মেটেরিয়া মেডিকা । ১ম বর্ষ । ২১। ইপিকাকুয়ানা

ইপিকাকুয়ানা

(Ipecacuanha)

Full name :  Cephaelis ipecacuanha

Short name :   Ip

ইপিকাকুয়ানার উদ্ভিদজ নাম :

(Botanical name) :
Cephaelis ipecacuanha 

ইপিকাকুয়ানার সমনাম/প্রতিনাম (Synonyms)

ইপিকাক, 
ক্যারিকোকা ইপিকাকুয়ানহা, 
সিফাইলিস এমিটিকা ইপিকাকুয়ানহা, ইপিকাকুয়ানহা ডিসেটেরিকা।

ইপিকাকুয়ানার উৎস (Source ):
Plant ( উদ্ভিদ) । এক প্রকার ক্ষুদ্র গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।
Part used : Root. 
স্যাঁতসেঁতে ছায়াযুক্ত স্থানে জন্মে। ছোট ছোট সাদা ফুল হয়। এটি রুবিয়াসিয়াই (Rubiaceae) গোত্রের উদ্ভিদ।

প্রাচীন ওষুধ-বহির্ভূত ব্যবহারের ইতিহাস:

1. দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসীরা, বিশেষ করে ব্রাজিলের আদিবাসীরা, ইপেকাক উদ্ভিদ ব্যবহার করত বমি উদ্রেককারী এবং আন্ত্রিক রোগ নিরাময়ের উপাদান হিসেবে।

2. তারা এই গাছের মূল ও শিকড় থেকে প্রাকৃতিক ঔষধ তৈরি করত যা বিষাক্ত খাবার খাওয়ার পরে বমি করাতে সাহায্য করত।

3. কখনো কখনো এটি ব্যবহৃত হতো আমাশয় (dysentery), জ্বর, বা বুকের কফ loosen করার জন্য।

পরবর্তীতে চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যবহার:

17শ শতকে ইউরোপে এটি পরিচিত হয় এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর প্রয়োগ শুরু হয়।

হোমিওপ্যাথিতেও Ipecacuanha একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ, যেখানে এটি প্রধানত ব্যবহৃত হয়:

অতিশয় বমি। যখন অতিরিক্ত বমি হওয়ার পরেও কোন প্রকার স্বস্তি বোধ হয় না, বরং বমি বমি ভাব লেগেই থাকে। 

নিঃশ্বাসের সমস্যা (asthma, bronchitis)। 

রক্তপাতের প্রবণতা। 

অতিমাত্রায় কাশি বা হাঁপানি। 

Stage : Acute

Miasm : psoric +,  Tubercular +

ইপিকাকুয়ানার প্রাপ্তিস্থান (Habitat) : 
ব্রাজিল, 
ভারত বর্ষে মাংপু এবং পশ্চিমবঙ্গে, 
দক্ষিণ আমেরিকার উপরের অংশে চাষ করা হয়।

ইপিকাকুয়ানার প্রস্তুত প্রণালী (Preparation): গাছের শুষ্ক মূল থেকে বিচুর্ণ মাদার টিংচার প্রস্তুত করা হয়। মাদার টিংচার থেকে উচ্চ শক্তি প্রস্তুত করা হয়।
প্রস্তুত formula - F-3

ইপিকাকুয়ানার প্রভারের নাম (Prover) : 
ডাঃ ক্রিশ্চিয়ান ফ্রেড্রিক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান। 
১৮০৫ সালে ইপিকাকুয়ানা ঔষধটি প্রুভ করেন।

ইপিকাকুয়ানার কারণতত্ত্ব (Aetiology):

(ক) মূল কারণ: সোরা।

(খ) উত্তেজক/আনুসঙ্গিক কারণ: 
ইপিকাক-কাঁচা ফলমূল বা গুরপাক দ্রব্য ভোজন করিয়া রোগাক্রমণ। দারুণ পেটব্যথা, ব্যথায় রোগী নড়িতে চড়িতে পারে না। ভেদ অপেক্ষা বমি বা বমনেচ্ছা অধিক। এত বমি বা বমনেচ্ছা অন্য কোন ঔষধে দেখিতে পাওয়া যায় না। তৃষ্ণা নাই। ভেদ-বমি প্রায়ই সবুজ বর্ণ হয়। জিহবা পরিষ্কার।
কুইনাইনে চাপা দেয়া ম্যালেরিয়া,
ক্রোধ এবং ঘৃণা বা বিরক্তি হেতু রোগ।
আইস ক্রিম খাওয়ার কুফল, 
ভুক্ত দ্রব্যের অজীর্ণতা, 
মর্ফিয়া নেশা, 
পাকস্থলীর শিথিলতা বোধ, 
বিবমিষা,
 পিপাসাহীনতা, 
চর্ম রোগ চাপা পড়া, 
অন্তঃসত্বা অবস্থায়,
পক্ষাঘাত বাম অঙ্গে,
প্রচুর রক্তঃস্রাব,
স্বরলোপ, 
বমি ও বমনেচ্ছা।

বমির বৈশিষ্ট্য : ইপিকাকে বমি অপেক্ষা বমনেচ্ছা আরও ভীষণ অর্থাৎ বমি হইয়া গেলেও ইপিকাক কিছুমাত্র শান্তি বোধ করে না, অনবরত বমনেচ্ছায় কষ্ট পাইতে থাকে।

গার্নেসি (কি নোটস), বলেন "..........
এ ওষুধটি ব্যবহারের শ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শক হচ্ছে, এর অবিরাম কিন্তু নিষ্ফল বমির ইচ্ছা; বা বমি করার সাথে সাথেই আবার তা করার ইচ্ছা হয়; অবিরাম গা বমি ভাব।

ডাক্তার রাধারমন বিশ্বাস বলেন..... 
প্রদর্শক-
অবিরাম বমন বা বিবমিষা।
জিহ্বা পরিষ্কার, লালাস্রাব, পিপাসাহীনতা।
ক্রুদ্ধ মেজাজ।

নোট : শীঘ্র-শীঘ্র ইপিকাকে রোগ সমূহ বাড়ে,  ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাংঘাতিক আকার ধারণ করে। 

মন্তব্য- ইপিকাকের সম্বন্ধে বলতে গেলে একটি কথাতেই তা সম্পূর্ণ করা যায় - বমন (Vomiting) বা বিবমিষা (Nausea)। এই লক্ষণটি যে সমস্ত রোগের সহিত থাকবে বা রোগেই থাকবেই তাতেই ইপিকাকের দিকে প্রথম নজর দিবেন। অনবরত গা-বমি-বমি করে, বমি হলেও শান্তি নেই। 

ডাক্তার নীল মনি ঘটক বলেন,.......
ইপিকাক- একটি সদাব্যবহাররোপযোগী ঔষধ। যদিও গভীরভাবে ক্রিয়া করিবার মত শক্তি হহার নাই। এবং সেজন্য কোনও প্রকার পুরাতন পীড়ায় কখনও প্রয়োজন আসে না, তবুও তরুন পীড়ায় অথবা পুরাতন পীড়ারই তরুণভাবের অভিব্যক্তিকালে, ইহার কার্য অতি চমৎকার, এমন কি সময়ে সময়ে ইহার ক্রিয়া দেখিয়া বিস্মৃত হইতে হয়।

রক্তস্রাব সম্পর্কে কেন্ট বলেন;.......... 
ইপিকাক ছাড়া আমি চিকিৎসাই চালাতে পারতাম না, কারণ রক্তস্রাবে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আমি শিরা বা ধমনী কেটে যাওয়ার কারণে যে রক্তস্রাব হয়, তার কথা বলছি না, এগুলো সার্জারির বিষয়: আমি বলছি জরায়ু থেকে যে রক্তস্রাব হয় তার কথা, যেসব রক্তস্রাব হয় কিডনি, অস্ত্রগুলো, পাকস্থলি, ফুসফুস থেকে...... মারাত্মক ধরনের জরায়ুজ রক্তস্রাবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা কোনো যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই ব্যবস্থা দিতে পারেন।

 ন্যাশ তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন
স্থায়ী লেগে থাকা গা বমি ভাব, কোনোকিছুতেই উপশম হয় না, অনেক রোগ লক্ষণের সাথেই এ লক্ষণ থাকে।

গা বমির জন্য যত ওষুধ আছে, তার মধ্যে ইপিকাকুয়ানহা সবার আগে, গা বমিভাব বমির পরও একই রকম থাকে। গা বমিভাব অনড়, " কোনো কিছুতেই উপশম হয় না। 

ভুক্ত দ্রব্যের অজীর্ণতা (এলুমিনা, ক্যাল্কেরিয়া কার্ব, কার্ব-ভেজ, চায়না, হিপার সালফ, লাইকোপডিয়াম, নাক্স-ভম, পালসেটিলা, সালফার)

রাগ (Anger)- (একোনাইট ন্যাপ, ক্যামোমিলা, কলোসিন্থ, নাক্স ভম, ইগ্নেসিয়া, ওপিয়াম, প্লাটিনা, স্ট্যাফিসেগ্রিয়া।) 

কী-নোটস:

১। সবরোগে অবিরাম ও সব সময় গা বমি বমি ভাব ও বমি তৎসহ পরিস্কার জিহ্বা।

২। উজ্জ্বল লাল বর্ণের রক্তস্রাব প্রবণতা ও তৃষ্ণাহীনতা।

৩। হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট, শিশুদের ব্রঙ্কাইটিস, দূদর্ঘ্য কাশি, বুকের মধ্যে ঘড় ঘড় বা সাঁই সাঁই শব্দ। কাশতে কাশতে বমি হয়ে যায়।

৪। পাকস্থলী শিথিল বলে মনে হয়, যেন ঝুলে পড়েছে এরূপ অনুভূতি।

৫। অর্জীর্ণতা হতে আক্ষেপের সৃষ্টি হয়।

নরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের  চারটি কথা :

ইপিকাকের প্রথম কথা : -বমি ও বমনেছা।
ইপিকাকের দ্বিতীয় কথা : -পরিষ্কার জিহ্বা ও তৃষ্ণাহীনতা।
ইপিকাকের তৃতীয় কথা : - শ্বাসকষ্ট।
ইপিকাকের চতুর্থ কথা: -রক্তস্রাব।

ইপিকাকুয়ানার গঠনগত/ধাতুগত বৈশিষ্ট্য (Constitution):

এপিয়ারেন্স: 
উৎকণ্ঠাযুক্ত, 
বিবর্ণ মুখমন্ডল, 
কাতরতার চাপ ফুটে উঠে।
 মুখমন্ডল মলিন পীতাভ, 
গন্ডদ্বয় ফোলা এবং 
চোখ নীলিমা বেষ্টিত।
শীত ও গরমে অত্যানুভূতি প্রবণতা: 
উভয় কাতর (শীত কাতর ও গরম কাতর)

ইপিকাকুয়ানা ক্রিয়াস্থল (Affinities):

ব্লাড (Blood),
নার্ভস (Nerves), 
আম্বিলিক্যাল অঞ্চল (Umbilical region), রেসপিরেটরী অর্গানস-ফুসফুস (Respiratory organs), 
পাকস্থলী (Stomach), 
অস্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী (Mucous membranes of stomach and intestines), 
স্পাইন্যাল কর্ড (Spinal cord), 
ফিমেল অর্গানস (Female organs), 
শ্বাসতন্ত্র (Respiratory system), 
চর্ম, (Skin), 
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ (Extremities),

ইপিকাকুয়ানার রোগসমূহ/প্রয়োগক্ষেত্রঃ

বমি ও বমনেচ্ছাই ইপিকাকের শ্রেষ্ঠ লক্ষণ। এত বমি বা বমনেচ্ছা অন্য কোন ঔষধে নাই। 
সকল প্রকার রোগে সহিত বমি ও বমনেচ্ছাই বর্তমান থাকে সেইখানেই ইপিকাক ব্যবহৃত হইতে পারে।
যেমন, 
জ্বরের সহিত বমি, 
উদরাময়ের সহিত বমি, 
সর্দি-কাশির সহিত বমি,
 শূল-বেদনার সহিত বমি ইত্যাদি।
ইপিকাকে আমরা সকল রকম বমিই দেখতে পাই,
-পিত্তবমি, 
রক্তবমি, 
শ্লেষ্মাবমি, 
জলের ন্যায় বমি, 
ভুক্ত দ্রব্য অজীর্ণ হইয়া বমি, 
কাঠবমি বা ব্যর্থ বমনেচ্ছা ইত্যাদি। 
রক্তস্বল্পতা (এনিমিয়া), 
হাঁপানী, 
শ্বাসনালীর প্রদাহ, 
কাশি, 
হুপিংকাশি, 
বধিরতা, 
উদরাময়, 
আমাশয়, 
আন্ত্রিক জ্বর, 
চোখের রোগ, 
পিত্তপাথরী, 
পাকাশয়িক ক্ষত, 
রক্তবমি, রক্তস্রাব, 
অর্শ, সবিরাম জ্বর, 
গর্ভাবস্থায় উপসর্গ, 
স্বল্প বিরাম জ্বর, 
লালাস্রাব, 
ধনুষ্টংকার, 
দাঁতের ব্যথা, 
বমি বমিভাব ও বমি, 
ক্রিমিজনিত জ্বর, 
পীত জ্বর প্রভৃতি, 
রোগ ছাড়াও লক্ষণ সাদৃশ্যে যে কোন নামের রোগে ব্যবহার করা যায়।

ইপিকাকুয়ানা মানসিক লক্ষণঃ

(i) মেজাজ খিটখিটে, প্রত্যেক বস্তুকে অবজ্ঞা করে।

(ii) ক্রোধপ্রবণ, অনেক কিছু চায়, কিন্তু কি যে চায় তা জানে না।

(iii) সামান্য শব্দ অসহনীয়।

(iv) ক্রোধ এবং ঘৃণা বা বিরক্তি হেতু মানসিক রোগ।

(v) বয়স্ক ব্যক্তি সর্বদা রাগ, বিমর্ষ এবং সকল বিষয়ে তাচ্ছিল মনে করে।


ইপিকাকুয়ানার সারাংশঃ

ইপিকাকুয়ানার ঔষধের মূল কাজ হলো নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ুর উপর। বুক ও পাকস্থলীতে আক্ষেপিক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। ইপিকাকের প্রধান লক্ষণ হল, এক টানা বমি বমিভাব ও বমি, এটিই এই ঔষধের প্রধান পথ প্রদর্শক লক্ষণ। দূষ্পাচ্য খাদ্য, কিসমিস, কেক প্রভৃতি খাবার খাওয়ার কুফল। বিশেষ করে মেদবহুল শিশু ও বয়ষ্কদের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে, যারা দুর্বল এবং যাদের সহজেই ঠান্ডা লাগে। আপেক্ষিক উপসর্গসমূহ। রক্তস্রাব উজ্জ্বল লালবর্ণের এবং পরিমাণে প্রচুর হয়।

ইপিকাকুয়ানার সার্বদৈহিক লক্ষণাবলী:

(i) প্রবণতা : শীত ও গরমে অত্যানুভূতি প্রবণতা (Relation with heat and cold): উভয় কাতর (শীত কাতর ও গরম কাতর)

(ii) অনিচ্ছা (Aversion): খাদ্য (আর্সেনিক এল্বাম, ককুলাস, কলচিকাম, ফেরাম মেট, লিলিয়াম টিগ, নাক্স-ভম), খাবারের গন্ধ (ককুলাস, কচিকাম, আর্সেনিক এলাম, পডোফাইলাম, সিপিয়া)

(iii) আকাংখা (Desire): সুস্পষ্ট কোন খাবার জানে না। মিষ্টি (আর্জেন্টাম নাই, চায়না, লাইকোপডিয়াম, সালফার)

(iv) ঘাম (Sweat): রাতে, ঠান্ডা ঘাম।

(v) ঘুম (Sleep): চোখ অর্ধ খোলা রাখে (লাইকোপডিয়াম)

(vi) স্বপ্ন (Dream): ভয়ঙ্কর, স্মরণ রাখতে পারে না (বিস্মৃত)।

(vii) ক্ষুধা (Appetite): যে কোনও প্রকার খাবার ঘৃণা করে (loathing of any kind of food) (এন্টিম ক্রুড, আর্সেনিক এত্থাম, বেলেডোনা, ককুলাস, কলোসিন্থ, কেলি কার্ব, সিপিয়া।)

(viii) পিপাসা (Thirst): পিপাসা সামান্য বা থাকে না।

(ix) জেনারেল মোডালিটিস (General modalities) :

বৃদ্ধি : পর্যায়ক্রমে, 
শীত এবং উষ্ণ আবহাওয়া,
 নিম্নগতি, 
উষ্ণ, 
আর্দ্র, 
দক্ষিন দিকের প্রবাহ বাতাস (ইউফ্রেসিয়া)

(x) সাইড (Side) : ডান দিক। এছাড়াও ইন্টারনাল হেড ও হাইপোকন্ডিয়াকে বাম দিকে থেকে আক্রমণ করে।

ইপিকাকুয়ানার পরিচায়ক/নির্দেশক/চারিত্রিক লক্ষণাবলী :

(i) মেজাজ খিটখিটে, প্রত্যেক বস্তুকে অবজ্ঞা করে। ক্রোধপ্রবণ, অনেক কিছু চায়, কিন্তু কি যে চায় তা জানে না।

(ii) অবিশ্রান্ত হাঁচি, সর্দি, সাঁই সাঁই শব্দযুক্ত কাশি। অবিরাম এবং ভীষন কাশি, এ কাশি প্রতি নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেখা যায়।

(ii) মাথার অস্থিসমূহ যেন ভেঙ্গে বা থেঁৎলে গেছে এরূপ অনুভূতি, দাঁত এবং জিহ্বার মূলদেশ পর্যন্ত ব্যথা প্রসারিত হয়।

(v) জিহ্বা বেশ পরিষ্কার কিন্তু মুখের মধ্যে ক্রমাগত এত অধিক লালা নিঃসৃত থাকে যে, তার মুখ প্রায় সর্বদাই ভিজা থাকে।

(iv) দৃষ্টিশক্তির অবিরাম পরিবর্তনশীলতা। চোখের পেশীর দুর্বলতা ও আক্ষেপ। চলন্ত বস্তুর দিকে তাকালে বমি বমিভাব।

(v) পিত্তবমি, রক্তবমি, শ্লেষ্মাবমি, পানির মত বমি, ভুক্ত দ্রব্য অজীর্ণ হয়ে বমি, ব্যর্থ বমননেচ্ছা ইত্যাদি জ্বরের সাথে বমি, উদরাময়ের সাথে বমি, সর্দি কাশির সাথে বমি।

(v) জরায়ু থেকে রক্তস্রাব, প্রচুর, উজ্জ্বল লাল, গলগল করে বেরিয়ে থাকে তৎসহ বমি বমিভাব। ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট সময়ের আগে শুরু হয় ও পরিমাণে প্রচুর।

(v) সামান্য শীতবোধসহ অত্যধিক গায়ের তাপমাত্রা। বমি বমিভাব ও বমি এবং শ্বাসকষ্ট। অনুপযুক্ত খাদ্য খাবার পরে রোগে পুনরাক্রমন দেখা দেয়।

(v) চোখগুলি অর্ধনিমিলীত করে ঘুম যায়। ঘুম যাবার সময় সমগ্র অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ধাক্কা বা আঘাত লাগে (ইগ্নেশিয়া)।

(v) মল পিচের ন্যায় কালো, ঘাসের ন্যায় সবুজ, ফেনাযুক্ত ঝোলা গুড়ের ন্যায়, তৎসহ আম্বিলিকাস অঞ্চলে মোচড়ানি ব্যথা।

(v) শরীরের আড়ষ্টের মত টান-টান, এরপরে বাহু দুইটি একটি অপরটির দিকে আক্ষেপিক ঝাঁকুনি দিয়ে থাকে।

(viii) গ্রীষ্মকালে গরম আর্দ্র আবহাওয়ায়, গরম ঘরে উত্তাপে, কুলপী বরফ খেলে বৃদ্ধি। শীতল পানি পানে বিশ্রামে চাপে চোখ বন্ধ করলে উপশম।

ইপিকাকুয়ানার মাথার লক্ষণাবলী:

মাথার অস্থিসমূহ যেন ভেঙ্গে বা থেঁৎলিয়ে গেছে এইরূপ অনুভূতি, দাঁত এবং জিহ্বার মূলদেশ পর্যন্ত ব্যথা প্রসারিত হয়।
(ix) মল পিচের ন্যায় কালো, ঘাসের ন্যায় সবুজ, ফেনাযুক্ত ঝোলা গুড়ের ন্যায়, তৎসহ আম্বিলিকাস অঞ্চলে মোচড়ানি ব্যথা।

বমিতে ইপিকাকের ব্যবহার বা লক্ষণাবলী :

(i) বমি বমিভাব ও বমি, মাথা সামনে নিচু করলে বমিভাব দেখা দেয়।

(ii) ক্রমাগত বমি বমিভাব ও বমি এবং প্রচুর সাদাবর্ণের স্বচ্ছ শ্লেষ্মা বমি হয়।

(iii) পিপাসা থাকে না বা সামান্য মাত্র থাকে। কিন্তু জ্বরের উত্তাপ অবস্থায় পিপাসা দেখা যায়।

(iv) বমি বমিভাব সংকোচন অনুভূতি সামান্য পরিশ্রমে ফুসফুস হতে রক্তস্রাব।

(v) কাশির সময় দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম, দম ফেলার জন্য রাতে উঠে বসতে হয়।

(vi) ঘড়ঘড় শব্দ শ্বাসরোধ, শ্বাসকষ্ট-তরুণ আক্রমনে এটি একটি ভাল ঔষধ।

(vii) জিহ্বা পরিষ্কার, পিপাসা থাকে না বা সামন্য থাকতে পারে।

(viii) মুখগহ্বর আর্দ্র অত্যধিক লালা নিঃসরণ হয়।

(ix) পিত্ত, রক্ত, শ্লেষ্মা এবং পানির মত বমি, ভুক্তদ্রব্য অজীর্ন হয়ে বমি বা ব্যর্থ বমননেচ্ছা ইত্যাদি জ্বরের সাথে বমি, উদরাময়ের সাথে বমি, সর্দি কাশির সাথে বমি।

ইপিকাকুয়ানার স্ত্রীরোগের লক্ষণাবলী:

জরায়ু থেকে রক্তস্রাব, প্রচুর, উজ্জ্বল লাল, গলগল করে বেরিয়ে থাকে তৎসহ বমি বমিভাব। গর্ভাবস্থায় বমি। নাভি থেকে জরায়ু পর্যন্ত ব্যথা। ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট সময়ের আগে শুরু হয় ও পরিমাণে প্রচুর।

এন্টিম ক্রুড, রাসটক্স ও ইপিকাকের জিহ্বার লক্ষণ নিম্নরূপঃ

এন্টিম ক্রুডের জিহ্বার লক্ষণ:

(i) জিহ্বা উপর পুরু শুভ্র প্রলেপযুক্ত।

(ii) জিহ্বা যেন চুন দ্বারা লেপাবৃত্ত করা হয়েছে।

(iii) দাঁত হতে মাড়ীগুলো আলাদা হয়ে যায়।

(iv) তালুদেশ ক্ষতযুক্ত হয়, অত্যাধিক শ্লেষ্মা বাহির হয়।

(v) জিহ্বা দ্বারা দাঁত স্পৃষ্ট হলে মনে হয় যেন একটি শিরা ছিন্ন হয়ে গেছে।

(vi) তৃষ্ণাহীনতা।

রাস-টক্সের জিহ্বার লক্ষণ:

(i) জিহ্বা লাল ও ফাটাযুক্ত।

(ii) জিহ্বার অগ্রভাগটি লাল ও ত্রিভুজাকার এবং বাকী অংশ প্রলেপযুক্ত।

(iii) জিহ্বার কিনারাগুলো শুদ্ধ ও লাল।

ইপিকাকের জিহ্বা :

(i) জিহ্বা পরিষ্কার, পিপাসা থাকে না বা সামান্য থাকতে পারে।

(ii) মুখগহ্বর আর্দ্র, অত্যধিক লালা নিঃসরণ হয়।

(iii) ক্রমাগত বমি বমিভাব ও বমি এবং প্রচুর সাদাবর্ণের স্বচ্ছ শ্লেষ্মা বমি হয়।

ইপিকাকুয়ানার জ্বরের লক্ষণাবলী:

সবিরাম জ্বর, অনিয়মিতভাবে রোগ লক্ষণের প্রকাশ, কুইনাইন ব্যবহারের পরে। 
সামান্য শীতবোধসহ অত্যধিক গায়ের তাপমাত্রা। 
বমি বমিভাব ও বমি এবং শ্বাসকষ্ট। 
অনুপযুক্ত খাদ্য খাবার পরে রোগের পুনরাক্রমন দেখা দেয়।

ইপিকাকুয়ানার মলের লক্ষণাবলী:

মল পিচের ন্যায় কালো, ঘাসের ন্যায় সবুজ, ফেনাযুক্ত ঝোলা গুড়ের ন্যায়, তৎসহ আম্বিলিকাস অঞ্চলে মোচড়ানি ব্যথা। আমাশয়, মল পিচ্ছিল।

ইপিকাকুয়ানার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের লক্ষণাবলী :

শরীরের আড়ষ্টের মত টান-টান, এরপরে বাহু দুইটি একটি অপরটির দিকে আক্ষেপিক ঝাঁকুনি দিয়ে থাকে।

শ্বাসতন্ত্র পীড়ায় ইপিকাক ও এন্টিম টার্টের তুলনা:

ইপিকাক
শ্বাসকষ্ট, নিরন্তর বুকের মধ্যে সংকোচন অনুভূতি।

অবিরাম হাঁচি এবং ভীষন কাশি, সাঁই সাঁই শব্দযুক্ত কাশি। 

বুকের ভিতর শ্লেষ্মায় পরিপূর্ণ রয়েছে কিন্তু কাশিলে তা উঠে না।

স্বরভঙ্গ, বিশেষতঃ ঠান্ডা লাগার ফলে, সম্পূর্ণ স্বরলোপ।

হুপিং কাশি তৎসহ নাক, মুখ ও ফুসফুস থেকে রক্তস্রাব।

এন্টিম টার্ট

বুকের মধ্যে জ্বালাকর ও ভেলভেটের ন্যায় অনুভূতি, যা গলা পর্যন্ত ঠেলে উঠে।

আহারে কাশির বৃদ্ধি তৎসহ বুকে ও কণ্ঠনালীতে ব্যথা।

শ্লেষ্মায় প্রভূত ঘড়ঘড়ানি, কিন্তু অতি অল্পেই শ্লেষ্মা উঠে।

স্বরভঙ্গ। দ্রুত এবং কষ্টকর শ্বাস-প্রশ্বাস, দম বন্ধের অনুভূতি।

মাথাঘোরাসহ কাশি, শ্বাসকৃষ্ণতা যা উদ্গারে উপশম হয়।
ইপিকাকুয়ানার চর্মের লক্ষণাবলী :

মলিন, শিথিল। চোখের চারিদিকে নীলাভ। ঘামাচির উদ্ভেদ।

ইপিকাকুয়ানার ঘুমের লক্ষণাবলী ৪

চোখগুলি অর্ধউন্মিলীত করে ঘুম যায়। ঘুম যাবার সময় সমগ্র অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ধাক্কা বা আঘাত লাগে (ইগ্নেশিয়া)।

ইপিকাকুয়ানার হ্রাস-বৃদ্ধি :

উপশম/হাস (Amelioration) : 
মুক্ত বাতাসে, 
শ্লেষ্মা স্রাবান্তে, 
সামনের দিকে ঝুঁকে বসলে, 
দরজা জানালা খুলে রাখলে,
 বিশ্রাম,
 নিষ্পেষণে (চাপে), 
চোখ বন্ধ করলে, 
শীতল পানি পানে, 
খাওয়ার সময় (দন্তশূল)।

বৃদ্ধী (Aggravation): 
রাতে (শ্বাসকষ্ট), 
উপরে উঠার সময়, 
কাশির সঙ্গে,
সামান্য পরিশ্রমে, 
দৌড়াদৌড়ি করলে, 
পরিশ্রমে, 
গরম ঘরে, 
শীতকালীন শুষ্ক আবহাওয়া, 
গ্রীষ্মকালের ভিজা আবহাওয়ায়, 
শরৎকালে, 
দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডায়, 
অবনত হওয়ায় (বমি), 
উদ্ভেদ চাপা দেয়ায়, ফল, 
সালাদ, 
চর্বিতে। 
অতিভোজন বা বিলাসী ভোজনে। 
কুলপী বরফ খেলে,
 কুইনাইন,
 নড়াচড়ায়, 
শব্দে, 
ক্রোধে।

ইপিকাকুয়ানার অনুপূরক ও ক্রিয়ানাশক ঔষধের নামঃ

পরিপূরক/তুলনীয় ঔষধ: 
এরেনিয়া, 
এন্টিম ক্রুড, 
এন্টিম টার্ট, 
এপিস মেলিফিকা, 
আর্নিকা মন্টানা, 
আর্সেনিক এলবাম, 
বেলেডোনা, 
ব্রায়োনিয়া এলবা, 
ক্যাডমিয়া, 
চায়না 
অফি, 
কিউগ্রাম মেটালিকাম, 
ইগ্নেশিয়া, 
পডোফাইলাম, 
ফসফরাস, 
রিউম, 
ট্যাবেকাম, 
সিপিয়া, 
সালফার। 
হাঁপানিতে ব্লাটা ওরিয়েন্টালিস তুলনীয়।

অনুপূরক ঔষধ : 
এন্টিম-টার্টারিকাম,
 আর্নিকা মন্টানা, 
কিউপ্রাম মেট।

শত্রুভাবাপন্ন ঔষধ : 
ওপিয়াম।

ক্রিয়ানাশক ঔষধ : 
আর্নিকা, 
আর্সেনিক, 
চায়না, 
নাক্স-ভমিকা, 
ট্যাবেকাম।

ক্রিয়াকাল: -১০ দিন।

ঔষধের ব্যবহৃত শক্তি ও মাত্রা: 
৩০, ২০০ বা এম/২, এম/৩ শক্তি ও উচ্চশক্তি এবং সূক্ষ্মমাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

ঔষধ সেবনকালে নিষেধ : 
এলকোহল জাতীয় পানীয়,
 বিয়ার,
 কফি,
 চর্বি,
 মাখন, 
টক ফল, 
মাংস,
 কেক।

প্রশন : - 

ইপিকাকুয়ানার ঔষধের মূল কাজ হলো নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ুর উপর। আর কোন কোন হোমিওপ্যাথি ওষুধ আছে এই স্নায়ুর উপর কাজ করে? 

উওর : 

নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ু (Nervus Pneumogastricus বা Vagus Nerve) একটি গুরুত্বপূর্ণ পারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ু, যা হজমতন্ত্র, হৃদযন্ত্র, ও শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।

ইপিকাকুয়ানা (Ipecacuanha) মূলত বমি, বমির অনুভূতি, এবং শ্বাসকষ্টের উপসর্গে কার্যকর, এবং এটি নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ুর উপর তীব্র প্রভাব ফেলে।

এই স্নায়ুর উপর কাজ করে এমন আরও কিছু হোমিওপ্যাথিক ওষুধ হলো:

১. Antimonium tartaricum

নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ুর শ্লৈষ্মিক উত্তেজনায় কাজ করে।

প্রচুর কফ জমে থাকে, কিন্তু উঠাতে পারে না।

বাচ্চাদের ঘন ঘন বমি ও শ্বাসকষ্টে কার্যকর।

২. Lobelia inflata

গ্যাস্ট্রিক ও রেসপিরেটরি সিস্টেম উভয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

বমির সাথে শ্বাসকষ্ট, নিঃশ্বাসে বাধা, অ্যাজমার মতো লক্ষণে কার্যকর।

৩. Nux vomica

হজমতন্ত্রের সমস্যা, বমির ভাব, গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডিটি, এবং ইরিটেবল কন্ডিশনে কাজ করে।

নিউমোগ্যাস্ট্রিক উত্তেজনায় হজমতন্ত্রে প্রভাব ফেলে।

৪. Arsenicum album

বমির সাথে প্রবল দুর্বলতা, তীব্র গ্যাস্ট্রিক ইরিটেশন, এবং এনজাইটি থাকে।

এটি নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ুর বেদনা ও অতিসংবেদনশীলতায় কার্যকর।

৫. Veratrum album

প্রচণ্ড বমি, ডায়রিয়া ও ঠান্ডা ঘামে সহ নিউমোগ্যাস্ট্রিক ইনভলভমেন্ট।

অত্যন্ত ক্ষীণ ও দুর্বল হয়ে পড়ে।

সংক্ষেপে বলা যায়,

নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ুর উপর কাজ করে এমন প্রধান হোমিওপ্যাথিক ঔষধগুলো হলো:

Ipecac, Ant-tart, Lobelia, Nux vomica, Ars alb, Veratrum alb।

প্রশন : 

নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ু (Nervus Pneumogastricus বা Vagus Nerve) একটি গুরুত্বপূর্ণ পারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ু। এর সম্পর্কে বিস্তারিত বলুন?

উওর : 

নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ু বা Vagus Nerve (ল্যাটিন: 
Nervus Pneumogastricus) হলো শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং দীর্ঘতম ক্র্যানিয়াল স্নায়ু (Cranial Nerve X)। এটি মস্তিষ্ক থেকে বের হয়ে শরীরের অনেকগুলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে স্নায়বিক সঙ্কেত সরবরাহ করে। নিচে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হলো:

নাম ও পরিচয়:

নাম: Vagus Nerve (Cranial Nerve X)

অর্থ: "Vagus" শব্দের অর্থ "ভবঘুরে" বা "wanderer" — কারণ এই স্নায়ু মস্তিষ্ক থেকে শুরু হয়ে গলার নিচে, বুক, এমনকি পেট পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।

ধরন: এটি মিশ্র স্নায়ু — অর্থাৎ এতে সেন্সরি (অনুভূতি), মোটর (চলন), এবং প্যারাসিমপ্যাথেটিক (অটোনোমিক) ফাইবার থাকে।

উৎপত্তি: মস্তিষ্কের Medulla Oblongata থেকে উৎপন্ন হয়।

ভাগ (Divisions):

Vagus nerve শরীরে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে কাজ করে। প্রধান অঞ্চলসমূহ:

1. Head & Neck (মাথা ও গলা):

গলার পেশি ও স্বরযন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে (larynx & pharynx)

কথা বলা, গিলতে সাহায্য করে।

2. Thorax (বক্ষদেশ):

হৃদয়: হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণ করে।

ফুসফুস: ব্রঙ্কাই ও শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে।

3. Abdomen (উদর/পেট):

পাকস্থলী, লিভার, কিডনি, অন্ত্র ইত্যাদিতে সংবেদন ও প্যারাসিমপ্যাথেটিক সঙ্কেত পাঠায়।

হজমে সহায়তা করে (gastric secretion, peristalsis)

মূল কাজগুলো (Functions):

১. Parasympathetic Control:

হৃদস্পন্দন কমানো, হজম বাড়ানো, বিশ্রাম ও পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে সহায়তা।

২. Motor Function:

গলার পেশি, গলনালী ও স্বরযন্ত্রে স্নায়বিক সঙ্কেত পাঠিয়ে কথা বলা ও গিলতে সাহায্য করে।

৩. Sensory Function:

গলা, কান, হার্ট, ফুসফুস, পাকস্থলীর সংবেদন বহন করে মস্তিষ্কে পৌঁছায়।

৪. Reflex Actions:

Gag reflex, cough reflex, এবং vomiting reflex–এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Vagus Nerve Dysfunction বা সমস্যা হলে:

গিলতে অসুবিধা, 
স্বরের পরিবর্তন, 
হঠাৎ বমি, 
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, 
ব্রেডিকার্ডিয়া (হৃদস্পন্দন ধীর হওয়া), 
অতিরিক্ত ঘাম ইত্যাদি হতে পারে।

হোমিওপ্যাথিতে এর গুরুত্ব:

এই স্নায়ুতে কাজ করে এমন লক্ষণ ও রোগে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ হোমিও ঔষধ ব্যবহৃত হয়, 

যেমন:
Ipecac, Antimonium tart, Nux vomica, Lobelia, Arsenicum alb, Veratrum alb ইত্যাদি।

Vagus Nerve Dysfunction বা উত্তেজনা/দুর্বলতা থেকে হওয়া রোগসমূহ:


১. গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল (হজমতন্ত্র):

Gagging / vomiting tendency (বমির প্রবণতা)

Gastroparesis (পাকস্থলীর মুভমেন্ট ধীর হওয়া)

Acid reflux / GERD

Constant nausea without relief

Hiccups (বারবার হেঁচকি)

২. রেসপিরেটরি (শ্বাসতন্ত্র):

Asthma (অ্যাজমা বা হাঁপানি)

Chronic cough

Difficulty breathing, especially with nausea

Bronchospasm

৩. কার্ডিওভাসকুলার (হৃদয়):

Bradycardia (হৃদস্পন্দন ধীর হওয়া)

Vasovagal syncope (হঠাৎ মাথা ঘুরে অজ্ঞান হওয়া)

Palpitations due to vagal overstimulation.

৪. নিউরোলজিক্যাল / মেন্টাল:

Anxiety with nausea

Panic attacks associated with gut symptoms

Vagal epilepsy (নিউমোগ্যাস্ট্রিক সম্পর্কিত খিঁচুনি)

৫. গলা ও স্বরযন্ত্র:

Hoarseness of voice.

Chronic sore throat without infection.

Difficulty swallowing (Dysphagia).

হোমিওপ্যাথিক কেস এনালাইসিস উদাহরণসহ:

Case 1: Ipecacuanha (ইপিকাকুয়ানা)

লক্ষণ:

বমি হবে কিন্তু কোনো আরাম আসে না

জিহ্বা পরিষ্কার, তবুও বমি

সাথে শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি


ভিত্তি: নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ুর উত্তেজনা


ব্যবহার: Ipecac 30 বা 200, বারবার বমি ও শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে

Case 2: Antimonium tartaricum

লক্ষণ:

বুক ভর্তি কফ কিন্তু উঠাতে পারে না

শিশুরা নীলাভ হয়ে যায় শ্বাসকষ্টে

ঘনঘন হাঁপায় এবং বমির ভাব থাকে


ভিত্তি:  
ব্রঙ্কিয়াল ও নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ুর ইনভলভমেন্ট

ব্যবহার:৷ Ant-tart 30/200।

Case 3: Nux vomica

লক্ষণ:

বেশি খাওয়া বা মদ্যপানের পর হজমে সমস্যা

গ্যাস্ট্রিক, বমির প্রবণতা, বিরক্তিকর মেজাজ

কোষ্ঠকাঠিন্য ও অল্পতেই রেগে যায়

ভিত্তি

নিউমোগ্যাস্ট্রিক স্নায়ু ও সিমপ্যাথেটিক ভারসাম্যহীনতা

ব্যবহার:  Nux vom 200 / 1M, রাতে এক ডোজ


Case 4: Veratrum album

লক্ষণ:

প্রচণ্ড দুর্বলতা, ঘাম, ও বমি


ঠান্ডা হাত-পা, শ্বাসকষ্ট


ডিহাইড্রেশন ধরনের লক্ষণ


ব্যবহার: Verat alb 30/200

Case 5: Gelsemium sempervirens

লক্ষণ:

টেনশন বা ভয় থেকে গলা শুকিয়ে আসে


গিলতে কষ্ট, দুর্বলতা


Vagus nerve এবং mental-emotional effect।

ব্যবহার: Gelsemium 30/200

উপসংহার:

Vagus nerve-এ সমস্যা মানেই একাধিক সিস্টেমে প্রভাব — হজম, শ্বাস, হৃদয়, মন!

হোমিওপ্যাথিতে লক্ষণভিত্তিক এবং মিয়াজমাটিক বিশ্লেষণে চিকিৎসা করলে এই ধরনের জটিল অবস্থাও সাফল্যের সাথে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।




-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ
বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি, 
ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা    
প্রভাষক, 
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ। 

আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। 

>Share by:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন