হোমিওপ্যাথিক ওষুধ কীভাবে মানব কোষের শক্তি উৎপাদনকারী অংশ — মাইটোকন্ড্রিয়ার ভিতরে কাজ করে?

হোমিওপ্যাথিক ওষুধ মানব কোষের ভিতর পাওয়ার হাউজ মাইটোকন্ড্রিয়ার ভিতরে কিভাবে কার্যসম্পাদন করে।

এটি হোমিওপ্যাথি, - বায়োকেমিস্ট্রি এবং -কোয়ান্টাম বায়োলজির এক গভীর মিলনবিন্দু।

চলুন বিষয়টি ধাপে ধাপে সহজ কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছি।

প্রথমে বুঝে নিই: মাইটোকন্ড্রিয়া কী?

মাইটোকন্ড্রিয়া হলো আমাদের প্রতিটি কোষের “Power House” — এখানে গ্লুকোজ ও অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে ATP (Adenosine Triphosphate) উৎপন্ন হয়।

ATP = কোষের জ্বালানি।

যেমন:

Glucose + O₂ → CO₂ + H₂O + Energy (ATP)

আমরা জানি, কোনো মানব রোগ হলে, কোষের মাইটোকন্ড্রিয়াল কার্যকারিতা নষ্ট হয়, ATP কমে যায়,   ফলে কোষ দুর্বল হয়, জীবনীশক্তির শক্তি  নেমে আসে।

এখন দেখি: হোমিওপ্যাথিক ওষুধ কাজ করে কিভাবে।

হোমিওপ্যাথিক ওষুধে মূলত "vital information" বা "energy signatureএনার্জি ইমপ্রিন্ট ( Energy Imprint) থাকে — পদার্থের নয়, তার তরঙ্গ বা তথ্যীয় রূপ।

এটা একে বলে "Dynamic energy", যা হ্যানিম্যান তাঁর “Organon of Medicine” এ বলেছেন “Dynamic influence upon the vital force।”



শরীরের ভাইটাল ফোর্সে প্রভাব:

ওষুধ মুখে গেলে, প্রথমে ভাইটাল ফোর্স (জীবনী শক্তি)–কে উত্তেজিত করে।

এই জীবনী শক্তিই কোষে, বিশেষ করে মাইটোকন্ড্রিয়াল মেমব্রেন পোটেনশিয়াল - এ পরিবর্তন আনে।

বায়ো-ইলেকট্রিক ও কোয়ান্টাম স্তরের প্রভাব:

হোমিওপ্যাথিক রেমেডির পানি বা অ্যালকোহল বেসে ন্যানোস্ট্রাকচার বা কোয়ান্টাম ইন্টারফেরেন্স প্যাটার্ন তৈরি হয়।

এটি শরীরের বায়ো-ইলেকট্রিক ফিল্ডের সাথে রেজোনেট করে →

মাইটোকন্ড্রিয়ার মেমব্রেনে ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট চেইনে প্রভাব ফেলে।

এখন আসুন, রেজোনেট (Resonate)” শব্দের অর্থ:

Resonate মানে হলো

“একই কম্পাঙ্কে (frequency) কম্পিত হওয়া”

অর্থাৎ, যখন দুটি জিনিসের কম্পন বা তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সি একে অপরের সাথে মিলে যায়, তখন তারা পরস্পরের শক্তি বিনিময় বা যোগাযোগ করতে পারে —

এই ঘটনাকে বলে রেজোন্যান্স (Resonance)।

উদাহরণ দিয়ে বোঝা যাক:

ধরা যাক, দুটি গিটার পাশাপাশি রাখা আছে।

তুমি একটার একটি নির্দিষ্ট তারে হাত দিলে সেটি কম্পিত হলো —

অন্য গিটারের একই ফ্রিকোয়েন্সির তারটিও আপনি থেকেই কাঁপতে শুরু করে 

এটা-ই “রেজোন্যান্স”।

শরীরের ক্ষেত্রে "রেজোন্যান্স" কীভাবে ঘটে?

আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষ, টিস্যু, অঙ্গ—

সবকিছুই আসলে বৈদ্যুতিক ও কম্পনশীল শক্তির সিস্টেম।

এই সিস্টেমের মধ্যেই থাকে একটি বায়ো-ইলেকট্রিক ফিল্ড বা “জীবনী শক্তির তরঙ্গক্ষেত্র”।

প্রতিটি সুস্থ কোষ নির্দিষ্ট এক ফ্রিকোয়েন্সি বা কম্পনে কাজ করে।

💊 হোমিওপ্যাথিক ওষুধের রেজোন্যান্স:

হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ভিতর থাকে তথ্যীয় শক্তি (informational energy pattern) —

একটি নির্দিষ্ট কম্পাঙ্ক (frequency signature)।

যখন এই ফ্রিকোয়েন্সি রোগগ্রস্ত কোষের ফ্রিকোয়েন্সির সাথে মিলে যায় —

তখন রেজোন্যান্স ঘটেত

থ্য-শক্তি কোষের ভিতরে প্রবেশ করে

কোষ তার স্বাভাবিক কম্পন ফিরে পায়

শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য (homeostasis) পুনরুদ্ধার হয়।

বৈজ্ঞানিকভাবে বলা যায়:

রেজোন্যান্স মানে “frequency matching”

এতে energy transfer বা information transfer ঘটে,

ফলস্বরূপ সেল মেমব্রেনের ইলেকট্রিক পোটেনশিয়াল ঠিক হয়,

মাইটোকন্ড্রিয়া আবার ঠিকভাবে ATP উৎপাদন শুরু করে।

সারসংক্ষেপে:


> “রেজোনেট” মানে হলো একই ফ্রিকোয়েন্সিতে কম্পিত হয়ে যোগাযোগ সৃষ্টি করা।

হোমিওপ্যাথিক ওষুধের শক্তি তরঙ্গ শরীরের বায়ো-ইলেকট্রিক ফিল্ডের সাথে রেজোনেট করলে,

কোষে তথ্য প্রবেশ করে, এবং শরীর তার স্বাভাবিক শক্তি ভারসাম্যে ফিরে আসে।

এর ফলে:

ইলেকট্রন ফ্লো সঠিক হয়।

Reactive Oxygen Species (ROS) কমে।

ATP উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

কোষের মেরামত প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়।

বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা (সম্ভাব্য মেকানিজম)

কার্যক্রম ফলাফল

ধাপ ১,

কার্যক্রম: হোমিওপ্যাথিক দ্রবণের - ইলেকট্রিক সিগনেচার কোষে পৌঁছায়

ফলাফল: কোষের মেমব্রেন পোটেনশিয়াল পুনঃসমন্বয় হয়।

ধাপ: ২

কার্যক্রম সিগন্যাল - মাইটোকন্ড্রিয়ার ভিতরে প্রবেশ করে- 

ফলাফল:  ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট চেইন সক্রিয় হয়।

 ধাপ ৩,

কার্যক্রম ATP -  সিনথেজ কার্যক্ষমতা বাড়ে - 

ফলাফল:  শক্তি উৎপাদন বাড়ে।

ধাপ ৪,

কার্যক্রম:  কোষীয় রিসেপ্টর ও জিন - এক্সপ্রেশন পরিবর্তিত হয় - 

ফলাফল:  হিলিং ও রিজেনারেশন ত্বরান্বিত হয়।


আধুনিক গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে:

1. IIT Bombay (2010) – ডঃ Jayesh Bellare এর গবেষণায় দেখা গেছে:

হোমিওপ্যাথিক দ্রবণে source material এর ন্যানোপার্টিকেলস উপস্থিত থাকে।

এগুলো কোষীয় এনজাইম সিস্টেমকে প্রভাবিত করে।

2. Nano-medicine theory of Homeopathy (Khuda-Bukhsh, 2014):

হোমিও রেমেডি “gene expression modulation” করে,

যার মাধ্যমে মাইটোকন্ড্রিয়ার কার্যক্ষমতা পুনঃস্থাপিত হয়।

🧠 সারসংক্ষেপে:

> হোমিওপ্যাথিক ওষুধ সরাসরি রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায় না, বরং তথ্য-শক্তি (information-energy) মাধ্যমে ভাইটাল ফোর্স → কোষ → মাইটোকন্ড্রিয়া → ATP → স্বাস্থ্যে কাজ করে।

এভাবে এটি সেলের ভিতর মাইটোকন্ড্রিয়ার বায়ো-এনার্জেটিক ব্যালান্স পুনঃস্থাপন করে এবং দেহকে স্বাভাবিক হিলিং প্রক্রিয়া চালাতে সাহায্য করে।

 


-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ
বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি, 
ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা    
প্রভাষক, 
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ। 

আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।

>Share by:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন