ঘ) হেমাটেমেসিস বা রক্তবমি (Haematemesis)
প্রশ্ন-০২.১৯। হেমাটেমেসিস বা রক্তবমি কাহাকে বলে?
উত্তর : বমির সহিত রক্ত ক্ষরণ হইলে তাহাকে হেমাটেমেসিস বা রক্তবমি বলে।
ফুসফুস হইতে কাশির সহিত যে রক্তপাত (হেমোপটিসিস) হয় উহা হইতে ইহা পৃথক পীড়া।
প্রশ্ন-০২.২০। হেমাটেমেসিসের কারণ বর্ণনা কর।
উত্তর : হেমাটেমেসিসের কারণ- হেমাটেমেসিস বা রক্তবমির কারণগুলি নিম্নরূপ-
১) সাধারণতঃ পাকাশয় ক্ষত রোগে অনেকদিন ভুগিলে রক্তবমি হইতে পারে।
২) পাকাশয়ে ক্যান্সার হইলে।
৩) যকৃতে রক্তাধিক্যের ফলে।
৪) ডিওডেনামে ক্ষত হইলে।
৫) ইসোফেগাল আলসার এবং ইসোফেগাল ভেরিসেস নামক রোগে পাকস্থলীর কোন ভেইনে রাপচার হইলে ফাটিয়া গেলে।
৬) ব্ল্যাকওয়াটার ফিভারে।
৭) করোসিভ পয়জনিং।
৮) ইরসাপাইরিন, এসপিরিন, কটিসন প্রভৃতি ঔষধ প্রয়োগের ফলে।.
৯) গুটিবসন্ত, হেমোরেজিক মিজল্স, ইউরিমিয়া প্রভৃতি ইনফেকশাস্ পীড়ায়।
প্রশ্ন-০২.২১। হেমাটেমেসিসের লক্ষণাবলী বা ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
বা, হেমাটেমেসিসের লক্ষণ ও চিহ্নসমূহ কি কি?
উত্তর: হেমাটেমেসিসের লক্ষণাবলী বা ক্লিনিক্যাল ফিচার- হেমাটেমেসিসের লক্ষণাবলী নিম্নরূপ-
লক্ষণ (symptom), রোগী যাহা বলিবেন-
১) গা বমি ভাব থাকে।
২) রক্তবমির 'স্মাগে পেটে ভারবোধ, ব্যথা প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়।
৩) অজীর্ণতা ও বদহজম দেখা দেয়।
৪) রোগীর মুখে সব সময় নোনতা স্বাদ থাকে।
৫) মাথা ঝিমঝিম করে।
চিহ্ন (Sign) চিকিৎসক যাহা দেখিবেন-
১) মুখ, নাক প্রভৃতি হইতে বমির সাথে রক্ত বাহির হইতে থাকে।
২) রোগীর দীর্ঘ নিশ্বাস পড়ে।
৩) নাড়ী খুব দুর্বল হয়। প্রচুর বমি হইলে কোলান্স অবস্থা আসিতে পারে।
প্রশ্ন-০২.২২। হেমাটেমেসিসের জটিল উপসর্গ বা জটিলতা লিখ।
বা, হেমাটেমেসিসের ভাবীফল লিখ।
উত্তরঃ
হেমাটেমেসিসের জটিল উপসর্গ-
১) অতিরিক্ত রক্তস্রাব হইতে থাকিলে তাহা হইতে ক্যান্সার হইতে পারে।
২) পাকস্থলীর ক্যান্সার হইলে তাহা মারাত্মক হয়।
৩) উপযুক্ত খাদ্য ও পুষ্টির অভাবে রোগী দিনদিন দুর্বল হইয়া পড়ে।
প্রশ্ন-০২.২৩। হেমাটেমেসিসের ব্যবস্থাপনা বা চিকিৎসা লিখ।
উত্তর: হেমাটেমেসিসের ব্যবস্থাপনা-
১) রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখিতে হইবে।
২) রক্তবমি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত শুধু বরফের পানি সামান্য' সামান্য পান করিতে দেওয়া যাইতে পারে। অন্যান্য খাদ্য দেওয়া বন্ধ রাখিতে হইবে।
৩) নাভি হইতে উপরের দিকে পেটে আইসব্যাগ প্রয়োগ করিতে হইবে।-
৪) দেহের খাদ্য ও পানির অভাব আংশিকভাবে পুরণের জন্য নরম্যাল স্যালাইন উইথ ৫% ডেক্সট্রোজ ২৪ ঘন্টায় ৩ হইতে ৪ পাইন্ট ফোঁটা ফোঁটা করিয়া শিরায় দিতে হইবে।
ব্যবহৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ-
রক্তপাত বন্ধের জন্য রোগীর রোগের লক্ষণাবলী, রোগীর ব্যক্তি কেন্দ্রিক লক্ষণাবলী, সম্মিলিত করি লক্ষণ সমষ্টি নির্ণয় করে হোমিওপ্যাথিক মেটেরিয়া মেডিকা থেকে রোগীর জন্য একটি মাত্র ওষুধ নির্ণয় করিতে হইবে। নির্মলিখিত ওষুধসমূহ থেকে,
ইপিকাক, চায়না, হ্যামামেলিস, বেলেডোনা, ফেরাম ফস প্রভৃতি ঔষধ ব্যবহার করিতে হইবে।
--------++++++++--+----+
৬) হেমাচুরিয়া বা প্রস্রাবের সহিত রক্তক্ষরণ (রক্তপ্রস্রাব)
(Heamaturia)
প্রশ্ন-০২.২৪। হেমাচুরিয়া বা রক্তপ্রস্রাব কাহাকে বলে?
উত্তর: প্রস্রাবের সাথে যখন রক্তক্ষরণ হয় তখন তাহাকে হেমাচুরিয়া বা রক্ত প্রস্রাব বলে।
প্রশ্ন-০২.২৫। হেমাচুরিয়া বা রক্ত প্রস্রাবের কারণ লিখ।
উত্তরঃ হেমাচুরিয়ার কারণ- বিভিন্ন কারণে হেমাচুরিয়া বা রক্তপ্রস্রাব হইতে পারে। নিম্নে হেমাচুরিয়ার কারণসমূহ বর্ণিত হইল।
১) প্রস্রাবের পূর্বে রক্ত ক্ষরণের কারণ (মূত্রনলী হইতে রক্ত আসিলে)-
ক) একিউট গনোরিয়া-গনোকক্কাস নামক জীবাণুর সংক্রমণে।
২) প্রস্রাবের পরে রক্তক্ষরণের কারণ (মূত্রথলী হইতে রক্ত আসিলে)-
ক) মূত্রথলীতে পাথরী সৃষ্টি।
খ) মূত্রথলীর প্যাপিলোমা।
৩) প্রস্রাবের সাথে ঘোলাটে অবস্থায় রক্তক্ষরণের কারণ-
ক) কিডনী- পাথর সৃষ্টি, আঘাত লাগা, ক্ষতসৃষ্টি, প্রদাহ ও স্ফীতি, টিউমার সৃষ্টি, ক্যান্সার।
খ) মূত্র থলী- পাথর সৃষ্টি, ছড়িয়া যাওয়া, আঘাত লাগা, প্রদাহ ও স্ফীতি, সংকোচন, টিউমার, অর্বুদ, ক্যান্সার প্রভৃতি।
গ) ব্লাডার- পাথর সৃষ্টি, আঘাত, ক্ষত, টিউমার প্রভৃতি।
ঘ) প্রস্টেট- প্রদাহ ও স্ফীতি, আকারে বড় হওয়া, অর্বুদ, টিউমার প্রভৃতি।
ঙ) পারপিউরিয়া।
চ) ব্ল্যাকওয়াটার ফিভার, পার অক্সিম্যাল হেমোগ্লোবিনুরিয়া, বসন্ত, ম্যালেরিয়া, স্কার্ভি প্রভৃতি পীড়া দ্বারা।
ছ) কিছু কিছু ঔষধ সেবন।যেমন-সালফা ডায়াজিন, সালফা পাইরিডিন, ইরগাপাইরিন, এসপিরিন, হেক্সামিন, দীর্ঘদিন যাবত এলোপ্যাথি উগ্র প্রকৃতির ঔষধ সেবন।
৪) অন্যান্য কারণ- একিউট ইউরেথ্রাইটিস, ইউরেথ্রা চাপ খাওয়া, এপেন্ডিসাইটিস, স্যালপিনজাইটিস, রেকটাস বা জরায়ুর ক্যান্সার, হাইপারটেনশন, প্রস্রাব করানোর জন্য পর পর ক্যাথিটার প্রয়োগ, লিউকেমিয়া, সৃতিকাজ্বর প্রভৃতি।
প্রশ্ন-০২.২৬। হেমাচুরিয়া বা রক্তপ্রস্রাবের লক্ষণ বা ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
বা, হেমাচুরিয়া বা রক্ত প্রস্রাবের চিহ্ন ও লক্ষণাবলী লিখ।
উত্তর : হেমাচুরিয়ার লক্ষণাবলী বা ক্লিনিক্যাল ফিচার- হেমাচুরিয়ার লক্ষণাবলী নিম্নরূপ।
চিহ্ন (sign), চিকিৎসক যাহা দেখিবেন-
১) প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২) প্রস্রাব দ্বার দিয়া রক্তের বড় বড় চাপ বাহির হয়।
৩) কিডনী হইতে রক্ত আসিলে প্রস্রাবের সাথে মিশ্রিত হইয়া রক্ত বাহির হয়।
৪) মূত্রথলী হইতে রক্ত আসিলে প্রথমে প্রস্রাব হওয়ার পরে রক্ত বাহির হয়।
৫) ইউরেথ্রা হইতে রক্ত আসিলে প্রথমে রক্ত ফোঁটা ফোঁটা বাহির হয়, পরে প্রস্রাব হয়। ইহাতে রোগীর কোন কষ্ট অনুভব হয় না।
লক্ষণ (symptom), রোগী যাহা বলিবেন-
১) মূত্রথলী হইতে রক্ত আসিলে প্রস্রাব ত্যাগকালীন রোগীর বেদনা ও কষ্ট হয়।
২) মূত্রনলী হইতে রক্ত আসিলে প্রথমে রক্ত ফোঁটা ফোঁটা বাহির হয়, পরে প্রস্রাব হয়। প্রস্রাব নির্গমনে কোন কষ্ট অনুভব হয় না।
প্রশ্ন-০২.২৭। বিভিন্ন কারণজনিত হেমাচুরিয়া বা রক্ত প্রস্রাবে মূত্রত্যাগকালীন অনুভূতিগুলি বর্ণনা কর।
উত্তর: রক্ত প্রস্রাবে মূত্রত্যাগকালীন কষ্টকর অনুভূতিগুলি নিম্নরূপ-
১) মূত্রত্যাগের শুরুতে কষ্ট হইলে ইউরেথ্রার গোলযোগ।
২) মূত্রত্যাগ শেষে কষ্ট হইলে মূত্রথলীর গোলযোগ।
৩) প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত কষ্ট হইলে কিডনীর গোলযোগ।
৪) নড়াচড়া বা ব্যায়াম করার সময় কষ্ট হইলে মূত্র পাথরী।
৫) মূত্রে ভয়ানক দুর্গন্ধ হইলে প্রস্টেটের গোলযোগ।
৬) মূত্রত্যাগে তেমন কোন বেদনা বা কষ্ট না হইলে মূত্রপথের বা মূত্রযন্ত্রের কোথাও টিউমার বা অর্বুদ সৃষ্টির লক্ষণ।
৭) মূত্রত্যাগে ভয়ংকর জ্বালাপোড়া হইলে মূত্রপথে বা মূত্রযন্ত্রে কোথাও পাথর সৃষ্টি, ক্ষত সৃষ্টি।
৮) কিডনী অঞ্চলে টিপ দিলে ভয়ানক ব্যথা তবে পাথর সৃষ্টি বা টিউমার।
৯) মূত্রথলীতে টিপ দিলে ভয়ানক ব্যথা হইলে প্রস্টেটবৃদ্ধি, মূত্রথলীতে পাথর বা ক্ষত বুঝিতে হইবে।
প্রশ্ন-০২.২৮। হেমাচুরিয়া বা রক্তপ্রস্রাবের ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা লিখ।
উত্তর: ব্যবস্থাপনা- এই পীড়ায় সম্পূর্ণ বিশ্রাম আবশ্যক। মলত্যাগের জন্য
যাহাতে বেগ না দিতে হয় এইরূপ ব্যবস্থা করা উচিত। পাথরীর জন্য রক্তস্রাব হইলে রোগীকে স্থিরভাবে চিৎ করিয়া শুইতে বলিবেন এবং জল এরারোট, বার্লি প্রভৃতি খাইতে দিবেন। ব্লাডারের ভিতর বড় রক্তের চাপ থাকিলে হ্যামামেলিস সমপরিমাণ পানিতে মিশাইয়া মূত্রনালীতে পিচকারী এবং মূল অরিষ্ট সেবন করিতে হইবে। কিডনীর প্রদাহের প্রথমাবস্থায় রক্ত নির্গত হইলে দুই পাশের কিডনীর উপর গরম পানির ফোমেন্টেশান এবং পশমী কাপড় দিয়া কোমর বাঁধিয়া দিবেন।
ব্যবহৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ :
রোগীর রোগের লক্ষণাবলী, রোগীর ব্যক্তি কেন্দ্রিক লক্ষণাবলী, সম্মিলিত করি লক্ষণ সমষ্টি নির্ণয় করে হোমিওপ্যাথিক মেটেরিয়া মেডিকা থেকে রোগীর জন্য একটি মাত্র ওষুধ নির্ণয় করিতে হইবে। নির্মলিখিত ওষুধসমূহ থেকে,
আর্সেনিক, ক্যান্থারিস, চিমাফিলা, আর্ণিকা, ক্রোটেলাস, হ্যামামেলিস, ল্যাকেসিস, মার্কুরিয়াস, মিলিফোলিয়াম, এসিড নাইট, সিকেলি, নাক্স, টেরিবিন্থ, বার্বেরিস ভালগ প্রভৃতি ব্যবস্থেয়।
------**********------------
চ) ম্যালেনা বা মলের সাথে রক্তক্ষরণ
(Malaena)
প্রশ্ন-০২.২৯। ম্যালেনার সংজ্ঞা লিখ।
উত্তর: মলের সহিত রক্তক্ষরণ হইলে রক্ত কালবর্ণ ধারণ করে এবং মলও কালবর্ণ হইয়া আলকাতরার ন্যায় পায়খানা হয়। ইহারই নাম ম্যালেনা।
প্রশ্ন-০২.৩০। ম্যালেনার কারণ লিখ।
উত্তর: ম্যালেনার কারণ-সাধারণতঃ নিম্নলিখিত কারণে ম্যালেনা হইয়া থাকে।
১) পাকস্থলী বা অস্ত্রে ক্ষত হইয়া উহা হইতে রক্তক্ষরণ হইয়া থাকে।
২) পাকাশয়ের প্রসারণের কারণে ইহা হইতে পারে।
৩) অস্ত্রে প্রদাহ, অর্শ, মলদ্বারের ক্যান্সার প্রভৃতি কারণে তাজা রক্ত মলের সাথে দেখা যায়।
প্রশ্ন-০২.৩১। ম্যালেনার লক্ষণাবলী বা ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
বা, ম্যালেনার চিহ্ন ও লক্ষণসমূহ লিখ।
উত্তর: ম্যালেনার লক্ষণাবলী বা ক্লিনিক্যাল ফিচার নিম্নরূপ-
চিহ্ন (sign), চিকিৎসক যাহা দেখিবেন-
১) মল কালবর্ণের হইয়া থাকে।।
২) মলের সাথে তাজা রক্ত মিশ্রিত থাকিতে পারে।
৩) পাকস্থলী বা অস্ত্রে ক্ষত হয়।
লক্ষণ (symptoms), রোগী যাহা বলিবেন-
১) রোগীর পেটে ব্যথাবেদনা হইয়া থাকে।
২) ক্ষুধা কমিয়া যায়, মুখে অরুচিবোধ হয়।
প্রশ্ন-০২.৩২। ম্যালেনার ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর: খাদ্যদ্রব্য ভালভাবে চিবাইয়া খাওয়া উচিত। হালকা ও লঘুপাক খাদ্য রোগীকে গ্রহণ করিতে হইবে। ডাবের পানি, ঘোল ভাল পথ্য। মশলাযুক্ত খাদ্য, মাংস, মদ জাতীয় পানীয় বর্জনীয়। রোগী পূর্ণ বিশ্রামে থাকা উচিত। ঠাণ্ডা দ্রব্য পান করা উচিত।
কাজী সাইফ উদদীন আহমেদ
>Share by:
Make a comments as guest/by name or from your facebook:
Make a comment by facebook: