সাধারণ মানুষদের যা জানা প্রয়োজন - এলোপ্যাথি এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য।

এলোপ্যাথি এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি দুটি ভিন্ন দর্শন ও পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে কাজ করে। তাদের মৌলিক পার্থক্যগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:

১. চিকিৎসার নীতিমালা

এলোপ্যাথি:

"বিপরীত দ্বারা নিরাময়" নীতির উপর ভিত্তি করে কাজ করে।

লক্ষণ দমন বা উপসর্গ দূর করার জন্য ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

রোগের মূল কারণের পরিবর্তে তাৎক্ষণিক আরাম প্রদানকে বেশি গুরুত্ব দেয়।ক

হোমিওপ্যাথি:

"সমকসম শময়তি" অর্থাৎ "Like Cures Like" নীতিতে কাজ করে।

রোগের লক্ষণগুলো দূর করার জন্য রোগীর সঙ্গে মিল রেখে ওষুধ নির্বাচন করা হয়।

রোগের মূল কারণ দূর করতে কাজ করে।


২. ওষুধের প্রভাব ও উপাদান

এলোপ্যাথি:

রাসায়নিক এবং কৃত্রিম উপাদান থেকে তৈরি।

ওষুধের মাত্রা সাধারণত বেশি হয় এবং এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।

শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে অবশ করে লক্ষণ দূর করে।

হোমিওপ্যাথি:

প্রাকৃতিক উপাদান যেমন গাছপালা, খনিজ, এবং প্রাণিজ উৎস থেকে তৈরি।

ওষুধ ক্ষুদ্র মাত্রায় (diluted form) ব্যবহার করা হয়, যা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন

শরীরের প্রাকৃতিক নিরাময় ক্ষমতা (vital force) উদ্দীপিত করে।


৩. রোগীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি

এলোপ্যাথি:

রোগকে নির্দিষ্ট অংশ বা অঙ্গে সীমাবদ্ধ করে দেখে।

লক্ষণ দমনই এর প্রধান লক্ষ্য।

হোমিওপ্যাথি:

রোগীকে সম্পূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে দেখে (শারীরিক, মানসিক, আবেগগত দিক)।

লক্ষণ নয়, রোগীর সমগ্র অবস্থার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়।



৪. চিকিৎসার লক্ষ্য

এলোপ্যাথি:

দ্রুত উপসর্গ দূর করে তাৎক্ষণিক আরাম প্রদান।

দীর্ঘমেয়াদী রোগে ওষুধের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ে।

হোমিওপ্যাথি:

রোগের মূলে কাজ করে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান দেয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করে।


৫. চিকিৎসার গতি

এলোপ্যাথি:

রোগের তীব্র অবস্থায় দ্রুত কাজ করে।

তাৎক্ষণিক ফলাফল দেয়।

হোমিওপ্যাথি:

তীব্র রোগে দ্রুত কাজ করতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদী রোগে সময় লাগে।

ধৈর্য ও ধারাবাহিক চিকিৎসা প্রয়োজন।


৬. পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

এলোপ্যাথি:

রাসায়নিক ওষুধের কারণে অনেক ক্ষেত্রে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়।

ওষুধের ডোজ বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে।

হোমিওপ্যাথি:

সঠিক প্রয়োগে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

ক্ষুদ্র ডোজের কারণে এটি নিরাপদ।


৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর প্রভাব

এলোপ্যাথি:

শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে শরীর ওষুধের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

হোমিওপ্যাথি:

ইমিউন সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে এবং প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

শরীরকে স্বাভাবিকভাবে রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।


৮. উপযোগিতা এবং ব্যবহারক্ষেত্র

এলোপ্যাথি:

জটিল ও জরুরি চিকিৎসায় কার্যকর।

অস্ত্রোপচার, ইনফেকশন, এবং গুরুতর আঘাতে উপযোগী।

হোমিওপ্যাথি:

দীর্ঘমেয়াদী এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে কার্যকর।

ত্বক, মানসিক রোগ, হরমোনজনিত সমস্যা, এবং শিশুদের রোগে উপযোগী।


৯. খরচ এবং প্রাপ্যতা

এলোপ্যাথি:

তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল।

নির্দিষ্ট ওষুধ এবং যন্ত্রপাতি দরকার।

হোমিওপ্যাথি:

তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী।

প্রাকৃতিক উৎস থেকে ওষুধ তৈরি হওয়ায় সহজলভ্য।


১০. চিকিৎসার ধরন

এলোপ্যাথি:

রোগের এক অংশে ফোকাস করে এবং লক্ষণ নিরাময়ে মনোযোগ দেয়।

একই রোগের জন্য সাধারণত একই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।

হোমিওপ্যাথি:

প্রতিটি রোগীর জন্য ব্যক্তিগতকৃত চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে ওষুধ নির্বাচন করা হয়।


উপসংহার

এলোপ্যাথি রোগের তাৎক্ষণিক চিকিৎসায় কার্যকর, বিশেষ করে গুরুতর অবস্থায়। তবে এটি লক্ষণ দমন করে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি থাকে।

হোমিওপ্যাথি রোগের মূল কারণ নিরাময়ে কার্যকর, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী রোগের ক্ষেত্রে। এটি নিরাপদ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন।


সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি বেছে নেওয়ার জন্য রোগীর অবস্থা, প্রয়োজন এবং চিকিৎসকের পরামর্শকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।


-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ
বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি, 
ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা    
প্রভাষক, 
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ। 



আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। 


>Share by:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন