চিকিৎসায় আর ওষুধের প্রয়োজন নেই। আসুন প্রাকৃতিক জীবনধারার ভিতর দিয়ে সুস্থ থাকার চেষ্টা করি।

চিকিৎসায় আর ওষুধের প্রয়োজন নেই। আসুন প্রাকৃতিক জীবনধারার ভিতর দিয়ে সুস্থ থাকার চেষ্টা করি। আর যদি অসুস্থ হই তাহলে প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি আমরা গ্রহণ করি এবং সুস্থ থাকার চেষ্টা করি। 

চিকিৎসায় আর ওষুধের প্রয়োজন নেই, আল কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী:
আল-কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী রোগের চিকিৎসা ও ওষুধ ব্যবহার করা একটি স্বাভাবিক ও অনুমোদিত বিষয়। 

ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে, রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি এবং সুস্থতা লাভের জন্য প্রথমে আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। তবে আল্লাহ রোগ সৃষ্টি করেছেন এবং তার নিরাময়ের উপায়ও দিয়েছেন। তাই চিকিৎসা নেওয়া সুন্নাহসম্মত এবং নৈতিক দায়িত্ব। কিছু হাদিসে চিকিৎসা গ্রহণের গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে:
1. হাদিসে রোগের চিকিৎসা করার গুরুত্ব: নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন:
"প্রত্যেক রোগেরই চিকিৎসা আছে। যখন চিকিৎসা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তখন আল্লাহর ইচ্ছায় তা সুস্থতা আনে।" (সহিহ মুসলিম)


2. চিকিৎসা গ্রহণকে নিরুৎসাহিত না করা:
সাহাবী আল-আসওয়াদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন:
 "আল্লাহ তোমাদের জন্য যেসব রোগ সৃষ্টি করেছেন, তার নিরাময়ও দিয়েছেন। কাজেই তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো।" (তিরমিজি)

তবে, কোরআন ও হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে যে, আল্লাহর উপর সম্পূর্ণ ভরসা ও দোয়া করা উচিত।
 এর সঙ্গে রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তির জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করাও সুন্নাহর অংশ।

এছাড়া, কিছু দোয়া ও আয়াত আছে যা রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তির জন্য পড়া যেতে পারে, যেমন:

------..সূরা আল-ফাতিহা
-------আয়াতুল কুরসী
-------সূরা ইখলাস, 
-------সূরা ফালাক ও
-------সূরা নাস



ইসলামিক দৃষ্টিতে, চিকিৎসা গ্রহণ করা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলের (ভরসা) বিপরীতে নয়। বরং, আল্লাহ যে উপায় দিয়েছেন, তা গ্রহণ করা উচিত, এবং চিকিৎসার পাশাপাশি আল্লাহর রহমত কামনা করাও উচিত।

++++
"চিকিৎসায় আর ওষুধের প্রয়োজন নেই" বিজ্ঞানভিত্তিক অনুযায়ী:-----

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে, "চিকিৎসায় আর ওষুধের প্রয়োজন নেই" এই সিদ্ধান্ত নেওয়া রোগের ধরন, রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং নির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। 

কিছু রোগ বা অবস্থার ক্ষেত্রে, চিকিৎসা বা ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে না, যেমন:

1. স্বল্পস্থায়ী রোগ: সাধারণ সর্দি-কাশির মতো কিছু স্বল্পস্থায়ী রোগের জন্য শরীরের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক সময় পর্যাপ্ত হয়ে থাকে, এবং ওষুধ ছাড়াও সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

2. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: সুস্থ জীবনযাপন যেমন সঠিক খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম ইত্যাদি অনেক রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, চিকিৎসা বা ওষুধ ছাড়া সুস্থ থাকা সম্ভব হতে পারে।

3. মনোভাব এবং প্লাসিবো প্রভাব: কিছু রোগ বা মানসিক অবস্থা এমন থাকে যেখানে ওষুধ ছাড়াই মানসিক স্বস্তি, ধ্যান, এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখতে পারে। প্লাসিবো প্রভাবও কিছু ক্ষেত্রে কাজ করে।

তবে, কিছু গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার, সংক্রমণ ইত্যাদির জন্য প্রাকৃতিক ওষুধ ও চিকিৎসা প্রয়োজন। 

বৈজ্ঞানিক দিকগুলো:
1. আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান: 
আধুনিক চিকিৎসা গবেষণার মাধ্যমে নির্দিষ্ট রোগের জন্য সঠিক প্রাকৃতিক চিকিৎসা বা ওষুধ নির্ধারণ করা হয়। এসব৷ প্রাকৃতিক  চিকিৎসার ওষুধ না নিলে রোগীর অবস্থা জটিল হয়ে উঠতে পারে।

2. শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা:
শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক ছোটখাটো রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে, তবে কিছু রোগের জন্য চিকিৎসা না নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। যদি আপনি মনে করেন যে আপনার আর ওষুধের প্রয়োজন নেই, তবে আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়াই সঠিক হবে। 

+++++

 "চিকিৎসায় আর এলোপ্যাথিক ওষুধের প্রয়োজন নেই" তাহলে কিভাবে সুস্থ থাকা যায়। "চিকিৎসায় আর এলোপ্যাথিক ওষুধের প্রয়োজন নেই" ধারণাটি অনেক মানুষের জন্য প্রাকৃতিক ও বিকল্প পদ্ধতির উপর নির্ভর করার ইচ্ছা প্রকাশ করে। এলোপ্যাথিক ওষুধ ছাড়াই সুস্থ থাকা কিছু বিকল্প পদ্ধতির মাধ্যমে সম্ভব, তবে এটি নির্ভর করে
----- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, 
------জীবনযাত্রা 
------খাদ্যাভ্যাস এবং 
------সঠিক স্বাস্থ্য-পরিচর্যার উপর। 

নিম্নে কিছু বিকল্প পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো যা ওষুধ ছাড়াই সুস্থ থাকতে সহায়ক হতে পারে:
1. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
সুষম খাদ্যগ্রহণ: ফল, শাকসবজি, প্রোটিন, এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজের চাহিদা পূরণ হলে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত চিনি এড়ানো: প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং চিনি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে।

2. প্রাকৃতিক বা বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি:
হোমিওপ্যাথি: 
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা এমন একটি বিকল্প পদ্ধতি যেখানে প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে শরীরের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো হয়।

আয়ুর্বেদ: 
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা প্রাচীন ভারতীয় পদ্ধতি যা প্রাকৃতিক ভেষজ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার মাধ্যমে সুস্থতা বজায় রাখে।

ন্যাচারোপ্যাথি (Naturopathy):
এটি প্রাকৃতিক থেরাপি এবং ডায়েটের উপর ভিত্তি করে শরীরের নিজস্ব নিরাময় প্রক্রিয়া উন্নত করার পদ্ধতি।

3. ব্যায়াম ও শরীরচর্চা:
নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম যেমন হাঁটাহাঁটি, সাইকেল চালানো, যোগব্যায়াম বা যোগাভ্যাস করার মাধ্যমে শরীর সক্রিয় রাখা।

যোগব্যায়াম
যোগব্যায়াম শরীরের নমনীয়তা এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

4. যোগ এবং ধ্যান:
মেডিটেশন বা ধ্যান: 
মানসিক শান্তি এবং চাপ কমানোর জন্য ধ্যান অত্যন্ত কার্যকরী। মানসিক চাপ কমলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।

প্রাণায়াম
শ্বাসপ্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেহের অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানো যায়, যা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।

5. প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:
পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট:
অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরকে দুর্বল করে দিতে পারে। স্ট্রেস কমানোর পদ্ধতি হিসেবে যোগ, ধ্যান, এবং মননশীলতা চর্চা করা যেতে পারে।

6. আধুনিক প্রাকৃতিক চিকিৎসা:
অ্যাকুপাংচার:
চীনা ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত যা শরীরের শক্তির প্রবাহকে উন্নত করতে সাহায্য করে।

ম্যাসাজ থেরাপি:
শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে এবং পেশির ব্যথা দূর করতে ম্যাসাজ থেরাপি কার্যকরী হতে পারে।

7. প্রাকৃতিক প্রতিরোধক এবং হার্বাল সাপ্লিমেন্ট:
কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যেমন আদা, হলুদ, রসুন, তুলসী প্রভৃতি খাবারে ব্যবহার করা হলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সহায়ক হয়। ভিটামিন সি এবং ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়।

8. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য:
নিয়মিত হাত ধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দিলে জীবাণু সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। ব্যক্তিগত হাইজিন বজায় রাখলে এবং সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

সতর্কতা:
যদি কোনো গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগেন, তবে বিকল্প চিকিৎসার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক পদ্ধতির ওপর নির্ভর করা সব ক্ষেত্রে কার্যকরী নাও হতে পারে, বিশেষ করে যখন পরিস্থিতি জটিল।

সংক্ষেপে:
এলোপ্যাথিক ওষুধের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে বা সম্পূর্ণভাবে বাদ দিয়ে সুস্থ থাকতে চাইলে, 
--------সঠিক খাদ্যাভ্যাস, 
--------শারীরিক সক্রিয়তা, 
--------প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি, এবং 
--------মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।




-- কাজী সাইফ উদদীন আহমেদ,
Lecturer, Federal Homoeopathic Medical College, Dhaka.


আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। 



>Share by:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন