ইউরেমিয়া (Uremia) কি?
ইউরেমিয়া (Uremia) হলো এক ধরণের চিকিৎসাগত অবস্থা যা কিডনি কার্যকারিতার ব্যর্থতার কারণে রক্তে বর্জ্য পদার্থের জমে থাকা থেকে সৃষ্ট হয়। কিডনি যখন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে ইউরিয়া ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ রক্তে জমা হয়, যার ফলে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়।
আবিষ্কার ও অন্য নাম:
ইউরেমিয়ার প্রথম আবিষ্কার 19 শতকের দিকে হয়েছিল, যখন কিডনি ব্যর্থতা এবং রক্তে বিষাক্ত পদার্থের সংশ্লেষণের সাথে সম্পর্কিত লক্ষণগুলি লক্ষ্য করা হয়। ইউরেমিয়া কখনো কখনো "কিডনি ফেইল্যুর সিন্ড্রোম" নামেও পরিচিত।
কারণ:
ইউরেমিয়া সাধারণত কিডনি কার্যকারিতার ব্যর্থতার কারণে ঘটে, যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে:
-----ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD)
-----অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি
-----ডায়াবেটিস
------উচ্চ রক্তচাপ
------প্রস্টেটের সমস্যার কারণে মূত্রত্যাগে সমস্যা
প্রকারভেদ:
ইউরেমিয়া সাধারণত দুইটি প্রকারের হতে পারে:
1. একিউট ইউরেমিয়া: হঠাৎ কিডনি ব্যর্থতা হলে ঘটে।
2. ক্রনিক ইউরেমিয়া: দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগের কারণে ঘটে।
লক্ষণাবলী:
-----ক্লান্তি ও দুর্বলতা
-----মূত্রের পরিমাণ কমে যাওয়া
-----বমি বমি ভাব, বমি
------শ্বাসকষ্ট
------মাথাব্যথা ও মনোযোগে ঘাটতি
------ত্বকে খোসপাঁচড়া
-------পায়ে ও মুখে ফোলা
--------উচ্চ রক্তচাপ
------হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
ইনভেস্টিগেশন (পরীক্ষা):
রক্তে ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা পরীক্ষা
-----GFR (গ্লোমেরুলার ফিল্ট্রেশন রেট) নির্ধারণ
-----ইলেক্ট্রোলাইট লেভেল (পটাসিয়াম, সোডিয়াম ইত্যাদি)
-----আল্ট্রাসাউন্ড ও কিডনি বায়োপসি
জটিলতা:
-----হার্টের সমস্যা
-----ফুসফুসে তরল জমা হওয়া
-----মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যাওয়া (এনসেফালোপ্যাথি)
------রক্তের ক্যালসিয়াম লেভেল কমে যাওয়া
------মৃত্যু (যদি চিকিৎসা না করা হয়)
ভবিষ্যৎ ফল:
ইউরেমিয়া যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তবে এটি গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হতে পারে।
প্রতিরোধ:
------কিডনির যত্ন নেওয়া এবং উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা
------নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা
------স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়াম
ঘরোয়া চিকিৎসা:
ইউরেমিয়া একটি গুরুতর অবস্থা, তাই ঘরোয়া চিকিৎসা নির্ভরযোগ্য নয়। তবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
ব্যবস্থাপনা:
-------ডায়ালাইসিস (কিডনির বিকল্প হিসেবে রক্ত পরিস্কার করা)
-------কিডনি প্রতিস্থাপন
-------মেডিকেশন (উচ্চ রক্তচাপ ও ফ্লুইড ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে)
-------পুষ্টি পরিকল্পনা
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন:
--------ইউরেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে (যেমন: ফোলা, শ্বাসকষ্ট, মূত্রের সমস্যা)
--------কিডনি রোগের পূর্ব ইতিহাস থাকলে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
কি খাওয়া যাবে:
------কম প্রোটিনযুক্ত খাদ্য
------লবণ ও পটাসিয়ামের মাত্রা কম রাখা
------পর্যাপ্ত পানি পান করা (ডাক্তারের পরামর্শে)
কি খাওয়া যাবেনা:
------উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার
------বেশি লবণযুক্ত খাবার
------প্রসেসড খাবার
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:
হোমিওপ্যাথিতে, কিডনি এবং ইউরেমিয়ার চিকিৎসা বিভিন্ন নির্দিষ্ট লক্ষণ ও রোগীর ব্যক্তিগত অবস্থা অনুযায়ী করা হয়।
ব্যবহৃত কিছু হোমিওপ্যাথিক ওষুধের মধ্যে রয়েছে:
1. Apis Mellifica: ইউরিন বন্ধ হওয়া বা কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে।
2. Arsenicum Album: দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট এবং ফোলা।
3. Berberis Vulgaris: কিডনির পাথর এবং মূত্রনালীতে সমস্যা।
পারে:
১. Arsenicum Album
লক্ষণ: ক্লান্তি, দুর্বলতা, বমি, এবং শ্বাসকষ্ট।
ব্যবহার: যখন রোগী বিষাক্ত পদার্থের কারণে অসুস্থতা অনুভব করেন।
২. Nux Vomica
লক্ষণ: গ্যাস, বমি, এবং অস্বস্তি।
ব্যবহার: অতিরিক্ত মদ্যপান বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণের কারণে সৃষ্টি হওয়া সমস্যার জন্য উপযুক্ত।
৩. Phosphorus
লক্ষণ: ত্বকে সমস্যা, দুর্বলতা, এবং উষ্ণতা অনুভব করা।
ব্যবহার: রক্তের মধ্যে বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি কমাতে সহায়তা করে।
৪. Apis Mellifica
লক্ষণ: ত্বকে চুলকানি, ফোলা এবং অস্বস্তি।
ব্যবহার: কিডনির স্বাস্থ্য এবং মূত্রনালীর সমস্যা কমাতে সহায়ক।
৫. Berberis Vulgaris
লক্ষণ: কিডনি বা মূত্রনালীর সমস্যার সাথে যুক্ত ব্যথা।
ব্যবহার: কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৬. Cantharis
লক্ষণ: মূত্রতন্ত্রের জ্বালা এবং ব্যথা।
ব্যবহার: মূত্রনালীতে সমস্যা বা সংক্রমণের জন্য।
৭. Lycopodium
লক্ষণ: অস্থিরতা, বিষাক্ততা, এবং ত্বকের সমস্যা।
ব্যবহার: কিডনির কার্যক্ষমতা এবং হজম সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।
পারে:
৮. Staphysagria
লক্ষণ: মানসিক উদ্বেগ এবং শারীরিক দুর্বলতা।
ব্যবহার: মানসিক চাপের কারণে ইউরেমিয়ার লক্ষণগুলোর জন্য।
৯. Natrum Muriaticum
লক্ষণ: পানি ধারণ, ফোলা, এবং শারীরিক দুর্বলতা।
ব্যবহার: শরীরে অতিরিক্ত পানি জমা হওয়া রোধ করতে সহায়ক।
১০. Colchicum
লক্ষণ: পেটে ব্যথা, বমি এবং দুর্বলতা।
ব্যবহার: ইউরেমিয়ার কারণে সৃষ্টি হওয়া অন্যান্য লক্ষণের জন্য উপকারী।
ব্যবহার ও পরামর্শ :
ডোজ ও ব্যবহারের পদ্ধতি: হোমিওপ্যাথিক ঔষধের ডোজ রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। তাই রোগীদের উপযুক্ত ডোজ এবং ব্যবহারের পদ্ধতির জন্য একজন নিবন্ধিত হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার বা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
চিকিৎসার সময়কাল: ইউরেমিয়ার চিকিৎসায় সময় প্রয়োজন হতে পারে, এবং চিকিৎসা গ্রহণকারীকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
এই ঔষধগুলো রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ভিত্তিতে ব্যবহৃত হয় এবং সঠিক চিকিৎসার জন্য একজন বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়া আবশ্যক।
হোমিওপ্যাথিক দার্শনিক ও ডাক্তারদের মতামত:
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যক্তির দেহের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উদ্দীপিত করে। এটি রোগীর ব্যক্তিত্ব ও শারীরিক লক্ষণের উপর ভিত্তি করে ওষুধ প্রয়োগ করে থাকে।
Homoeopathy র বিভিন্ন ডাক্তারের মতে, কিডনির সমস্যা হলে রোগের প্রাথমিক অবস্থায় হোমিওপ্যাথি প্রয়োগ করলে দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল ভালো হতে পারে।
ইউরেমিয়া (Uremia) হলো একটি স্বাস্থ্য সমস্যা যা সাধারনত কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পেলে ঘটে। এটি তখন হয় যখন শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমা হয় এবং রক্তে ইউরিয়া এবং ক্রিয়েটিনিনের স্তর বৃদ্ধি পায়।
হোমিওপ্যাথি এই অবস্থার চিকিৎসায় কিছু বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে, যার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিচে উল্লেখ করা হলো:
1. সমষ্টিগত দৃষ্টিভঙ্গি: হোমিওপ্যাথি রোগীকে সমগ্রভাবে দেখতে এবং তাদের শারীরিক, মানসিক এবং আবেগগত অবস্থার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করতে বিশ্বাস করে। রোগীর লক্ষণ, জীবনধারা এবং ইতিহাস বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত প্রতিকার নির্ধারণ করা হয়।
2. লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা: ইউরেমিয়ার লক্ষণ যেমন ক্লান্তি, বমি, ত্বকে চুলকানি, মলাশয়ে সমস্যা ইত্যাদি লক্ষণগুলোর ভিত্তিতে বিভিন্ন হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। যেমন, Arsenicum album, Nux vomica, Phosphorus, এবং Apis mellifica সাধারণত ইউরেমিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
3. কিডনি সুরক্ষা: হোমিওপ্যাথি কিডনির কার্যক্ষমতা উন্নত করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর জন্য কিছু ঔষধ যেমন Berberis vulgaris এবং Cantharis কার্যকর হতে পারে।
4. নিরাময় প্রক্রিয়া: হোমিওপ্যাথি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোগের মূল কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করে এবং শরীরের প্রাকৃতিক নিরাময় ক্ষমতাকে উদ্দীপিত করে। এটি দীর্ঘমেয়াদী ফলপ্রসু চিকিৎসার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
5. রোগীর স্বাস্থ্য ও খাদ্যবিধি: হোমিওপ্যাথিক ডাক্তাররা রোগীর খাদ্য ও জীবনধারার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেন, কারণ এটি ইউরেমিয়ার চিকিৎসায় সহায়ক হতে পারে।
এইভাবে, হোমিওপ্যাথির দার্শনিকতা এবং চিকিৎসা পদ্ধতি ইউরেমিয়ার চিকিৎসায় একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।
তবে, রোগীকে যে কোনও ধরনের চিকিৎসা শুরু করার আগে একজন নিবন্ধিত হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার বা চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
+++++++
ইউরেমিয়া (Uremia) এলোপ্যাথিক চিকিৎসা :
ইউরেমিয়া (Uremia) সাধারণত কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাসের কারণে হয়, এবং এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় এই অবস্থার তীব্রতা কমাতে বিভিন্ন ঔষধ ব্যবহার করা হয়। ইউরেমিয়ার কারণ এবং লক্ষণ অনুযায়ী বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করা হয়। নিচে কিছু সাধারণ এলোপ্যাথিক ওষুধের তালিকা উল্লেখ করা হলো:
১. ডায়ুরেটিকস (Diuretics)
ব্যবহার: কিডনির মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি এবং লবণ বের করে শরীর থেকে তরল বের করতে সাহায্য করে। এটি ইউরেমিয়ায় সৃষ্ট ফোলাভাব কমাতে সহায়ক।
উদাহরণ:
-----Furosemide (Lasix)
-----Bumetanide
-----Torsemide
২. অ্যান্টিহাইপারটেনসিভস (Antihypertensives)
ব্যবহার: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা কিডনি ক্ষতির সাথে সম্পর্কিত।
উদাহরণ:
-----Lisinopril
-----Losartan
----Amlodipine
৩. ইলেকট্রোলাইট ম্যানেজমেন্ট ড্রাগস (Electrolyte Management Drugs)
ব্যবহার: ইউরেমিয়ার কারণে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা হতে পারে। বিশেষত পটাসিয়াম এবং সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ প্রয়োজন হয়।
উদাহরণ:
-----Sodium bicarbonate: অ্যাসিডোসিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়।
-----Calcium gluconate: রক্তের পটাসিয়ামের মাত্রা কমাতে ব্যবহৃত হয়।
৪. ফসফেট বাইন্ডার (Phosphate Binders)
ব্যবহার: রক্তের মধ্যে ফসফেটের পরিমাণ কমাতে সহায়ক, কারণ কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে ফসফেট জমা হতে পারে।
উদাহরণ:
------Sevelamer
------Calcium carbonate
৫. ইরিথ্রোপয়েটিন স্টিমুলেটিং এজেন্ট (Erythropoietin Stimulating Agents)
ব্যবহার: কিডনির ব্যর্থতার কারণে রক্তাল্পতা (anemia) হতে পারে। ইরিথ্রোপয়েটিন ইনজেকশন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক।
উদাহরণ:
-----Epoetin alfa (Epogen, Procrit)
-----Darbepoetin alfa (Aranesp)
৬. ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার (Calcium Channel Blockers)
ব্যবহার: উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনি ফাংশন বজায় রাখতে সহায়ক।
উদাহরণ:
------Amlodipine
------Nifedipine
৭. বাইকার্বোনেট থেরাপি (Bicarbonate Therapy)
ব্যবহার: ইউরেমিয়া থেকে অ্যাসিডোসিস প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ:
------Sodium bicarbonate: রক্তের অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সহায়ক।
৮. ডায়ালাইসিস (Dialysis)
ব্যবহার: যখন কিডনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়, তখন ডায়ালাইসিস রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ, অতিরিক্ত পানি এবং ইলেকট্রোলাইট সরিয়ে দেয়। এটি মুলত ইউরেমিয়ার চূড়ান্ত অবস্থায় ব্যবহৃত হয়।
-------হেমোডায়ালাইসিস (Hemodialysis)
-------পারিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস (Peritoneal Dialysis)
৯. অ্যান্টিবায়োটিক (Antibiotics)
ব্যবহার: সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়, কারণ ইউরেমিয়া রোগীদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।
উদাহরণ:
------Ceftriaxone
------Piperacillin-tazobactam
১০. পেইন ম্যানেজমেন্ট (Pain Management)
ব্যবহার: ইউরেমিয়ার কারণে হওয়া ব্যথা এবং অস্বস্তি দূর করতে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ:
-----Acetaminophen
------Tramadol
পরামর্শ
ইউরেমিয়ার জন্য চিকিৎসা পরিকল্পনা এবং ওষুধ নির্বাচন রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে, এবং এটি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে পরিচালিত হওয়া উচিত।
কিডনি বিশেষজ্ঞ (নেফ্রোলজিস্ট) সাধারণত ইউরেমিয়ার চিকিৎসা পরিচালনা করেন এবং যদি প্রয়োজন হয়, ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে রোগীর শরীরের ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণ করা হয়।
+++++
ইউরেমিয়া (Uremia) রোগীর মৃত্যুর হার এবং আরোগ্যহার কি রকম পৃথিবীতে?
ইউরেমিয়া (Uremia) কিডনির ব্যর্থতার একটি গুরুতর অবস্থা এবং এর মৃত্যুর হার ও আরোগ্যহার মূলত নির্ভর করে চিকিৎসার প্রক্রিয়া, রোগীর শারীরিক অবস্থা, এবং চিকিৎসা পাওয়ার সময়সীমার উপর।
এখানে কিছু সাধারণ তথ্য উপস্থাপন করা হলো:
১. মৃত্যুর হার
ইউরেমিয়া চিকিৎসা না করা হলে, এটি একটি প্রাণঘাতী অবস্থা হতে পারে।
যখন কিডনি পুরোপুরি কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তখন শরীরে রওে বিষাক্ত পদার্থ জমা হয়, যা বিভিন্ন জটিলতার দিকে নিয়ে যায়।
সঠিক চিকিৎসা ছাড়া ইউরেমিয়ার কারণে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট:
চিকিৎসার অভাব: যদি ইউরেমিয়ার জন্য যথাযথ চিকিৎসা না দেওয়া হয় (যেমন ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন), তখন মৃত্যুর হার অত্যন্ত বেশি হতে পারে। এই অবস্থায়, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।
তীব্র কিডনি ব্যর্থতা: তীব্র কিডনি ব্যর্থতার ক্ষেত্রে ইউরেমিয়া দ্রুত উন্নতি করতে পারে এবং সঠিক চিকিৎসার অভাব হলে মৃত্যুর হার ৫০% বা তারও বেশি হতে পারে।
তীব্র সংক্রমণ বা অন্যান্য জটিলতা: ইউরেমিয়া রোগীরা সংক্রমণ, হৃদরোগ, এবং অন্যান্য সমস্যার শিকার হলে মৃত্যুর ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পায়।
২. আরোগ্য হার
ইউরেমিয়ার আরোগ্য নির্ভর করে এর অন্তর্নিহিত কারণ এবং রোগীর শরীর কিভাবে প্রতিক্রিয়া করে তার উপর:
প্রাথমিক পর্যায়ের কিডনি রোগ: যদি প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগ ধরা পড়ে এবং রোগীকে সময়মত ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়, তবে আরোগ্য হার বেশ ভালো হতে পারে।
ডায়ালাইসিস: ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে ইউরেমিয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, এবং ডায়ালাইসিসে থাকা রোগীরা অনেক বছর বেঁচে থাকতে পারেন। তবে, এটি পুরোপুরি আরোগ্য নয় বরং রোগের ব্যবস্থাপনা।
কিডনি প্রতিস্থাপন: সফল কিডনি প্রতিস্থাপনের পরে, অনেক রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন। কিডনি প্রতিস্থাপনের পরে ৫ বছরের বেঁচে থাকার হার ৮৫-৯০% এর মধ্যে হতে পারে।
৩. উন্নত চিকিৎসা প্রযুক্তি :
উন্নত দেশগুলোতে উন্নত চিকিৎসা সুবিধার কারণে ইউরেমিয়া রোগীর মৃত্যুর হার কম এবং আরোগ্য হার বেশি। ডায়ালাইসিস এবং কিডনি প্রতিস্থাপনের সুবিধা সহজলভ্য হওয়ার কারণে রোগীরা দীর্ঘমেয়াদে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারেন।
৪. উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবস্থা :
অনেক উন্নয়নশীল দেশে চিকিৎসা পরিষেবার অভাব এবং ডায়ালাইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপনের উচ্চ ব্যয় ইউরেমিয়ার মৃত্যুর হার বাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসা সময়মত না পাওয়া গেলে রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
৫. জীবনযাত্রা ও পরামর্শ :
ইউরেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন এবং নিয়মিত ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়।
উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কিডনি ব্যর্থতার ঝুঁকি কমানো যায়, যা ইউরেমিয়া প্রতিরোধে সহায়ক।
সঠিকভাবে পুবথেকে চিকিৎসা, সচেতনতা, এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে ইউরেমিয়ার আরোগ্য হার বাড়ানো সম্ভব, তবে সময়মত চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
-- কাজী সাইফ উদদীন আহমেদ,
Lecturer, Federal Homoeopathic Medical College, Dhaka.
আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।
>Share by:
Make a comments as guest/by name or from your facebook:
Make a comment by facebook: