খ) এপিসট্যাক্সিস বা নাসিকা দিয়া রক্তপাত
(Epistaxis)
প্রশ্ন-০২.১০। এপিসট্যাক্সিস বা নাসিকা দিয়া রক্তপাতের সংজ্ঞা দাও।
উত্তরঃ মাঝে মাঝে অনেকের নাক দিয়া রক্তপাত হইতে দেখা যায়।
নাসিকা গহ্বর হইতে যখন রক্তস্রাব হয় তাহাকে এপিসট্যাক্সিস বলা হয়।
প্রশ্ন-০২.১১। এপিসট্যাক্সিস বা নাসিকা হইতে রক্তস্রাবের কারণ লিখ।
• উত্তর: এপিসট্যাক্সিসের কারণ-
যে সকল কারণে নাসিকা হইতে রক্তস্রাব হয় তাহা নিম্নে দেওয়া হইল।
ক) উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপ্রেসার।
খ) নাসিকায় বা মাথায় আঘাত লাগা।
গ) মস্তিষ্কে রক্তের আধিক্য বা বেশী রক্তজমিয়া থাকিলে।
ঘ) অতিরিক্ত পরিশ্রম করা বা মাথার খাটুনি খাটা।
ঙ) নাসিকার পলিপাস, ম্যালিগন্যান্ট টিউমার প্রভৃতি পীড়ায়।
চ) সাইনাসাইটিস রোগ হইতে।
ছ) স্ত্রীলোকদের ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার কারণে নাসিকা দিয়া রক্তস্রাব।
জ) যকৃতের পীড়া, লিভার সিরোসিস, ক্রণিক নেফ্রাইটিস, পারপিউরিয়া, লিউকিমিয়া প্রভৃতি পীড়ায়, উপদংশ বা সিফিলিস রোগের উপসর্গ হইতে, টাইফয়েড, কালাজ্বর, গুটিবসন্ত, ডিপথিরিয়া প্রভৃতি রোগের উপসর্গ হইতে।
ঝ) ভাইরাস ইনফেকশান জনিত, যেমন- তরুণ ও পুরাতন সর্দি, কাশি, হামজুর, নাসিকা ঝিল্লীর পুরাতন প্রদাহ প্রভৃতি।
প্রশ্ন-০২.১২। এপিসট্যাক্সিসের বা নাসিকা দিয়া রক্তস্রাবের লক্ষণ বা ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
উত্তর: এপিসট্যাক্সিসের লক্ষণ বা ক্লিনিক্যাল ফিচার- সাধারণভাবে ইহা খুব
একটা দেখা যায় না। তবে কাহারও মাঝে মাঝে সর্দির ইতিহাস বা মাথা যন্ত্রণার ইতিহাস বা উচ্চরক্তচাপের ইতিহাস দেখা যায়।
ক) হঠাৎ নাকের মধ্যে সুড়সুড় করে বা অস্বস্তি মনে হয়।
খ) হঠাৎ নাক দিয়া ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়িতে থাকে। কিছুটা রক্ত পড়ার পর তাহা আপনা আপনিই বন্ধ হইয়া যায়।
গ) কখনও সর্দিগর্মি, স্ট্রোক, সানস্ট্রোক প্রভৃতির ইতিহাস থাকে।
ঘ) অনেকের মাথা ব্যথা হয়, অনেকের আবার হয় না।
৬) কখনও কখনও রোগী অজ্ঞান হইতে পারে।
প্রশ্ন-০২.১৩। এপিসট্যাক্সিস বা নাসিকা হইতে রক্তস্রাবের ব্যবস্থাপনা বা চিকিৎসা লিখ।
উত্তর : এপিসট্যাক্সিসের ব্যবস্থাপনা- নাসিকা হইতে রক্তস্রাব হইলে কারণ
অনুসারে ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করিতে হইবে। সাধারণতঃ আপনা আপনিই অনেকের রক্ত বন্ধ হইয়া যায়। যদি আপনা আপনি রক্ত বন্ধ না হয় তবে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।
ক) রোগীকে সোজাভাবে চেয়ারে বসাইয়া নাকের উপর ও রগের উভয় পাশে বরফ লাগাইতে হইবে। ইহাতেও রক্ত বন্ধ না হইলে নাকের পার্শ্ব দেয়াল দ্বারা মধ্যবর্তী দেয়ালের উপর অনেকক্ষণ চাপ দিয়া ধরিয়া রাখিতে হইবে।
খ) একেবারেই রক্ত পড়া বন্ধ না হইলে জীবাণুমুক্ত সাধারণ ফিতার আকারে গজ ছিপির ন্যায় ঠাসিয়া প্লাগ করিয়া কয়েকঘণ্টা রাখিলেই রক্ত বন্ধ হইয়া যাইবে। নাসিকায় আঘাতপ্রাপ্ত হইলে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হয়।
গ) উচ্চ রক্তচাপ জন্য মস্তিষ্কের রক্তাধিক্যজনিত নাক দিয়া রক্ত বাহির হইলে প্রেসার কমিয়া আসে। এই ক্ষেত্রে রক্তপাত বন্ধ করা উচিত নয়।
ঘ) সাইনোসাইটিস রোগের জন্য হইলে এলোপ্যাথিক মতে ক্যালসিয়াম উইথ ভিটামিন ইনজেকশান এবং টেরামাইসিন বা ডক্সি জাতীয় এন্টিবায়োটিক ব্যবস্থা করা করা হয়।
ঙ) রোগীর যাহাতে ভাল ঘুম হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। অতিরিক্ত রৌদ্রে ঘোরাঘুরি, নেশা সেবন প্রভৃতি বন্ধ রাখিতে হইবে।
ব্যবহৃত হোমিওপ্যথিক ঔষধাবলী-
রক্তস্রাবের, অবস্থা ও লক্ষণানুযায়ী হোমিওপ্যাথিক মতে আর্ণিকা, একোনাইট, হ্যামামেলিস, ক্যালেন্ডুলা, চায়না, মিলিফোলিয়াম, প্রভৃতি ঔষধ ব্যবহার করা হয়।
------+++++++++++--------
গ) হেমোপটিসিস বা কাশির সহিত রক্তক্ষরণ
(Haemoptysis)
প্রশ্ন-০২.১৪। হেমোপটিসিস কাহাকে বলে?
উত্তর : কাশির সহিত গলা হইতে রক্তক্ষরণ হইলে তাহাকে হেমোপটিসিস বলে।
প্রশ্ন-০২.১৫। হেমোপটিসিসের প্রকারভেদ বা শ্রেণীবিভাগ লিখ।
উত্তর : হেমোপটিসিসের প্রকারভেদ- হেমোপটিসিস প্রধানত ২ প্রকারের।
যথা-
১) স্পুরিয়াম হেমোপটিসিস- স্বরযন্ত্র বা ল্যারিংস এর উপরের অংশ হইতে যে রক্তক্ষরণ হয় তাহাকে স্পুরিয়াম হেমোপটিসিস বলে।
২) ট্র হেমোপটিসিস- স্বরযন্ত্র বা ল্যারিংস এর নিচের অংশ হইতে যে রক্তক্ষরণ হয় তাহাকে টু হেমোপটিসিস বলে।
প্রশ্ন-০২.১৬। হেমোপটিসিসের কারণসমূহ লিখ।
উত্তর: হেমোপটিসিসের কারণ- হেমোপটিসিসের কারণসমূহ নিম্নরূপ-
ক) উচ্চ রক্তচাপ,
খ) লোবার নিমোনিয়া,
গ) ব্রংকিয়েকটিসিস,
ঘ) ব্রংকাসের এডিনোমা,
৬) ফুসফুসের ক্যান্সার,
চ) ফুসফুসের এবসেস,
ছ) হুপিং কাশি,
জ) রক্তের পীড়া, যেমন-পারপিউরিয়া, হেমোফিলিয়া, লিউকিমিয়া প্রভৃতি।
ঝ) পালমোনারী টিউবারকুলোসিস,
ঞ) কনজেসটিভ হার্ট ফেলিওর।
প্রশ্ন-০২.১৭। হেমোপটিসিসের ব্যবস্থাপনা বা চিকিৎসা লিখ।
উত্তর: হেমোপটিসিসের ব্যবস্থাপনা-
ক) রোগীকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্রামে রাখিতে হইবে।
খ) রোগীকে বরফের পানি পান বা বরফ চুষিতে দিতে হইবে। খাদ্যবস্তু ঠাণ্ডা করিয়া দিতে হইবে। দুধে ও পানিতে বরফে মিশাইয়া দেওয়া চলে। উষ্ণ খাদ্য কখনও খাইতে দেওয়া উচিত নয়।
গ) দেহের খাদ্য ও পানির অভাব আংশিকভাবে মিটাইবার জন্য নরম্যাল্ স্যালাইন উইথ ৫% ডেক্সট্রোজ ফোঁটা ফোঁটা করিয়া শিরায় দিতে হইবে।
ব্যবহৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ-
রক্তপাত বন্ধের জন্য রোগীর রোগের লক্ষণাবলী, রোগীর ব্যক্তি কেন্দ্রিক লক্ষণাবলী, সম্মিলিত করি লক্ষণ সমষ্টি নির্ণয় করে হোমিওপ্যাথিক মেটেরিয়া মেডিকা থেকে রোগীর জন্য একটি মাত্র ওষুধ নির্ণয় করিতে হইবে। নির্মলিখিত ওষুধসমূহ থেকে,
ইপিকাক, ব্রায়োনিয়া, হ্যামামেলিস, মিলিফোলিয়াম প্রভৃতি ঔষধ লক্ষণানুযায়ী ব্যবহার করা যায়।
প্রশ্ন-০২.১৮। হেমাটেমেসিস ও হেমোপটিসিসের মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা কর।
উত্তর: হেমাটেমেসিস ও হেমোপটিসিসের মধ্যে পার্থক্যগুলি নিম্নে আলোচনা করা হইল।
১) হেমাটেমেসিসে বমির সাথে রক্তক্ষরণ হয়।
VS
আর হেমোপটিসিসে কাশির সাথে রক্তক্ষরণ হয়। হেমোপটিসিসের রক্ত ফুসফুস হইতে ক্ষরিত হয়। কিন্তু হেমাটেমেসিসে ফুসফুস হইতে রক্ত ক্ষরণ হয় না।
২) হেমাটেমেসিসে পেপটিক আলসারের ইতিহাস থাকে।
VS
আর হেমোপটিসিসে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহের ইতিহাস পাওয়া যায়।
৩) হেমাটেমেসিসের জন্য গ্যাস্ট্রিক আলসারই অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী।
VS
কিন্তু হেমোপটিসিসের জন্য পালমোনারী টিউবারকুলোসিস, মাইট্রাল স্টেনোসিস, লোবার নিমোনিয়া, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং ব্রংকিয়েকটিসিস অধিক ক্ষেত্রে দায়ী।
৪) হেমাটেমেসিসে কালচে বর্ণের রক্ত নির্গত হয়।
VS
হেমোপটিসিসে টকটকে তাজা লালবর্ণের রক্ত নির্গত হয়।
৫) হেমাটেমেসিসের রক্ত ফেনাযুক্ত নয়।
VS
অথচ হেমোপটিসিসের রক্ত ফেনাযুক্ত।
কাজী সাইফ উদদীন আহমেদ
>Share by:
Make a comments as guest/by name or from your facebook:
Make a comment by facebook: