ঔষধ ছাড়া সুস্থ থাকতে মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের বিষয়টি ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে আল কোরআন ও সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে গভীরভাবে আলোচনা করা যায়। ইসলাম মানবজীবনের প্রতিটি দিকেই ব্যালান্স বা ভারসাম্য বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছে, এবং খাদ্যাভ্যাসও এর ব্যতিক্রম নয়। কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গঠন করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা যেতে পারে।
১. খাদ্যের হালাল ও পবিত্রতা:
আল্লাহ তাআলা কোরআনে বারবার হালাল ও পবিত্র খাদ্য গ্রহণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। যেমন বলা হয়েছে:
> "হে মানবজাতি! তোমরা পৃথিবীতে যা হালাল ও পবিত্র রয়েছে তা খাও, আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।"
(সূরা বাকারা: ১৬৮)
এখানে "হালাল" ও "পবিত্র" বলতে বুঝানো হয়েছে সেই সমস্ত খাদ্য, যা ইসলামের শরীয়ত অনুসারে বৈধ এবং স্বাস্থ্যসম্মত।
২. খাদ্যে পরিমিতি বজায় রাখা:
ইসলামে কোনো কিছুতেই অতিরিক্ততা পছন্দ করা হয় না। খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিমিতি বজায় রাখার বিষয়টি সুন্নাহতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
> "মানুষের জন্য কিছু লোকমাই যথেষ্ট, যা তার পিঠ সোজা রাখতে পারে।
তবে যদি আরও খেতে চায়, তবে সে যেন এক-তৃতীয়াংশ খায় খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানি খাওয়ার জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ খালি রাখে নিঃশ্বাসের জন্য।"
(তিরমিজি: ২৩৮০)
এ থেকে বোঝা যায় যে, অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং এটি সুস্থতার পথে অন্তরায়।
৩. প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ:
কোরআন এবং হাদিসে অনেক স্থানে বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাদ্যের উপকারিতা সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন খেজুর, মধু, জলপাই, আঙ্গুর, এবং দুধের মতো খাবারগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বাস্থ্যকর বলা হয়েছে।
> "আর পেঁয়াজ, রসুন ও মশলা দ্বারা যে জলপাই থেকে তেল উৎপাদিত হয় তা (তোমরা) খাও।"
(সূরা আত-তীন: ১-৪)
এছাড়া মধুর ব্যাপারে বলা হয়েছে:
> "তোমার পালনকর্তা মৌমাছির প্রতি নির্দেশ দিলেন, 'তুমি পাহাড়ে, বৃক্ষে এবং মানুষদের বানানো ঘরে গৃহ তৈরি কর।' তারপর সকল ফল থেকে আহার কর এবং তোমার পালনকর্তার পথ সুগম কর। তাদের পেট থেকে মানুষের রোগের জন্য নিরাময়কর পানীয় (মধু) বের হয়। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।"
(সূরা নাহল: ৬৮-৬৯)
৪. পানির গুরুত্ব:
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতেন। তিনি খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি খাদ্যের আগে ও পরে পানি পান করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়াও খাদ্য গ্রহণের সময়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং ধীরেস্থিরে খাওয়ার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন, যা হজম ব্যবস্থাকে সুগম করে।
৫. রোজা:
রোজা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, এবং এটি মানুষের শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে এবং পেটের বিশ্রাম নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
এটি এক ধরনের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া, যা শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আল্লাহ বলেছেন:
> "হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা পরহেজগার হতে পার।"
(সূরা বাকারা: ১৮৩)
৬. সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল:
কোরআনে এমন কিছু আয়াত রয়েছে, যেখানে ফলমূলের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
আল্লাহ পৃথিবীকে মানুষের জন্য জীবনধারণের উপযুক্ত করে তৈরি করেছেন এবং তার মধ্যে সবুজ শস্য, ফলমূল, শাকসবজি এবং খাওয়ার উপযুক্ত জিনিস দিয়েছেন। এ ধরনের খাবারগুলো পুষ্টি সরবরাহ করে, যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে।
> "তিনিই মাটির মাধ্যমে শস্য উৎপাদন করেন, ফলমূল, খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান তৈরি করেন এবং অন্যান্য নানা ধরণের ফসল।"
(সূরা আনআম: ৯৯)
৭. শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা:
খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখার জন্য ইসলাম শরীর চর্চা এবং ভালো মানসিকতার উপর গুরুত্ব দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
> "শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিন থেকে উত্তম এবং আল্লাহর নিকট প্রিয়।"
(সহিহ মুসলিম)
শক্তিশালী হওয়ার অর্থ শুধুমাত্র শারীরিক দিক থেকে নয়, বরং মানসিক ও আত্মিক শক্তি অর্জনের বিষয়টিও এতে অন্তর্ভুক্ত।
উপসংহার:
ইসলামে খাদ্যাভ্যাসের মূলনীতি হলো ভারসাম্য, পরিমিতি এবং হালাল ও পবিত্র খাদ্য গ্রহণ করা।
আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে চলা এবং সুন্নাহ অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে মানুষ ঔষধ ছাড়াও সহজে সুস্থ থাকতে পারে।
অতিরিক্ত খাবার বা ক্ষতিকর খাদ্য থেকে বিরত থাকা, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, রোজা রাখা এবং পানির পর্যাপ্ত গ্রহণ ইত্যাদি সবই ইসলামের আদর্শ খাদ্যাভ্যাসের অংশ।
ঔষধ ছাড়া সুস্থ থাকতে মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিত সাইন্টিফিক ব্যাখ্যা - শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অনুযায়ী :
ঔষধ ছাড়াই সুস্থ থাকার জন্য দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস গঠনে বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক কার্যক্ষমতা নিশ্চিত করতে প্রতিদিন যে সকল পুষ্টি দরকার, তা বিভিন্ন খাদ্য উৎস থেকে গ্রহণ করা উচিত।
নিচে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং খাদ্যাভ্যাসের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
১. মস্তিষ্ক:
পুষ্টি: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন বি, চoline
খাদ্য উৎস: মাছ (বিশেষত স্যামন, সারডাইন), আখরোট, বাদাম, ডিম, ব্লুবেরি
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যক্ষমতা উন্নত করে।
এছাড়া, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং স্নায়ু ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়।
ভিটামিন বি নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদনে সাহায্য করে যা স্নায়ু সংকেতের প্রেরণ নিশ্চিত করে।
২. হৃদপিণ্ড:
পুষ্টি: ফাইবার, পটাশিয়াম, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম
খাদ্য উৎস: ওটস, আলমন্ড, আভোকাডো, বীজজাতীয় খাবার, সবুজ শাকসবজি
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা: ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের প্রদাহ কমায়, যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
৩. লিভার:
পুষ্টি: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ফাইবার
খাদ্য উৎস: লেবু, গাজর, আপেল, বিট, ব্রকোলি
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা: লিভার ডিটক্সিফিকেশন (বিষমুক্তকরণ) এর প্রধান অঙ্গ।
ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
ফাইবার লিভার থেকে বর্জ্য দ্রুত সরাতে সাহায্য করে।
৪. কিডনি:
পুষ্টি: পানি, ইলেকট্রোলাইট, পটাশিয়াম, ফাইবার
খাদ্য উৎস: শসা, তরমুজ, বেল পেপার, ডার্ক চকোলেট, শাকসবজি
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা: কিডনির প্রধান কাজ হলো শরীরের বর্জ্য বের করে শরীরের ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখা।
পর্যাপ্ত পানি এবং পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য কিডনির কার্যক্ষমতা ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৫. হাড় এবং দাঁত:
পুষ্টি: ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস
খাদ্য উৎস: দুধ, দই, চিজ, পালং শাক, ক্যাল, বাদাম
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা: ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সহায়ক।
ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস হাড় এবং দাঁতের সঠিক গঠন এবং মজবুত রাখতে কাজ করে।
৬. চামড়া (ত্বক):
পুষ্টি: ভিটামিন ই, ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, জিঙ্ক
খাদ্য উৎস: বাদাম, বীজ, কমলা, লেবু, বেরি, শাকসবজি
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা: ভিটামিন সি এবং ই ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে এবং ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে। এছাড়া, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং জিঙ্ক ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে এবং প্রদাহ প্রতিরোধ করে।
৭. পাচনতন্ত্র:
পুষ্টি: ফাইবার, প্রোবায়োটিকস, পানি
খাদ্য উৎস: ফল, শাকসবজি, দই, খেজুর, ওটমিল
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা: ফাইবার এবং প্রোবায়োটিকস পাচনতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে, হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
সুতরাং, শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখতে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। পুরো শরীরের জন্য একটি ব্যালান্সড ডায়েট অনুসরণ করা স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপকারী।
ঔষধ ছাড়া সুস্থ থাকতে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রা প্রাচীনতম নিয়ম অনুযায়ী :
ঔষধ ছাড়া সুস্থ থাকতে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রা প্রাচীনতম নিয়ম অনুযায়ী বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক অনুসরণ করতে হয়। এগুলো মূলত প্রাকৃতিক এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে:
১. প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রহণ:
তাজা ও মৌসুমি ফলমূল: ফল শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল সরবরাহ করে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মৌসুমি এবং স্থানীয় ফল অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
শাকসবজি: প্রচুর শাকসবজি, বিশেষ করে সবুজ শাক-সবজি, শরীরে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেয় যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
আঁশযুক্ত খাবার: শস্যদানা, গম, চাল এবং অন্যান্য খাদ্য দ্রব্য যা প্রচুর পরিমাণে আঁশ সরবরাহ করে, হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।
২. পর্যাপ্ত পানি পান:
দিনে ৮-১০ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। পানি শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে।
৩. নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ:
প্রতিদিন কিছুটা সময় হাঁটাহাঁটি, যোগব্যায়াম, অথবা শারীরিক অনুশীলন করা উচিত। প্রাচীন নিয়ম অনুযায়ী, শরীরকে সক্রিয় রাখা স্বাস্থ্যের মূল চাবিকাঠি।
৪. সঠিক বিশ্রাম:
শরীর ও মনের সঠিক পুনর্গঠনের জন্য পর্যাপ্ত ও নিয়মিত ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
৫. প্রাকৃতিক জীবনযাপন:
সূর্যের আলো: পর্যাপ্ত সূর্যালোক পাওয়া প্রয়োজন, কারণ এতে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রকৃতির সাথে সংযোগ: প্রকৃতির সাথে সময় কাটানো, যেমন খোলা বাতাসে হাঁটা, মনকে প্রশান্ত করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
৬. মানসিক শান্তি ও ধ্যান:
প্রাচীন নিয়মে মানসিক শান্তি এবং ধ্যানকে শরীরের সুস্থতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রতিদিন কিছু সময় ধ্যান এবং মানসিক প্রশান্তির জন্য আলাদা রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৭. সংযমী খাদ্যাভ্যাস:
অতিরিক্ত বা অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে বিরত থাকা উচিত। পরিমিত খাদ্যগ্রহণ এবং সংযমী খাদ্যাভ্যাস সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই নিয়মগুলো প্রাচীন এবং প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভিত্তি।
এই ধরণের জীবনযাত্রা রোগ প্রতিরোধ এবং শরীরকে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক।
৮. প্রাকৃতিক ওষুধ:
প্রাচীন নিয়মে ঔষধ নয়, বরং খাদ্যকেই ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তাই খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ এবং সুস্থ থাকার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
এই নিয়মগুলো প্রতিদিনের জীবনে অনুসরণ করলে ঔষধ ছাড়াই শরীর ও মনের সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।
ঔষধ ছাড়া সুস্থ থাকতে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস এ শাকসবজি নাকি মাংস কোনটি বেশি খাওয়া দরকার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী :
ঔষধ ছাড়া সুস্থ থাকতে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে শাকসবজি এবং মাংস দুটিই গুরুত্বপূর্ণ, তবে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে শাকসবজি বেশি খাওয়া সাধারণত স্বাস্থ্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এর কারণ হলো:
শাকসবজির বৈজ্ঞানিক উপকারিতা:
1. আঁশের উৎস: শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে আঁশ সরবরাহ করে, যা হজমের প্রক্রিয়াকে উন্নত করে, অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
2. ভিটামিন ও মিনারেল: শাকসবজিতে ভিটামিন A, C, K এবং ফোলেটসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ পাওয়া যায়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
3. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীর থেকে ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করে এবং ক্যান্সারসহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়।
4. হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো: গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি শাকসবজি খাওয়ার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
5. ওজন নিয়ন্ত্রণ: শাকসবজিতে ক্যালোরি কম থাকায় তা বেশি পরিমাণে খাওয়া গেলেও ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
মাংসের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা ও সীমাবদ্ধতা:
1. প্রোটিনের উৎস: মাংস প্রোটিনের একটি উচ্চমানের উৎস, যা পেশী গঠনে এবং কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
2. বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান: মাংসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, জিঙ্ক, ভিটামিন B12 এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও ভিটামিন থাকে, যা রক্তের স্বাস্থ্য এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে।
3. সীমাবদ্ধতা: যদিও মাংস প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি সরবরাহ করে, লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত মাংসের অতিরিক্ত গ্রহণ হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিশেষ করে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের কারণে।
বৈজ্ঞানিক সুপারিশ:
উদ্ভিজ্জ খাদ্য বেশি: বেশিরভাগ গবেষণায় দেখা গেছে, শাকসবজিসমৃদ্ধ ডায়েট যেমন মেডিটেরেনিয়ান ডায়েট, যা শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, এবং স্বল্প পরিমাণ মাংস ও মাছের ওপর নির্ভরশীল, দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সুবিধা দেয়।
পরিমিত মাংস: মাংস খাওয়া উচিত, তবে পরিমিত পরিমাণে এবং বিশেষ করে সাদা মাংস (মাছ ও মুরগি) এবং চর্বিহীন মাংস বেছে নেওয়া উচিত।
উপসংহার:
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে শাকসবজি বেশি খাওয়া উচিত, কারণ এটি দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
মাংসও খাওয়া যেতে পারে, তবে তা পরিমিত পরিমাণে এবং সুষম খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে।
রোগাক্রান্ত শরীর কত দিনের ভিতর সঠিক খাদ্য অভ্যাস মাধ্যমে সুস্থ হওয়া সম্ভব ?
রোগাক্রান্ত শরীর কত দিনের মধ্যে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে সুস্থ হতে পারে তা নির্ভর করে রোগের ধরন, রোগীর শারীরিক অবস্থা, বয়স, এবং রোগের তীব্রতার উপর।
সাধারণত হালকা বা মাঝারি ধরনের রোগে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন দ্রুত ফল দেয়।
তবে দীর্ঘমেয়াদী বা ক্রনিক রোগের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি কিছুটা দীর্ঘ হতে পারে।
যদি রোগটি সাধারণ ফ্লু বা হালকা সংক্রমণের মতো হয়, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম সাধারণত ১-২ সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল দেয়।
তবে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বা কিডনি সমস্যা ইত্যাদির মতো দীর্ঘমেয়াদী রোগগুলির ক্ষেত্রে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের সাথে ধীরে ধীরে সুস্থতা আসে এবং তা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন।
তবে, প্রতিটি ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার ভিন্নতা রয়েছে, তাই খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ
বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি,
ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা
প্রভাষক,
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ।
আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।
>Share by:
Make a comments as guest/by name or from your facebook:
Make a comment by facebook: