অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের সাইড ইফেক্টের রূপান্তরিত একটি রূপ হলো অ্যানিমিয়া (Anaemia)

অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের সাইড ইফেক্ট হিসেবে অ্যানিমিয়া (রক্তাল্পতা) হতে পারে। 

কিছু ওষুধ হেমাটোপয়েটিক সিস্টেমে (রক্ত উৎপাদনকারী সিস্টেম) প্রভাব ফেলে, যা রক্তের লাল কণিকা, শ্বেত কণিকা, অথবা প্লাটিলেটের উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। 

এখানে কিছু অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের উদাহরণ দেওয়া হলো যা অ্যানিমিয়া ঘটাতে পারে:

1. নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs): 
যেমন ইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রক্সেন। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে পেটের অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হতে পারে, যা রক্তাল্পতা সৃষ্টি করে।

2. অ্যান্টিবায়োটিক: 
কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, যেমন ক্লোরামফেনিকল, হাড়ের মজ্জার কার্যকারিতা কমিয়ে অ্যানিমিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

3. অ্যান্টিক্যান্সার ড্রাগ: 
কেমোথেরাপির ওষুধগুলো রক্তকণিকা উৎপাদনে প্রভাব ফেলে, যা হাড়ের মজ্জার উপর চাপ সৃষ্টি করে অ্যানিমিয়া ঘটায়।

4. মেটফর্মিন: 
এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে এটি ভিটামিন বি১২ শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে ম্যাক্রোসাইটিক অ্যানিমিয়া হতে পারে।

5. অ্যান্টিকনভালসেন্টস: 
কিছু খিঁচুনি প্রতিরোধক ওষুধ, যেমন ফেনিটয়েন বা কার্বামাজেপিন, রক্তকণিকা উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।


এ ধরনের সাইড ইফেক্ট দেখা দিলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত এবং রক্ত পরীক্ষা করে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।



চলুন আরো বিস্তারিত আলোচনা করি। 

অ্যানিমিয়া, বা রক্তাল্পতা, হচ্ছে একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে রক্তের লাল কণিকার (ইরিথ্রোসাইট) সংখ্যা কমে যায় অথবা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকে।

 অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের কারণে অ্যানিমিয়া বিভিন্ন পদ্ধতিতে ঘটতে পারে, যেমন:

1. হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়া (Hemolytic Anemia)

এই ধরনের অ্যানিমিয়া হয় যখন লাল রক্তকণিকা ভেঙে যায় এবং রক্তে অপর্যাপ্ত পরিমাণ লাল কণিকা থাকে। কিছু অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ লাল কণিকার অস্বাভাবিকভাবে ধ্বংসের কারণ হতে পারে। উদাহরণ:

পেনিসিলিন এবং তার ডেরিভেটিভস।

কুইনাইন-ম্যালেরিয়ার ওষুধ।

সালফা-ভিত্তিক অ্যান্টিবায়োটিক।


এগুলো শরীরের ইমিউন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যা লাল রক্তকণিকাকে ধ্বংস করে দেয়, ফলে হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়া হয়।


2. অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া (Aplastic Anemia)

এই ধরনের অ্যানিমিয়া হয় যখন হাড়ের মজ্জা যথেষ্ট পরিমাণ লাল রক্তকণিকা উৎপাদন করতে পারে না। কিছু ওষুধ, বিশেষ করে কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন থেরাপি, হাড়ের মজ্জার কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। 

উদাহরণ:

কেমোথেরাপি ড্রাগস: যেমন মেথোট্রেক্সেট বা সাইক্লোফসফামাইড।

অ্যান্টিবায়োটিক:যেমন ক্লোরামফেনিকল।

এগুলো হাড়ের মজ্জাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে রক্ত উৎপাদনের ক্ষমতা কমে যায় এবং অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া দেখা দেয়।


3. মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া (Megaloblastic Anemia)

মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া তখন হয় যখন লাল রক্তকণিকা অস্বাভাবিকভাবে বড় হয় এবং সঠিকভাবে কার্যকর হয় না। এটি সাধারণত ফোলেট বা ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতির কারণে হয়। কিছু ওষুধ এই ঘাটতির সৃষ্টি করতে পারে:

উদাহরণ,

মেটফর্মিন: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত, যা ভিটামিন বি১২ শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

অ্যান্টি-ফোলেট ড্রাগস: যেমন মেথোট্রেক্সেট, যা ফোলিক অ্যাসিডের শোষণ বা কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।


4. গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল রক্তপাতের কারণে অ্যানিমিয়া

নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs) দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের ফলে পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হতে পারে। 

উদাহরণ:

ইবুপ্রোফেন এবং ন্যাপ্রক্সেন।

এ ধরনের অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের ফলে শরীরের লাল রক্তকণিকার মাত্রা হ্রাস পায়, যা রক্তাল্পতার কারণ হয়।

5. ড্রাগ-ইনডিউসড হাইপোপ্রোলিফারেটিভ অ্যানিমিয়া

এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে লাল রক্তকণিকা পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপন্ন হয় না। কিছু ওষুধ হাড়ের মজ্জার কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে, 

যেমন:

অ্যান্টিকনভালসেন্টস: যেমন ফেনিটয়েন বা কার্বামাজেপিন, যা দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে রক্তকণিকার উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

অ্যান্টি-সাইকোটিক ড্রাগস: যেমন ক্লোজাপিন, যা হাড়ের মজ্জাকে দমন করতে পারে।


সতর্কতা ও ব্যবস্থাপনা:

রক্তাল্পতার লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

যদি কোনো ওষুধ গ্রহণের পর অ্যানিমিয়ার লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে ওষুধের মাত্রা কমানো বা বন্ধ করা যেতে পারে।

প্রয়োজন হলে রক্ত পরীক্ষা ও ভিটামিন সম্পূরক দেওয়া যেতে পারে।


উপসংহার

অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ সঠিকভাবে ব্যবহৃত না হলে বা দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ধরনের অ্যানিমিয়া সৃষ্টি হতে পারে। যথাযথ চিকিৎসা এবং নজরদারি না থাকলে এই ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুরুতর হয়ে উঠতে পারে।





---কাজী সাইফ উদদীন আহমেদ,
Lecturer,
Federal Homoeopathic Medical College, Dhaka.


আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। 

>Share by:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন