হোমিওপ্যাথিতে দীর্ঘদিন ঔষধ সেবনে রোগীর কি কি ক্ষতি হতে পারে?

প্রশ্ন : হোমিওপ্যাথিতে দীর্ঘদিন ঔষধ সেবনে রোগীর কি কি ক্ষতি হতে পারে?

উওর :
"Law of homeopathy" অনুযায়ী গভীর আলোচনা করার  মাধ্যমে  তাহা বোঝার চেষ্টা করি। 

হোমিওপ্যাথির মূল ভিত্তি হলো প্রাকৃতিক নিয়ম ও নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, যা রোগীর দেহকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে। 

এর প্রতিষ্ঠাতা ড. স্যামুয়েল হ্যানেম্যানের অনুসৃত বেশ কিছু মূলনীতি রয়েছে, যা হোমিওপ্যাথির আইন (Law of Homeopathy) হিসেবে পরিচিত। এই নীতিগুলোর কয়েকটি হল:


1. Similia Similibus Curentur বা "Like Cures Like"

এই নীতি অনুযায়ী, যা উপাদান সুস্থ ব্যক্তির দেহে কোনো নির্দিষ্ট উপসর্গ সৃষ্টি করে, সেটি একই ধরনের উপসর্গ নিয়ে ভোগা রোগীর জন্য চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়। এই মূলনীতির ওপর ভিত্তি করেই হোমিওপ্যাথি ঔষধের নির্বাচন করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ, পেঁয়াজ (Allium Cepa) সুস্থ অবস্থায় নাকে জ্বালাপোড়া, নাক দিয়ে পানি পড়া ও চোখে জ্বালার মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে। তাই সর্দি, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি সমস্যা থাকলে Allium Cepa ঔষধটি ব্যবহৃত হতে পারে।

 



2. ন্যূনতম মাত্রার আইন (Law of Minimum Dose)

হোমিওপ্যাথিতে ঔষধের খুবই কম মাত্রা বা ডোজ ব্যবহার করা হয়।
 মনে করা হয়, ঔষধের পরিমাণ যত কম হবে, ততই তার কার্যকারিতা এবং প্রভাব গভীর হবে, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উদ্দীপ্ত করে রোগ নিরাময়ে সহায়তা করবে।

হোমিওপ্যাথির ঔষধগুলো অনেক সময় খুব কম ঘনত্বে বা বিশুদ্ধ পানির সাথে মিশ্রণ করে তৈরি করা হয়। পোটেন্টাইজেশন (Potentization) নামে পরিচিত এই প্রক্রিয়ায় ঔষধের কার্যকারিতা বাড়ানো হয়, যা মূল উপাদানটি প্রায় অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও গভীরভাবে কাজ করতে সক্ষম হয় বলে মনে করা হয়।



3. একক ঔষধের আইন (Law of Single Remedy)

এই নীতি অনুযায়ী, একটি সময়ে রোগীর জন্য একটি মাত্র ঔষধ প্রয়োগ করা উচিত, যা রোগের সব লক্ষণকে আচ্ছন্ন করতে পারে।
 হোমিওপ্যাথি বিশ্বাস করে, একাধিক ঔষধ একইসাথে ব্যবহার করলে তাদের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে এবং রোগ নিরাময়ের পথ বিভ্রান্ত হতে পারে।

একক ঔষধের মাধ্যমে রোগীর সমস্ত উপসর্গকে নিরাময় করার চেষ্টা করা হয় এবং এটি রোগের মূল কারণের উপর গভীরভাবে কাজ করে।



4. সমগ্রিক চিকিৎসার আইন (Law of Holistic Treatment)


হোমিওপ্যাথি রোগীকে শুধুমাত্র তার শারীরিক উপসর্গের মাধ্যমে নয়, বরং মানসিক ও আবেগগত দিকগুলোও বিবেচনা করে চিকিৎসা করে। 
রোগীকে একটি সমগ্র হিসেবে গণ্য করা হয় এবং দেহ, মন, এবং আবেগের সঠিক ভারসাম্য আনার লক্ষ্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। 
এই নীতিতে বিশ্বাস করা হয় যে মানসিক অবস্থা শরীরের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং তা নিরাময়ের মাধ্যমে শারীরিক উপসর্গগুলোকেও কমানো যায়।



5. Vital Force বা জীবনশক্তির ধারণা

হোমিওপ্যাথি বিশ্বাস করে, মানব দেহে একটি অদৃশ্য শক্তি আছে, যা জীবনশক্তি বা ভাইটাল ফোর্স নামে পরিচিত। এই শক্তি দেহের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। যখন এই জীবনশক্তি ব্যাহত হয়, তখন রোগ দেখা দেয়। হোমিওপ্যাথি ঔষধ সেই জীবনশক্তিকে উদ্দীপিত করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করে।


হোমিওপ্যাথির আইন ও নীতির সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা :

সুবিধা:

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম: হোমিওপ্যাথির ঔষধের কম ডোজ এবং প্রকৃতির অনুরূপ উপাদান ব্যবহারের কারণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে কম।

দেহের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: হোমিওপ্যাথি রোগীর দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, যা রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে সহায়ক।

সমগ্রিক উপসর্গ নিরাময়: এই চিকিৎসা পদ্ধতি রোগীকে শারীরিক, মানসিক এবং আবেগগতভাবে সুস্থ রাখার চেষ্টা করে।


সীমাবদ্ধতা:

গবেষণার অভাব: আধুনিক বিজ্ঞানের মানদণ্ড অনুযায়ী হোমিওপ্যাথির অনেক দার্শনিক তত্ত্ব এখনো প্রমাণিত করিতে পার নাই, যা বিতর্কের জন্ম দেয়। আশা করি, হোমিওপ্যাথির দার্শনিক তত্ত্ব অদূর ভবিষ্যৎ প্রমাণিত করিতে পারবে। 


গুরুতর রোগে কার্যকারিতা: কিছু গুরুতর রোগের ক্ষেত্রে বা জরুরি অবস্থায় এই চিকিৎসা পদ্ধতি কম কার্যকর, তা না হওয়ার একমাত্র কারণ সরকারি কোন প্রকার পৃষ্ঠপোষকতা না থাকা ফলে। 


ঔষধ নির্বাচন জটিল: প্রতিটি রোগীর জন্য উপসর্গ অনুযায়ী সঠিক ঔষধ নির্বাচন করা কঠিন এবং খুবই দক্ষতা প্রয়োজন।


সার্বিকভাবে, হোমিওপ্যাথির এই নীতিগুলো প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে এবং শরীরের নিজস্ব নিরাময়ের ক্ষমতা বাড়িয়ে স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।


অতএব, হোমিওপ্যাথির আইন (Law of Homeopathy) মেনে চলিলে, ঔষধ সেবনে রোগীর কোন প্রকার ক্ষতি হতে পারে না।হোমিওপ্যাথিতে দীর্ঘদিন ধরে একই প্রকার একই শক্তি ঔষধ সেবন করার কোন নিয়ম নেই। 





-- কাজী সাইফ উদদীন আহমেদ,
Lecturer, Federal Homoeopathic Medical College, Dhaka.


আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। 

>Share by:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন