দোকানের চানাচুর খাওয়ার অভ্যাস থাকলে আজই চানাচুর খাওয়া ছেড়ে দিন

চানাচুর খাওয়ার অভ্যাস শরীরের জন্য কিছু সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এতে সাধারণত উচ্চ মাত্রার তেল, নুন এবং প্রিজারভেটিভ থাকে, যা অতিরিক্ত খেলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। 

এর ফলে হৃৎপিণ্ডের অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বৃদ্ধি, এবং পরবর্তীতে ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও, চানাচুরে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা দ্রুত শরীরে শক্তি বাড়ায় কিন্তু পরে ক্লান্তির কারণ হতে পারে। 

চানাচুর খাওয়ার অভ্যাসের সাথে সম্পর্কিত কিছু ক্ষতিকর প্রভাব এবং স্বাস্থ্যকর বিকল্প সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য নিচে দেওয়া হলো:

চানাচুর সাধারণত স্ন্যাক্স হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং এতে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ থাকে, যেমন মটর, চিড়ে, বাদাম, এবং বিভিন্ন মসলা। তবে, কিছু প্রক্রিয়াকৃত চানাচুরে ক্ষণিক ক্ষতিকারক পদার্থ থাকে যা সাধারণত নিম্নলিখিত কারণে ঘটে:



1. কৃত্রিম রং ও সংরক্ষক:
কিছু চানাচুরে কৃত্রিম রং ও সংরক্ষক ব্যবহার করা হতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

2. অতিরিক্ত লবণ ও চিনি: 
বেশিরভাগ চানাচুরে অতিরিক্ত লবণ ও চিনি থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

3. ট্রান্স ফ্যাট:
কিছু প্রস্তুতকৃত চানাচুরে ট্রান্স ফ্যাট থাকতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

4. মাইক্রোবায়াল দূষণ: 
যদি প্রস্তুতকারক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করে, তাহলে খাদ্যে মাইক্রোবায়াল দূষণ ঘটতে পারে।

চানাচুর খেলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে, বিশেষত যদি এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয় বা নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি হয়। কিছু সাধারণ সমস্যা অন্তর্ভুক্ত:

1. ওজন বৃদ্ধি:
চানাচুরের উচ্চ ক্যালোরি এবং চর্বির পরিমাণের কারণে এটি ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে।

2. হৃদরোগ:
 ট্রান্স ফ্যাট এবং অতিরিক্ত লবণ থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

3. উচ্চ রক্তচাপ: 
লবণের পরিমাণ বেশি থাকলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে, যা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

4. ডায়াবেটিস: 
অতিরিক্ত চিনির কারণে রক্তে শর্করার স্তর বাড়তে পারে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

5. পাকস্থলীর সমস্যা: 
অতিরিক্ত চর্বি এবং লবণ পেটের অস্বস্তি, অ্যাসিডিটি, এবং হজমের সমস্যার কারণ হতে পারে।

6. কিডনি সমস্যা: 
অতিরিক্ত লবণ কিডনির কার্যকারিতা বিঘ্নিত করতে পারে এবং কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

7. অ্যালার্জি
কিছু লোকের জন্য চানাচুরে থাকা বাদাম বা অন্যান্য উপকরণের কারণে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে।

নিচে একটি সাধারণ চানাচুর তৈরির রেসিপি দেওয়া হলো:
উপকরণ:
তৈল ভাজা চিঁড়া (পোহা) – ২ কাপ
তৈল ভাজা বাদাম – ১/২ কাপ
তৈল ভাজা ছোলা – ১/২ কাপ
তৈল ভাজা মুড়ি – ১/২ কাপ
তৈল ভাজা মটর – ১/২ কাপ
তৈল ভাজা কারি পাতা – ১০-১২টি
লবণ – স্বাদ অনুযায়ী
চিনি – ১ চা চামচ (ঐচ্ছিক)
মরিচ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
হলুদ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
জিরা গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
সরিষার তেল বা ভাজার জন্য যে কোনো তেল – ২-৩ টেবিল চামচ। 

চানাচুর তৈরির রেসিপি দেখে বুঝে নিন যে চানাচুর স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। 

স্বাস্থ্যকর বিকল্প:
1. বিকেলের নাস্তা: বাদাম, কুমড়ো বীজ বা শুকনো ফল (যেমন কিশমিশ, খেজুর) গ্রহণ করতে পারেন।
2. ফল: আপেল, কলা, কমলালেবু, বা পেয়ারা খেতে পারেন। এগুলি পুষ্টিতে সমৃদ্ধ এবং কম ক্যালোরি।
3. শাকসবজি: গাজর, শসা, এবং টমেটো কাটা মাখন ছাড়া খেতে পারেন। এগুলি স্বাস্থ্যকর এবং তাজা।
4. পপকর্ন: বাড়িতে তেল ছাড়া পপকর্ন বানিয়ে খেতে পারেন, যা একটি সুস্বাস্থ্যকর ও স্বাস্থ্যকর বিকল্প।
5. গ্রেনোলা বা ওটমিল: স্বাস্থ্যকর গ্রেনোলা বা ওটমিলেও অনায়াসে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

চানাচুরের বদলে স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে আপনি আপনার শরীরের প্রতি যত্ন নিতে পারবেন এবং সুস্থ থাকতে পারবেন।



-- কাজী সাইফ উদদীন আহমেদ,
Lecturer, Federal Homoeopathic Medical College, Dhaka.


আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। 
>Share by:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন