ইপিকাক,ক্যারিকোকা ইপিকাকুয়ানহা,সিফাইলিস এমিটিকা ইপিকাকুয়ানহা, ইপিকাকুয়ানহা ডিসেটেরিকা।
Plant ( উদ্ভিদ) । এক প্রকার ক্ষুদ্র গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।Part used : Root.
স্যাঁতসেঁতে ছায়াযুক্ত স্থানে জন্মে। ছোট ছোট সাদা ফুল হয়। এটি রুবিয়াসিয়াই (Rubiaceae) গোত্রের উদ্ভিদ।
অতিশয় বমি। যখন অতিরিক্ত বমি হওয়ার পরেও কোন প্রকার স্বস্তি বোধ হয় না, বরং বমি বমি ভাব লেগেই থাকে।নিঃশ্বাসের সমস্যা (asthma, bronchitis)।রক্তপাতের প্রবণতা।অতিমাত্রায় কাশি বা হাঁপানি।
ব্রাজিল,ভারত বর্ষে মাংপু এবং পশ্চিমবঙ্গে,দক্ষিণ আমেরিকার উপরের অংশে চাষ করা হয়।
ইপিকাক-কাঁচা ফলমূল বা গুরপাক দ্রব্য ভোজন করিয়া রোগাক্রমণ। দারুণ পেটব্যথা, ব্যথায় রোগী নড়িতে চড়িতে পারে না। ভেদ অপেক্ষা বমি বা বমনেচ্ছা অধিক। এত বমি বা বমনেচ্ছা অন্য কোন ঔষধে দেখিতে পাওয়া যায় না। তৃষ্ণা নাই। ভেদ-বমি প্রায়ই সবুজ বর্ণ হয়। জিহবা পরিষ্কার।
কুইনাইনে চাপা দেয়া ম্যালেরিয়া,ক্রোধ এবং ঘৃণা বা বিরক্তি হেতু রোগ।আইস ক্রিম খাওয়ার কুফল,ভুক্ত দ্রব্যের অজীর্ণতা,মর্ফিয়া নেশা,পাকস্থলীর শিথিলতা বোধ,বিবমিষা,পিপাসাহীনতা,চর্ম রোগ চাপা পড়া,অন্তঃসত্বা অবস্থায়,পক্ষাঘাত বাম অঙ্গে,প্রচুর রক্তঃস্রাব,স্বরলোপ,বমি ও বমনেচ্ছা।
এ ওষুধটি ব্যবহারের শ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শক হচ্ছে, এর অবিরাম কিন্তু নিষ্ফল বমির ইচ্ছা; বা বমি করার সাথে সাথেই আবার তা করার ইচ্ছা হয়; অবিরাম গা বমি ভাব।
অবিরাম বমন বা বিবমিষা।জিহ্বা পরিষ্কার, লালাস্রাব, পিপাসাহীনতা।ক্রুদ্ধ মেজাজ।
ইপিকাক- একটি সদাব্যবহাররোপযোগী ঔষধ। যদিও গভীরভাবে ক্রিয়া করিবার মত শক্তি হহার নাই। এবং সেজন্য কোনও প্রকার পুরাতন পীড়ায় কখনও প্রয়োজন আসে না, তবুও তরুন পীড়ায় অথবা পুরাতন পীড়ারই তরুণভাবের অভিব্যক্তিকালে, ইহার কার্য অতি চমৎকার, এমন কি সময়ে সময়ে ইহার ক্রিয়া দেখিয়া বিস্মৃত হইতে হয়।
ইপিকাক ছাড়া আমি চিকিৎসাই চালাতে পারতাম না, কারণ রক্তস্রাবে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আমি শিরা বা ধমনী কেটে যাওয়ার কারণে যে রক্তস্রাব হয়, তার কথা বলছি না, এগুলো সার্জারির বিষয়: আমি বলছি জরায়ু থেকে যে রক্তস্রাব হয় তার কথা, যেসব রক্তস্রাব হয় কিডনি, অস্ত্রগুলো, পাকস্থলি, ফুসফুস থেকে...... মারাত্মক ধরনের জরায়ুজ রক্তস্রাবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা কোনো যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই ব্যবস্থা দিতে পারেন।
স্থায়ী লেগে থাকা গা বমি ভাব, কোনোকিছুতেই উপশম হয় না, অনেক রোগ লক্ষণের সাথেই এ লক্ষণ থাকে।
গা বমির জন্য যত ওষুধ আছে, তার মধ্যে ইপিকাকুয়ানহা সবার আগে, গা বমিভাব বমির পরও একই রকম থাকে। গা বমিভাব অনড়, " কোনো কিছুতেই উপশম হয় না।
ভুক্ত দ্রব্যের অজীর্ণতা (এলুমিনা, ক্যাল্কেরিয়া কার্ব, কার্ব-ভেজ, চায়না, হিপার সালফ, লাইকোপডিয়াম, নাক্স-ভম, পালসেটিলা, সালফার)
ইপিকাকের প্রথম কথা : -বমি ও বমনেছা।ইপিকাকের দ্বিতীয় কথা : -পরিষ্কার জিহ্বা ও তৃষ্ণাহীনতা।ইপিকাকের তৃতীয় কথা : - শ্বাসকষ্ট।ইপিকাকের চতুর্থ কথা: -রক্তস্রাব।
উৎকণ্ঠাযুক্ত,বিবর্ণ মুখমন্ডল,কাতরতার চাপ ফুটে উঠে।মুখমন্ডল মলিন পীতাভ,গন্ডদ্বয় ফোলা এবংচোখ নীলিমা বেষ্টিত।
উভয় কাতর (শীত কাতর ও গরম কাতর)
ব্লাড (Blood),নার্ভস (Nerves),আম্বিলিক্যাল অঞ্চল (Umbilical region), রেসপিরেটরী অর্গানস-ফুসফুস (Respiratory organs),পাকস্থলী (Stomach),অস্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী (Mucous membranes of stomach and intestines),স্পাইন্যাল কর্ড (Spinal cord),ফিমেল অর্গানস (Female organs),শ্বাসতন্ত্র (Respiratory system),চর্ম, (Skin),অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ (Extremities),
বমি ও বমনেচ্ছাই ইপিকাকের শ্রেষ্ঠ লক্ষণ। এত বমি বা বমনেচ্ছা অন্য কোন ঔষধে নাই।সকল প্রকার রোগে সহিত বমি ও বমনেচ্ছাই বর্তমান থাকে সেইখানেই ইপিকাক ব্যবহৃত হইতে পারে।
যেমন,জ্বরের সহিত বমি,উদরাময়ের সহিত বমি,সর্দি-কাশির সহিত বমি,শূল-বেদনার সহিত বমি ইত্যাদি।
ইপিকাকে আমরা সকল রকম বমিই দেখতে পাই,-পিত্তবমি,রক্তবমি,শ্লেষ্মাবমি,জলের ন্যায় বমি,ভুক্ত দ্রব্য অজীর্ণ হইয়া বমি,কাঠবমি বা ব্যর্থ বমনেচ্ছা ইত্যাদি।রক্তস্বল্পতা (এনিমিয়া),হাঁপানী,শ্বাসনালীর প্রদাহ,কাশি,হুপিংকাশি,বধিরতা,উদরাময়,আমাশয়,আন্ত্রিক জ্বর,চোখের রোগ,পিত্তপাথরী,পাকাশয়িক ক্ষত,রক্তবমি, রক্তস্রাব,অর্শ, সবিরাম জ্বর,গর্ভাবস্থায় উপসর্গ,স্বল্প বিরাম জ্বর,লালাস্রাব,ধনুষ্টংকার,দাঁতের ব্যথা,বমি বমিভাব ও বমি,ক্রিমিজনিত জ্বর,পীত জ্বর প্রভৃতি,রোগ ছাড়াও লক্ষণ সাদৃশ্যে যে কোন নামের রোগে ব্যবহার করা যায়।
বৃদ্ধি : পর্যায়ক্রমে,শীত এবং উষ্ণ আবহাওয়া,নিম্নগতি,উষ্ণ,আর্দ্র,দক্ষিন দিকের প্রবাহ বাতাস (ইউফ্রেসিয়া)
মুক্ত বাতাসে,শ্লেষ্মা স্রাবান্তে,সামনের দিকে ঝুঁকে বসলে,দরজা জানালা খুলে রাখলে,বিশ্রাম,নিষ্পেষণে (চাপে),চোখ বন্ধ করলে,শীতল পানি পানে,খাওয়ার সময় (দন্তশূল)।
রাতে (শ্বাসকষ্ট),উপরে উঠার সময়,কাশির সঙ্গে,সামান্য পরিশ্রমে,দৌড়াদৌড়ি করলে,পরিশ্রমে,গরম ঘরে,শীতকালীন শুষ্ক আবহাওয়া,গ্রীষ্মকালের ভিজা আবহাওয়ায়,শরৎকালে,দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডায়,অবনত হওয়ায় (বমি),উদ্ভেদ চাপা দেয়ায়, ফল,সালাদ,চর্বিতে।অতিভোজন বা বিলাসী ভোজনে।কুলপী বরফ খেলে,কুইনাইন,নড়াচড়ায়,শব্দে,ক্রোধে।
এরেনিয়া,এন্টিম ক্রুড,এন্টিম টার্ট,এপিস মেলিফিকা,আর্নিকা মন্টানা,আর্সেনিক এলবাম,বেলেডোনা,ব্রায়োনিয়া এলবা,ক্যাডমিয়া,চায়নাঅফি,কিউগ্রাম মেটালিকাম,ইগ্নেশিয়া,পডোফাইলাম,ফসফরাস,রিউম,ট্যাবেকাম,সিপিয়া,সালফার।
এন্টিম-টার্টারিকাম,আর্নিকা মন্টানা,কিউপ্রাম মেট।
ওপিয়াম।
আর্নিকা,আর্সেনিক,চায়না,নাক্স-ভমিকা,ট্যাবেকাম।
৩০, ২০০ বা এম/২, এম/৩ শক্তি ও উচ্চশক্তি এবং সূক্ষ্মমাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
এলকোহল জাতীয় পানীয়,বিয়ার,কফি,চর্বি,মাখন,টক ফল,মাংস,কেক।
প্রশন : -
ইপিকাকুয়ানার ঔষধের মূল কাজ হলো নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ুর উপর। আর কোন কোন হোমিওপ্যাথি ওষুধ আছে এই স্নায়ুর উপর কাজ করে?
উওর :
নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ু (Nervus Pneumogastricus বা Vagus Nerve) একটি গুরুত্বপূর্ণ পারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ু, যা হজমতন্ত্র, হৃদযন্ত্র, ও শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
ইপিকাকুয়ানা (Ipecacuanha) মূলত বমি, বমির অনুভূতি, এবং শ্বাসকষ্টের উপসর্গে কার্যকর, এবং এটি নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ুর উপর তীব্র প্রভাব ফেলে।
এই স্নায়ুর উপর কাজ করে এমন আরও কিছু হোমিওপ্যাথিক ওষুধ হলো:
১. Antimonium tartaricum
নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ুর শ্লৈষ্মিক উত্তেজনায় কাজ করে।
প্রচুর কফ জমে থাকে, কিন্তু উঠাতে পারে না।
বাচ্চাদের ঘন ঘন বমি ও শ্বাসকষ্টে কার্যকর।
২. Lobelia inflata
গ্যাস্ট্রিক ও রেসপিরেটরি সিস্টেম উভয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
বমির সাথে শ্বাসকষ্ট, নিঃশ্বাসে বাধা, অ্যাজমার মতো লক্ষণে কার্যকর।
৩. Nux vomica
হজমতন্ত্রের সমস্যা, বমির ভাব, গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডিটি, এবং ইরিটেবল কন্ডিশনে কাজ করে।
নিউমোগ্যাস্ট্রিক উত্তেজনায় হজমতন্ত্রে প্রভাব ফেলে।
৪. Arsenicum album
বমির সাথে প্রবল দুর্বলতা, তীব্র গ্যাস্ট্রিক ইরিটেশন, এবং এনজাইটি থাকে।
এটি নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ুর বেদনা ও অতিসংবেদনশীলতায় কার্যকর।
৫. Veratrum album
প্রচণ্ড বমি, ডায়রিয়া ও ঠান্ডা ঘামে সহ নিউমোগ্যাস্ট্রিক ইনভলভমেন্ট।
অত্যন্ত ক্ষীণ ও দুর্বল হয়ে পড়ে।
সংক্ষেপে বলা যায়,
নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ুর উপর কাজ করে এমন প্রধান হোমিওপ্যাথিক ঔষধগুলো হলো:
Ipecac, Ant-tart, Lobelia, Nux vomica, Ars alb, Veratrum alb।
প্রশন :
নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ু (Nervus Pneumogastricus বা Vagus Nerve) একটি গুরুত্বপূর্ণ পারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ু। এর সম্পর্কে বিস্তারিত বলুন?
গিলতে অসুবিধা,স্বরের পরিবর্তন,হঠাৎ বমি,গ্যাস্ট্রিক সমস্যা,ব্রেডিকার্ডিয়া (হৃদস্পন্দন ধীর হওয়া),অতিরিক্ত ঘাম ইত্যাদি হতে পারে।
Vagus Nerve Dysfunction বা উত্তেজনা/দুর্বলতা থেকে হওয়া রোগসমূহ:
১. গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল (হজমতন্ত্র):
Gagging / vomiting tendency (বমির প্রবণতা)
Gastroparesis (পাকস্থলীর মুভমেন্ট ধীর হওয়া)
Acid reflux / GERD
Constant nausea without relief
Hiccups (বারবার হেঁচকি)
২. রেসপিরেটরি (শ্বাসতন্ত্র):
Asthma (অ্যাজমা বা হাঁপানি)
Chronic cough
Difficulty breathing, especially with nausea
Bronchospasm
৩. কার্ডিওভাসকুলার (হৃদয়):
Bradycardia (হৃদস্পন্দন ধীর হওয়া)
Vasovagal syncope (হঠাৎ মাথা ঘুরে অজ্ঞান হওয়া)
Palpitations due to vagal overstimulation.
৪. নিউরোলজিক্যাল / মেন্টাল:
Anxiety with nausea
Panic attacks associated with gut symptoms
Vagal epilepsy (নিউমোগ্যাস্ট্রিক সম্পর্কিত খিঁচুনি)
৫. গলা ও স্বরযন্ত্র:
Hoarseness of voice.
Chronic sore throat without infection.
Difficulty swallowing (Dysphagia).
হোমিওপ্যাথিক কেস এনালাইসিস উদাহরণসহ:
Case 1: Ipecacuanha (ইপিকাকুয়ানা)
লক্ষণ:
বমি হবে কিন্তু কোনো আরাম আসে না
জিহ্বা পরিষ্কার, তবুও বমি
সাথে শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি
ভিত্তি: নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ুর উত্তেজনা
ব্যবহার: Ipecac 30 বা 200, বারবার বমি ও শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে
Case 2: Antimonium tartaricum
লক্ষণ:
ভিত্তি:বুক ভর্তি কফ কিন্তু উঠাতে পারে না
শিশুরা নীলাভ হয়ে যায় শ্বাসকষ্টে
ঘনঘন হাঁপায় এবং বমির ভাব থাকে
ব্রঙ্কিয়াল ও নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ুর ইনভলভমেন্ট
Case 3: Nux vomica
লক্ষণ:৫
বেশি খাওয়া বা মদ্যপানের পর হজমে সমস্যা
গ্যাস্ট্রিক, বমির প্রবণতা, বিরক্তিকর মেজাজ
কোষ্ঠকাঠিন্য ও অল্পতেই রেগে যায়
ভিত্তি:
নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ু ও সিমপ্যাথেটিক ভারসাম্যহীনতা
ব্যবহার: Nux vom 200 / 1M, রাতে এক ডোজ
Case 4: Veratrum album
লক্ষণ:
প্রচণ্ড দুর্বলতা, ঘাম, ও বমি
ঠান্ডা হাত-পা, শ্বাসকষ্ট
ডিহাইড্রেশন ধরনের লক্ষণ
ব্যবহার: Verat alb 30/200
Case 5: Gelsemium sempervirens
লক্ষণ:
টেনশন বা ভয় থেকে গলা শুকিয়ে আসে
গিলতে কষ্ট, দুর্বলতা
Vagus nerve এবং mental-emotional effect।
ব্যবহার: Gelsemium 30/200
উপসংহার:
Vagus nerve-এ সমস্যা মানেই একাধিক সিস্টেমে প্রভাব — হজম, শ্বাস, হৃদয়, মন!
হোমিওপ্যাথিতে লক্ষণভিত্তিক এবং মিয়াজমাটিক বিশ্লেষণে চিকিৎসা করলে এই ধরনের জটিল অবস্থাও সাফল্যের সাথে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।
Make a comments as guest/by name or from your facebook:
Make a comment by facebook: