প্যাথলজি, ক্লাস # ১ , প্রদাহ (তরুণ ও পুরাতন) (Inflammation)

১. প্রদাহ (তরুণ ও পুরাতন)

(Inflammation-Acute & chronic)

প্রশ্ন-২.১। প্রদাহ কাহাকে বলে?

উত্তর: দেহ অভ্যন্তরে কোথাও কোন টিসুর মধ্যে যদি বহিরাগত কোন পদার্থ, জীব বা জড় প্রবেশ করে তাহা হইলে শ্বেতকণিকা ও রক্তরসের সাহায্যে শরীর এই অবাঞ্চিত পদার্থকে অপসারনের চেষ্টা করে। অপসারণ ক্রিয়ার প্রস্তুতিপর্ব হইতে চূড়ান্ত পর্ব পর্যন্ত পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখিয়া যে পরিবর্তন হয় তাহাকে প্রদাহ বলে।
 প্রদাহের সূচনা যে কারণেই হোক না কেন সবক্ষেত্রেই মোটামুটি একই ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়।

প্রশ্ন-২.২। প্রদাহের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কি কি সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

অথবা, প্রদাহের লক্ষণ বা চিহ্নসমূহ লিখ।

অথবা, প্রদাহের কার্ডিনাল সাইনগুলি কি কি?

উত্তর: প্রদাহের মূল বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণসমূহ নিম্নরূপ-

১) প্রদাহিত স্থান লালবর্ণ হওয়া-
প্রদাহিত স্থান রক্তাধিক্যতার ফলে লালবর্ণ ধারণ করে। আঘাতপ্রাপ্ত বা জীবাণু প্রবেশ স্থলের স্থানিক 'রক্তবাহী ধমনীসমূহ আকারে বৃদ্ধি পায়, ফলে সেই জায়গায় অধিক পরিমাণে রক্ত প্রবাহিত হয় এবং স্থানটি লালবর্ণ ধারণ করে।

২) প্রদাহিত স্থান ফুলিয়া যাওয়া-
এনডোথেলিয়াম, ফাইব্রোব্লাস্ট কোষের সংখ্যাবৃদ্ধি ও ক্ষরণ জমা হওয়ার সময় স্থানটি ফুলিয়া উঠে। অধিক রক্ত ও তম্ভরস জমা হওয়ার কারণেই স্থানটি স্থানীয়ভাবে স্ফীত দেখা যায়।

৩) প্রদাহিত স্থানে তাপ সৃষ্টি-
রক্তাধিক্যের ফলে প্রদাহিত স্থানটি গরম হয়। প্রদাহিত স্থানে শ্বেতকণিকাসমূহ দলে দলে সমবেত হয় এবং জীবাণুসমূহকে চতুর্দিক হইতে ঘিরিয়া ফেলে ফলে দুই পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়, ফলে স্থানটিতে বেশী উত্তাপ অনুভূত হয়।

৪) প্রদাহিত স্থান ব্যথাযুক্ত হওয়া-
প্রদাহিত স্থানে অতিরিক্ত প্রদাহিত রস জমা হওয়ার কারণে চর্ম টান টানভাবে প্রসারিত হয় এবং চর্মের নীচেই তন্তুতে অবস্থিত স্নায়ুর উপর চাপ পড়ার ফলে ব্যথার সৃষ্টি হয়।

৫) প্রদাহিত স্থানের কর্মক্ষমতা লোপ-
প্রদাহিত স্থান উত্তপ্ত হওয়া, ফুলিয়া উঠা, ব্যথাযুক্ত হওয়া প্রভৃতি কারণে স্থানটির স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা লোপ পায়।




প্রশ্ন-২.৩। প্রদাহের প্যাথলজিজনিত পরিবর্তন লিখ।

অথবা, প্রদাহের রোগ তত্ত্ব লিখ।

উত্তর: প্রদাহের প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তনকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।

ক) রক্তপ্রবাহজনিত পরিবর্তন।

খ) রক্তক্ষরণজনিত পরিবর্তন।

গ) কলাজনিত পরিবর্তন।

ক) রক্তপ্রবাহজনিত পরিবর্তন-
প্রদাহে হঠাৎ রক্তপ্রবাহজনিত পরিবর্তন বেশী লক্ষ করা যায়। প্রথমে স্নায়ুতন্ত্রের উত্তেজনায় ক্যাপিলারীসমূহ সংকুচিত হয়। কিন্তু এই সংকোচন ক্ষণস্থায়ী। ইহার পর রক্তনালীসমূহ সংখ্যায় বৃদ্ধি পায় এবং স্ফীত হয়। রাসায়নিক কারণে ইহা ঘটিয়া থাকে। ইহা ছাড়া বহু ক্যাপিলারী যেগুলি ইতিপূর্বে বন্ধ ছিল সেগুলি খুলিয়া যায়। তাই প্রদাহিত স্থানে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং রক্তবদ্ধতা দেখা দেয়। তীব্র ক্ষেত্রে রক্তজমাটও সৃষ্টি হয়। দেহের রক্তনালীর স্ফীতি উত্তেজকের দ্বারা সরাসরি প্রভাবে অথবা রাসায়নিক বস্তুর মাধ্যমে হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে স্নায়ুজনিত কারণেও হইয়া থাকে।

খ) ক্ষরণজনিত পরিবর্তন-
রক্তপ্রবাহে কোষজনিত পরিবর্তনের ফলে প্রদাহস্থানে প্রোটিনসমৃদ্ধ তরল পদার্থ জমা হয়। ইহার আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.০০৪ এর উপর। রক্ত এবং কলা রস হইল ক্ষরণের কারণ।

১) রক্তের মধ্যে নিউট্রোফিল, লিমফোসাইট, মনোসাইট প্রভৃতি থাকে।

২) প্রদাহ হইতে তৈরী হয় ম্যাকরোফেজ।

সিরাম, রক্ত ও অন্তকলারস দ্বারা কলারস গঠিত। রক্তের সাথে অপসোনিয়াম, কমপ্লিসেন্ট, ইমিউনো গোবিউলিন এবং জীবাণু ধ্বংস করার ক্ষমতা থাকে।

গ) কলাজনিত পরিবর্তন-
আক্রান্ত কলার স্থায়ীভাবে দুই রকম পরিবর্তন হয়। যথা-অবক্ষয়জনিত ও কলাবৃদ্ধি। প্রদাহ সৃষ্টিকারী কারণ যখন তীব্র হয় তখন কলাতে অবক্ষয় সৃষ্টি হয়। যখন উত্তেজক মাত্রা অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী হয় তখন কলার সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে।



প্রশ্ন-২.৪। প্রদাহের কারণসমূহ লিখ।

উত্তর: প্রদাহের কারণসমূহ প্রধানতঃ দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা-মুখ্য ও গৌণ কারণ।

ক) মুখ্য কারণ:

১) জীবাণুঘটিত-
জীবাণু দ্বারা আক্রমণ, জীবাণু দেহের মধ্যে প্রবেশ ও সংক্রমণ প্রদাহের অন্যতম কারণ। জীবাণু আক্রমণে দেহকোষ বিপদের সম্মুখীন হয় এবং একটা বিচিত্র ফিজিওলজিক্যাল পরিবর্তন শুরু হয়।

ব্যাকটেরিয়া-স্ট্যাফাইলোকক্কাস, স্ট্রেপটোকক্কাস, গণোকক্কাস, মেনিনগো-কক্কাস প্রভৃতি।

ছত্রাক-ক্যানডিডা।

পরজীবি-মাইক্রোফাইলেরিয়া, প্রভৃতি।

২) অক্সিজেন ঘটিত-
শারীরিক আঘাত, অতি উচ্চতাপ বা অতি নিম্নতাপ, বিদ্যুৎপ্রবাহ, তীব্র অম্ল, জীবাণু, ভাইরাস প্রভৃতির জন্য কোষের গঠন ও ক্রিয়াকলাপ অস্বাভাবিক হইতে পারে ফলে অক্সিজেনঘটিত প্রক্রিয়ায় গোলযোগ ঘটিতে পারে। ফলে প্রদাহ সৃষ্টি হইতে পারে।

৩) রাসায়নিক কারণ-
এসিড বিষ যেমন হাইড্রোক্লোরিক এসিড, কার্বলিক এসিড, ফসফোরাস প্রভৃতি, ফেনোল অম্ল, ক্ষার প্রভৃতি।

৪) রক্তজালক বা সূক্ষ্ম উপশিরা ঘটিত-
রক্তজালক এবং উপশিরাগাত্রে এমন কিছু পরিবর্তন ঘটে যে রক্তের জলীয় অংশ রক্তনালীর বাহিরে আসে। ফলে প্রদাহ দেখা দেয়।

৫) অ্যান্টিজেন-
অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়ার কারণ যেমন-হাইপার-সেনসিটিভিটি, এলার্জি প্রভৃতি।

৬) রক্ত রস ঘটিত-
প্রোটিন সমৃদ্ধ রক্তরস রক্তনালীর বাহিরে টিসুর মধ্যে জমা হয় ফলে সংশিষ্ট স্থান স্ফীত হইয়া উঠে।

খ) গৌণ কারণ:

ক) আমিষ, চর্বি বা শর্করাজনিত পুষ্টিহীনতা, রক্তহীনতা, হৃদপিণ্ডের দুর্বলতা প্রভৃতি।

খ) বহুমূত্র ও এই জাতীয় অন্যান্য পীড়া।

গ) রক্তে কোন উপবিষ থাকিলে যেমন-সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস প্রভৃতি।

ঘ) অস্বাস্থ্যকর স্থানে বসবাসের কারনে।



প্রশ্ন-২.৫। প্রদাহের শ্রেণীবিভাগ লিখ।

উত্তর: প্রদাহের স্থায়ীত্বকাল হিসাবে প্রদাহ তিন প্রকার। যেমন-
ক) তরুণ প্রদাহ (Acute Inflammation): কয়েক ঘন্টা হইতে কয়েক

খ) সাব একিউট প্রদাহ (Sub Acute Inflammation): স্থায়িত্ব কয়েক দিন হইতে কয়েক সপ্তাহ।

গ) পুরাতন প্রদাহ (Chronic Inflammation): স্থায়িত্ব কয়েক সপ্তাহ বা মাস বা বৎসর পর্যন্ত।

ইহা ছাড়া নিম্নলিখিত ভাবেও প্রদাহকে ভাগ করা যায়।.

১) শেক্ষাত্মক প্রদাহ-
মৃদু সর্দির আক্রমণের ফলে স্থান বিশেষের প্রদাহের ফলে শেষ্মার প্রাচুর্য ঘটে। যেমন নাক, শ্বাসনালী, অন্ত্র প্রভৃতি।।

২) পুঁজোৎপাদী প্রদাহ-
স্ট্যাকাইলোকক্কাস, স্ট্রেপটোকক্কাস, গনোকক্কাস প্রভৃতি জীবাণুর আক্রমণে আক্রান্ত স্থানে পূজ সৃষ্টি হইয়া প্রদাহ হয়।

৩) শৈরিক বা রক্তায়ু প্রদাহ-
দেহের যেখানে কোমল শিথিল টিসু থাকে এবং যেখানে রক্তনালী হইতে রক্ত রস প্রায় বিনাবাধায় বাহির হইয়া আসে ও প্রদাহ সৃষ্টি করে।

৪) ফাইব্রিনাস প্রদাহ-
যে প্রদাহে নির্যাসের সাথে প্রচুর পরিমাণে ফাইব্রিন থাকে তাহাকে বলে ফাইব্রিনাস প্রদাহ।

৫) ডিপথিরিয়াবৎ প্রদাহ-
শরীরের কোন শেষ্মা ঝিলী যদি এই ধরনের ফাইব্রিনাস প্রদাহে আক্রান্ত হয় তাহাকে ডিপর্থিরিয়াবৎ প্রদাহ বলে।

৬) রক্তস্রাবী প্রদাহ-
যে প্রদাহে নির্যাসের সাথে অজস্র লোহিত কণিকা মিশ্রিত থাকে তাহাকে রক্তস্রাবী প্রদাহ বলে।

৭) টিসুবিনষ্টকারী প্রদাহ-
যে প্রদাহে টিসুর পরিমাণগত বিনাশ ঘটে তাহাকে টিসু বিনষ্টকর প্রদাহ বলে।




প্রশ্ন-২.৬। প্রদাহের ফলাফল লিখ।

উত্তর: প্রদাহের ফলাফল নিম্নরূপ-

ক) আরোগ্যলাভ-
দেহের প্রতিরোধ শক্তি ভাল থাকিলে সামান্য প্রদাহ একটু ব্যথাবেদনা ও জ্বালাযন্ত্রণার পর ভাল হইয়া যায়।

খ) পুঁজ সৃষ্টি হইয়া পাকিয়া যাওয়া-
অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রদাহের পরিমাণ ফল জটিল ও ভয়াবহ হয়। মৃত শ্বেত কণিকা ও জীবাণুগুলি পচিয়া রক্তরসের সাথে মিশিয়া পুঁজের সৃষ্টি করে। পূজ উৎপাদনকারী প্রদাহ যে কোন সময় ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে।

গ) পঁচনশীল ক্ষত সৃষ্টি-
টিসুবিনষ্টকারী প্রদাহে গ্যাংগ্রীন বা পচনশীল ক্ষত সৃষ্টি হয়।

ঘ) কাঠিন্যপ্রান্তী-
তরুণ অবস্থায় প্রদাহ ভাল হইয়া যাওয়ার পর বা বার বার প্রদাহ সৃষ্টির ফলে প্রদাহ স্থান আঁশযুক্ত তন্ত্র দ্বারা পুরাতন হইয়া কঠিনাকীর ধারণ করে।

ঙ) নানা প্রকার জটিলতা সৃষ্টি-
ফাইব্রিণযুক্ত প্রদাহে মুখ গহ্বরের ঝিলী আবরণে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, উহা ডিপথিরিয়া রোগের লক্ষণ। ফ্লেগমোনাস প্রদাহে টিসুর স্বাভাবিক ফাঁকে ফাঁকে পুঁজ সৃষ্টি হইয়া মারাত্মক রূপ নেয়। আসঞ্জক প্রদাহে যক্ষ্মারোগ ও নিউমোকক্কাস জীবাণুর আক্রমণ প্রকাশ পায়। শোনিতাক্ত প্রদাহে রিকেটশিয়া জীবাণুর আক্রমণ প্রকাশ পায়।

চ) প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন-
প্রদাহের ফলে প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন ঘটিতে পারে। যথা-স্থানীয় পরিবর্তন, কেন্দ্রীয় পরিবর্তন, প্রক্রিয়াগত পরিবর্তন।




প্রশ্ন-২.৭। তরুণ প্রদাহের সংজ্ঞা ও প্রকার ভেদ লিখ।

উত্তর: তরুণ প্রদাহের সংজ্ঞা:
যে প্রদাহ হঠাৎ সৃষ্টি হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে বিলীন হয় তাহাকে তরুণ প্রদাহ বলে।

 তরুণ প্রদাহের প্রকার ভেদ:

১) ক্যাটারাল প্রকৃতির।

২) মেমব্রেনাস প্রকৃতির।

৩) সিরাস প্রকৃতির।

৪) ফাইব্রিনাস প্রকৃতির। ।

৫) হেমোরেজ প্রকৃতির।

৬) সাপুরেটিভ প্রকৃতির।

৭) এলার্জিক প্রকৃতির।

৮) নেক্রোটিক প্রকৃতির।



প্রশ্ন-২.৮। তরুণ প্রদাহের কারনসমূহ কি কি?

উত্তর: তরুণ প্রদাহের কারন:

তরুণ প্রদাহের কারন সমূহ নিম্ন রূপঃ

i) জীবিত জীবাণুর সংক্রমণ
যেমন-ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইট প্রভৃতি।

ii) ব্যাহ্যিক কারণ বা অজৈব উত্তেজক কারণ,
 যেমন-আঘাত লাগা, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম, এক্সরে, তীব্র আলো (রেডিয়েশন) প্রভৃতি।

iii) রক্তক্ষরন ও রক্ত সরবরাহে  - ব্যাঘাত।

iv) অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়া, 
যেমন-হাইপার সেনসিটিভিটি, এলার্জি প্রভৃতি।



প্রশ্ন-২.৯। তরুণ প্রদাহে প্রদাহিত স্থানের কি কি পরিবর্তন ঘটে?

উত্তর: তরুণ প্রদাহের সময় প্রদাহিত স্থানের নিম্নলিখিত পরিবর্তন ঘটে।

১) ভাস্কুলার পরিবর্তন 
(Vascular change)

২) লসিকারসের পরিবর্তন 
(Limphatic change)

৩) কোষীয় পরিবর্তন 
(Cellular change)

(১) ভাস্কুলার পরিবর্তন: 
প্রদাহিত স্থানের রক্তের লোহিত কনিকা ও শ্বেত কানিকা প্রভৃতি কোষ বৃদ্ধি পাইয়া শিরা উপশিরা রক্তপূর্ণ হইয়া অস্বাভাবিক আকার ধারন করে। ফলে স্থানটি বেদনাময় হয়। ইহাকে ভাস্কুলার পরিবর্তন বলে। ইহা দুই প্রকার। যথা-রক্তনালীর প্রাচীরের পরিবর্তন ও রক্তপ্রবাহের পরিবর্তন।

(ক) রক্তনালীর প্রাচীরের পরিবর্তন

i) প্রদাহের প্রাথমিক অবস্থায় সূক্ষ্ম ধমনীসমূহের ইরিটেন্টের ক্রিয়ার ফলে ক্ষনস্থায়ী ভাবে সংকুচিত হয়। সংকোচনের পর ইহা অধিক হারে প্রসারিত হয়।

ii) সূক্ষধমনীর অভ্যন্তরের প্রাচীর খসখসে হওয়ায় এন্ডোথেলিয়্যাল লাইনিং অস্পষ্ট হয়, কোষ স্ফীত হয় এবং দেওয়ালের ভিতরে উপবৃদ্ধি হইতে পারে।

iii) তরুণ প্রদাহে কৈশিক জালিকার ভিতরের ফাঁক বাড়িয়া যায় এবং তথায় নূতন কৈশিক জালিকা সৃষ্টি হইতে পারে।

(খ) রক্ত প্রবাহের পরিবর্তন:

i) প্রদাহিত স্থানে রক্তের পরিমান বাড়িয়া যায়।

ii) রক্ত সামান্য চটচটে ও আঠালো হয়।

iii) প্রদাহিত স্থানে প্রথমে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, কিন্তু পরে কমিয়া যায়।

iv) শ্বেত কনিকা রক্তনালীর কেন্দ্রের পরিবর্তে পরিধি বাহিয়া প্রবাহিত হয়।

(২) লসিকা রসের পরিবর্তন:
প্রদাহিত স্থানে অসমোটিক চাপ বৃদ্ধি পায় ফলে তাহার অধিক লসিকা রস ক্ষরন হয়। লসিকা রস জমা হইয়া স্থানটি ফুলিয়া যায়।

(৩)  কোষীয় পরিবর্তন :

প্রদাহিত স্থানে নিম্নলিখিত কোষের আধিক্য দেখা যায়।

i) লোহিত কনিকা- প্রদাহিতস্থানে লোহিত কনিকা বেশী থাকে বলিয়া স্থানটি। উত্তপ্ত ও লাল হয়।
ii) শ্বেত কনিকা- প্রদাহিত স্থানে শ্বেত কনিকা জমা হয়। স্বাভাবিক অবস্থা হইতে শ্বেত কনিকার এই বৃদ্ধিকে লিউকোসাইটিস বলে।

iii) লিম্ফোসাইট- টিসু বা রক্ত হইতে কিছু সংখ্যক লিম্ফোসাইট আসিয়া প্রদাহিত স্থানে জমা হয় এবং এন্টিবডির সৃষ্টি করে।

iv) ম্যাক্রোযোজ- ইহার রেটিকিউলো-এন্ডোথেলিয়্যাল তন্ত্রের বৃহদাকৃতির বিচরন কোষ। এই কোষ প্রাদাহিক স্থানের ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য বস্তুকে গিলিয়া খায়।

v) পলিফরম- শিরা হইতে পলিফরম আসিয়া প্রদাহিত স্থানে জমা হয় এবং উত্তেজক পদার্থকে গিলিয়া মারিতে চেষ্টা করে। উত্তেজক পদার্থের বিষক্রিয়ায় যদি পলিফরম নিজেই মরিয়া যায় তবে উহাদের মৃত কোষ প্রদাহিত স্থানে পূজের সৃষ্টি করে।

vi) ব্যাসোফিল- প্রাদাহিত স্থানে কিছু সংখ্যক ব্যাসোফিল আসিয়া হেপারিন নামক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ সৃষ্টি করে।.

vii) ইউসিনোফিল- প্রদাহিক স্থানে অল্প সংখ্যক ইউসিনোফিল আসিয়া জমা হয়।


প্রশ্ন-২.১০। পুরাতন প্রদাহের সংজ্ঞা ও কারণ লিখ।

উত্তর: পুরাতন প্রদাহ: 
যে সকল প্রদাহ অনেকদিন স্থায়ী হয়, প্রদাহের সৃষ্টি, ধবংস-ও ক্ষরণ এক সাথে সংঘটিত হয়। বাহ্যিক লক্ষণ অস্পষ্ট থাকে এবং নূতন কোষ বা টিসুর সৃষ্টি পরস্পর চলিতে থাকে তাহাকে পুরাতন প্রদাহ বলে।

পুরাতন প্রদাহের কারণ: 
পুরাতন প্রদাহের কারণ তরুণ প্রদাহের কারণের অনুরূপ তবে যে কোন প্রদাহ প্রথমে তরুণ প্রদাহ হিসাবে শুরু হয় পরে পুরাতন রূপ ধারন করে। 

পুরাতন প্রদাহের কারন সমূহ হইল:

i) জীবানু ঘটিত: 
জীবিত জীবাণুর সংক্রমণ যেমন-ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক প্রভৃতির সংক্রমণ।

ii) উত্তেজক কারণ: 
যেমন শারীরিক আঘাত, অতি উচ্চ বা নিম্নতাপ, বিদ্যুৎপ্রবাহ, তীব্র অম্ল, রেডিয়েশান প্রভৃতি

iii) রাসায়নিক কারণ: 
এসিড বিষ যেমন-হাইড্রোক্লোরিক এসিড, কার্বলিক এসিড, ফসফোরাস, ক্ষার, ফেনোল প্রভৃতি।

iv) রক্তজালক বা সূক্ষ্ম উপশিরা ঘটিত:
রক্তজালক এবং উপশিরা গাত্রে এমন কিছু পরিবর্তন ঘটে যে রক্তের জলীয় অংশ রক্তনালীর বাহিরে আসে ফলে প্রদাহ দেখা দেয়।

v) অ্যান্টিজেন : 
অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়ার ফলে যেমন হাইপার সেনসিটিভিটি, এলার্জি প্রভৃতি।

vi) রক্ত রস ঘটিতঃ 
প্রোটিন সমৃদ্ধ রক্ত রস রক্তনালীর বাহিরে টিসুর মধ্যে জমা হয় ফলে সংশ্লিষ্ট স্থানে স্ফীত হইয়া প্রদাহ সৃষ্টি হয়।

vii)  অন্যান্য কারণ সমূহ
পুষ্টিহীনতা, রক্তহীনতা, বহুমূত্র, রক্তে সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস উপবিষের উপস্থিতির কারণে।



প্রশ্ন-২.১১। পুরাতন প্রদাহে প্রাদাহিক স্থানে যে সকল পরিবর্তন ঘটে তাহার বিবরণ দাও।

উত্তর: পুরাতন প্রদাহে প্রাদাহিক স্থানে নিম্নলিখিত পরিবর্তন ঘটে।

ক) পুরাতন প্রদাহে প্রদাহিত স্থানে পুরাতন রক্ত কনিকা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।

খ) প্রদাহিত স্থানে সামান্য পরিমানে লসিকা রস ক্ষরিত হয়।

গ) প্রদাহিত স্থানে সামান্য পরিমানে কোষ ক্ষরণ হয়।

ঘ) নিম্নলিখিত নূতন কোষের সন্নিবেশ ঘটে।

i) প্লাজমাকোষ: ইহা গাঢ় নীল সাইটোপ্লাজমযুক্ত। সিফিলিস প্রদাহে ইহা অধিক পরিমানে বিদ্যমান থাকে। এন্টিবডি সৃষ্টি করা ইহার কাজ।

ii) লিম্ফোসাইট: যক্ষ্মা বা অন্যান্য পুরাতন প্রদাহে ইহা অধিক মাত্রায় জমা হয়।

iii) ম্যাক্রোযোজ: ইহা বৃহদাকার সাধারণ কোষ, রক্ত ও টিসু হইতে ইহা আসে এবং অন্যান্য বস্তু গলাধকরন করা ইহার কাজ।

iv) বড়কোষ: ইহা বহু নিউক্লিয়াসযুক্ত অসম আকারের কোষ। বাহ্যিক কোন বস্তুর চারিদিকে এপিথিলিয়াল কোষ সমূহ মিলিত হইয়া এই কোষ গঠন করে। অন্যান্য বস্তু গলাধ করন করা ইহার কাজ।




প্রশ্ন-২.১২। পুরাতন প্রদাহের বৈশিষ্ট্য সমূহ কি কি?

উত্তর: পুরাতন প্রদাহের বৈশিষ্ট্য সমূহ হইল:

1) ইহা অনেকদিন স্থায়ী হয়।

ii) ইহা প্রথমে তরুণ প্রদাহ হিসাবে শুরু হয়, পরে পুরাতন রূপ ধারণ করে।

iii) সৃষ্টি, ধ্বংস ও ক্ষরণ একসাথে সংঘটিত হয়।

iv) রক্ত প্রবাহের বৃদ্ধি কম হয়।

v) নূতন কোষ বা টিসূর সৃষ্টি পরস্পরে চলিতে থাকে।

vi) ইহার, কোষ সমূহ বড় (জায়েন্ট)।

vii) লসিকা রস কম বাহির হয়।

viii) ইহাতে লিম্ফোসাইট অনেক বেশী।



প্রশ্ন-২.১৩। তরুণ ও পুরাতন প্রদাহের পার্থক্য কি কি?

'উত্তর: তরুণ প্রদাহ ও পুরাতন প্রদাহের পার্থক্যসমূহ নিম্নরূপঃ

তরুণ প্রদাহ
এবং 
পুরাতন প্রদাহ

১। তরুণ প্রদাহ ক্ষণস্থায়ী।

১। পুরাতন প্রদাহ অনেকদিন স্থায়ী হয়।

২। ইহা উত্তেজক কারণ হইতে হঠাৎ সৃষ্টি হয়।

২। তরুণ প্রদাহই পরবর্তীতে পুরাতন প্রদাহে পরিনত হয়।

৩। প্রদাহের তীব্রতা, ক্ষরণ ও ধ্বংস ধীরে ধীরে ঘটে।

৩। ইহাতে সৃষ্টি, ধ্বংসও ক্ষরণ এক সাথে সংঘটিত হয়।

৪। ইহাতে রক্ত প্রবাহ বেশী।

৪। ইহাতে রক্ত প্রবাহের বৃদ্ধি কম হয়।

৫। ইহাতে নূতন কোষ বা টিসুর সৃষ্টি কম হয়।

৫। ইহাতে নূতন কোষ বা টিসুর সৃষ্টি পরস্পর চলিতে থাকে।

৬। ইহাতে বাহ্যিক লক্ষণ সুস্পষ্ট।

৬। ইহাতে বাহ্যিক লক্ষণ অস্পষ্ট।

৭। ইহাতে লসিকা রস অধিক পরিমানে বাহির হয়।

৭। ইহাতে লসিকা রস কম বাহির হয়।

৮। ইহাতে পলিফরম বেশী।

৮। ইহাতে লিম্ফোসাইট বেশী।

৯। ইহাতে জায়েন্ট কোষ দেখা যায় না।

৯। ইহাতে সাধারনতঃ জায়েন্ট কোষ হয়।



প্রশ্ন-২.১৪। প্রদাহের বিভিন্ন অবস্থা বা ধাপ গুলি কি কি?

উত্তর: প্রদাহের বিভিন্ন অবস্থা সমূহ নিম্নরূপ:

১) প্রাদাহিক পর্যায়।

২) একজুডেশান পর্যায়।

৩) রেজুলিউশান পর্যায়।

৪) ফাইব্রিনয়েড পর্যায়।

৫) সাপুরেশন বা পূজ সৃষ্টি পর্যায়।

৬) আলসারেসন বা ক্ষত সৃষ্টি পর্যায়।

৭) গ্যাংগ্রীন বা পচনশীল ক্ষতে পরিনত হওয়ার পর্যায়।



-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ
বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি, 
ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা    
প্রভাষক, 
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ। 

আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। 

>Share by:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন