নবজাতকের যত্ন ও তার বিভিন্ন রোগের জন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গভীরভাবে ব্যাখ্যা করা হলো।
নবজাতকের যত্নের বিস্তারিত দিকনির্দেশনা
1. পরিবেশের তাপমাত্রা:
নবজাতক তাপমাত্রার পরিবর্তনে খুবই সংবেদনশীল। সুতরাং, তাদের কক্ষের তাপমাত্রা গড়ে ২৫-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখুন। সরাসরি ঠান্ডা বাতাস বা গরম বাতাসের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
2. ঘুম:
প্রথম কয়েক মাসে নবজাতকের ১৬-১৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। নিরাপদ ও আরামদায়ক বিছানায় তাকে শোয়ান এবং ঘুমের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। বিছানায় অতিরিক্ত জিনিস যেমন বড় বালিশ বা ভারী কাঁথা রাখবেন না।
3. ত্বকের যত্ন:
নবজাতকের ত্বক নাজুক, তাই পরিষ্কার ও আরামদায়ক সুতির কাপড় পরানো জরুরি। ত্বকে কোনো র্যাশ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কোনো ধরনের কেমিক্যাল বা পারফিউমযুক্ত প্রোডাক্ট এড়িয়ে চলা ভালো।
4. স্তন্যপান ও খাওয়ানো:
প্রথম ছয় মাসে শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো প্রয়োজন। এতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
শিশুর পেট ভরলে বোঝা যাবে সে শান্ত হয়ে ঘুমাবে এবং কান্নাকাটি কমাবে।
5. মলত্যাগ ও প্রস্রাব:
শিশুর মলত্যাগের ধরণ পরিবর্তন হতে পারে। যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়, তবে কিছু হোমিওপ্যাথিক ওষুধ সাহায্য করতে পারে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
নবজাতকের বিভিন্ন রোগ এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ।
১. পেটের গ্যাস এবং পেট ব্যথা
নবজাতক সাধারণত পেটের গ্যাসের সমস্যায় ভুগে থাকে। এই ক্ষেত্রে:
Nux Vomica: শিশুর হজমে অসুবিধা হলে ও পেটের গ্যাস হলে ব্যবহৃত হয়। ডোজ নির্ধারণে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Chamomilla: শিশুর পেট ব্যথায় কাঁদলে কার্যকর। এটি শিশুর চিৎকার করে কাঁদার প্রবণতা কমায়।
Colocynthis: তীব্র পেটের ব্যথায় কার্যকর।
২. ঠান্ডা, সর্দি এবং জ্বর
নবজাতক সহজেই ঠান্ডা, সর্দি এবং জ্বরে আক্রান্ত হয়। এই ক্ষেত্রে:
Aconitum Napellus: ঠান্ডা বা হঠাৎ সর্দি হলে প্রথম পর্যায়ে ব্যবহার করা যায়।
Allium Cepa: নাক থেকে পানি ঝরা এবং হাঁচি হলে কার্যকর।
Belladonna: হঠাৎ তীব্র জ্বর হলে এবং গা গরম হয়ে গেলে ব্যবহৃত হয়।
৩. চামড়ার সমস্যা (র্যাশ, একজিমা, খোস-পাঁচড়া)
নবজাতকের চামড়া নাজুক, তাই র্যাশ বা ত্বকের অন্যান্য সমস্যায়:
Sulphur: চামড়ায় র্যাশ বা চুলকানি হলে ব্যবহৃত হয়।
Graphites: শুষ্ক চামড়া বা একজিমার ক্ষেত্রে উপকারী।
Calendula: ত্বকের ক্ষত বা ইনফেকশনের ক্ষেত্রে।
৪. জন্ডিস
নবজাতক জন্মের পরপরই জন্ডিসে আক্রান্ত হতে পারে, যা সাধারণত জন্মের প্রথম সপ্তাহেই দেখা দেয়। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায়:
Chionanthus: নবজাতকের জন্ডিসের জন্য ব্যবহৃত হয়।
Chelidonium: লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং পিত্তথলির সমস্যায় সহায়তা করে।
Lycopodium: লিভারের জটিলতায় কার্যকর।
৫. শ্বাসকষ্ট এবং কাশি
শ্বাসকষ্ট বা শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হলে:
Antimonium Tartaricum: শ্বাসকষ্টের সাথে বুকে শ্লেষ্মা জমলে ব্যবহার করা হয়।
Spongia Tosta: শুকনো কাশি বা রাতে কাশি বেশি হলে কার্যকর।
৬. কোষ্ঠকাঠিন্য এবং মলত্যাগের সমস্যা
নবজাতকের পেটের সমস্যা, বিশেষ করে কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে:
Bryonia: যদি পেট শক্ত হয়ে যায় এবং শিশুর পেটে ব্যথা হয়।
Nux Vomica: কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা ও হজমের গণ্ডগোলে ব্যবহার করা হয়।
সতর্কতা এবং পরামর্শ
1. চিকিৎসকের পরামর্শ:
নবজাতকের রোগ ও সমস্যার ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রয়োগের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
2. ডোজ নিয়ন্ত্রণ:
শিশুর বয়স ও ওজন অনুযায়ী ওষুধের ডোজ নির্ধারণ করুন।
3. দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা:
কোনো উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী হলে ঘরোয়া চিকিৎসার পরিবর্তে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
এই নির্দেশনাগুলো নবজাতকের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা কমাতে সহায়ক হতে পারে, তবে সঠিক ডায়াগনসিস ও চিকিৎসার জন্য পেশাদার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
-- কাজী সাইফ উদদীন আহমেদ,
Lecturer, Federal Homoeopathic Medical College, Dhaka.
আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।
Tags:
নবজাতক
>Share by:
Make a comments as guest/by name or from your facebook:
Make a comment by facebook: