় উপকারী।আরম্ভে ব্যবহার করা হয়, যখন রোগ দ্রুত শুরু হয়।
ফোলা ও অর্শুভাবপূর্ণ লসিকাগ্রন্থি।জ্বালাপোড়া ও চিমটি ধরা মতো অনুভূতি থাকে।ঠান্ডা জিনিসে উপশম হয়।
পুঁজ সৃষ্টি হওয়ার প্রবণতা থাকলে কার্যকর।ঘেমে যাওয়ার প্রবণতা এবং দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম থাকলে ব্যবহার হয়।
দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক ইনফেকশনে এবং পুঁজ বের করার জন্য উপকারী।শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
যদি ইনফেকশন পুঁজে রূপান্তরিত হওয়ার উপক্রম হয় বা হয়ে থাকে।খুব সংবেদনশীল এবং ঠান্ডায় অবনতি ঘটে।
বাম পাশের লসিকানালি আক্রান্ত হলে এবং স্পর্শ সহ্য করতে না পারলে।দাগ বা রেখা উঠলে এবং অবস্থা ক্রমে খারাপ হলে প্রযোজ্য।
দাহ ও জ্বালার সাথে দুর্বলতা ও উদ্বেগ থাকলে কার্যকর।রোগী সাধারণত অস্থির এবং ঠান্ডায় আরাম পায় না।
শরীরের কোনো সংক্রমিত বা বিষদূষিত স্থানের ড্রেনেজ অঞ্চলের লসিকাগ্রন্থির প্রদাহকে লিম্ফ্যাডেনাইটিস (Lymphadenitis) বলে।
লিম্ফ্যাডেনাইটিস প্রধানত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ দ্বারা সৃষ্টি হয়।সাধারণত Streptococcus এবং Staphylococcus প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া এর জন্য দায়ী।সংক্রমিত স্থান হইতে জীবাণু লসিকানালী পথে লসিকাগ্রন্থিতে পৌঁছে প্রদাহ সৃষ্টি করে।প্রদাহের ফলে গ্রন্থিগুলো স্ফীত, স্পর্শে বেদনাদায়ক এবং লালচে হয়ে যায়। কখনও কখনও গ্রন্থির মধ্যে পুঁজ সঞ্চিত হয়ে অ্যাবসেস (abscess) গঠন করে।
১. তরুণ (Acute) লিম্ফ্যাডেনাইটিস – হঠাৎ আরম্ভ হয় এবং তীব্র উপসর্গ দেখা যায়।
২. পুরাতন (Chronic) লিম্ফ্যাডেনাইটিস – দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ, যা সাধারণত টিউবারকুলার সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে।
হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা ব্যক্তিকেন্দ্রিক, তাই রোগীর উপসর্গ, প্রকৃতি, মেন্টাল অবস্থা এবং ইতিহাস অনুযায়ী ওষুধ নির্বাচন করা হয়। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ আছে যেগুলি লিম্ফ্যাডেনাইটিসে প্রাথমিকভাবে বিবেচনায় আনা হয়।
যদি প্রদাহ তীব্র হয়, গ্রন্থি লাল, গরম, ফুলে থাকে এবং স্পর্শে অত্যন্ত ব্যথা হয়।আরম্ভকালীন (acute) অবস্থায় ভালো কাজ করে।
যখন গ্রন্থি পেকে পুঁজ জমেছে বা পুঁজ হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।ঠান্ডায় সংবেদনশীল, সামান্য বাতাসেও কাঁপুনি লাগে।অ্যাবসেস বা ফোঁড়ার ক্ষেত্রে খুব উপকারী।
গ্রন্থি ফুলে ব্যথা করছে এবং মুখে অতিরিক্ত লালা ঝরছে, জিহ্বায় দাগ, ঘাম বেশি—এই লক্ষণগুলো থাকলে ব্যবহার হয়।রাতের সময় উপসর্গ বেড়ে যায়।
দীর্ঘস্থায়ী (chronic) লিম্ফ্যাডেনাইটিসে, বিশেষ করে যখন পুঁজ সহজে নির্গত হচ্ছে না।শরীর দুর্বল, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, ঘন ঘন সংক্রমণ হয়।
পুঁজ নির্গমনে সহায়তা করে।
শিশু বা স্থূল দেহের রোগীদের ক্ষেত্রে, যারা ঠান্ডা সহজে ধরে এবং ঘাড়ের চারপাশে গ্রন্থি ফুলে থাকে।মানসিকভাবে ভয়, দুশ্চিন্তা বেশি থাকে।
বারবার লসিকাগ্রন্থি ফুলে যায় বা টিউবারকুলার ইতিহাস থাকলে ব্যবহৃত হয়।দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল কেসে মায়াজমেটিক রেমেডি হিসেবে কার্যকর।
ডানদিকে গ্রন্থি ফুললে, অথবা যদি রোগ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।গ্যাস্ট্রিক সমস্যা ও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির সঙ্গে থাকলে ভালো কাজ করে।
Case taking খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র ফিজিকাল লক্ষণ নয়, রোগীর মেন্টাল অবস্থা, অতীত ইতিহাস, পারিবারিক রোগপ্রবণতা সব বিবেচনায় নিয়ে ওষুধ নির্বাচন করতে হবে।
নোট:১. প্রদাহযুক্ত স্থানটি লালচে, উঁচু এবং স্পষ্ট সীমানাযুক্ত হয়। স্থানটি উষ্ণ, ফুলে ওঠা ও স্পর্শে ব্যথাযুক্ত হয়।২. আক্রান্ত স্থানে টান ধরার মতো ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হয়।৩. হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার জ্বর, কাঁপুনি, মাথাব্যথা, গা-ব্যথা ইত্যাদি সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়।৪. নিকটবর্তী লিম্ফ গ্ল্যান্ড ফুলে যেতে পারে (lymphadenopathy)।৫. জ্বরের তীব্রতা বাড়লে বমি, প্রলাপ বা স্নায়বিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে।৬. জটিলতায় পুঁজ জমা (abscess), সেপসিস, এন্ডোকার্ডাইটিস, নিউমোনিয়া, অথবা গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস দেখা দিতে পারে।
এই রোগের দ্রুত চিকিৎসা না করলে টক্সিমিয়া ও অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে যা প্রাণঘাতী হতে পারে।
i) ব্রেণের উপরের আবরণ ও মেনিনজেস আক্রান্ত হইতে পারে।
ii) হৃদপিণ্ড আক্রান্ত হইতে পারে ও এন্ডোকার্ডাইটিস হইতে পারে।
iii) প্রচণ্ড টক্সিমিয়া দেখা দিতে পারে, রক্তে শ্বেত কনিকা বৃদ্ধি পায়।
iv) ফুসফুস আক্রান্ত হইতে পারে।
v) কিডনী প্রদাহ হইতে পারে, প্রস্রাব কমিয়া যায় বা প্রস্রাব বন্ধ হইয়া যাইতে পারে।
ইরিসিপেলাসের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা রোগীর লক্ষণ, অবস্থার প্রকৃতি ও মানসিক-শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়। নিচে ইরিসিপেলাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ও তাদের প্রয়োগ সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
প্রথম পর্যায়ে, তীব্র লালভাব, গরম অনুভব, ফুলে ওঠা, স্পর্শে ব্যথা ও জ্বালা ভাব থাকলে।জ্বর থাকলেও মাথা গরম, চোখ লাল, ঘুমের মধ্যে প্রলাপ—এগুলো থাকলে উপযুক্ত।
আক্রান্ত অংশটি ফুলে ওঠে, জ্বালাপোড়া করে এবং স্পর্শে ব্যথা হয়।ঠান্ডা জিনিসে আরাম, গরমে কষ্ট।চোখের আশেপাশে বা মুখমণ্ডলে ইরিসিপেলাস হলে বিশেষ কার্যকর।
প্রদাহের সাথে চুলকানি ও ফুসকুড়ি থাকে।গরম জলে বা সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়।বৃষ্টি বা ঠান্ডা আবহাওয়ার পর এই রোগ দেখা দিলে উপযুক্ত।
ত্বকে পুঁজ জমার প্রবণতা, জ্বালা ও জ্বালাপোড়া যদি প্রধান লক্ষণ হয়।ফোস্কার মতো উপসর্গ দেখা দিলে উপকারী।
যদি ঘন ঘন পুনরাবৃত্তি হয় এবং ত্বকে পুঁজ বা পিচ্ছিল স্রাব দেখা দেয়।চর্মরোগের ইতিহাস থাকলে বা ত্বকে পুরুত্ব ও শুষ্কতা থাকলে উপযুক্ত।
বাম দিক থেকে ডান দিকে রোগ বিস্তার হলে।ছোঁয়া সহ্য করতে পারে না, ঘন ঘন কথা বলে, তীব্র উপসর্গে উপকারী।
রোগ বারবার ফিরে এলে বা দীর্ঘমেয়াদী ইরিসিপেলাস হলে।আগের চিকিৎসা কাজ না করলে বা কনস্টিটিউশনাল চিকিৎসায় বিবেচ্য।
সংজ্ঞা:
1. অ্যাকিউট বা তরুণ আলসার:
2. ইনফ্ল্যামেটরি (প্রদাহজনিত) আলসার: প্রদাহযুক্ত, লাল এবং ব্যথাযুক্ত।
3. স্প্রেডিং আলসার: চারদিকে বিস্তার লাভ করে, কিন্তু সারে না।
4. গ্যাংগ্রিনাস বা পচনশীল আলসার: সংক্রমণ ও পচনের জন্য মারাত্মক ব্যথা হয়।
5. স্লাফিং আলসার: গভীর ক্ষতযুক্ত, সাধারণত সিফিলিস বা ধাতব বিষক্রিয়ায় হয়।
6. ক্রনিক (পুরাতন) আলসার: দীর্ঘদিন স্থায়ী ক্ষত, বারবার রিল্যাপ্স করে।
7. ভেরিকোজ আলসার: শিরার চাপজনিত কারণে সৃষ্ট, সাধারণত পায়ের নিচের অংশে হয়।
8. ফিস্টুলাস আলসার: দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত যা নালির মত গহ্বর তৈরি করে।
9. গ্যাস্ট্রিক আলসার: পাকস্থলীতে অবস্থান করে, খাদ্য গ্রহণে ব্যথা বৃদ্ধি পায়।
10. ডিওডেনাল আলসার: ক্ষুদ্রান্ত্রের ডিওডেনামে সৃষ্ট হয়, উপবাসে ব্যথা বাড়ে।
কারণসমূহ:
1. আঘাতজনিত: ছুরি-কাঁচি, পেরেক, কাঁচ বা যন্ত্রপাতির দ্বারা আঘাত পেলে ক্ষত হতে পারে।
2. সংক্রমণজনিত: ব্যাকটেরিয়া (যেমন: Mycobacterium tuberculosis), ভাইরাস বা ছত্রাক দ্বারা সংক্রমণ হলে ক্ষত সৃষ্টি হয়।
3. রক্ত সঞ্চালনের অভাব: বিশেষ করে ভেরিকোজ ভেইন বা ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে।
4. রাসায়নিক বা বিষক্রিয়া: পারদ, আর্সেনিক ইত্যাদি ধাতব বিষক্রিয়ায়।
5. পর্যাপ্ত ড্রেসিং না হওয়া: অপারেশনের পর সঠিকভাবে ক্ষত পরিচর্যা না হলে সংক্রমণজনিত ক্ষত হয়।
প্রশ্ন ২.৩৬: কার্বাংকলের সংজ্ঞা দাও। ইহার কারণ (প্যাথলজি) ও লক্ষণ লিখ।
উত্তর:
কার্বাংকলের সংজ্ঞা:
চর্ম ও চর্মতলের সাবকিউটেনিয়াস টিস্যুর বহু লোমকূপ ও সেবেসিয়াস গ্রন্থি একত্রে সংক্রমিত হয়ে যে পচনশীল, গভীর ও বেদনার্ত ক্ষতের সৃষ্টি করে, তাকে কার্বাংকল (Carbuncle) বলা হয়। এটি একধরনের মারাত্মক বিষফোড়া যা একাধিক সংক্রমিত লোমকূপ থেকে শুরু হয়ে চর্মতলে বিস্তৃত হয়।
কারণ ও প্যাথলজি (Pathology):
কার্বাংকল সাধারণত Staphylococcus aureus জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট হয়। জীবাণু লোমকূপের মাধ্যমে চর্মে প্রবেশ করে এবং চর্মতলে প্রসারিত হয়ে বহু লোমকূপ ও সেবেসিয়াস গ্রন্থিকে আক্রান্ত করে। একাধিক ফোঁড়া একত্র হয়ে বৃহৎ পুঁজযুক্ত পচনশীল ক্ষতের সৃষ্টি করে। সংক্রমিত স্থানটি ফোলা, লাল ও কঠিন হয়ে যায় এবং মধ্যভাগে নেক্রোসিস বা টিস্যু মৃত্যুর ফলে নরম কেন্দ্রীয় অংশ তৈরি হয়। চর্মে একাধিক পুঁজ নির্গমনের ছিদ্র বা sinus সৃষ্টি হয়, যেখান দিয়ে পুঁজ অল্প পরিমাণে নির্গত হয়।
লক্ষণসমূহ (Symptoms):
- সংক্রমিত স্থানটি লাল, ফোলা ও অত্যন্ত বেদনাদায়ক হয়
- মাঝখানে নরম, কেন্দ্রীয় নেক্রোটিক অঞ্চল
- একাধিক পুঁজ নিঃসরণকারী ছিদ্র থাকে
- উচ্চমাত্রার জ্বর ও বিষক্রিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়
- দুর্বলতা, মাথাব্যথা ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হতে পারে
- রক্তে সংক্রমণ (Septicemia) ঘটতে পারে
- ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কার্বাংকল হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগের বাহ্যিক লক্ষণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ কারণ, মায়াজম, এবং রোগীর সামগ্রিক মানসিক ও শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে ওষুধ নির্বাচন করা হয়। কার্বাংকল সাধারণত সিকোটিক বা সিফিলিটিক মায়াজমের প্রভাবযুক্ত হয়ে থাকে। চিকিৎসায় প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে — প্রদাহ ও সংক্রমণ কমানো, পুঁজ নিষ্কাশন সহজ করা, ব্যথা উপশম, ও রক্ত বিশুদ্ধকরণ।
এটি কার্বাংকল ও অ্যানথ্রাক্স জাতীয় বিষাক্ত ফোঁড়ার প্রধান প্রতিষেধক।যখন ক্ষতটি বিষাক্ত, নীলচে বা কালচে রঙের হয়, কেন্দ্রীয় নেক্রোসিস থাকে।পুঁজ দুর্গন্ধযুক্ত, জ্বরসহ বিষক্রিয়ার লক্ষণ থাকলে এটি উপকারী।
ক্ষত ফেটে পুঁজ পড়ার সময় এবং ব্যথা খুব তীব্র হলে উপকারী।রোগী খুব ঠান্ডা-সংবেদনশীল এবং স্পর্শ সহ্য করতে পারে না।পূর্ণাঙ্গ ফোঁড়া তৈরিতে সাহায্য করে ও সংক্রমণ কমায়।
ক্ষত পুড়ে যাওয়া মতো ব্যথাযুক্ত, সন্ধ্যার পর ব্যথা বাড়ে।রোগী খুব দুর্বল, অস্থির ও ভীতসন্ত্রস্ত থাকে।পুঁজ দুর্গন্ধযুক্ত ও চর্মের আশেপাশে নেক্রোসিস থাকলে উপকারী।
ক্ষত পূর্ণভাবে নিরাময়ের জন্য কার্যকর।পুঁজ নিষ্কাশনে সাহায্য করে এবং পুনরুদ্ধারে সহায়ক।দীর্ঘস্থায়ী বা বারবার ফোঁড়া হলে উপকারী।
নীলাভ-কালো রঙের কার্বাংকল, যেখানে কেন্দ্রীয়ভাবে টিস্যু নষ্ট হয়।স্পর্শে সংবেদনশীলতা, ও ঘুম থেকে উঠে উপসর্গ বৃদ্ধি পায়।
এটি প্রচণ্ড বিষাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত কার্বাংকলের ক্ষেত্রে খুব কার্যকর।অনেক সময় Anthracinum-এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
যখন প্রদাহ শুরু হয়, স্থান লাল, ফোলা ও উষ্ণ থাকে।ব্যথা প্রচণ্ড, তবে এখনো পুঁজ গঠিত হয়নি – এই পর্যায়ে ভালো কাজ করে।
পূজযুক্ত, দুর্গন্ধযুক্ত ক্ষতের জন্য উপকারী।রাতের বেলায় উপসর্গ বৃদ্ধি পায় এবং পেশীতে ব্যথা থাকতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস থাকলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: সংক্রমিত স্থান সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।পুষ্টিকর খাদ্য: রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পুষ্টিকর খাবার দেওয়া দরকার।
আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।
Make a comments as guest/by name or from your facebook:
Make a comment by facebook: