সার্জারী - ৪ নং ক্লাস, রক্তক্ষরণ বা হেমারেজ (Haemorrage)

রক্তক্ষরণ বা হেমারেজ, রক্তদান, শক, তরল
ও ইলেকট্রোলাইটের সমতা


ক) রক্তক্ষরণ বা হেমারেজ
(Haemorrage)


প্রশ্ন-০২.০১। রক্তক্ষরণ বা হেমারেজ কাহাকে বলে?

উত্তর : দেহের কোন অংশের রক্তনালী বা তাহার কণিকা কাটিয়া গেলে যে রক্তপাত হয় তাহাকে রক্তক্ষরণ বা হেমারেজ বলে। 
রক্তক্ষরণ হইলে রক্তবাহী নালী দিয়া রক্ত চর্মের বাহিরেও আসিতে পারে, আবার ক্ষরিত রক্ত দেহের ভিতরে কোন টিসুর মধ্যেও জমিতে পারে।



প্রশ্ন-০২.০২। রক্তক্ষরণ বা হেমারেজের প্রকারভেদ বা শ্রেণীবিভাগ লিখ।


উত্তর: রক্তক্ষরণ বা হেমারেজের প্রকারভেদ-রক্ত ক্ষরণকে নিম্নের শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।

১। রক্তক্ষরণের উৎস অনুসারে- ৩ ভাগে।

ক) ধমনীর রক্তক্ষরণ-রক্তপ্রবাহ দ্রুত হয়।

খ) শিরার রক্তক্ষরণ-রক্তপ্রবাহ ধীরগতির।

গ) ক্যাপিলারীর রক্তক্ষরণ-রক্ত ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরিতে থাকে।

২। রক্তক্ষরণের স্থায়িত্বকাল বা সময় অনুসারে- ৩ ভাগে।

ক) প্রাইমারী রক্তক্ষরণ-আঘাতে বা অপারেশানের সময় এই ধরনের রক্তক্ষরণ হয়।

খ) প্রতিক্রিয়াশীল বা রিএকশ্যানারী রক্তক্ষরণ-সাধারণত অস্ত্রোপ্রচারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইহা আরম্ভ হয়।

গ) সেকেণ্ডারী রক্তক্ষরণ-আঘাতপ্রাপ্তির বা অপারেশানের পর তিনদিন হইতে পনেরো দিনের মধ্যে ইহা হইতে পারে।

৩। দৃষ্টিগোচর হিসাবে- ২ প্রকার।

ক) বহিঃরক্তক্ষরণ-রক্তবাহী নালী দ্বারা রক্ত দেহের বাহিরে আসিলে তাহা বহিঃরক্তক্ষরণ।

খ) অন্তঃরক্তক্ষরণ-রক্ত যখন শিরা হইতে বাহিরে আসে কিন্তু শরীরের ভিতরে থাকে তাহা অন্তঃরক্তক্ষরণ।

৪। অবস্থাভেদে - ২ প্রকার।

ক) একিউট রক্তক্ষরণ-হঠাৎ রক্তপাত ঘটিলে তাহা একিউট রক্তক্ষরণ।

খ) ক্রণিক রক্তক্ষরণ-দীর্ঘদিন ধরিয়া অল্প অল্প রক্তপাত ঘটিলে তাহা ক্রণিক রক্তক্ষরণ।


 


প্রশ্ন-০২.০৩। রক্তক্ষরণ বা হেমারেজের কারণ লিখ।

উত্তর: রক্তক্ষরণ বা হেমারেজের কারণ - নিম্নলিখিত কারণে রক্তক্ষরণ ঘটিয়া থাকে।

ক) আঘাত ও দুর্ঘটনার ফলে।

খ) অস্ত্রোপচারের ফলে।

গ) ক্ষতসৃষ্টি হইলে।

ঘ) জীবাণু সংক্রমণের ফলে।

ঙ) উচ্চ রক্তচাপের ফলে।

চ) নানা কারণে শিরা বা ধমনীর ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি ও যার ফলে আভ্যন্তরীণ রক্তপাত।

ছ) সর্দি, গর্মি, স্ট্রোক প্রভৃতি হইলে।



প্রশ্ন-০২,০৪। তরুণ রক্তক্ষরণ বা একিউট হেমারেজের কারণ লিখ।

উত্তর : একিউট হেমারেজের কারণ - নিম্নলিখিত কারণে একিউট হেমারেজ হইতে পারে।

ক) আঘাতের ফলে দেহের কোন অংশের রক্তনালী বা জালিকা কাটিয়া গেলে।

খ) দুর্ঘটনার ফলে।

গ) অস্ত্রোপচারের ফলে।

ঘ) অতিরিক্ত সর্দিকাশি হইলে।

৬) দীর্ঘদিন মেয়েদের ঋতুস্রাব বন্ধ থাকিলে।

চ) সর্দি, গর্মি, স্ট্রোক প্রভৃতি হইতে।



প্রশ্ন-০২.০৫। পুরাতন রক্তক্ষরণ বা ক্রণিক হেমারেজের কারণ লিখ।

উত্তর : ক্রনিক হেমারেজের কারণ - নিম্নলিখিত কারণে ক্রণিক হেমারেজ হইতে পারে।

ক) যকৃতের রোগ বা লিভার ট্রাবল।

খ) উচ্চ রক্তচাপ।

গ) অতিরিক্ত মস্তিষ্কের খাটুনি।

ঘ) জীবাণু সংক্রমণের ফলে।

ঙ) ক্ষুদ্রান্ত্র বা বৃহদন্ত্র আক্রান্ত হইলে।

চ) কিডনী বা ব্লাডার আক্রান্ত হইলে।



প্রশ্ন-০২.০৬। রক্তক্ষরণ বা হেমারেজের লক্ষণাবলী বা ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।

বা, রক্তক্ষরণ বা হেমারেজের চিহ্ন ও লক্ষণাবলী লিখ।

উত্তর: রক্তক্ষরণের লক্ষণাবলী বা ক্লিনিক্যাল ফিচার দেহের বাহিরে রক্তক্ষরণ হইলে ইহা দৃশ্যমান। রক্তক্ষরণে রক্তপাত হইতে দেখা যায়। কিন্তু অন্তঃরক্তক্ষরণ নিম্নলিখিত চিহ্ন ও লক্ষণ দ্বারা নির্ণয় করা যায়।

চিহ্ন (sign),  চিকিৎসক যাহা দেখিবেন-

ক) মুখ ও ঠোঁটের রক্তশূন্য ভাব।

খ) অস্থির ভাব।

গ) বিন্দু বিন্দু ঘর্ম।

ঘ) মুখমণ্ডলে উদ্বেগ, আতঙ্কের ছাপ ও পাণ্ডুবর্ণ।

ঙ) ত্বকের ঠাণ্ডা ভাব।

চ) দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস।

ছ) দ্রুতগতি নাড়ী অথচ দুর্বল বা ক্ষীণ।

জ) মাথাঘোরা বা মূর্ছাভাব।

ঝ) অনেক সময় শক দেখা যায়।

লক্ষণ (symptom),  রোগী যাহা বলিবেন-

ক) শীতশীত বোধ।

খ) পিপাসার অভাব।

গ) শ্বাসকষ্ট।

ঘ) ভয় ভয় ভাব।

৬) ব্যথা যন্ত্রণা।

চ) মাথাঘোরা।



প্রশ্ন-০২.০৭। রক্তক্ষরণ বা হেমারেজের ব্যবস্থাপনা বা চিকিৎসা লিখ।

উত্তর: রক্তক্ষরণের ব্যবস্থাপনা  -

ক) রোগীকে চুপচাপ শোয়াইয়া রাখিতে হইবে। বেশী নাড়াচাড়া করা উচিত নয়। যত শান্ত ভাবে শুইয়া থাকিবে ততই রক্তপাত কম হইবে।

খ) ক্ষতস্থানে রক্তজমাট বাঁধিলে তাহা কখনও সরাইতে নাই। জমাট বাঁধা রক্ত সরাইলে রক্তপাত বেশী হইবে।

গ) ক্ষতস্থানে প্রবিষ্ট কোন দ্রব্য থাকিলে তাহা অতি ধীরে ধীরে আলতোভাবে বাহির করিয়া ফেলিতে হইবে।

ঘ) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যখন যেভাবে প্রয়োজন সেইভাবে চাপ দিয়া রক্তবন্ধ করিতে হইবে। প্রয়োজনে প্রেসার পয়েন্টে চাপ দিতে হইবে।

ঙ) ক্ষতস্থানের চারপাশে ডেটল পানি ও তুলা দিয়া পরিষ্কার করিতে হইবে। সাবধান থাকিতে হইবে যাহাতে কোন জীবাণু ক্ষতের সংস্পর্শে না আসে।

চ) ক্ষতের উপর এন্টিসেপটিক ক্রীম ও sterile গজ দিয়া ক্ষতটি ব্যান্ডেজ করিতে হইবে।

ছ) আহত অঙ্গটি সব সময় splint বা ব্যান্ডেজ বাঁধিয়া রাখা কর্তব্য। তাহাতে সেপসিসের ভয় থাকে না।

জ) শিরাপথে রক্ত সঞ্চালন, প্লাজমা, গ্লুকোজ, স্যালাইন ইত্যাদি সাহায্যে রক্তের আয়তন পূর্বাবস্থায় ফিরাইয়া আনিতে হইবে।

ঝ) রক্তপাত বেশী হইলে ও বন্ধ করিতে অসমর্থ হইলে প্রয়োজনে টুর্নিকেট বাঁধিতে হইবে।

রক্তক্ষরণের চিকিৎসা -

ব্যবহৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ-  রক্তক্ষরণের কারণ ও রোগীর অবস্থানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ 
আর্ণিকা, 
দুর্বা, 
ক্যালেন্ডুলা, 
হ্যামামেলিস,  প্রভৃতি ব্যবহার করিতে হইবে।



প্রশ্ন-০২.০৮। প্রেসার পয়েন্ট কাহাকে বলে? দেহের প্রেসার পয়েন্টসমূহ কি? 

উত্তর : প্রেসার পয়েন্ট- প্রেসার পয়েন্ট হইল দেহের মধ্যেকার কতকগুলি বিশেষ পয়েন্ট, যেসব পয়েন্টে চাপ দিলে ধমনীর রক্ত বন্ধ করিতে সাহায্য করে।

এইসব পয়েন্টে বড় ধমনীগুলি চামড়ার বা ত্বকের খুব কাছে থাকে। দেহের ঐসব অংশের কাছাকাছি ধমনী কাটিয়া গেলে ঐ সব প্রেসার পয়েন্টে চাপ দিয়া রক্ত বন্ধ করিতে হয়।

দেহের প্রেসার পয়েন্টসমূহ - দেহের প্রেসার পয়েন্ট ৪টি। ধমনীর নাম অনুযায়ী ঐসব প্রেসার পয়েন্টগুলির নামকরণ করা হইয়াছে।

চারটি প্রেসার পয়েন্টের মধ্যে - 
ব্রেকিয়াল ও 
ফিমোর‍্যাল 
সব সবচাইতে বেশী কাজে লাগে।



প্রশ্ন-০২.০৯। রক্তক্ষরণ বা হেমারোজের জটিলতাসমূহ কি কি?
বা, রক্তক্ষরণ বা হেমারেজের ভাবীফল লিখ।

উত্তর: রক্তক্ষরণ বা হেমাজেজের জটিলতা বা ভাবীফল -

ক) রোগী খুব অস্থির ও মুখাবয়বে উদ্বেগের ছাপ থাকে। চোখে আতঙ্কের ভাব দেখা যায়।

খ) কপালের পাশে বিন্দু বিন্দু ঘর্ম দেখা দেয়।

গ) শারীরিক উত্তাপ প্রথমে স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু পরে হাত পা সব ঠাণ্ডা হইয়া যায়।

ঘ) নাড়ী দ্রুত ধাবমান হয় এবং রোগী সত্বর দুর্বল হইয়া পড়ে।

ঙ) শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হইতে থাকে এবং হাঁ করিয়া বাতাস গিলিবার চেষ্টা করে। পরে মূর্ছার ভাব এবং সত্যিকার মূর্ছা দেখা দেয়।

চ) বেশী রক্তপাতের জন্য শক হইতে পারে।


কাজী সাইফ উদদীন আহমেদ 
>Share by:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন