অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের সাইড ইফেক্টের রূপান্তরিত রূপ হলো kidneys Diseases বিস্তারিত আলোচনা:
অনেক সময় এলোপ্যাথিক ওষুধ দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারের ফলে কিডনির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ, যেমন ব্যথানাশক, অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড, এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ওষুধ, কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে “ড্রাগ-ইনডিউসড কিডনি ডিজিজ” বা "ওষুধ-জনিত কিডনি রোগ" বলা হয়।
নিচে এলোপ্যাথিক ওষুধের কারণে কীভাবে কিডনি রোগ হতে পারে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কিডনি রোগের কারণ হিসেবে কিছু সাধারণ এলোপ্যাথিক ওষুধ :
কিডনি রোগের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ ধরনের ওষুধ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, যা কিডনির ক্ষতি করে এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে কিডনি বিকল বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD) এর দিকে ধাবিত করতে পারে।
এসব ওষুধের মধ্যে প্রধানগুলো হলো:
1. নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAIDs):
যেমন Ibuprofen, Naproxen, এবং Diclofenac।
NSAIDs ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়, তবে এগুলো কিডনির রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দেয়। দীর্ঘমেয়াদে NSAIDs ব্যবহারে কিডনির টিউবিউল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি (AKI) এবং ক্রনিক কিডনি ডিজিজের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
2. অ্যান্টিবায়োটিকস:
কিছু বিশেষ অ্যান্টিবায়োটিক যেমন Aminoglycosides (Gentamicin, Amikacin), Vancomycin, এবং Amphotericin B কিডনির ক্ষতি করতে পারে।অ্যান্টিবায়োটিক কিডনির টিস্যুতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং দীর্ঘ ব্যবহারে কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস করে।
3. প্রোটোন পাম্প ইনহিবিটর (PPIs):
যেমন Omeprazole, Esomeprazole, এবং Pantoprazole।
এসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় ব্যবহৃত এই ওষুধগুলি দীর্ঘমেয়াদে কিডনির ফিল্টারিং সিস্টেমে ক্ষতি করতে পারে, যা ইন্টারস্টিশিয়াল নেফ্রাইটিস এবং ক্রনিক কিডনি ডিজিজের কারণ হতে পারে।
4. স্টেরয়েড ও ইমিউনোস্যাপ্রেসিভ ড্রাগস:
যেমন Prednisone, Tacrolimus, এবং Cyclosporine।
এই ওষুধগুলি ইমিউন সিস্টেম নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়, তবে এটি কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস করে এবং দীর্ঘ ব্যবহারে কিডনি বিকল হতে পারে।
5. ডায়ুরেটিক্স:
যেমন Furosemide এবং Hydrochlorothiazide।
কিডনির মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি ও লবণ বের করতে এই ওষুধ ব্যবহৃত হয়। তবে দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা এবং কিডনির কার্যকারিতা হ্রাসের ঝুঁকি থাকে।
কিডনির ওপর ওষুধের প্রভাবের কারণ :
কিডনির মূল কাজ হলো রক্ত থেকে বর্জ্য এবং অতিরিক্ত তরল অপসারণ করা।অনেক ওষুধ কিডনি দিয়ে প্রসেস হয়, ফলে কিছু ওষুধ কিডনির টিস্যুতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে যারা ইতিমধ্যে কিডনির সমস্যায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। এলোপ্যাথিক ওষুধের কারণে কিডনিতে দেখা দিতে পারে নিচের সমস্যাগুলি:
1. অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি (AKI):
কিছু ওষুধের প্রভাবে হঠাৎ কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। এটি মূলত ডোজ বেশি হলে বা কিডনি ইতিমধ্যেই দুর্বল থাকলে দেখা দিতে পারে।
2. ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD):
দীর্ঘমেয়াদে NSAIDs, PPI, এবং কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবে কিডনির কার্যকারিতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে এবং তা ক্রনিক কিডনি ডিজিজে রূপ নিতে পারে।
3. ইন্টারস্টিশিয়াল নেফ্রাইটিস:
কিছু ওষুধ কিডনির ইন্টারস্টিশিয়াল টিস্যুতে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা কিডনির ফিল্টারিং ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
4. এনালজেসিক নেফ্রোপ্যাথি:
দীর্ঘমেয়াদী ব্যথানাশক ওষুধ (বিশেষ করে NSAIDs) ব্যবহার করলে এটি হতে পারে। এতে কিডনির টিস্যু ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে।
ঝুঁকি এড়ানোর জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা :
কিডনি সুরক্ষার জন্য এলোপ্যাথিক ওষুধের ব্যবহার সতর্কতার সাথে করতে হবে।
নিচে ঝুঁকি এড়ানোর জন্য কিছু প্রতিরোধ ব্যবস্থা তুলে ধরা হলো:
1. স্বল্প মেয়াদে ওষুধ সেবন: কেবল প্রয়োজনমতো এবং স্বল্প সময়ের জন্য ওষুধ সেবন করা উচিত।
2. ডোজ নিয়ন্ত্রণ: চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কখনও ওষুধের ডোজ বাড়ানো উচিত নয়।
3. বিকল্প ওষুধের ব্যবহার: যখনই সম্ভব, NSAIDs-এর পরিবর্তে প্যারাসিটামল বা অন্যান্য বিকল্প প্যাথি ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
4. নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা: যদি দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ সেবন করতে হয়, তবে নিয়মিত কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা উচিত (যেমন: ক্রিয়েটিনিন, ইউরিয়া, এবং ইজিআরএফ)।
5. প্রচুর পানি পান করা: পানি বেশি পান করলে কিডনির মাধ্যমে ক্ষতিকর পদার্থ সহজে বের হয়ে যেতে পারে।
ডাক্তারের পরামর্শের গুরুত্ব :
কিডনি ক্ষতির ঝুঁকি এড়াতে এবং প্রয়োজনে এলোপ্যাথিক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
----কাজী সাইফ উদদীন আহমেদ,
Lecturer, Federal Homoeopathic Medical College, Dhaka.
আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।
>Share by:
Make a comments as guest/by name or from your facebook:
Make a comment by facebook: