প্যাথলজি, ক্লাস # ২, রিপেয়ার ও হিলিং, জীবাণু সংক্রমন, সেপটিসিমিয়া, সাপুরেশন , এবসেস, ইরিসিপেলাস, আলসার , কার্বংকল

প্যাথলজি, ক্লাস # ২ 
রিপেয়ার ও হিলিং, জীবাণু সংক্রমন, টক্সিমিয়া, সেপটিসিমিয়া, সাপুরেশন , এবসেস, ব্যাকটেরিমিয়া, লিম্ফেনজাইটস, ইরিসিপেলাস, আলসার , কার্বংকল 


২. রিপেয়ার ও হিলিং (Repair and Healing)

প্রশ্ন-২.১৫। রিপেয়ার কাহাকে বলে?

উত্তর: প্রদাহ প্রতিক্রিয়ার শেষ পর্যায় -
যখন প্রদাহ কারী জীবাণু বা অন্য পদার্থ সম্পূর্ণ পরাজিত বা পর্যুদস্ত হয় তখনই ক্ষতস্থানের সংস্কারের কাজ আরম্ভ হয়।'
কলার পচনের ফলে নষ্ট স্থান সৃষ্ট ফাঁক যখন গ্রানুলেশন কলা ও তন্ত্র দ্বারা পুরন হইয়া স্কার সৃষ্টি হয় তখন তাহাকে রিপেয়ারিং বলে। এই ক্ষেত্রে নূতনকলা পূর্বের কলা হইতে সম্পূর্ণ আলাদা।

 প্রশ্ন : গ্রানুলেশন কলা গঠন কাকে বলে?

গ্রানুলেশন গঠন হল ক্ষতস্থানে নতুন ছোট রক্তনালী, তন্তু (fibroblast), ও কোষ দিয়ে তৈরি এক ধরনের কোমল ও দানাদার (granular) টিস্যু—যা ক্ষতস্থানের স্থান পূরণ করে এবং স্কার তৈরির মাধ্যমে নিরাময় প্রক্রিয়া শুরু করে।



প্রশ্ন-২.১৬। হিলিং কাহাকে বলে?

উত্তর: কোন প্রদাহের ফলে -
 কলাতে (Tissue)  যে পরিবর্তন ঘটে ও প্রদাহ ক্ষরণ সৃষ্টি হয় তাহা যে পদ্ধতি দ্বারা অপসারিত হয় ও প্রদাহ দ্বারা সৃষ্ট কলার ফাঁক নূতন স্বাভাবিক কলা দ্বারা পুরন হয় তাহাকে হিলিং বলে।


প্রশ্ন-২.১৭। রিপেয়ার ও হিলিং এর মধ্যে পার্থক্য কি?

উত্তর: রিপেয়ার ও হিলিং এর মধ্যে পার্থক্য হইল:

রিপেয়ার

১। কলার পচনের ফলে সৃষ্টি ফাঁক রিপেয়ার হয়।

২ ।  রিপেয়ারে নূতন সৃষ্ট কলা পূর্বের 'কলা হইতে পৃথক।

৩। ইহা গ্রানুলেশন কলা ও তন্ত্র প্রাচুর্য দ্বারা পূরণ হয়।

৪। ইহাতে প্রধান বিষয় হইল স্কার সৃষ্টি হওয়া।

৫। রিপেয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ।

হিলিং

১। নেক্রোসিসের ফলে সৃষ্ট ফাঁক হিলিং হয়।

২। হিলিং এ নূতন সৃষ্ট কলা পূর্বের কলার সদৃশ।

৩। ইহা স্বাভাবিক কলা দ্বারা পুরন হয়।

৪। স্কার সৃষ্টি হওয়া ইহাতে প্রধান বিষয় নয়।

৫। হিলিং প্রক্রিয়াটি জটিল।



প্রশ্ন-২.১৮। হিলিং এর পদ্ধতি সমূহ কি কি?

উত্তর: দেহ কোষের হিলিং অত্যন্ত জটিল পদ্ধতি। ইহার মধ্যে নিম্নলিখিত পদ্ধতি অন্তর্গত:

১) ক্যাপিলারীর এনডোথেলিয়ামের সংখ্যা বৃদ্ধি।

২) ফাইব্রোরাস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি।

৩) কোষ বিভাজন দ্রুত।

৪) কোলাজেনের তলানি পড়া।

৫) কলার রিজেনারেশান।

৬) রাসায়নিক পদ্ধতির পরিবর্তন।


প্রশ্ন-২.১৯। হিলিং পদ্ধতির বিভিন্ন পর্যায়গুলি কি কি?

উত্তর: হিলিং পদ্ধতির পর্যায় সমূহ নিম্নরূপ:

১) প্রাথমিক ভাবে রক্ত জমাট বাঁধা।

২) প্রদাহ।

৩) ডিমোলিশান।

৪) ক্ষতের সংকোচন।

৫) গ্রানুলেশন জাতীয় কলা গঠন।

৬) স্কার সংগঠন।




প্রশ্ন-২.২০। হিলিং এর শ্রেণী বিভাগ কর এবং উহাদের বর্ননা দাও।

উত্তর: চর্মের হিলিং দুই প্রকারের। 

যথাঃ (১) প্রাথমিক হিলিং 
(২) মাধ্যমিক হিলিং।

১) প্রাথমিক হিলিং: 
কোন প্রকার আঘাত বা প্রদাহের ফলে যেখানে ক্ষতের ফাঁক খুব সামান্য, পরিষ্কার ক্ষতের কিনারা সুস্পষ্ট, রক্তপাত খুব কম, ক্ষরণের পরিমানও অল্প ও প্রদাহহীন, সে ক্ষেত্রে ক্ষতের পাশ হইতে কোষ বৃদ্ধির ফলে ফাঁক পুরন হয়। এই পদ্ধতির নাম প্রাথমিক হিলিং।

ক্ষত নিরাময়ের পর্যায় (Wound Healing Stages):

আঘাতের ফলে ক্ষতস্থানে রক্তজমাট (clot) গঠিত হয়, যা ক্ষতের ফাঁকটি সাময়িকভাবে পূরণ করে। 

এরপর ক্ষতিগ্রস্ত কোষসমূহ থেকে প্লাজমা ও বিজারক (exudate) নির্গত হয় এবং সেখানে ম্যাক্রোফেজ কোষ সমবেত হয়। 

ম্যাক্রোফেজ কোষ সমুহ মৃত কোষ ও জীবাণু অপসারণ করে প্রদাহ পর্ব সম্পন্ন করে।

পরবর্তী ধাপে, ফাইব্রোব্লাস্ট ও ক্যাপিলারি এন্ডোথেলিয়াল কোষ সক্রিয় হয়ে মাইটোসিসের মাধ্যমে দ্রুত বিভাজিত হয়। 

এন্ডোথেলিয়াম কোষ দুই প্রান্ত থেকে অগ্রসর হয়ে ফাইব্রিনের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং নতুন কেশিকানাল (capillary loop) তৈরি করে—যাকে angiogenesis বলা হয়।

পরিশেষে, এপিথেলিয়াল কোষ ক্ষতের প্রান্ত থেকে বৃদ্ধি পেয়ে উপরের তলাকে আবৃত করে, ফলে ক্ষতটি ধীরে ধীরে সম্পূর্ণভাবে নিরাময় হয়।


২) মাধ্যমিক হিলিং (Secondary Healing):
যখন কোনো আঘাত, সংক্রমণ বা প্রদাহের কারণে কোষ নষ্ট হয়ে ক্ষত (wound) সৃষ্টি হয় এবং ক্ষতের প্রান্ত একত্রিত হয়ে সরাসরি পূরণ সম্ভব হয় না, তখন ক্ষতের নিচ থেকে গ্রানুলেশন টিস্যু (granulation tissue) গঠিত হয়ে ধীরে ধীরে ক্ষতস্থান পূরণ হয়। এই প্রক্রিয়াকে মাধ্যমিক হিলিং বলা হয়।

পর্যায়সমূহ:
মাধ্যমিক হিলিংয়ে নিম্নোক্ত ধাপগুলো পরিলক্ষিত হয়—

1. জমাট বাঁধা (Clot formation): রক্ত জমাট বাঁধে এবং এতে ফাইব্রিন ও প্রদাহজনিত এক্সসুডেট (exudate) থাকে।

2. ইনফ্ল্যামেটরি কোষের আগমন: নিউট্রোফিল প্রথমে আসে এবং পরবর্তীতে ম্যাক্রোফেজ ও লিম্ফোসাইট উপস্থিত হয়ে মৃত কোষ ও জীবাণু পরিষ্কার করে।

3. গ্রানুলেশন টিস্যুর গঠন: ক্ষতস্থানে ফাইব্রোব্লাস্ট ও এন্ডোথেলিয়াল কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যা নতুন ক্যাপিলারি গঠনের মাধ্যমে গ্রানুলেশন টিস্যু তৈরি করে।

4. ক্ষত সংকোচন (Wound contraction): মায়োফাইব্রোব্লাস্টের সাহায্যে ক্ষত সংকুচিত হয়, ফলে ক্ষতস্থানের পরিধি কমে আসে।

5. এপিথেলিয়ালাইজেশন: অবশেষে, ক্ষতের উপরিভাগে এপিথেলিয়াল কোষ বৃদ্ধি পেয়ে ক্ষত পূরণ করে।

মাধ্যমিক হিলিংয়ে ক্ষতস্থানের পূর্ণ আরোগ্য হতে বেশি সময় লাগে এবং তাতে দাগ (scar) তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।


প্রশ্ন-২.২১। হিলিং এর জটিলতা সমূহ বা অসুবিধা সমূহ কি কি?

উত্তরঃ হিলিং এর ফলে নিম্নলিখিত অসুবিধা সৃষ্টি হয়।

i) সংক্রমিত হওয়া।

ii) কোলয়েড সৃষ্টি হওয়া।

iii) সিকেট্রাইজেশন।

iv) ফাটিয়া যাওয়ার আশংকা।

v) পিগমেন্টেশন বা তদ্ভরন্‌জন হওয়া।



প্রশ্ন-২.২২। কি কি কারনে হিলিং (ক্ষত সংস্কার) বিঘ্নিত ও বিলম্বিত হয়।  অথবা,

প্রশ্ন-২.২২: কি কি কারণে ক্ষত নিরাময় (Healing) বিঘ্নিত ও বিলম্বিত হয়?

উত্তর: নিম্নোক্ত কারণগুলো ক্ষত নিরাময় প্রক্রিয়াকে ব্যাহত ও বিলম্বিত করে:

1. বয়সজনিত কারণ: বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে ফাইব্রোব্লাস্ট কোষের কার্যকারিতা ও কোলাজেন সংশ্লেষণ হ্রাস পায়। এছাড়া রক্তনালীর সংকীর্ণতার ফলে ক্ষতস্থানে রক্ত সরবরাহ কমে যায়, ফলে নিরাময় প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়।

2. প্রোটিনের অভাব: প্রোটিন টিস্যু পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। এর অভাবে কোষ বিভাজন ও ক্ষত পুনর্গঠন বিলম্বিত হয়।

3. ভিটামিন সি-এর ঘাটতি: কোলাজেন সংশ্লেষণের জন্য ভিটামিন সি অপরিহার্য। এর অভাবে নিরাময় প্রক্রিয়া ধীরগতি হয়।

4. নিউট্রোফিলের স্বল্পতা: সংক্রমণ প্রতিরোধে নিউট্রোফিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর স্বল্পতায় প্রদাহ প্রতিক্রিয়া দুর্বল হয় এবং নিরাময় বিলম্বিত হয়।

5. রক্তক্ষরণের প্রবণতা: অতিরিক্ত রক্তপাত ও হেমাটোমা নিরাময়কে বিলম্বিত করে, কারণ জমাট বাঁধা রক্ত অপসারণ না হলে নতুন টিস্যু গঠন বাধাগ্রস্ত হয়।

6. ডায়াবেটিস মেলিটাস: উচ্চ রক্তশর্করা কোষীয় কার্যকলাপ হ্রাস করে, রক্তপ্রবাহ কমায় এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়, ফলে হিলিং প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।

7. কর্টিকোস্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ: যেমন হাইড্রোকরটিসন, যা প্রদাহপ্রতিক্রিয়া ও ফাইব্রোব্লাস্টের কার্যকারিতা হ্রাস করে ক্ষত নিরাময়কে বিলম্বিত করে।


রিপেয়ার এবং ক্ষত নিরাময়ের 
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:

হোমিওপ্যাথিতে ক্ষত নিরাময়ের ক্ষেত্রে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা করা হয়। রোগীর শারীরিক লক্ষণ, মানসিক অবস্থা, আঘাতের ধরন, ক্ষতের প্রকৃতি (তাজা, পুরাতন, ইনফেকটেড ইত্যাদি) অনুযায়ী ঔষধ নির্বাচন করা হয়। কিছু ওষুধ সরাসরি ক্ষত নিরাময়ে সহায়ক, আবার কিছু ইনফেকশন প্রতিরোধ, ব্যথা উপশম এবং পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে।

গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধসমূহ:

1. Arnica montana:

সদ্য আঘাতে প্রথম ওষুধ।

ব্যথা, ফোলা ও অভ্যন্তরীণ রক্তপাত রোধে কার্যকর।

রক্ত জমাট বাধা ও ব্রুইজ দূর করে দ্রুত হিলিংয়ে সহায়তা করে।

মনে হয় যেন বিছানা শক্ত বা শরীর থেঁতলে গেছে।

2. Calendula officinalis:

কাটা-ছেঁড়া, পচে যাওয়া বা ইনফেকটেড ক্ষতের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

ক্ষতের উপরিভাগে প্রয়োগযোগ্য (টিংচার/লোশন) এবং অভ্যন্তরীণভাবে ব্যবহৃত হয়।

পুঁজযুক্ত ক্ষতের নিরাময়ে গতি আনে ও ইনফেকশন প্রতিরোধ করে।

3. Hypericum perforatum:

স্নায়ু সংবেদী আঘাত বা কাটা ক্ষতের জন্য।

আঘাতস্থানে টান, তীব্র যন্ত্রণা বা অবশভাব অনুভব হলে এটি উপকারী।

বিশেষ করে আঙুল, নখ, মেরুদণ্ড ও স্নায়ু যুক্ত স্থান।

4. Staphysagria:

অস্ত্রোপচারের পর বা গভীর কাটায় ক্ষতের জন্য।

ক্ষতের প্রান্তে জ্বালা, টান বা চুলকানি থাকলে ব্যবহৃত হয়।

বিশেষ করে যখন ক্ষতটিতে ব্যথার চেয়ে ‘খচখচে’ অনুভূতি বেশি হয়।

5. Symphytum officinale:

হাড় ভাঙা বা গভীর আঘাত পরবর্তী ক্ষত নিরাময়ের জন্য।

হাড় ও নরম টিস্যুর পুনর্গঠনে সাহায্য করে।

Arnica পরে ব্যবহার করলে কার্যকরতা বাড়ে।

6. Silicea:

পুরাতন ক্ষত, পুঁজ তৈরি ও স্লো হিলিং হলে ব্যবহৃত হয়।

শরীর থেকে ফোঁড়া বা পুঁজ বের করে দেয়।

রোগীর যদি শরীর দুর্বল ও ঠান্ডা প্রকৃতির হয়, এটি বিশেষ উপকারী।

7. Hepar sulphuris:

সংক্রমিত ক্ষত বা পুঁজ পড়া শুরু হয়েছে এমন ক্ষেত্রে কার্যকর।

ব্যথা, ফোলা ও ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়ক।
---

অন্যান্য সহায়ক চিকিৎসা:

পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাদ্য (বিশেষ করে প্রোটিন, ভিটামিন C, জিঙ্ক) গ্রহণ।

ক্ষত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।

প্রয়োজনে হোমিওপ্যাথিক অ্যান্টিসেপ্টিক ব্যবহার।
---

উপসংহার:

হোমিওপ্যাথিতে ক্ষত নিরাময় শুধুমাত্র উপসর্গের উপর ভিত্তি করে নয়, রোগীর সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করেই করা হয়। সঠিক ওষুধ নির্বাচন করলে দ্রুত এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন নিরাময় সম্ভব।

অস্ত্রোপচারের পর ক্ষত, পুরনো ক্ষত, এবং ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষত—এই তিনটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও ওষুধের বিস্তারিত আলোচনা দেওয়া হলো:

---

১. অস্ত্রোপচারের পর ক্ষত (Post-surgical Wound):

বৈশিষ্ট্য:

কাটাছেঁড়ার ক্ষত, সেলাইয়ের দাগ, ইনফেকশনের ঝুঁকি।

ব্যথা, টান অনুভব, ক্ষতের ধীরে নিরাময়।

উপযোগী ওষুধ:

1. Staphysagria:

অস্ত্রোপচারের পর মূল ওষুধ।

ক্ষতস্থানে খচখচে বা চাপধরনের ব্যথা থাকে।

দাগ দীর্ঘদিন স্থায়ী হওয়ার প্রবণতা থাকলে উপকারী।

2. Calendula officinalis:

ইনফেকশন প্রতিরোধে কার্যকর।

ক্ষত দ্রুত শুকাতে ও দাগ কমাতে সহায়তা করে।

বাহ্যিকভাবে টিংচার হিসেবে ব্যবহার করলে উপকার বেশি।

3. Arnica montana:

অস্ত্রোপচারের পরের ব্যথা, রক্তপাত বা ফোলার জন্য।

শরীর যেন থেঁতলে গেছে এমন অনুভূতি থাকলে।

4. Hypericum perforatum:

স্নায়ুতে কাটা বা টান লাগা থাকলে।

বিশেষ করে মেরুদণ্ড বা স্নায়ুসম্পৃক্ত স্থানে সার্জারি হলে উপকারী।

---

২. পুরনো ক্ষত (Chronic or Non-healing Wound):

বৈশিষ্ট্য:

দীর্ঘদিন ধরে না শুকানো ক্ষত।

মাঝে মাঝে ব্যথা, চুলকানি বা পুঁজ দেখা যায়।

সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।


উপযোগী ওষুধ:

1. Silicea:

পুঁজযুক্ত পুরনো ক্ষত।

ক্ষত থেকে ফোঁড়া বা বিদেশী বস্তু বের করার ক্ষমতা রাখে।

ধীরগতির হিলিং-এ বিশেষ কার্যকর।

2. Calcarea sulphurica:

ঘন হলুদ পুঁজ পড়ে এমন ক্ষত।

ক্ষত নিরাময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে সহায়ক।

3. Graphites:

ক্ষতস্থানে আঠালো রস বা নিঃসরণ থাকলে।

মোটা ত্বক, গাঢ় রঙের ক্ষতচিহ্নসহ ধীরে নিরাময় হলে।

4. Fluoric acid:

দীর্ঘস্থায়ী, বারবার ফিরে আসা ক্ষত।

ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

---

৩. ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষত (Diabetic Ulcer/Wound):

বৈশিষ্ট্য:

ক্ষত সহজে শুকায় না বা সংক্রমিত হয়ে যায়।

রক্ত সঞ্চালন কম থাকায় নিরাময় ধীরগতির হয়।

মাঝে মাঝে গ্যাংগ্রিনের ঝুঁকিও দেখা দেয়।

উপযোগী ওষুধ:

1. Calendula officinalis:

ক্ষত দ্রুত নিরাময়ে সহায়ক ও ইনফেকশন রোধে কার্যকর।

বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণভাবে দেওয়া হয়।

2. Silicea:

ক্ষতস্থানে পুঁজ, দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত বা টিস্যু গলে যাওয়া লক্ষণে উপকারী।

3. Hepar sulphuris:

সংক্রমিত ক্ষত, যেখানে স্পর্শে তীব্র ব্যথা হয়।

গ্যাংগ্রিনের পূর্বাভাস থাকলে ব্যবহৃত হয়।

4. Arsenicum album:

ক্ষত থেকে দুর্গন্ধ বের হলে, পোড়া পোড়া ব্যথা থাকলে।

দুর্বলতা, অনিদ্রা ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত রোগীদের জন্য উপযোগী।

5. Fluoric acid:

ডায়াবেটিস জনিত দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত, যেখানে সাধারণ চিকিৎসায় ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
---

উপসংহার:

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ক্ষত নিরাময়ের প্রতিটি ধাপেই নির্দিষ্ট ওষুধ প্রয়োগে সুফল পাওয়া যায়। তবে রোগীর সার্বিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে ঔষধ নির্বাচন করাই হোমিওপ্যাথির মূলনীতি।




৩. জীবাণু সংক্রমন (Infection)


প্রশ্ন-২.২৩। জীবাণু সংক্রমন কাহাকে বলে?
 কি ভাবে জীবাণু সংক্রমন বিস্তার লাভ করে?

উত্তর:  জীবাণু সংক্রমন : দেহের কোন টিসুতে জীবানু প্রবেশ করিয়া নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধি করিয়া মানবদেহে রোগ সৃষ্টি করিতে পারে। এই রোগ সৃষ্টিকে ইনফেকশান বা জীবাণুঘটিত রোগ সংক্রমন বলে। 
দ্বিতীয়তঃ জীবাণু শরীরের মধ্যে ভয়ংকর বিষ তৈরী করিতে পারে ফলে শরীর দূষিত হইতে পারে।
জীবাণু সংক্রমনের ব্রিভিন্ন উপায়-

ত্বক: ত্বকের যে কোন ক্ষত অতি সহজেই মাটি, ময়লা, দুষিত বাতাস বা জীবাণু বাহী কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে আসিলে ত্বকের ক্ষতে জীবাণুর উপস্থিতি ঘটিতে পারে।

শ্বাস প্রশ্বাস: ভাইরাস জনিত পীড়ায় রোগ জীবাণু হাঁচি, কাশি প্রভৃতির দ্বারা ছড়াইতে পারে, ধুলিকনার সাহায্যে বাতাসের দ্বারা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে সুস্থ দেহে প্রবেশ করে এবং রোগের সংক্রমন ঘটে।

জীবাণু দ্বারা দুষিত খাদ্য ও পানিয়: রোগবাহী কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে বা মাছি দ্বারা খাদ্য দূষিত হইতে পারে। দূষিত খাদ্য ও পানীয় গ্রহনের ফলে রোগ- জীবানু সংক্রমিত হয়।

ত্বকের ছিদ্র দ্বারা: কীটপতঙ্গ দংশনের ফলে, সংক্রামিত সিরিঞ্জ দ্বারা সূঁচ প্রয়োগের ফলে অর্থাৎ ত্বকের ছিদ্র মাধ্যমেও নানা প্রকারে রোগ জীবাণু বিস্তার লাভকরে।

জীবাণু সংক্রমন (Infection)হো

মিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও মেডিসিন।

জীবাণু সংক্রমণ (Infection) বলতে বোঝায় যখন কোনো ক্ষতিকর জীবাণু (যেমন: ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক বা পরজীবী) শরীরে প্রবেশ করে এবং সংক্রমণ ঘটায়। এতে জ্বর, ব্যথা, ফুলে যাওয়া, দুর্বলতা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

হোমিওপ্যাথিক দৃষ্টিভঙ্গি:

হোমিওপ্যাথি জীবাণুকে সরাসরি হত্যা না করে শরীরের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা (immunity) বাড়ানোর মাধ্যমে সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে। চিকিৎসা নির্ভর করে লক্ষণের ওপর — যেমন রোগীর মানসিক অবস্থা, উপসর্গের প্রকৃতি, সংক্রমণের ধরণ ইত্যাদি।
---

কিছু গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ:

১. Belladonna

সংক্রমণের শুরুতে ব্যবহৃত হয়

হঠাৎ করে উচ্চ জ্বর, মুখ লাল, চোখ লাল, স্পর্শে অতিসংবেদনশীল

গলা ব্যথা বা টনসিল সংক্রমণে ভালো কাজ করে

২. Aconite

সংক্রমণ যদি হঠাৎ ঠান্ডা বা ভয় পাওয়ার পর শুরু হয়

উদ্বিগ্নতা, ঘন ঘন নাড়ি, শুকনো তৃষ্ণা সহ জ্বর

৩. Arsenicum Album

খাদ্যে বিষক্রিয়াজনিত সংক্রমণ

পাতলা পায়খানা, বমি, দুর্বলতা, ঠান্ডা লাগা, অনিরাপত্তা বোধ

৪. Hepar Sulphuris

ফোঁড়া বা পুঁজযুক্ত সংক্রমণ

ব্যথা খুব তীব্র, একটু ঠান্ডা হাওয়াতেও কষ্ট

ঘাম বেশি, পচা গোশতের গন্ধ

৫. Mercurius Solubilis

টনসিল, দাঁতের সংক্রমণ বা মাড়ির পুঁজ

লালা বেশি পড়ে, মুখে দুর্গন্ধ

রাতের বেলায় উপসর্গ বাড়ে

৬. Echinacea

রক্ত সংক্রমণ বা সেপসিসে সহায়ক

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

৭. Pyrogenium

জীবাণুজনিত জ্বর, যদি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন মনে হয়

দেহে পুঁজ, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব বা ঘা
---

সাধারণ পরামর্শ:

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণের পূর্বে অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথের পরামর্শ নেওয়া উচিত

জ্বর বেশি হলে বা অবস্থার অবনতি ঘটলে কনভেনশনাল চিকিৎসার সাহায্য নিতে হবে

সংক্রমণ প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি। 



৪. টক্সিমিয়া
(Toxaemia)


প্রশ্ন-২.২৪: টক্সিমিয়া কাকে বলে? এর কারণ ও বর্ণনা দাও।

উত্তর: সংজ্ঞা:
টক্সিমিয়া (Toxemia) হলো এমন একটি অবস্থায়, যেখানে জীবিত ব্যাকটেরিয়া শরীরের কোনো নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে টক্সিন বা অন্তবিষ (Exotoxin) উৎপন্ন করে, এবং সেই বিষ রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন টিস্যু ও অঙ্গে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, যদিও জীবাণু নিজে রক্তে উপস্থিত থাকে না।

কারণ ও বর্ণনা:
টক্সিমিয়া সাধারণত তখন ঘটে, যখন কোনো ব্যাকটেরিয়া শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে সংক্রমণ ঘটায় এবং সেখান থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ (toxins) নিঃসরণ করে। এই বিষ রক্তস্রোতে প্রবেশ করে শরীরের দূরবর্তী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পৌঁছে নানা রোগ-লক্ষণ তৈরি করে। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, রক্তে জীবাণু উপস্থিত না থাকলেও তাদের উৎপাদিত বিষ রক্তে বিদ্যমান থাকে।

উদাহরণস্বরূপ:
টিটেনাস (Tetanus) রোগে Clostridium tetani নামক ব্যাকটেরিয়া ক্ষতস্থানে অবস্থান করে tetanospasmin নামক শক্তিশালী টক্সিন নিঃসরণ করে। এই টক্সিন রক্তের মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রে পৌঁছে টিটেনাস টক্সিমিয়া সৃষ্টি করে, যদিও জীবাণু নিজে রক্তে থাকে না।

আরো উদাহরণসমূহ:

১. ডিপথেরিয়া (Diphtheria):
Cornyebacterium diphtheriae ব্যাকটেরিয়া গলার ঝিল্লিতে অবস্থান করে diphtheria toxin নিঃসরণ করে, যা রক্তের মাধ্যমে হৃদপিণ্ড, স্নায়ুতন্ত্র প্রভৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং টক্সিমিয়া সৃষ্টি করে।

২. টিটেনাস (Tetanus):
Clostridium tetani ব্যাকটেরিয়া ক্ষতস্থানে থেকে tetanospasmin নামক টক্সিন নিঃসরণ করে, যা স্নায়ুতন্ত্রে গিয়ে পেশিতে শক্তি (spasm) সৃষ্টি করে। এটি একটি ক্লাসিক টক্সিমিয়ার উদাহরণ।

৩. বটুলিজম (Botulism):
Clostridium botulinum ব্যাকটেরিয়া খাদ্যে উপস্থিত থেকে botulinum toxin তৈরি করে। এই টক্সিন হজমের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এবং স্নায়ুতন্ত্রে গিয়ে পক্ষাঘাত সৃষ্টি করে। এটি একটি খাদ্যজাত টক্সিমিয়া (food-borne toxemia)।

৪. স্ট্যাফিলোকক্কাল টক্সিক শক সিন্ড্রোম (Staphylococcal Toxic Shock Syndrome):
Staphylococcus aureus ব্যাকটেরিয়া কিছু নির্দিষ্ট অবস্থায় (যেমন ট্যামপন ব্যবহারে) toxin নিঃসরণ করে, যা রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে তীব্র জ্বর, রক্তচাপ পতন ও অঙ্গ বিকলতা সৃষ্টি করতে পারে।

৫. স্ট্রেপটোকক্কাল টক্সিক শক সিন্ড্রোম (Streptococcal Toxic Shock Syndrome):
Streptococcus pyogenes ব্যাকটেরিয়ার toxin দেহে সিস্টেমিক প্রদাহ এবং টিস্যুর ক্ষতি ঘটায়, যা একটি মারাত্মক টক্সিমিয়া পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

হোমিওপ্যাথিক দৃষ্টিকোণ থেকে টক্সিমিয়া:

হোমিওপ্যাথিতে টক্সিমিয়াকে শরীরের এক ধরণের বিষাক্ত আভ্যন্তরীণ অবস্থা হিসেবে দেখা হয়, যেখানে শরীরের নিজস্ব রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সিম্পটম (উপসর্গ) অনুযায়ী চিকিৎসা প্রযোজ্য হয়।
---

প্রধান লক্ষণসমূহ (Symptoms):

উচ্চ জ্বর

মাথা ব্যথা

ক্লান্তি ও দুর্বলতা

অজ্ঞানতা বা ঘোর ভাব

পেশিতে ব্যথা বা খিচুনি

স্নায়বিক বা মানসিক পরিবর্তন

বমি বমি ভাব বা বমি
---

প্রয়োগযোগ্য হোমিওপ্যাথিক ওষুধসমূহ:

১. Pyrogenium:

মৃতজ বা পচা জীবাণু থেকে তৈরি ওষুধ

রক্তে বিষক্রিয়া হলে, সেপটিক অবস্থায়

উচ্চ জ্বর, কাঁপুনি ও দুর্ভেদ্য দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম


২. Baptisia:

টাইফয়েড জাতীয় টক্সিমিয়া

রোগী বিভ্রান্ত থাকে, নিজের শরীর ছড়িয়ে আছে মনে হয়

মুখে দুর্গন্ধ ও কালচে লাল জিহ্বা


৩. Arsenicum Album:

বিষক্রিয়াজনিত দুর্বলতা, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা

পাতলা, দুর্গন্ধযুক্ত, আগুন জ্বালানো প্রকৃতির ডায়রিয়া

রোগী বারবার পানি চায়, কিন্তু অল্প অল্প করে খায়


৪. Echinacea:

রক্তে সংক্রমণ ও বিষক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ

ফোড়া, ইনফেকশন বা বিষক্রিয়া সংক্রান্ত লক্ষণে

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক


৫. Lachesis:

গা গরম অথচ চাদর সহ্য করতে না পারা

বাম পাশে বেশি সমস্যা, বিষক্রিয়া বা পচন জাতীয় রোগে

স্নায়বিক উত্তেজনা ও বিষাক্ত উপসর্গ


৬. Sulphur:

রোগের পরবর্তী সময়ে যখন বিষক্রিয়া শরীরে জমে থাকে

ত্বকে সমস্যা, তীব্র জ্বালাভাব, গরম সহ্য করতে না পারা

মনে রাখার জন্য টিপস:

Pyrogenium = পচা জিনিস + সেপটিক জ্বর

Baptisia = টাইফয়েড জাতীয় বিভ্রান্তি

Arsenicum = দুর্বলতা + ডায়রিয়া

Echinacea = ইনফেকশন + রক্ত বিশুদ্ধ

Lachesis = স্নায়বিক টক্সিমিয়া

Sulphur = পরবর্তী বিষক্রিয়া দূর
---

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মূলনীতি:

লক্ষণানুসারে ঔষধ নির্বাচন (Individualization),

রোগীর সম্পূর্ণ মানসিক ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায়,

মিনিমাম ডোজ এবং সিমিলিমাম সূত্র অনুসরণ করে চিকিৎসা প্রদান,
---

উপসংহার:
টক্সিমিয়া হোমিওপ্যাথিতে একটি জটিল কিন্তু চিকিৎসাযোগ্য অবস্থা, যেখানে সঠিক ওষুধ নির্বাচন রোগীকে বিষক্রিয়া থেকে উদ্ধার করতে পারে। প্রতিটি রোগীকে পৃথকভাবে দেখে ওষুধ নির্বাচন করা হোমিওপ্যাথির মৌলনীতি।



৫. সেপটিসিমিয়া
(Septicemia)



প্রশ্ন ২.২৫: সেপটিসেমিয়ার সংজ্ঞা, কারণ, লক্ষণাবলী ও শ্রেণী বিভাগ লিখুন।

উত্তর: সংজ্ঞা:
সেপটিসেমিয়া (Septicemia) বা রক্তদূষণ হলো এমন একটি রোগাবস্থা, যেখানে জীবাণু বা তার উৎপন্ন টক্সিনসমূহ রক্তে প্রবেশ করে রক্তকে বিষাক্ত করে তোলে এবং সারা দেহে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় জীবাণু রক্তে বংশবিস্তার করে এবং শরীরের অনাক্রম্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দেয়।

কারণ:
সেপটিসেমিয়া সাধারণত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়। উল্লেখযোগ্য জীবাণুগুলো হলো:

স্ট্রেপটোকক্কাস (Streptococcus)

স্ট্যাফাইলোকক্কাস (Staphylococcus)

ই. কোলাই (E. coli)

ক্লেপসিয়েলা, পসিউডোমোনাস প্রভৃতি গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া। 


এই জীবাণুগুলো সংক্রমিত ক্ষত, ফুসফুস, মূত্রনালি, পেটের অঙ্গ বা অন্য কোথাও থেকে রক্তে প্রবেশ করে সেপটিসেমিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

লক্ষণাবলী:

উচ্চমাত্রার জ্বর, কম্পনসহ

চরম দুর্বলতা ও শারীরিক অসুস্থতা

মাথাব্যথা ও বমি বমি ভাব

দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন

রক্তচাপ হ্রাস

বিভ্রান্তি বা অচেতনতা

জিহ্বা শুষ্ক হওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া

পেট ফাঁপা এবং ত্বকে দাগ বা পেটিকিয়া


শ্রেণী বিভাগ:
সেপটিসেমিয়াকে নিচেরভাবে শ্রেণীবিভাগ করা যায়—

1. প্রাথমিক সেপটিসেমিয়া: যখন জীবাণু সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং সেখানেই বংশবিস্তার করে।

2. গৌণ সেপটিসেমিয়া: যখন শরীরের অন্য কোনো সংক্রমণস্থল থেকে জীবাণু রক্তে প্রবেশ করে।

3. ব্যাকটেরিমিয়া: রক্তে অল্প সংখ্যক জীবাণু সাময়িকভাবে উপস্থিত থাকলেও ক্লিনিক্যাল লক্ষণ প্রকাশ পায় না।

4. সেপ্টিক শক: সেপটিসেমিয়ার জটিল রূপ, যেখানে রক্তচাপ মারাত্মকভাবে হ্রাস পায় এবং একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হতে থাকে।


শ্রেণীবিভাগ: ইহা তিন প্রকারের। 
যথা: ১।  মৃদু সেপ্টিসিমিয়া 
        ২। স্যাপ্রিমিয়া 
৩।  প্রোগ্রেসিভ সেপ্টিসিমিয়া।

উদাহরণস্বরূপ:
একজন রোগীর পায়ের ক্ষত দীর্ঘদিন ধরে পচন ধরেছিল। সময়মতো চিকিৎসা না করায় সেই পচন থেকে জীবাণু রক্তে প্রবেশ করে। কয়েকদিন পর রোগী জ্বরে আক্রান্ত হয়, শরীর কাঁপতে থাকে, শ্বাসকষ্ট হয়, বিভ্রান্তি দেখা দেয় এবং চেতনা হারিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে পরীক্ষা করে দেখা যায়, তার রক্তে স্ট্যাফাইলোকক্কাস জীবাণু রয়েছে — এটি একটি সেপটিসেমিয়ার উদাহরণ।

সেপটিসেমিয়ার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও ঔষধ (Medicine):

সেপটিসেমিয়া একটি গুরুতর ও প্রাণঘাতী সংক্রামক অবস্থা। হোমিওপ্যাথিতে রোগীর শারীরিক লক্ষণ, মানসিক অবস্থা ও সামগ্রিক প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে ওষুধ নির্বাচন করা হয়। তীব্র অবস্থায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার পাশাপাশি আধুনিক চিকিৎসা নেওয়াও জরুরি হতে পারে।

প্রধান হোমিওপ্যাথিক ওষুধসমূহ:

1. Pyrogenium

এটি সেপটিসেমিয়ার প্রধান ঔষধ।

পচা মাংসের গন্ধযুক্ত ঘাম বা নিঃসরণ থাকলে

উচ্চ জ্বর, কম্প, দুর্বলতা, বিভ্রান্তি

শরীরে ব্যথা, পালস ও তাপমাত্রার অমিল

2. Arsenicum Album

প্রচণ্ড দুর্বলতা, উদ্বেগ, বিশ্রামহীনতা

ঘন ঘন ঠান্ডা ও গরম লাগা

শরীর থেকে দুর্গন্ধযুক্ত নিঃসরণ

3. Lachesis

রক্তের বিষক্রিয়ায় উপযুক্ত

গলার আশেপাশে অস্বস্তি, গলায় ঢোক গিলতে কষ্ট

রোগী কথা বলতে চায়, উত্তেজিত প্রকৃতি

4. Baptisia Tinctoria

সেপটিক অবস্থায় যেসব রোগী ঘোরের মধ্যে থাকে

মুখে দুর্গন্ধ, জিহ্বা বাদামী, শরীর ভারী মনে হয়

5. Secale Cornutum

সেপটিক শকে ব্যবহার হয়

ঠান্ডা, শুকনো ত্বক, অথচ রোগী ঠান্ডা চায়

6. Carbo Vegetabilis

শ্বাসকষ্ট, চেতনা হ্রাস, ঠান্ডা শরীর

রক্তচাপ একেবারে কমে গেলে বা ধকলজনিত অবস্থা




৬. সাপুরেশন (পূজগঠন)
(Suppuration)


প্রশ্ন-২.২৬: সাপুরেশনের সংজ্ঞা লিখ এবং ইহার পদ্ধতির বর্ণনা দাও।

উত্তর: সাপুরেশনের সংজ্ঞা:
সাপুরেশন (Suppuration) হলো একটি প্রদাহজনিত প্রক্রিয়া, যার ফলে আক্রান্ত স্থানে জীবাণুর সংক্রমণে বিপুল পরিমাণ শ্বেত রক্তকণিকা (Leukocytes) জমা হয়ে মৃত কোষ, জীবিত ও মৃত ব্যাকটেরিয়া এবং সজ্জারস (exudate)-সহ এক ধরনের ঘন, সাদা, হলদেটে বা সবুজাভ তরল পদার্থ গঠিত হয়, যাকে পূজ বা পুঁজ বলা হয়।

সাপুরেশনের পদ্ধতি:
সাপুরেশন একটি জটিল জৈব প্রক্রিয়া যা নিম্নলিখিত ধাপে সম্পন্ন হয়:

১. লিউকোসাইটিক আগমণ (Infiltration of Leukocytes):
প্রদাহজনিত উত্তেজনার ফলে সংক্রামিত স্থানে রক্তনালীর মধ্য দিয়ে বিপুল সংখ্যক শ্বেত কণিকা আসে।

২. টিস্যু ও কোষধ্বংস (Tissue Necrosis):
ব্যাকটেরিয়া এবং শ্বেত কণিকার এঞ্জাইমের প্রভাবে আক্রান্ত স্থানের কোষসমূহ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

৩. তরলীকরণ (Liquefaction):
ধ্বংসপ্রাপ্ত টিস্যু, মৃত লিউকোসাইট, জীবিত ও মৃত ব্যাকটেরিয়া এবং নিঃসৃত তরল একত্রিত হয়ে পুঁজ তৈরি করে।

পুঁজসৃষ্টিকারী জীবাণু (Pyogenic Bacteria):
সাপুরেশন সাধারণত পায়োজেনিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংঘটিত হয়, যেমন:

Staphylococcus aureus

Streptococcus pyogenes

Neisseria gonorrhoeae

Neisseria meningitidis


এই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট টক্সিন প্রদাহিত টিসুতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং পুঁজ গঠনে সহায়তা করে।

উপসংহার:
সাপুরেশন একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে দেহ আক্রান্ত টিসুতে পুঁজ গঠন করে মৃত কোষ ও জীবাণু নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে।

উদাহরণ:
একজন রোগীর হাতে কাটা ঘা-তে জীবাণু সংক্রমণ হলে প্রথমে সেখানে লালচে ফোলাভাব ও ব্যথা দেখা দেয়। কয়েকদিন পর সেই স্থানে হলদেটে সাদা ঘন তরল পদার্থ (পুঁজ) জমা হতে থাকে। পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেখানে Staphylococcus aureus জীবাণুর উপস্থিতি রয়েছে। এই অবস্থাটি সাপুরেশনের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ, যেখানে জীবাণুর আক্রমণে শ্বেত কণিকার উপস্থিতি, টিসু ধ্বংস ও তরলীকরণের মাধ্যমে পুঁজ সৃষ্টি হয়েছে।


সাপুরেশনের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা :
সাপুরেশনের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা রোগীর লক্ষণ, পুঁজের প্রকৃতি, অবস্থান, ব্যথার ধরণ, সময় অনুযায়ী বৃদ্ধি বা উপশম ইত্যাদি বিবেচনায় নির্ধারিত হয়। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ আলোচনা করা হলো যেগুলো সাপুরেশন বা পুঁজ গঠন ও নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়:
---

সাপুরেশনের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও ঔষধ:

১. Hepar Sulphuris Calcareum:

এটি সাপুরেশনের প্রধান ওষুধ।

পুঁজ ফাটার আগেই অত্যন্ত সংবেদনশীলতা ও তীব্র ব্যথা থাকে।

সামান্য ঠান্ডা লাগলেও ব্যথা বাড়ে।

রোগী চাদর মুড়ি দিয়ে গরম থাকতে চায়।

ফোঁড়া বা ঘায়ে পুঁজ হওয়ার আগেই প্রয়োগ করলে দ্রুত উপশম হয়।


২. Silicea (Silica):

পুঁজকে পরিপক্ব করে নিষ্কাশনে সহায়তা করে।

পুঁজ তৈরি হয় কিন্তু বের হয় না—এমন ক্ষেত্রে কার্যকর।

দীর্ঘস্থায়ী ফোঁড়া, অ্যাবসেস বা ফিস্টুলাতে কার্যকর।

ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না।


৩. Mercurius Solubilis / Merc. Vivus:

ফোঁড়ায় প্রচণ্ড ব্যথা ও পুঁজের গন্ধযুক্ত নিঃসরণ।

মুখে লালা জমে, জিহ্বায় ছাপ পড়ে, গন্ধযুক্ত ঘাম হয়।

ইনফ্লেমেশন থেকে পুঁজ হওয়ার মাঝামাঝি সময় ব্যবহার উপযোগী।


৪. Calcarea Sulphurica:

হলদে ঘন ও ঘনঘনে পুঁজ হলে ভালো কাজ করে।

ফোঁড়া ফেটে গেলেও দীর্ঘদিন পুঁজ পড়তে থাকলে এটি প্রয়োগ হয়।


৫. Myristica Sebifera:

ফোঁড়াকে খুব দ্রুত পেকে ফাটাতে সাহায্য করে।

এটি "homeopathic knife" নামে পরিচিত।

গভীর ফোঁড়া বা অ্যাবসেসে খুব ভালো কাজ করে।


৬. Lachesis:

পুঁজ জমে ফুলে ওঠা, যেখানে ব্যথা বাঁ দিক থেকে ডান দিকে যায়।

ঘা ফেটে গেলে আরাম পাওয়া যায়।

---

সার্বিক ব্যবস্থাপনা (General Management):

আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার রাখা।

প্রয়োজনে গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে।

অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণে ধৌত করা।

পুঁজ জমে ব্যথা বেশি হলে ফোঁড়া ফাটাতে হতে পারে (Surgical drainage) – তবে হোমিওপ্যাথিতে তা অনেক সময় এড়ানো সম্ভব।
---

উপসংহার:

সাপুরেশনে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা মূলত ব্যক্তির সামগ্রিক লক্ষণ বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করে। সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করলে ব্যথা, পুঁজ, ইনফ্লেমেশনসহ রোগের সকল উপসর্গ দ্রুত ও নিরাপদে সেরে যায়।




৭. এবসেস বা ফোঁড়া
(Abscess)



১।  প্রশ্ন–২.২৭: এবসেস বা ফোঁড়ার সংজ্ঞা দাও। ফোঁড়ার কারণ ও শ্রেণীবিভাগ কর।

উত্তর:
ফোঁড়ার সংজ্ঞা (Definition of Abscess):
এবসেস বা ফোঁড়া হলো শরীরের কোনো কঠিন বা গভীর টিস্যুতে জীবাণুজনিত প্রদাহের ফলে শ্বেত রক্তকণিকা, মৃত কোষ, জীবাণু এবং কোষ নিঃসৃত তরল পদার্থ দ্বারা পূর্ণ এক ধরনের পুঁজপূর্ণ গহ্বর। এটি একটি স্থানীয় সংক্রমণজনিত পুঁজ সঞ্চয়ের অবস্থা।
উদাহরণ: লিভার এবসেস, ব্রেন এবসেস ইত্যাদি।

ফোঁড়ার কারণ (Causes):

১. প্রদাহজনিত কারণে জীবাণু সংক্রমণের ফলে আক্রান্ত স্থানে বিপুল পরিমাণ শ্বেত রক্তকণিকা (WBC) জমা হয়।

২. এই শ্বেত কণিকা, মৃত ও জীবিত জীবাণু, কোষের অবশেষ এবং রস নিঃসরণ মিলে পুঁজ গঠিত হয়।

৩. সাধারণত,  -

স্ট্যাফাইলোকক্কাস (Staphylococcus), 
স্ট্রেপটোকক্কাস (Streptococcus), 
গনোকক্কাস (Gonococcus) 

প্রভৃতি পায়োজেনিক জীবাণুর আক্রমণে এবসেস তৈরি হয়।

ফোঁড়ার শ্রেণীবিভাগ (Classification of Abscess):

এবসেস বা ফোঁড়াকে নিম্নরূপ শ্রেণিবদ্ধ করা যায়:

১) পায়োজেনিক এবসেস (Pyogenic Abscess):

পায়োজেনিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট এবসেস।

অধিকাংশ সাধারণ ফোঁড়া এই শ্রেণীতে পড়ে।

২) পাইয়েমিক এবসেস (Pyaemic Abscess):

সংক্রমিত পুঁজ রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে একাধিক এবসেস তৈরি করে।

এটি সেপসিস বা পাইইমিয়া অবস্থায় দেখা যায়।

৩) কোল্ড এবসেস (Cold Abscess):

টিউবারকুলার জীবাণু (Mycobacterium tuberculosis) দ্বারা সৃষ্ট এবসেস।

সাধারণ এবসেসের মত তাপ, লালভাব বা তীব্র ব্যথা থাকে না বলে একে “কোল্ড এবসেস” বলা হয়।

৪) রেসিডুয়াল এবসেস (Residual Abscess):

পূর্ববর্তী সংক্রমণ বা ফোঁড়ার অপর্যাপ্ত চিকিৎসার ফলে অবশিষ্ট টিস্যুতে পুনরায় সংক্রমণজনিত এবসেস সৃষ্টি হতে পারে।

এবসেস বা ফোঁড়ার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:

মূলত রোগীর লক্ষণ, অবস্থান, ব্যথার প্রকৃতি, পুঁজ গঠনের ধরণ এবং রোগীর সামগ্রিক মেনটাল ও ফিজিকাল কনস্টিটিউশন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। নিচে এবসেস বা ফোঁড়ার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ আলোচনা করা হলো:

হোমিওপ্যাথিতে এবসেস চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলো—

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ,

পুঁজ গঠনের প্রক্রিয়া দ্রুত করা (if needed),

ফোঁড়া পরিপক্ব হলে তা ভেঙে পুঁজ নিঃসরণে সহায়তা করা,

এবং পরবর্তীতে টিস্যু রিপেয়ার ও রিকারেন্স প্রতিরোধ করা।

---

গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধসমূহ:

১. Hepar Sulphuris Calcareum:

ফোঁড়া যদি অত্যন্ত স্পর্শকাতর, ব্যথাযুক্ত ও ঠান্ডা বাতাসে সংবেদনশীল হয়।

পুঁজ গঠনের পূর্বেই ফোঁড়া ফেটে যায় এমন প্রবণতা।

ফোঁড়া দ্রুত পেকে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে খুব কার্যকর।

ব্যথা সুঁচ ফোটার মতো, এবং উষ্ণ প্রয়োগে আরাম লাগে।


২. Belladonna:

ফোঁড়া প্রাথমিক স্তরে যখন লালচে, গরম ও স্পর্শে ব্যথাযুক্ত হয়।

হঠাৎ আরম্ভ হওয়া প্রদাহ এবং ধমনীসদৃশ স্পন্দন থাকলে এটি উপকারী।


৩. Silicea:

পরিপক্ব ফোঁড়া যেটি সহজে ফাটছে না, অথবা বারবার হয়ে যাচ্ছে।

পুঁজ বের করে দেওয়ার জন্য উপযুক্ত।

দীর্ঘস্থায়ী বা পুরনো এবসেসে অত্যন্ত কার্যকর।


৪. Mercurius Solubilis / Mercurius Vivus:

যখন এবসেস থেকে পুঁজ নিঃসরণ হয় এবং দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব থাকে।

রাতে ঘেমে যাওয়া, মুখে লালা পড়া—এই লক্ষণ থাকলে উপযুক্ত।


৫. Myristica Sebifera:

"Homeopathic knife" বলা হয় একে।

ফোঁড়া দ্রুত পাকিয়ে ফাটিয়ে পুঁজ বের করতে কার্যকর।

শুরুতেই প্রয়োগ করলে অপারেশনের দরকার হয় না অনেক সময়।


৬. Lachesis:

ফোঁড়া বাঁদিকে হলে, স্পর্শ সহ্য করতে না পারলে।

পুরাতন বা বেগুনী রঙের এবসেসের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।


৭. Calcarea Sulphurica:

যদি এবসেস ফেটে গিয়ে পুঁজ বের হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে নির্গমন চলতে থাকে।

Yellow, thick, creamy pus—এর ক্ষেত্রে উপকারী।
---

পটভূমি অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা:

প্রাথমিক পর্যায়ে (inflammation only): Belladonna

পুঁজ গঠনের সময়: Hepar Sulph

পুঁজ বের করার জন্য: Silicea, Myristica

বারবার ফোঁড়া হওয়া: Silicea, Sulphur, Graphites

পুঁজ নিঃসরণ দীর্ঘস্থায়ী হলে: Calcarea Sulph

ডায়াবেটিক রোগীদের এবসেস: Syphilinum (intercurrent), Merc Sol

পরামর্শ:

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যক্তি বিশেষের লক্ষণ অনুযায়ী হয়। এজন্য উপসর্গ বিশ্লেষণ করে ওষুধ নির্বাচন করা উচিত এবং প্রয়োজনে অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উত্তম।


প্রশ্ন ২.২৮: লোম ফোঁড়া বা বয়েলের সংজ্ঞা দাও। ইহার কারণ (প্যাথলজি) ও লক্ষণাবলী লিখ।

উত্তর: সংজ্ঞা:
লোম ফোঁড়া (Boil বা Furuncle) হলো ত্বকের লোমকূপ ও তার আশেপাশের টিস্যুতে স্ট্যাফাইলোকক্কাল ইনফেকশনের কারণে সৃষ্ট একটি পুঁজপূর্ণ প্রদাহযুক্ত ফোঁড়া।

কারণ (প্যাথলজি):
লোম ফোঁড়া সাধারণত Staphylococcus aureus ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। ব্যাকটেরিয়া লোমকূপে প্রবেশ করে Folliculitis সৃষ্টি করে, যা পরে গভীরতর প্রদাহে রূপ নিয়ে ফারাঙ্কল (Furuncle) সৃষ্টি করে। একাধিক ফারাঙ্কল একত্রে হলে কারবাঙ্কল (Carbuncle) গঠিত হতে পারে।
রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে, যেমন ডায়াবেটিস মেলিটাস বা অপুষ্টিতে, এই ধরনের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

লক্ষণাবলী:

আক্রান্ত স্থানে ব্যথাযুক্ত, লাল, ফোলা ও উষ্ণ প্রদাহ

ফোঁড়ার কেন্দ্রে পুঁজ সৃষ্টির প্রবণতা

মাঝে মাঝে একাধিক পুঁজপূর্ণ ছিদ্র দেখা যায়

ফোঁড়া ফেটে গেলে পুঁজ নির্গত হয় এবং উপশম ঘটে

শরীরের ঘাড়, মুখ, পশ্চাৎদেশ বা উরুতে বেশি দেখা যায়

জ্বর ও লিম্ফনোড ফুলে যাওয়ার মতো সাধারণ উপসর্গও থাকতে পারে


বিশেষ দ্রষ্টব্য:
ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে লোম ফোঁড়া হওয়ার প্রবণতা বেশি এবং ইনফেকশন গুরুতর আকার নিতে পারে।

লোম ফোঁড়া বা বয়েলের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:

হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। তবে নিচে কিছু প্রসিদ্ধ ও কার্যকর মেডিসিন দেওয়া হলো:

১. Hepar Sulphuris Calcareum:

ফোঁড়ার মধ্যে প্রচণ্ড ব্যথা এবং সংবেদনশীলতা

সামান্য ঠাণ্ডা বা বাতাসে ব্যথা বেড়ে যায়

পুঁজ দ্রুত বের করতে সাহায্য করে

ফোঁড়া ফুটে যাওয়ার পূর্বাবস্থায় খুব কার্যকর


২. Silicea:

বারবার ফোঁড়া হওয়া (Recurrent Boils)

শরীর পুঁজ বের করতে অক্ষম হলে

দীর্ঘস্থায়ী বা গভীর ফোঁড়ার জন্য

পুঁজ বের করে আনার জন্য উপযোগী


৩. Belladonna:

ফোঁড়া শুরুর অবস্থায়, যখন লালচে, গরম ও ফুলে থাকে

স্পর্শ করলে ব্যথা হয়

জ্বর থাকলে এই ওষুধ উপকারী


৪. Mercurius Solubilis:

রাতের বেলা ফোঁড়ার ব্যথা বেড়ে যায়

অতিরিক্ত ঘাম ও মুখে দুর্গন্ধ

পুঁজযুক্ত ও সান্দ্র নির্গমন


৫. Arsenicum Album:

ফোঁড়া বারবার ফিরে আসে

ব্যথা জ্বালাপোড়া জাতীয়

রোগী খুব দুর্বল ও উদ্বিগ্ন


৬. Myristica Sebifera:

প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে খ্যাত

ফোঁড়া ফুটে যাওয়ার সময় ও পরবর্তী ইনফেকশন ঠেকাতে কার্যকর

অপারেশন এড়াতে ব্যবহার করা হয় অনেক ক্ষেত্রে। 
---

সাধারণ পরামর্শ:

আক্রান্ত জায়গা পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখুন

ফোঁড়ায় হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন

পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন

বারবার হলে ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো অভ্যন্তরীণ সমস্যার খোঁজ করুন। 


৮. ব্যাকটেরিমিয়া
(Bacteraemia)

প্রশ্ন-২.২৯। ব্যাকটেরিমিয়ার সংজ্ঞা দাও। ইহার কারণ (প্যাথলজি) লিখ।

উত্তর: ব্যাকটেরিমিয়ার সংজ্ঞা: যখন কোন বাহ্যিক লক্ষণ প্রকাশ না করিয়া ব্যাকটেরিয়া গুপ্তভাবে টিসু হইতে রক্তে প্রবেশ করে, তাহাকে ব্যাকটেরিমিয়া বলে।

কারণ (প্যাথলজি): রক্তের কালচারে পীড়ার প্রথমাবস্থায় ব্যাকটেরিয়া ধরা পড়ে। পীড়ার শেষের দিকে কোন ব্যাকটেরিয়া থাকেনা। যেমন লোবার নিউমোনিয়ায় প্রথমে রক্তে নিউমোকক্কাস থাকে। কিন্তু শেষ দিকে দেখা যায় না।



৯. লিম্ফেঞ্জাইটিস
(Lymphangitis)


প্রশ্ন ২.৩০: লিম্ফেঞ্জাইটিসের সংজ্ঞা লিখ। ইহার প্যাথলজি বর্ণনা কর।

সংজ্ঞা:
লসিকানালির প্রদাহকে লিম্ফেঞ্জাইটিস (Lymphangitis) বলা হয়। এটি সাধারণত সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের কারণে ঘটে।

প্যাথলজি:
লিম্ফেঞ্জাইটিস প্রধানত Streptococcus pyogenes বা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। সংক্রমণপ্রবণ স্থান হতে ব্যাকটেরিয়া লসিকানালির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেখানকার এন্ডোথেলিয়াল কোষে প্রদাহ সৃষ্টি করে। 
এর ফলে আক্রান্ত লসিকানালি লাল, স্পর্শকাতর ও দড়ির মতো স্ফীত দেখায়। এই প্রদাহের ফলে সংশ্লিষ্ট লসিকাগ্রন্থিগুলোও (lymph nodes) ফোলা, ব্যথাযুক্ত ও স্পর্শসংবেদনশীল হয়ে পড়ে।


লিম্ফেঞ্জাইটিসের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগীর লক্ষণভিত্তিক ও ব্যক্তিগত প্রবণতা অনুযায়ী ওষুধ নির্বাচন করা হয়। লিম্ফেঞ্জাইটিসে প্রদাহ, ব্যথা, জ্বর এবং লসিকাগ্রন্থির ফোলাভাব প্রধান লক্ষণ। নিচে কিছু কার্যকর হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দেওয়া হলো:
---

গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধসমূহ:

1. Belladonna

তীব্র প্রদাহ, রক্তিমভাব, তাপ ও স্পর্শে ব্যথাযুক্ত অবস্থায় উপকারী।

আরম্ভে ব্যবহার করা হয়, যখন রোগ দ্রুত শুরু হয়।


2. Apis Mellifica

ফোলা ও অর্শুভাবপূর্ণ লসিকাগ্রন্থি।

জ্বালাপোড়া ও চিমটি ধরা মতো অনুভূতি থাকে।

ঠান্ডা জিনিসে উপশম হয়।


3. Mercurius Solubilis

পুঁজ সৃষ্টি হওয়ার প্রবণতা থাকলে কার্যকর।

ঘেমে যাওয়ার প্রবণতা এবং দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম থাকলে ব্যবহার হয়।


4. Silicea

দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক ইনফেকশনে এবং পুঁজ বের করার জন্য উপকারী।

শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।


5. Hepar Sulphuris

যদি ইনফেকশন পুঁজে রূপান্তরিত হওয়ার উপক্রম হয় বা হয়ে থাকে।

খুব সংবেদনশীল এবং ঠান্ডায় অবনতি ঘটে।


6. Lachesis

বাম পাশের লসিকানালি আক্রান্ত হলে এবং স্পর্শ সহ্য করতে না পারলে।

দাগ বা রেখা উঠলে এবং অবস্থা ক্রমে খারাপ হলে প্রযোজ্য।


7. Arsenicum Album

দাহ ও জ্বালার সাথে দুর্বলতা ও উদ্বেগ থাকলে কার্যকর।

রোগী সাধারণত অস্থির এবং ঠান্ডায় আরাম পায় না।



১০. লিম্ফাডিনাইটিস
(Lymphadenitis)

প্রশ্ন ২.৩১: লিম্ফ্যাডেনাইটিসের সংজ্ঞা দাও। ইহার কারণ (প্যাথলজি) লিখ ও বর্ণনা দাও।

উত্তর:
লিম্ফ্যাডেনাইটিসের সংজ্ঞা:
শরীরের কোনো সংক্রমিত বা বিষদূষিত স্থানের ড্রেনেজ অঞ্চলের লসিকাগ্রন্থির প্রদাহকে লিম্ফ্যাডেনাইটিস (Lymphadenitis) বলে।

কারণ (প্যাথলজি) ও বর্ণনা:
লিম্ফ্যাডেনাইটিস প্রধানত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ দ্বারা সৃষ্টি হয়।

সাধারণত Streptococcus এবং Staphylococcus প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া এর জন্য দায়ী। 
সংক্রমিত স্থান হইতে জীবাণু লসিকানালী পথে লসিকাগ্রন্থিতে পৌঁছে প্রদাহ সৃষ্টি করে। 
প্রদাহের ফলে গ্রন্থিগুলো স্ফীত, স্পর্শে বেদনাদায়ক এবং লালচে হয়ে যায়। কখনও কখনও গ্রন্থির মধ্যে পুঁজ সঞ্চিত হয়ে অ্যাবসেস (abscess) গঠন করে।

লিম্ফ্যাডেনাইটিস সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে:
১. তরুণ (Acute) লিম্ফ্যাডেনাইটিস – হঠাৎ আরম্ভ হয় এবং তীব্র উপসর্গ দেখা যায়।

২. পুরাতন (Chronic) লিম্ফ্যাডেনাইটিস – দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ, যা সাধারণত টিউবারকুলার সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে।


লিম্ফ্যাডেনাইটিসের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও ব্যবহৃত মেডিসিনসমূহ:

চিকিৎসার মূলনীতি:
হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা ব্যক্তিকেন্দ্রিক, তাই রোগীর উপসর্গ, প্রকৃতি, মেন্টাল অবস্থা এবং ইতিহাস অনুযায়ী ওষুধ নির্বাচন করা হয়। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ আছে যেগুলি লিম্ফ্যাডেনাইটিসে প্রাথমিকভাবে বিবেচনায় আনা হয়।

---

গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ঔষধসমূহ:

১. Belladonna:

যদি প্রদাহ তীব্র হয়, গ্রন্থি লাল, গরম, ফুলে থাকে এবং স্পর্শে অত্যন্ত ব্যথা হয়।

আরম্ভকালীন (acute) অবস্থায় ভালো কাজ করে।


২. Hepar Sulphuris Calcareum:

যখন গ্রন্থি পেকে পুঁজ জমেছে বা পুঁজ হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

ঠান্ডায় সংবেদনশীল, সামান্য বাতাসেও কাঁপুনি লাগে।

অ্যাবসেস বা ফোঁড়ার ক্ষেত্রে খুব উপকারী।


3. Mercurius Solubilis:

গ্রন্থি ফুলে ব্যথা করছে এবং মুখে অতিরিক্ত লালা ঝরছে, জিহ্বায় দাগ, ঘাম বেশি—এই লক্ষণগুলো থাকলে ব্যবহার হয়।

রাতের সময় উপসর্গ বেড়ে যায়।


৪. Silicea:

দীর্ঘস্থায়ী (chronic) লিম্ফ্যাডেনাইটিসে, বিশেষ করে যখন পুঁজ সহজে নির্গত হচ্ছে না।

শরীর দুর্বল, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, ঘন ঘন সংক্রমণ হয়।

পুঁজ নির্গমনে সহায়তা করে।


৫. Calcarea Carbonica:

শিশু বা স্থূল দেহের রোগীদের ক্ষেত্রে, যারা ঠান্ডা সহজে ধরে এবং ঘাড়ের চারপাশে গ্রন্থি ফুলে থাকে।

মানসিকভাবে ভয়, দুশ্চিন্তা বেশি থাকে।


৬. Tuberculinum:

বারবার লসিকাগ্রন্থি ফুলে যায় বা টিউবারকুলার ইতিহাস থাকলে ব্যবহৃত হয়।

দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল কেসে মায়াজমেটিক রেমেডি হিসেবে কার্যকর।


৭. Lycopodium:

ডানদিকে গ্রন্থি ফুললে, অথবা যদি রোগ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা ও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির সঙ্গে থাকলে ভালো কাজ করে।
---

সহায়ক দিকনির্দেশনা:

Case taking খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র ফিজিকাল লক্ষণ নয়, রোগীর মেন্টাল অবস্থা, অতীত ইতিহাস, পারিবারিক রোগপ্রবণতা সব বিবেচনায় নিয়ে ওষুধ নির্বাচন করতে হবে।



১১. ইরিসিপেলাস
(Erysipelas)


প্রশ্ন ২.৩২: ইরিসিপেলাসের সংজ্ঞা, কারণ ও লক্ষণ বর্ণনা কর।

উত্তর:
সংজ্ঞা: ইরিসিপেলাস হলো স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট ত্বক ও সাবকিউটেনিয়াস টিস্যুর একটি তীব্র, সংক্রামক এবং সীমারেখাযুক্ত প্রদাহজনিত রোগ।

কারণ (Pathology):
ইরিসিপেলাস সাধারণত Streptococcus pyogenes (Group A β-hemolytic streptococcus) জীবাণুর সংক্রমণে হয়ে থাকে।

এ ছাড়াও Staphylococcus aureus দায়ী হতে পারে। 

জীবাণুটি ত্বকের কোনো কাটা, ঘষা, ফাটা বা সংক্রমিত ক্ষত দিয়ে প্রবেশ করে। মুখমণ্ডল, হাত, পা কিংবা ত্বকের অন্য যে কোনও উন্মুক্ত অংশে এই রোগটি বেশি দেখা যায়।

লক্ষণাবলী (Clinical Features):

১. প্রদাহযুক্ত স্থানটি লালচে, উঁচু এবং স্পষ্ট সীমানাযুক্ত হয়। স্থানটি উষ্ণ, ফুলে ওঠা ও স্পর্শে ব্যথাযুক্ত হয়।

২. আক্রান্ত স্থানে টান ধরার মতো ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হয়।

৩. হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার জ্বর, কাঁপুনি, মাথাব্যথা, গা-ব্যথা ইত্যাদি সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়।

৪. নিকটবর্তী লিম্ফ গ্ল্যান্ড ফুলে যেতে পারে (lymphadenopathy)।

৫. জ্বরের তীব্রতা বাড়লে বমি, প্রলাপ বা স্নায়বিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

৬. জটিলতায় পুঁজ জমা (abscess), সেপসিস, এন্ডোকার্ডাইটিস, নিউমোনিয়া, অথবা গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস দেখা দিতে পারে।

নোট:
এই রোগের দ্রুত চিকিৎসা না করলে টক্সিমিয়া ও অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে যা প্রাণঘাতী হতে পারে।


প্রশ্ন-২.৩৩। ইরিসিপেলাসের জটিল উপসর্গ কি কি?

উত্তর: জটিল উপসর্গঃ

i) ব্রেণের উপরের আবরণ ও মেনিনজেস আক্রান্ত হইতে পারে।

ii) হৃদপিণ্ড আক্রান্ত হইতে পারে ও এন্ডোকার্ডাইটিস হইতে পারে।

iii) প্রচণ্ড টক্সিমিয়া দেখা দিতে পারে, রক্তে শ্বেত কনিকা বৃদ্ধি পায়।

iv) ফুসফুস আক্রান্ত হইতে পারে।

v) কিডনী প্রদাহ হইতে পারে, প্রস্রাব কমিয়া যায় বা প্রস্রাব বন্ধ হইয়া যাইতে পারে।


ইরিসিপেলাসের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা :
ইরিসিপেলাসের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা রোগীর লক্ষণ, অবস্থার প্রকৃতি ও মানসিক-শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়। নিচে ইরিসিপেলাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ও তাদের প্রয়োগ সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
---

ইরিসিপেলাসের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

১. Belladonna

প্রথম পর্যায়ে, তীব্র লালভাব, গরম অনুভব, ফুলে ওঠা, স্পর্শে ব্যথা ও জ্বালা ভাব থাকলে।

জ্বর থাকলেও মাথা গরম, চোখ লাল, ঘুমের মধ্যে প্রলাপ—এগুলো থাকলে উপযুক্ত।


২. Apis Mellifica

আক্রান্ত অংশটি ফুলে ওঠে, জ্বালাপোড়া করে এবং স্পর্শে ব্যথা হয়।

ঠান্ডা জিনিসে আরাম, গরমে কষ্ট।

চোখের আশেপাশে বা মুখমণ্ডলে ইরিসিপেলাস হলে বিশেষ কার্যকর।


৩. Rhus Toxicodendron

প্রদাহের সাথে চুলকানি ও ফুসকুড়ি থাকে।

গরম জলে বা সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়।

বৃষ্টি বা ঠান্ডা আবহাওয়ার পর এই রোগ দেখা দিলে উপযুক্ত।


৪. Cantharis

ত্বকে পুঁজ জমার প্রবণতা, জ্বালা ও জ্বালাপোড়া যদি প্রধান লক্ষণ হয়।

ফোস্কার মতো উপসর্গ দেখা দিলে উপকারী।


৫. Graphites

যদি ঘন ঘন পুনরাবৃত্তি হয় এবং ত্বকে পুঁজ বা পিচ্ছিল স্রাব দেখা দেয়।

চর্মরোগের ইতিহাস থাকলে বা ত্বকে পুরুত্ব ও শুষ্কতা থাকলে উপযুক্ত।


৬. Lachesis

বাম দিক থেকে ডান দিকে রোগ বিস্তার হলে।

ছোঁয়া সহ্য করতে পারে না, ঘন ঘন কথা বলে, তীব্র উপসর্গে উপকারী।


৭. Sulphur

রোগ বারবার ফিরে এলে বা দীর্ঘমেয়াদী ইরিসিপেলাস হলে।

আগের চিকিৎসা কাজ না করলে বা কনস্টিটিউশনাল চিকিৎসায় বিবেচ্য।
---

সাধারণ নির্দেশনা:

রোগীর শরীর ও মন—উভয়ের লক্ষণ বিবেচনা করে ওষুধ নির্বাচন করতে হবে।



১২. সেলুলাইটিস
 (Cellulitis)

প্রশ্ন-২.৩৪। সেলুলাইটিসের সংজ্ঞা, কারণ ও লক্ষণ লিখ।

উত্তর: সেলুলাইটিসের সংজ্ঞা: যদি কোষময় তন্ত্রর প্রদাহ সাপুরেশন স্নাফিং বা গ্যাংগ্রীনে' পরিণত হয় তবে তাহাকে সেলুলাইটিস বলে।

কারণ: সাধারণত: স্ট্রেপটোকক্কাস নামক জীবাণু সংক্রমণে ইহা ঘটিয়া থাকে।

লক্ষণ: আক্রান্ত স্থান গরম, কোমল ও স্ফীত হয়। লিফভেসেল আক্রান্ত হইলে প্রদাহ হয় এবং প্রদাহিত স্থান লালবর্ণ হইতে পারে। অতিশয় যন্ত্রণা হয় এবং রোগী অস্বস্তিতে ভোগে। রক্তাধিক্যের ফলে প্রদাহিত স্থান গরম হয়, ব্যথা অনুভব করে।



১৩. আলসার বা ক্ষত
(Ulcer)

প্রশ্ন ২.৩৫: আলসার বা ক্ষতের সংজ্ঞা দাও। ইহার শ্রেণীবিভাগ ও কারণ বর্ণনা কর।

উত্তর:
সংজ্ঞা:
আলসার বা ক্ষত (Ulcer) হলো ত্বক, শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি বা দেহের কোনো এপিথেলিয়াল পৃষ্ঠের কোষ সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে গভীর গহ্বর সৃষ্টি হওয়া, যা সাধারণত সংক্রমণ, আঘাত বা রক্তসংবহনজনিত কারণে হয়ে থাকে। ক্ষতের স্থান থেকে তন্তু ক্ষয় হয়ে যাওয়ার ফলে ক্রমাগত টিস্যু বিনষ্ট হয়।

শ্রেণীবিভাগ: আলসার বিভিন্নভাবে শ্রেণীবিভাজন করা যায়। 
প্রধান শ্রেণীগুলি হলো:

1. অ্যাকিউট বা তরুণ আলসার: 
আরোগ্যযোগ্য ও সাধারণত ব্যথাহীন।


2. ইনফ্ল্যামেটরি (প্রদাহজনিত) আলসার: প্রদাহযুক্ত, লাল এবং ব্যথাযুক্ত।


3. স্প্রেডিং আলসার: চারদিকে বিস্তার লাভ করে, কিন্তু সারে না।


4. গ্যাংগ্রিনাস বা পচনশীল আলসার: সংক্রমণ ও পচনের জন্য মারাত্মক ব্যথা হয়।


5. স্লাফিং আলসার: গভীর ক্ষতযুক্ত, সাধারণত সিফিলিস বা ধাতব বিষক্রিয়ায় হয়।


6. ক্রনিক (পুরাতন) আলসার: দীর্ঘদিন স্থায়ী ক্ষত, বারবার রিল্যাপ্স করে।


7. ভেরিকোজ আলসার: শিরার চাপজনিত কারণে সৃষ্ট, সাধারণত পায়ের নিচের অংশে হয়।


8. ফিস্টুলাস আলসার: দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত যা নালির মত গহ্বর তৈরি করে।


9. গ্যাস্ট্রিক আলসার: পাকস্থলীতে অবস্থান করে, খাদ্য গ্রহণে ব্যথা বৃদ্ধি পায়।


10. ডিওডেনাল আলসার: ক্ষুদ্রান্ত্রের ডিওডেনামে সৃষ্ট হয়, উপবাসে ব্যথা বাড়ে।



কারণসমূহ:

1. আঘাতজনিত: ছুরি-কাঁচি, পেরেক, কাঁচ বা যন্ত্রপাতির দ্বারা আঘাত পেলে ক্ষত হতে পারে।


2. সংক্রমণজনিত: ব্যাকটেরিয়া (যেমন: Mycobacterium tuberculosis), ভাইরাস বা ছত্রাক দ্বারা সংক্রমণ হলে ক্ষত সৃষ্টি হয়।


3. রক্ত সঞ্চালনের অভাব: বিশেষ করে ভেরিকোজ ভেইন বা ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে।


4. রাসায়নিক বা বিষক্রিয়া: পারদ, আর্সেনিক ইত্যাদি ধাতব বিষক্রিয়ায়।


5. পর্যাপ্ত ড্রেসিং না হওয়া: অপারেশনের পর সঠিকভাবে ক্ষত পরিচর্যা না হলে সংক্রমণজনিত ক্ষত হয়।



১৪. কার্বংকল বা বিষ ফোঁড়া
(Carbuncle)


প্রশ্ন ২.৩৬: কার্বাংকলের সংজ্ঞা দাও। ইহার কারণ (প্যাথলজি) ও লক্ষণ লিখ।

উত্তর:

কার্বাংকলের সংজ্ঞা:

চর্ম ও চর্মতলের সাবকিউটেনিয়াস টিস্যুর বহু লোমকূপ ও সেবেসিয়াস গ্রন্থি একত্রে সংক্রমিত হয়ে যে পচনশীল, গভীর ও বেদনার্ত ক্ষতের সৃষ্টি করে, তাকে কার্বাংকল (Carbuncle) বলা হয়। এটি একধরনের মারাত্মক বিষফোড়া যা একাধিক সংক্রমিত লোমকূপ থেকে শুরু হয়ে চর্মতলে বিস্তৃত হয়।

কারণ ও প্যাথলজি (Pathology):

কার্বাংকল সাধারণত Staphylococcus aureus জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট হয়। জীবাণু লোমকূপের মাধ্যমে চর্মে প্রবেশ করে এবং চর্মতলে প্রসারিত হয়ে বহু লোমকূপ ও সেবেসিয়াস গ্রন্থিকে আক্রান্ত করে। একাধিক ফোঁড়া একত্র হয়ে বৃহৎ পুঁজযুক্ত পচনশীল ক্ষতের সৃষ্টি করে। সংক্রমিত স্থানটি ফোলা, লাল ও কঠিন হয়ে যায় এবং মধ্যভাগে নেক্রোসিস বা টিস্যু মৃত্যুর ফলে নরম কেন্দ্রীয় অংশ তৈরি হয়। চর্মে একাধিক পুঁজ নির্গমনের ছিদ্র বা sinus সৃষ্টি হয়, যেখান দিয়ে পুঁজ অল্প পরিমাণে নির্গত হয়।

লক্ষণসমূহ (Symptoms):

  • সংক্রমিত স্থানটি লাল, ফোলা ও অত্যন্ত বেদনাদায়ক হয়
  • মাঝখানে নরম, কেন্দ্রীয় নেক্রোটিক অঞ্চল
  • একাধিক পুঁজ নিঃসরণকারী ছিদ্র থাকে
  • উচ্চমাত্রার জ্বর ও বিষক্রিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়
  • দুর্বলতা, মাথাব্যথা ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হতে পারে
  • রক্তে সংক্রমণ (Septicemia) ঘটতে পারে
  • ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কার্বাংকল হওয়ার ঝুঁকি বেশি। 
কার্বাংকলের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও ওষুধ আলোচনা:

চিকিৎসার মূলনীতি:

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগের বাহ্যিক লক্ষণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ কারণ, মায়াজম, এবং রোগীর সামগ্রিক মানসিক ও শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে ওষুধ নির্বাচন করা হয়। কার্বাংকল সাধারণত সিকোটিক বা সিফিলিটিক মায়াজমের প্রভাবযুক্ত হয়ে থাকে। চিকিৎসায় প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে — প্রদাহ ও সংক্রমণ কমানো, পুঁজ নিষ্কাশন সহজ করা, ব্যথা উপশম, ও রক্ত বিশুদ্ধকরণ।

প্রধান হোমিওপ্যাথিক ওষুধসমূহ:

1. Anthracinum

এটি কার্বাংকল ও অ্যানথ্রাক্স জাতীয় বিষাক্ত ফোঁড়ার প্রধান প্রতিষেধক।

যখন ক্ষতটি বিষাক্ত, নীলচে বা কালচে রঙের হয়, কেন্দ্রীয় নেক্রোসিস থাকে।

পুঁজ দুর্গন্ধযুক্ত, জ্বরসহ বিষক্রিয়ার লক্ষণ থাকলে এটি উপকারী।

2. Hepar Sulphuris Calcareum

ক্ষত ফেটে পুঁজ পড়ার সময় এবং ব্যথা খুব তীব্র হলে উপকারী।

রোগী খুব ঠান্ডা-সংবেদনশীল এবং স্পর্শ সহ্য করতে পারে না।

পূর্ণাঙ্গ ফোঁড়া তৈরিতে সাহায্য করে ও সংক্রমণ কমায়।

3. Arsenicum Album

ক্ষত পুড়ে যাওয়া মতো ব্যথাযুক্ত, সন্ধ্যার পর ব্যথা বাড়ে।

রোগী খুব দুর্বল, অস্থির ও ভীতসন্ত্রস্ত থাকে।

পুঁজ দুর্গন্ধযুক্ত ও চর্মের আশেপাশে নেক্রোসিস থাকলে উপকারী।

4. Silicea

ক্ষত পূর্ণভাবে নিরাময়ের জন্য কার্যকর।

পুঁজ নিষ্কাশনে সাহায্য করে এবং পুনরুদ্ধারে সহায়ক।

দীর্ঘস্থায়ী বা বারবার ফোঁড়া হলে উপকারী।

5. Lachesis

নীলাভ-কালো রঙের কার্বাংকল, যেখানে কেন্দ্রীয়ভাবে টিস্যু নষ্ট হয়।

স্পর্শে সংবেদনশীলতা, ও ঘুম থেকে উঠে উপসর্গ বৃদ্ধি পায়।

6. Tarentula Cubensis

এটি প্রচণ্ড বিষাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত কার্বাংকলের ক্ষেত্রে খুব কার্যকর।

অনেক সময় Anthracinum-এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

7. Belladonna (প্রাথমিক পর্যায়ে)

যখন প্রদাহ শুরু হয়, স্থান লাল, ফোলা ও উষ্ণ থাকে।

ব্যথা প্রচণ্ড, তবে এখনো পুঁজ গঠিত হয়নি – এই পর্যায়ে ভালো কাজ করে।

8. Mercurius Solubilis / Mercurius Vivus

পূজযুক্ত, দুর্গন্ধযুক্ত ক্ষতের জন্য উপকারী।

রাতের বেলায় উপসর্গ বৃদ্ধি পায় এবং পেশীতে ব্যথা থাকতে পারে।

সম্পূরক পরামর্শ:

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস থাকলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: সংক্রমিত স্থান সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।

পুষ্টিকর খাদ্য: রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পুষ্টিকর খাবার দেওয়া দরকার।



-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ
বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি, 
ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা    
প্রভাষক, 
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ। 

আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। 

>Share by:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন