মজার রুব্রিক : ১ MIND-BARKING-other dogs are barking ; when

মজার রুব্রিক : ১ 
MIND-BARKING-other dogs are barking ;  when

চেম্বারে স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে এলেন চিকিৎসার জন্য। এক পর্যায়ে স্বামী জানালেন , স্ত্রী সারাক্ষণ তার শ্বশুর - শাশুড়ির সঙ্গে ঝগড়া করে। ডাক্তার রুগীকে বললেন - সে কেনো এমন করে? রুগীনি উত্তর দিলো, তারাও সারাক্ষণ আমাকে কথা শোনায়। তাই আমিও উচিত কথাটা ছাড় দেই না।
এমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা এই রুব্রিক নিতে পারি। :

MIND-BARKING-other dogs are barking ;  when

রুব্রিকের ব্যাখ্যা (বাংলায়)

এই রুব্রিক মূলত এমন ধরনের মানসিক প্রবৃত্তি বোঝাতে ব্যবহৃত হয় যেখানে—

অন্য কেউ কিছু বললেই বা কিছু শুরু করলেই রোগীও তাতে প্রতিক্রিয়া দেখায়।

নিজের থেকে ঝগড়া বা কোলাহল শুরু নাও করতে পারে, কিন্তু যদি অন্যপক্ষ শুরু করে, তবে সে চুপ করে থাকবে না—সাথে সাথেই জবাব দিয়ে উঠবে।

প্রতিরোধমূলক বা প্রতিবাদী মানসিকতা থাকে।

কথায় কথায় “উচিত জবাব” দেওয়ার প্রবণতা।

ঠিক যেন কুকুর যখন কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে, তখন নিজেও ঘেউ ঘেউ করে ওঠে—

এমন পরিস্থিতিকেই Kent, Boenninghausen প্রমুখ repertory তে MIND – BARKING – other dogs are barking; when রুব্রিক দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে।

দৈনন্দিন উদাহরণ

রোগীনি শ্বশুর-শাশুড়ির কথায় কখনোই চুপ থাকে না।

অফিসে সহকর্মী যদি একটু তিরস্কার করে, রোগী সাথে সাথে তর্ক শুরু করে।

স্বভাবজাত প্রতিক্রিয়াশীল মানসিকতা—কেউ শুরু করলে সেও উত্তর দেবে।

মায়াজমেটিক দিক

এ ধরনের মানসিক প্রতিক্রিয়া সাধারণত সোরিক (Psoric) প্রকৃতির মধ্যে বেশি দেখা যায়।

কারণ Psora-তে মানসিক উত্তেজনা, অল্পতেই প্রতিক্রিয়া, প্রতিবাদী চরিত্র বিদ্যমান।

তবে কারো কারো ক্ষেত্রে সাইকোটিক (Sycotic) দিকও দেখা যায়—অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা ও সঙ্কীর্ণতা থেকে এই আচরণ জন্ম নেয়।

সম্ভাব্য ঔষধ উদাহরণ (রুব্রিক অনুসারে)

এ রুব্রিকে যেসব ওষুধ প্রধানত আসে, সেগুলো হলো:

1. Anacardium orientale – সবসময় জবাব দিতে চায়, প্রতিহিংসাপরায়ণ।

2. Nux vomica – উত্তেজিত, ঝগড়াটে, সামান্য বিরক্তিতেই তর্ক শুরু করে।

3. Lachesis – কারো কথায় কখনো চুপ থাকে না, নিজের মত চাপিয়ে দিতে চায়।

4. Capsicum – সামান্য উস্কানিতেই প্রতিবাদ, জেদী, অল্পতেই ঘরে-বাইরে ঝগড়া বাধায়।

5. Sulphur – আত্মগর্বী, সবকিছুর জবাব দিতে চায়, অন্যায় সহ্য করে না।

ক্লিনিক্যাল প্রয়োগ :

চেম্বারে যখন রোগী বা রোগিণীর স্বভাব লক্ষ্য করবেন—

সে কি নিজের থেকে ঝগড়া বাঁধায়? নাকি অন্যের কথায় প্রতিক্রিয়া দেয়?

যদি দেখা যায়, “অন্য কেউ শুরু করলেই রোগী চুপ থাকে না, সাথে সাথেই জবাব দেয়”, তখন এই রুব্রিক প্রযোজ্য।

---

 সারসংক্ষেপ:

MIND – BARKING – other dogs are barking; when রুব্রিক এমন মানসিক প্রবণতাকে বোঝায় যেখানে রোগী চুপ করে থাকতে পারে না—অন্য কেউ কিছু বললেই সেও পাল্টা জবাব দেয়। হোমিওপ্যাথিক প্র্যাকটিসে এ ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করলে যথাযথ ওষুধ নির্বাচন করতে এই রুব্রিক ব্যবহার করা হয়।

আরো গভীর আলোচনা :

MIND – BARKING – other dogs are barking; when রুব্রিকের মধ্যে আসলেই কুকুরের (Dog) কিছু মৌলিক স্বভাবকে মানুষের মানসিকতার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

কুকুরের যে যে স্বভাব এই রুব্রিকে প্রতিফলিত হয়, সেগুলো মানুষের মধ্যেও মানসিক আকারে দেখা যায়ঃ

কুকুরের স্বভাব বনাম মানুষের মানসিক রূপ

1. অন্যের ডাক শুনলেই প্রতিক্রিয়া (Reactive nature).

কুকুর অন্য কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে নিজেও ঘেউ ঘেউ শুরু করে।

মানুষের ক্ষেত্রে—অন্য কেউ কিছু বললেই চুপ করে থাকতে পারে না, সাথে সাথেই প্রতিবাদ বা তর্ক শুরু করে।

2. দলগত প্রভাব (Group influence)

কুকুর একা থাকলে হয়তো চুপচাপ থাকে, কিন্তু একসাথে থাকলে একজন শুরু করলে বাকিরাও ঘেউ ঘেউ করে।

মানুষের ক্ষেত্রেও—পরিবারে, অফিসে, আড্ডায়—একজন কথা তুললেই অন্যরা সাথে যোগ দেয়।

3. আত্মরক্ষামূলক প্রবৃত্তি (Defensive attitude)

কুকুর মনে করে অন্য কুকুরের ঘেউ ঘেউ মানে হুমকি, তাই সেও নিজের অবস্থান জানাতে চিৎকার করে।

মানুষের ক্ষেত্রেও—অন্যের কথায় নিজেকে আক্রান্ত মনে হয়, তাই তর্ক করে নিজের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করে।

4. অযথা প্রতিযোগিতা (Unnecessary competition)

কুকুর মাঝে মাঝে শুধু “আমি আছি” বোঝাতে ঘেউ ঘেউ করে, আসলে তেমন কোনো বিপদ নেই।

মানুষের ক্ষেত্রেও দেখা যায়—কথা না বললেই নয়, তাই জবাব দেয়, যদিও বিষয়টা তুচ্ছ।

5. সংবেদনশীলতা ও সহজে উত্তেজিত হওয়া (Irritability & Sensitivity)

কুকুর ছোট্ট আওয়াজেও সজাগ হয়ে ঘেউ ঘেউ করে ওঠে।

মানুষের মধ্যেও অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা থাকে, সামান্য মন্তব্যকেও বড় করে নেয়।

6. অন্যকে ছাড় না দেওয়া (Not yielding)

কুকুর ঘেউ ঘেউ শুরু করলে সহজে থামে না যতক্ষণ না অন্য কুকুর থামে।

মানুষের ক্ষেত্রেও—তর্ক শুরু করলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছাড়ে না।

---

মানুষের ভেতরে এই স্বভাব কেমনভাবে ধরা পড়ে?

বউ-শ্বশুরবাড়ি ঝগড়া: “তারা যদি আমাকে কিছু বলে, আমিও ছাড় দেই না।”

অফিস সহকর্মী: “বস যদি আমাকে ছোট করে, আমিও তার ভুলগুলো ধরে ফেলি।”

আড্ডা বা সংসার: কথায় কথায় জবাব দেওয়া, কখনোই পিছিয়ে না আসা।

⚖️ সারসংক্ষেপ

এই রুব্রিকে কুকুরের যে আসল স্বভাব মানুষের মধ্যে প্রতিফলিত হয় তা হলো—

প্রতিক্রিয়াশীলতা, দলগত প্রভাব, আত্মরক্ষা, প্রতিযোগিতা, অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা এবং না ছাড়ার মানসিকতা।

এখন আমরা দেখব, এই রুব্রিক MIND – BARKING – other dogs are barking; when এর সাথে কুকুরের স্বভাব অনুযায়ী মানুষের মধ্যে প্রতিফলিত মানসিক প্রবণতার মিল পাওয়া যায় এমন কিছু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ।

কুকুর-সদৃশ মানসিকতা বহনকারী হোমিও ঔষধসমূহ

১. Anacardium orientale

সবসময় প্রতিক্রিয়া দেখায়, সহজে চুপ থাকতে পারে না।

প্রতিশোধপরায়ণ, ঝগড়ায় ছাড় দেয় না।

একরকম “যেমনটি পেলাম, তেমনটি ফিরিয়ে দেব” মানসিকতা।

২. Nux vomica

তীক্ষ্ণ মেজাজ, খুব সংবেদনশীল।

সামান্য কথা শুনেই প্রচণ্ড রেগে যায়।

অন্য কেউ শুরু করলে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয়।

অফিস/বাসায় প্রায়শই ঝগড়া বাঁধায়।

৩. Lachesis muta

সবসময় কথার মধ্যে ঢোকে, কারো কথা শেষ হতে দেয় না।

অন্যের কথার জবাব না দিয়ে থাকতে পারে না।

সন্দেহপ্রবণ ও জেদী, কাউকে ছাড় দেয় না।

৪. Capsicum annuum

সামান্য উস্কানিতেই ঝগড়া শুরু করে।

কথা শুনে চুপ থাকতে পারে না, সাথে সাথে পাল্টা জবাব দেয়।

সহজে শান্ত হয় না, প্রতিহিংসার মনোভাবও থাকে।

৫. Sulphur

আত্মগর্বী, সবকিছুতে নিজের মতামত চাপিয়ে দিতে চায়।

অন্যের কথার জবাব দেওয়া তার কাছে একধরনের “বুদ্ধি দেখানো”।

বিতর্কপ্রিয় স্বভাব।


৬. Hyoscyamus niger

বেহুদা কথা বলে, উসকানিতে প্রতিক্রিয়া দেখায়।

প্ররোচনায় তাড়াহুড়ো করে উত্তর দেয়, অনেক সময় অশ্লীলতাও যোগ হয়।

৭. Stramonium

ভয় বা উত্তেজনায় হঠাৎ করে প্রতিক্রিয়া দেয়।

কখনো চিৎকার-চেঁচামেচি করে, যেন কুকুরের আচরণ।

ভয় পেলে বা হুমকি মনে করলে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে।


 এই মানসিকতার মূল বৈশিষ্ট্য

অন্যের উত্তেজনা/ঝগড়া/প্রতিক্রিয়ায় নিজেও সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখানো।

নিজের থেকে না শুরু করলেও অন্যো শুরু করলে চুপ করে থাকতে পারে না।

এটি কুকুরের “ঘেউ ঘেউ-এর প্রতিঘেউ” স্বভাবের সঙ্গে একেবারে মিলে যায়।

 সংক্ষেপে:

যেসব ওষুধ রোগীকে অন্যের কথায়/উস্কানিতে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখাতে, না ছাড়তে ও প্রতিবাদ করতে প্ররোচিত করে, সেগুলোর মধ্যে প্রধান হলো—

Anacardium, Nux vomica, Lachesis, Capsicum, Sulphur, Hyoscyamus, Stramonium।


-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ
বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি, 
ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা    
প্রভাষক, 
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ। 

আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।

>Share by:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন