গুয়েকাম অফিসিন্যালিস: হোমিওপ্যাথিতে একটি বহুমুখী ও কার্যকরী মেডিসিনের আলোচনা

GUAICUM OFFICINALIS (Guai) 
(গুয়েকাম অফিসিন্যালিস)

সমনাম : রেসিন অব লিগনাম ভিটা।
Short Name : Guai
উৎস : উদ্ভিদজ।
প্রভার : ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান।

কাতরতা : উভয়কাতর (++)।
মায়াজম : সোরিক (+), সাইকোটিক (+), সিফিলিটিক (+), টিউবারকুলার (+)।

ক্রিয়াস্থল : সন্ধিস্থল, লিগাম্যান্ট, টনসিল, ফুসফুস, ডিম্বাশয়, চর্ম, বক্ষ।

গভির ক্রিয়াশীল ঔষধ।

Guaiacum লক্ষণসর্বস্ব মেডিসিন।

কী-নোটস: Arthritic or Rheumatic disorderes.

১। গ্রন্থিবাত বা বাতজনিত দোষ (Arthritic or Rheumatic disorderes)., তৎসহ স্পর্শকাতর ( Tenderness) ও স্থানীক উত্তাপ  (Agg- Local Heat) প্রয়োগে বৃদ্ধি।

২। বর্ধনশীল বেদনা, বেদনা অন্তে সূচীবিদ্ধবৎ অনুভূতি (বিশেষতঃ মাথায়) এবং আক্রান্ত অঙ্গে উত্তাপ অনুভূতি (Sensation)

৩। দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, সমগ্র শরীরে বিশ্রী গন্ধ।

৪। Drsire :  আপেল ও অন্যফলের আকাংখা,       Aversion : দুগ্ধে অনীহা।

৫। পুরিসির সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা ও দম বন্ধ হওয়ার অনুভূতি।

হ্রাস-বৃদ্ধি:

বৃদ্ধি : নড়াচড়ায়, উত্তাপে, ঠান্ডা ভিজে আবহাওয়ায়, চাপে, স্পর্শে, পারদে, সন্ধ্যা ৬ টা হতে ভোর ৪টা।

হ্রাস : বাহ্যিক চাপে, হাই তুললে, হাত-পা বিস্তৃত করলে।

অনুপূরক :- পালসেটীলা, মেডোরিনাম, কষ্টিকাম, কলচিকাম, ল্যাককেনিনাম ও টিউবারকুলিনাম।

ক্রিয়ানাশক: নাই।

শত্রুভাবাপন্ন: কস্টিকাম, মার্কসল, রাস-টক্স।


গুয়েকাম

ওয়েকামের প্রথম কথা- ব্যথা, গরমে বৃদ্ধি ও নড়া-চড়ায় বৃদ্ধি।

ইহা একটি সুগভীর ক্রিয়াশীল ঔষধ। সিফিলিসের রোগের ( মায়াজম নয়)  উপর ইহার ক্ষমতা আছে। যদিও ইহা সাধারণত বাত এবং গাউটের জন্যই ব্যবহৃত হয়, গাঁটে গাঁটে ব্যথা এবং ব্যথার জন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা আক্রান্ত স্থান এত আড়ষ্ট হইয়া থাকে যে রোগী তাহা প্রসারিত করিতে পারে না, গরমে বৃদ্ধি এবং নড়া-চড়া করিতেও বৃদ্ধি কিন্তু এই গাউট বা বাতের ধাত (ধাতু) যখন যক্ষ্মাদোষে পরিণত হইবার উপক্রম হয় তখন গুয়েকাম প্রায়ই বেশ উপকারে আসে। এই অবস্থায় রোগীর মুখে কিছুই ভাল লাগে না, শরীর দিন দিন দুর্বল হইয়া পড়িতে থাকে, উদরাময় দেখা দেয়। প্রত্যহ প্রাতে ভীষণ কষ্টকর বমি; সন্ধি স্থানে ফোড়া। গুয়েকাম প্রয়োগে এইরূপ ফোড়া পাকিয়া ফাটিয়া যায়।

গুয়েকামের দ্বিতীয় কথা : -পর্যায়ক্রমে দুর্গন্ধ ঘাম ও দুর্গন্ধ প্রস্রাব।

গুয়েকামের একটি বিশেষত্ব এই যে, "যখন তাহার দেহে প্রচুর ঘাম দেখা দেয় তখন প্রায়ই সে দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাবের জন্য কষ্ট পাইতে থাকে, আবার যখন দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব প্রকাশ পায় তখন আর ঘাম দেখা দেয় না।" প্রস্রাবের পরও প্রস্রাবের বেগ।

শরীরের সন্ধি স্থানে ফোড়া; যক্ষ্মা।

কাশি, কাশির সহিত রক্ত।

টনসিল প্রদাহ।

পায়ের শিরা টানিয়া ধরে।

প্রদাহযুক্ত স্থানে উত্তাপ অসহ্য।

জ্বরের সহিত হাত দুইটি অত্যন্ত উত্তপ্ত হইয়া ওঠে।

দুগ্ধে অরুচি।

সায়েটিকা ঠান্ডায় উপশম।

নিদ্রাকালে পড়িয়া যাইবার স্বপ্ন।

দাঁতে দাঁতে চাপিলে দাঁত ব্যথা লাগে।

গলার মধ্যে উপদংশজনিত ক্ষত ভীষণ জ্বালা করিতে থাকে।

প্রদাহযুক্ত স্থানে উত্তাপ সহ্য হয় না।

পায়ের শিরা এমনভাবে টানিয়া ধরে যে পা সোজা করিতে পারে ঋতুকষ্ট, ঋতুরোধ, ডিম্বকোষ প্রদাহ। কিন্তু উপদংশের ইতিহাস গরমে বৃদ্ধি, দুর্গন্ধ, ঘাম বা প্রস্রাব, দুর্গন্ধ মল, আহারে অরুচি, বা দুগ্ধে অরুচি ইহার বিশিষ্ট পরিচয়।

&&&&&&*





গুয়েকাম

যেসব অন্যমনষ্ক, বিষণ্ণ জড়ভাবাপন্ন, রুক্ষমনা ও ভোলামন বিশিষ্ট এবং গেটে বাতগ্রস্ত ব্যক্তি, যারা প্রায় সময় গেঁটে বাত বা বিভিন্ন প্রকার বাতে কষ্ট পায় কষ্টগুলি প্রায়ই ঠাণ্ডায় ও রাত্রে দেখা দেয়, নড়াচড়ায় ও গরমে বৃদ্ধি। বিশ্রামে ও ঠাণ্ডায় এবং ঠাণ্ডা প্রলেপে উপশম। কেবলমাত্র মাথা ও মুখমণ্ডলের বাম দিকের স্নায়ুশূল দপ দপানি ও সুঁচ ফুটানোর মত ব্যথা মাথা বেয়ে মুখ পর্যন্ত সঞ্চারিত হয়। বিশেষ করে শীতল ও আর্দ্র আবহাওয়ায় দেখা দেয়। বিকাল ৪টা থেকে ভোর-৬টায় বৃদ্ধি পায়। Rheumatism, gout. on Rhumatic Condition.

এছাড়া ব্যথা চাপলে ও হাঁটলে উপশম। বসলে ও দাঁড়ালে বৃদ্ধি। 

বিশেষ করে সন্ধিবাত আক্রান্ত ব্যক্তি যাদের বেদনা হাটু হতে পায়ের গোড়ালীতে অধিক পরিলক্ষিত হয়। সঙ্কোচনবশতঃ হাঁটার সময় পায়ের শিরাতে টান লাগে এবং পা ২টি ছোট মনে হয় এমনকি সঙ্কোচনবশতঃ পা দু'টি ছোট মনে হয়, এমনকি পা সোজা করতেও কষ্ট হয়। পায়ের গাট ফোলে, লাল হয়। জ্বালাযুক্ত ও স্পর্শকাতর বেদনাসহ ছিঁড়ে যাওয়া ও সুঁচ াআফোঁটানোর ন্যায় বেদনা দেখা দেয়। অনেক সময় গেটেবাত আক্রান্ত সন্ধিতে ফোঁড়া দেখা দেয়। বেদনা রাতে ও ঠাণ্ডায় দেখা দেয়। নড়াচড়ায় ও উত্তাপে বৃদ্ধি পায়। সঞ্চালণে ও ঠাণ্ডায় উপশমিত হয়। এরূপ গেটে বাতগ্রস্ত রোগী (Gout Patient)  প্রায় সময় উদরাময়ে ভোগে।

HOMŒOPATHIC MATERIA MEDICA
by William BOERICKE, M.D.
Presented by Médi-T

অ🌿 নিচে “Guaiacum officinale”-এর মূল ইংরেজি পাঠ্যের পূর্ণ বাংলা অনুবাদ দিচ্ছি — যতটা সম্ভব চিকিৎসা-পরিভাষা বজায় রেখে, সহজ ও স্পষ্ট ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে।

🧴 Guaiacum officinale

(Resin of Lignum Vitæ – GUAIACUM)

 প্রধান কার্যকারিতা:
Chief action on fibrous tissue, and is especially adapted to the arthritic diathesis, rheumatism, and tonsillitis. Secondary syphilis. Very valuable in acute rheumatism. Free foul secretions. Unclean odor from whole body. Promotes suppuration of abscesses. Sensitiveness and aggravation from local heat. Contraction of limbs, stiffness and immobility. Feeling that he must stretch.
এই ওষুধটি মূলত তন্তু (fibrous tissue) বা পেশি-সংযোগকারী টিস্যুর ওপর ক্রিয়া করে এবং গেঁটে বাত-প্রবণ (arthritic diathesis), বাতব্যাধি (rheumatism) এবং টনসিলের প্রদাহ ( Tonsil-Inflammation or tonsillitis)- এ বিশেষ কার্যকর।

এটি দ্বিতীয় পর্যায়ের সিফিলিস (secondary syphilis)-এও উপকারী

বিশেষত তীব্র বাতরোগ (acute rheumatism)-এ এটি অত্যন্ত মূল্যবান।

শরীর থেকে দুর্গন্ধযুক্ত নিঃসরণ (foul secretions) হয়, এবং পুরো শরীর থেকে দূর্গন্ধ আসে।

এটি ফোঁড়ার (abscess) পুঁজ নির্গমনকে (suppuration) উৎসাহ দেয়।

রোগী স্পর্শে অতিসংবেদনশীল (sensitive) হয়, এবং স্থানীয় উত্তাপে (local heat) অবস্থার অবনতি ঘটে।

হাত-পা সংকুচিত (contracted) হয়ে যায়, জড়তা (stiffness) ও অচলতা (immobility) দেখা দেয়।

রোগীর মনে হয়— অবশ্যই শরীর টানতে হবে (feeling that he must stretch)।

🧠 মন (Mind):
**Mind.--**Forgetful; thoughtless; staring. Slow to comprehend.

ভুলোমনা, অমনোযোগী, শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। বোঝার গতি ধীর।

🩸 মাথা (Head):
**Head.--**Gouty and rheumatic pain in head and face, extending to neck. 
Tearing pain in skull; worse, cold, wet weather. 
Feels swollen, and blood-vessels distended. 
Aching in left ear. 
Pains often end in a stitch, especially in head.

গেঁটে বাত বা বাতজনিত ব্যথা মাথা ও মুখে, যা ঘাড় পর্যন্ত বিস্তৃত।
খুলিতে টানটান ব্যথা হয়; ঠান্ডা, ভেজা আবহাওয়ায় বাড়ে।
মাথা ফুলে গেছে মনে হয়; রক্তনালীগুলো যেন ফোলা।
বাঁ-কানে ব্যথা।
ব্যথা শেষে হঠাৎ ছোঁচা বা খোঁচাধরনের ব্যথা (stitch pain) দেখা দেয়, বিশেষত মাথায়।


👁️ চোখ (Eyes):
**Eyes.--**Pupils dilated. Eyelids appear too short. Pimples around eyes.

চোখের মণি (pupil) প্রসারিত।
চোখের পাতা ছোট মনে হয়।
চোখের চারপাশে ফুসকুড়ি বা ছোট ছোট দানা।

🗣️ গলা (Throat):
**Throat.--**Rheumatic sore throat with weak throat muscles. 
Throat dry, burns, swollen, stitches toward ear. 
Acute tonsillitis. 
Syphilitic sore throat.

বাতজনিত গলা ব্যথা (rheumatic sore throat) — গলার পেশি দুর্বল।
গলা শুকনো, জ্বালাপোড়া, ফোলা, এবং কানের দিকে ছোঁচা ব্যথা।
তীব্র টনসিলের প্রদাহ (acute tonsillitis)।
সিফিলিটিক গলা ব্যথা (syphilitic sore throat)।
---

🍎 পেট (Stomach):
**Stomach.--**Tongue furred. 
Desire for apples and other fruits. Aversion to milk. 
Burning in stomach. 
Constricted epigastric region.
জিহ্বা মোটা আবরণে ঢাকা (furred tongue)।

আপেল ও অন্যান্য ফলের প্রতি আকর্ষণ, কিন্তু দুধের প্রতি বিরাগ (aversion to milk)।
পেটে জ্বালাপোড়া।
বুকের ওপরের অংশে (epigastric region) টান অনুভূত হয়।

💨 পেটের নিম্নাংশ (Abdomen):
**Abdomen.--**Intestinal fermentation. 
Much wind in bowels. 
Diarrhœa, cholera infantum.

অন্ত্রে গ্যাস জমে (intestinal fermentation)।
পেট ফাঁপা ও বাতের সমস্যা।
ডায়রিয়া বা শিশুদের কোলেরা (cholera infantum)।

🚾 মূত্রতন্ত্র (Urinary):
**Urinary.--**Sharp stitches after urinating. 
Constant desire.

প্রস্রাবের পর তীব্র ছোঁচা ব্যথা (sharp stitches)।
বারবার প্রস্রাবের বেগ (constant desire)।


🫁 শ্বাসতন্ত্র (Respiratory):
**Respiratory.--**Feels suffocated. 
Dry, tight cough. 
Fetid breath after coughing. 
Pleuritic stitches. 
Chest pains in articulations of ribs, with shortness of breathing till expectoration sets in.

শ্বাসরোধ অনুভব করে (feels suffocated)।
শুকনো, টানটান কাশি।
কাশির পর মুখে দুর্গন্ধ (fetid breath)।
বুকের মধ্যে ছোঁচা ব্যথা (pleuritic stitches)।
পাঁজরের সংযোগস্থানে ব্যথা হয়, এবং কাশি বা কফ উঠলে উপশম হয়।

👩‍🦰 নারী (Female):
**Female.--**Ovaritis in rheumatic patients, with irregular menstruation and dysmenorrhœa, and irritable bladder.

বাতপ্রবণ নারীদের ডিম্বাশয়ের প্রদাহ (ovaritis),
তৎসহ,
অনিয়মিত ঋতুস্রাব (irregular menstruation),
ঋতুকষ্ট (dysmenorrhoea),
এবং মূত্রথলির জ্বালা (irritable bladder) দেখা দেয়।

💪 পিঠ (Back):
**Back.--**Pain from head to neck. 
Aching in nape. Stiff neck and sore shoulders. 
Stitches between scapulæ to occiput. 
Contractive pain between scapulæ.

মাথা থেকে ঘাড় পর্যন্ত ব্যথা ছড়ায়।
ঘাড়ের পেছনে (nape) ব্যথা ও টান।
ঘাড় শক্ত হয়ে যায়, কাঁধে ব্যথা।
কাঁধের হাড়ের মাঝখানে (between scapulae) থেকে মাথার পেছন পর্যন্ত ছোঁচা ব্যথা।

পিঠে টানধরনের ব্যথা।

🦵 অঙ্গপ্রত্যঙ্গ (Extremities):
**Extremities.--**Rheumatic pain in shoulders, arms and hands. Growing pains (Phos ac). 
Pricking in nates. 
Sciatica and lumbago.
Gouty tearing, with contractions. 
Immovable stiffness. 
Ankle pain extending up the leg, causing lameness. 
Joints swollen, painful, and intolerant of pressure; can bear no heat. 
Stinging pain in limbs. 
Arthritic lancinations followed by contraction of limbs. 
A feeling of heat in the affected limbs.

কাঁধ, হাত ও হাতে বাতজনিত ব্যথা (rheumatic pain)।
বৃদ্ধি-জনিত ব্যথা (growing pains) (Phos. ac এর মতো)।
নিতম্বে সূচ ফোটার মতো ব্যথা।
সায়াটিকা (sciatica) ও ল্যাম্বাগো (lumbago)-তে উপকারী।
গেঁটে বাতের (Gout) খোঁচাধরনের ব্যথা, পরবর্তীতে অঙ্গ সংকোচন (contraction) ঘটে।
গোড়ালিতে (Ankle) ব্যথা, যা পায়ে উপরের দিকে ছড়ায় এবং ল্যাংড়াভাব সৃষ্টি করে।

জয়েন্ট ফোলা, ব্যথাযুক্ত ও চাপে সহ্য করতে পারে না; তাপেও অবস্থার অবনতি ঘটে।

অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সূচ ফোটার মতো ব্যথা (stinging pain)।
অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা, পরবর্তীতে সংকোচন।
আক্রান্ত স্থানে উষ্ণতা অনুভব হয়।

🕒 পরিবর্তন (Modalities):
**Modalities.--**
Worse, from motion, heat, cold wet weather; pressure, touch, from 6 pm to 4 am. 
Better, external pressure.

অবস্থা খারাপ হয় (Worse): নড়াচড়া করলে, উত্তাপে, ঠান্ডা ও ভেজা আবহাওয়ায়, চাপ বা স্পর্শে, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে।

অবস্থা ভালো হয় (Better): বাইরের চাপ প্রয়োগে (external pressure)।

⚗️ সম্পর্কিত ওষুধ (Relationship):
**Relationship.--**
Guaiacol (in the treatment of gonorrhœal epididymitis, 2 parts to 30 vaselin, locally).

Antidote: Nux. Follow Sepia.

Compare: Merc; Caust; Rhus; Mezer; Rhodod.

Guaiacol: গনোরিয়াল এপিডিডিমাইটিসে স্থানীয় প্রয়োগে ব্যবহৃত (২ অংশ গুইয়াকল, ৩০ অংশ ভ্যাসেলিন)।

Antidote: Nux vomica

Followed by: Sepia

Compare with: Mercurius, Causticum, Rhus tox, Mezereum, Rhododendron.

অনুপূরক :- পালসেটীলা, মেডোরিনাম, কষ্টিকাম, কলচিকাম, ল্যাককেনিনাম ও টিউবারকুলিনাম।

শক্তি:-
💧 মাত্রা (Dose):
Mother tincture থেকে ষষ্ঠ ঘনত্ব (6th attenuation) পর্যন্ত প্রয়োগ করা হয়।

&&&&&&
রোগলিপিটি সংগ্রহ করা হয় 
ডাক্তার নীলমণি ঘটক এর 
মেটেরিয়া মেডিকা থেকে।

রোগীলিপির সময় কাল :- ১৯২১ সাল ১৬ই মে।
চিকিৎসা সমাপ্ত সময় কাল :- ১৯২৮ সালের জানুয়ারীতে চিকিৎসা সমাপ্ত করি। 

রোগীতত্ত্ব শ্রীযুক্ত বিপিন বিহারী...., একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, কলিকাতা বড়বাজারে নানা কারবারে লিপ্ত ছিলেন এবং প্রভূত অর্থ উপার্জন করিতে সক্ষম হয়েন। 

অর্থের কেবল-যে অভাব ছিল না, তাহা নয়, অজস্র অর্থ দুই হস্তে খরচ করিয়াও তিনি নিঃশেষ করিতে পারেন নাই। 

তাঁহার পিতৃদেব ভয়ঙ্কর চরিত্রহীন' ব্যক্তি ছিলেন এবং তাহার জীবন প্রভাত অর্থাৎ যৌবনের উন্মেষ হইতেই অতি কুৎসিত এবং জঘন্য আনন্দে লিপ্ত থাকিয়া নিজের শরীরটিকে নষ্ট করিয়াছিলেন এবং শেষে প্রচুর রক্ত বমন করিয়া মারা যান।

বিপিন বিহারীর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বিজন বিহারী ২৮ বৎসর বয়সে রাজযক্ষ্মা পীড়ায় ইহলীলা সম্বরণ করেন। 

বিপিনের চরিত্রহীনতার বশে পাপ কার্যে লিপ্ত হইয়া পিতার অনুরূপ আনন্দ উপভোগ করিবার মত শরীর ছিল না, তবুও তিনিও আদৌ ত্রুটি করেন নাই। যাহা হউক, সে বিষয়ের পূর্ণ আলোচনা করিয়া লেখনি কলঙ্কিত করিতে ইচ্ছা করি না এবং বর্তমানে ক্ষেত্রে আবশ্যকও নহে। 

তবে এই পর্যন্ত জানিলেই যথেষ্ট হইবে যে, তিনি পৈতৃক দোষ প্রাপ্তি ব্যতীত নিজের অর্জিত দোষেও একেবারেই জর্জরিত ছিলেন। বিপিনের খুল্লতাত ধানবাদ বাজারের একজন ধনী ব্যবসাদার এবং তিনিও তাঁহার পুত্রগণ সম্পূর্ণ সদাচারী, সচ্চরিত্র এবং ধর্মভীরু ছিলেন এবং এখনও আছেন। ঐ খুল্লতাত যখন দেখিলেন যে, তাঁহার অগ্রজের বংশটি যাইতে বসিয়াছে, তখন তিনি বিপিনকে ধানবাদে লইয়া গিয়া আমার চিকিৎসাধীনে রাখেন এবং আরোগ্যের পূর্বে কলিকাতার বাড়িতে আর আসিতে দেন নাই।

ওখানকার ব্যবসা বিপিনের আর দুইটি কনিষ্ঠ সাহোদরের উপর নির্ভর করিয়া বিপিন ধানবাদে অবস্থান করেন ও আমার নিকট চিকিৎসা চলিতে থাকে। 

১৯২১ সাল ১৬ই মে, তাঁহার লিপি প্রস্তুত করি, নিম্নে তাঁহার লক্ষণলিপি বর্ণনা করিলাম।

নিত্যই সন্ধ্যার দিকে জ্বর, জ্বরতাপ অধিক নয়, তবে অস্বস্তিভাবটি বড় বেশী, বিশেষতঃ প্রতিরাত্রে এত প্রচুর পরিমাণে দুর্গন্ধ ঘর্ম বাহির হয় যে, আমার ভয় হয়। কি প্রকারে বাঁচিতে পারিব। ঘর্মে বরাবরই দুর্গন্ধ ও ঝাঁঝাল গন্ধ বাহির হইয়া থাকে, কিন্তু ৫/৬ মাস হইতে অতিরিক্ত পচাগন্ধ হইতেছে।

শিরঃপীড়া অতিশয় ভীষণ মাথার ভিতর কি যে হয়, বলিতে পারি না, আমার মনে হয় মাথার ভিতরে যেন কতকগুলি পোকা ও ক্রিমি জন্মিয়াছে এবং সেগুলি সদাসর্বদাই বিশেষতঃ রাত্রের দিকে মাথার মধ্যে নড়িয়া বেড়ায়। কত সময় কত প্রকার কি কষ্ট হয়, মনে থাকে না- মনটি যেন ঘোর ঘোর, কি বলি, কি করি- যেন কোনও ঠিক ঠিকানা নাই। চক্ষে জোনাকী পোকার মত প্রায়ই দেখি, বিশেষতঃ সন্ধ্যার পর, নিদ্রার মধ্যে এত ভীষণ স্বপ্ন হয় যে ভয়ে চীৎকার করিয়া উঠিতে হয়। বুকের দুই ধারেই নানা জাতির বেদনা, কিন্তু অনেকেই আমাকে গরম জিনিসের স্বেদ লইবার জন্য উপদেশ দিয়া থাকেন। ফলতঃ আমি তাহা সহ্য করিতে পারি না তাহা ছাড়া শরীরটি বাতে পরিপূর্ণ, কোমরের বাতে সহজে উঠা বসা করা যায় না, গ্রীষ্মের শেষে বর্ষার দিনেই বাতের বেদনা খুব বাড়ে। সে বেদনাতেও গরম লাগাইতে পারি না, অনেকক্ষণ টেপাটেপি করিলে তবে একটু উপশম পাই ও নড়াচড়া করিতে পারি। 
এদিকে আবার ঠান্ডাও সহ্য করিতে পারি না, কেননা শীতকালে প্রায়ই গলায় ব্যথা হয়, 'খক খক' কাশিতে হয় এবং যদি ২/৫ দিনেরও কাশি হয়, তবুও গলা হইতে যে শ্লেষ্মা উঠে, তাহাতে বিশ্রী গন্ধ হয়, গলায় ভীষণ জ্বালা হয় এবং তখন মনটি গলার মধ্যে যেন পড়িয়া থাকে। আমার শরীরটি যেন ঠান্ডাও চায় না এবং গরমও চায় না।

জিজ্ঞাসার দ্বারা যাহা জানিলাম, তাহাতে বিশেষ কোন কাজের কথা না পাইলেও এখানে সন্নিবেশিত করিলাম। কুলজ ইতিহাস ইতিপূর্বেই দিয়াছি। সুতরাং পুনরায় লিখিবার কোনও আবশ্যকতা নাই।

'স্নানের প্রবৃত্তি বড় একটা থাকে না, তাহা হইলে গ্রীষ্মের দিনে স্নান করিতেই হয়, নতুবা নিজের গায়ের গন্ধে নিজেই থাকিতেই পারি না। গ্রীষ্মকালে ঘর্মলক্ষণটি আর ও বৃদ্ধি পায় কোন পার্শ্বে শয়ন করিতে ইচ্ছা, তাহা ঠিক করিতে পারি না। মুখের মধ্যে চটচটে লালা প্রায়ই থাকে। বিশেষতঃ নিদ্রার পর প্রাতঃকালে উঠিবার পর অনেকখানি আঠাল দুর্গন্ধ লালাযুক্ত শ্লেষ্মা বাহির করিয়া ফেলিতে হয়, নতুবা 'গা কেমন কেমন' করিতে থাকে। আমার মনে হয়, নাতিশীতোষ্ণ দিনই আমার পক্ষে কতটা শান্তিদায়ক।

'আমার কোমরের ব্যথা, ঘাড়ের ও স্কন্ধদেশের ব্যথা, জ্বর, অতিরিক্ত ঘর্ম, বিশেষতঃ ঘর্মে এবং অন্যান্য স্রাবেও দুর্গন্ধ- ইহাই আমার শরীরের বিশিষ্টতা, মনের অবস্থা পূর্বেই কহিয়াছি।

উপরোক্ত লক্ষণাদি ও অবস্থা পাইয়া আমি সর্ব প্রথমে সোরিনামই সাব্যস্ত করি এবং ২০০ হইতে ১০০০ শক্তি পর্যন্ত প্রয়োগ করিয়া কোনও ফল না পাইয়া ৩ মাস পরে টিউবারকুলিনাম বোভিনাম ১০০০ শক্তি দিয়াও কোনও উন্নতি বা বৃদ্ধি লক্ষণ প্রাপ্ত হয় নাই। 

২৪শে অক্টোবর, ১৯২১ সালগুয়াইকাম ১০০০ শক্তি প্রয়োগ আরম্ভ করি এবং নভেম্বর মাসের মধ্যেই রোগী অনেক উপশম অনুভব করিয়াছিলেন।

১৯শে, ডিসেম্বর,  ১৯২১ সাল পুনরায় গুয়াইকাম ১০০০ শক্তি আরও একমাত্রা দেওয়া হয়। তাহার ফলে অনেক দিন ধরিয়া উপকার চলিতে থাকে। 

ফলতঃ তখনকার রাজনৈতিক ব্যাপারের ফলে তাঁহারা ব্যবসা বিষয়ে অনেক ক্ষতি ও বিশৃঙ্খলা ঘটায় এবং তাঁহার বহু অর্থ ক্ষয় এবং নানাদিকে নানা বিভ্রাট উপস্থিত হওয়ায়, রোগীকে কিছুদিনের জন্য কলিকাতায় আসিয়া থাকিতে হয় এবং ঔষধও রীতিমত ব্যবহার ত হইলই না, উপরন্তু ঐ সকল গোলোযোগ রোগীর মনের উপরও একটি অহিত প্রভাব বিস্তারিত করিয়াছিল এবং চিকিৎসা একেবারে প্রায়ই বন্ধ হইয়া গেল।

১৯২৩ সালের জুলাই মাসে, পুনরায় ধানবাদে গিয়া চিকিৎসাটি আরম্ভ করিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিলে আমি তখনকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করিয়া পূর্ব রেকর্ডের সহিত মিল করিয়া জানিলাম, রোগীর পূর্বেকার সন্ধ্যার দিকে জ্বরবোধটি ছিল না এবং মনেও অনেকটা আশ্বস্তভাব ফিরিয়াছিল, অধিকন্তু পাছায়, আঙ্গুলি গুলির ফাঁকে এবং উরুদেশে, মোটা মোটা, কাল কাল, চাকা চাকা একজিমা ও খোসে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে, বাকি পূর্বের সমস্ত লক্ষণ ছিল। 

আরও, একটি কথা যাহা আমি রোগীর মুখে জানিলাম তাহা এই যে, 'এখন স্নানাদি করিতে অনিচ্ছা ও অসুবিধা বোধ করিতেছি,' অর্থাৎ শীত বা তাপাদির প্রভাবটি পূর্বাপেক্ষা যেন অনেকটা মন্দীভূত হইয়াছে, ইহাও জানিতে পারিলাম।

১৯২৩ সালের আগস্টের প্রথমেই শুয়াইকাম ১০ এম দেওয়া হয়। ইহার পর হইতে আর উল্লেখজনক ঘটনা কিছুই ঘটে নাই, কেবল ১৯২৪ সালের মার্চের শেষে দেখা গেল যে, রোগীর চর্মপীড়াগুলির জন্য, বিশেষ কষ্ট হইতেছে এবং স্রাবের দুর্গন্ধের জন্যই রোগী যেন অতিষ্ঠ হইয়া উঠিয়াছে, এজন্য সোরিনাম ১০০০ চারটি মাত্রা, পরিবর্তিত শক্তিতে প্রয়োগ করা হয়। ইহার পর গুয়াইকাম, ক্রমে ক্রমে উচ্চতর হইতে উচ্চতম স্তরে, অর্থাৎ সি এম পর্যন্ত প্রয়োগ করিয়া ১৯২৮ সালের জানুয়ারীতে চিকিৎসা সমাপ্ত করি। 
বিপিনবাবুর পত্নীরও চিকিৎসা ১৯২৫ সালের প্রথম হইতে আরম্ভ হয়। ফলতঃ এখানে উহা প্রাসঙ্গিক হইবে না বলিয়া লিখিত হইল না। 




-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ
বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি, 
ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা    
প্রভাষক, 
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ। 

আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।


>Share by:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন