রোগীলিপি গ্রহণের পরবর্তী সময়ে করণীয় - লক্ষণ সমষ্টি নির্ধারণ এবং ওষুধ নির্বাচন

লক্ষণ সমষ্টি নির্ধারণ এবং ওষুধ নির্বাচন

রোগের বিবরণ (Case Record) বিস্তারিত ভাবে লেখার পর আমরা হ্যানিম্যান অর্গানন অফ মেডিসিন গৃহীত তথ্য ও সূত্র অবলম্বন করে ঔষধ নির্বাচনের মূল লক্ষ্যের দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হই-


  • লক্ষণের বিশ্লেষণ 

  • শ্রেণীবিভাজন

  • লক্ষণের মূল্যায়ন


প্রভৃতির মাধ্যমে পরিচালক লক্ষণগুলিকে বাছাই করে নিয়ে আমরা 


  • লক্ষণ সমষ্টি নির্ধারণ করি, এবং


হোমিওপ্যাথির সদৃশ  নীতির সাহায্য ঔষধ নির্বাচন করি।


ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটিকে আমরা (০৮)আটটি পর্যায়ে ভাগ করে নিতে পারি। 


প্রথম পর্যায়ে 


বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ সংগ্রহ 


১ম-  রোগী লিপিটি অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে আগাগোড়া বেশ কয়েকবার পড়ে নেই।    


২য়-  রোগীলিপিতে যে লক্ষণ গুলি রোগী ও রোগের বৈশিষ্ট্য  নির্দেশ করে সেই গুলির নিচে রঙ্গিন কালীর কলম ব্যবহার করে দাগ  দেই।


 ৩য়-  দাগ দেওয়া লক্ষণগুলোর প্রকৃত সূর বা ব্যঞ্জন বোঝার চেষ্টা করতে হইবে, প্রয়োজন বোধে সেই  লক্ষণগুলো নিয়ে রোগীকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।  


৪র্থ-  লক্ষণ গুলি বোঝার পর প্রতিটি লক্ষণকে মেটেরিয়া মেডিকা ভাষায় রূপান্তরিত করতে হবে। 


আসুন একটি  উদাহরণ  দিয়ে আপনাদের বুঝিয়ে দেই 


একজন ভদ্রলোক বললেন, - তিনি শুধু তার পা দুটি টেবিলের উপর উঁচু করে রেখে বসতে পারে অন্য কোন ভাবে বসলে তার কষ্ট বাড়ে।


মেটেরিয়া মেডিকার ভাষায় রূপান্তর করলে লক্ষণটি দাঁড়ায় ”পা ঝুলিয়ে রাখলে বৃদ্ধি ""


রেপারেটরির ভাষায়,


Comlete [ Extremities [ Pain lower limb, sitting, Down, agg --(20)


রোগীর এই কথাটি কিন্তু প্রকৃত গুরুত্ব/ Philosophy উপলব্ধি করতে গেলে - আমাদের আরেকটু অনুসন্ধানী হতে হবে।


দেখলাম, রোগী বৃদ্ধ, হয়তো তার প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বেড়ে গেছে ।

এতে প্রায় ব্যথা হয়, খুব ব্যথা হয়, এবং ক্ষতবোধ হয়, তখন ওখানে  হাতে ছোঁয়া পর্যন্ত যায় না।


এখন আরো স্পষ্ট হইল যে, রোগীর প্রোস্টেট স্ফীত, স্পর্শকাতর, যেহেতু চাপে বৃদ্ধি হয় সেহেতু রোগী তার পা দুটি উপরের দিকে রাখেন এবং তাতে উপসম বোধ করেন।


ফলাফল : এটি একটি" সাধারণ লক্ষণ"।

  ঔষধ নির্বাচনে আদৌ গুরুত্ব পূর্ণ নয়।


কিন্তু এটা যদি অস্থিবেস্ট ঝিল্লি প্রদাহের ঘটনা হতো এবং রোগী যদি পা নিচের দিকে ঝুলিয়ে রাখলে আরাম বোধ করতেন তবে আমাদের একটু থামতে হত, ভাবতে হবে।


ধরা যাক৷ -- রোগি আড়াআড়ি ভাবে উপুর হয়ে খাটের পাশে পা ঝুলিয়ে শুয়ে আছে। এতে তার ব্যথার উপশম হয়। চিৎ হয়ে  শুইতে পারে না, এর কারণ কি? বুঝিতে এর ব্যাখ্যা মেলে না।



সেই জন্য একটা অদ্ভুত ও অসাধারণ লক্ষণ এর মূল্য খুব  বেশি ।


বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ  আমরা জানি কোনিয়াম মেডিসিনের সেই অবস্থা সৃষ্টি করার ক্ষমতা আছে।


 দ্বিতীয় পর্যায়ে


"" বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী লক্ষণ পরপর লেখা'"


অর্থাৎ কেইস রেকর্ড রঙিন কালের আন্ডারলাইন করা লক্ষণগুলো একটি খালি পাতায় আবার নতুন করে পরপর লিখে নেই। এবং পাতাটি মূল কেইস রেকর্ডের সাথে সংযুক্ত করে রাখি।


 তৃতীয় পর্যায়ে :


 ""লক্ষণের শ্রেণীবিভাগ""


 দ্বিতীয় পর্যায়ে এর কাজ করা পাতার লক্ষণগুলোকে


  • সার্বদাহিক

  • দৈহিক ব্যাপক

  • সর্ব মানসিক

  • আঙ্গিক লক্ষণের

লক্ষণের শ্রেণীতে ভাগ করে আরেকটি পাতা লিখে নেই।

 

চতুর্থ পর্যায় :


""তৃতীয় পর্যায়ে কাজ করার পর - সেখান থেকে""


  • অদ্ভুত

  • অসাধারণ

  • বিরল লক্ষণ

  • দৃষ্টি আকর্ষণ


লক্ষণ পৃথক করণ করে আলাদা করে একটা পেজে লিখে নিতে হবে।



 পঞ্চম পর্যায় :


 "রোগীর নিজস্বতার বিচারে লক্ষণ বাছাই"


 দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পর্যায়ে থেকে এমন লক্ষণ সমূহ বাছাই করে নিতে হবে, যার দ্বারা রোগের যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায়।  অন্যথা রোগীর যথার্থ পরিচয় লক্ষণ গুলো একান্ত ভাবেই রোগীর নিজস্ব লক্ষণ ( ব্যক্তি স্বাতন্ত্র লক্ষণ)। এগুলো আলাদা পেজে লিখে নিতে হবে।


 ষষ্ঠ পর্যায় :


" লক্ষণ সুদৃশ্য  মেটেরিয়া মেডিকা থেকে ঔষধ  খোজা "


 দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, কাজ করা পেজ এ লিখিত লক্ষণ সমূহ  "হোমিওপ্যাথিক মেটেরিয়া মেডিকা" থেকে খুঁজে বের করতে হবে। কোন কোন ঔষধে এ এইসব লক্ষণ বর্তমান।


 সপ্তম পর্যায় :


"ঔষধ এর সংখ্যা অধিক হলে তা থেকে ওষুধ বাছাই"


 বাছাইকৃত ঔষধের সংখ্যা বেশি হয় - তবে ঔষধের সংখ্যা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার জন্য আমাদের বাছাই বা পরিহার্য লক্ষণের সাহায্য নিতে হবে।


 বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ  বাছাই বা পরিহার্য লক্ষণ বলতে এমন লক্ষণ বোঝায় যা ছাড়া রোগীকে ভাবাই যায় না। যা অনেক  ঔষধে আছে বা নাই। এই রকম একটি Elimation Symptom হল # রোগীর কাতরতা, # গরম কাতর, নাকি শীত কাতর।


এখন রোগী যদি গরম কাতর হয়, তাহলে শীত কাতর ঔষধ গুলো বাদ দিতে পারি।


আমরা আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোগী থেকে ২ - ৩ টি "বাছাই লক্ষণ" ভালোভাবে জিজ্ঞাসা করে নিতে পারি। যেমন, # পিপাসার আধিক্য বা # পিপাসা হীনতা।


অষ্টম পর্যায় :


"সদৃশ ঔষধ নির্বাচন"


সপ্তম পর্যায়ে থেকে বাছাইকৃত সদৃশ ওষুধটি আরও সাদৃশ করার জন্য মেটেরিয়া মেডিকা বই থেকে ঔষধ ভালোভাবে পড়ে নিয়ে রোগীকে আরো কিছু লক্ষণের সাথে সততা যাচাই করে নিয়ে রোগীকে সদৃৃশ একটি একক ঔষধ সেবনের জন্য দিতে হবে।


এইভাবে => রোগী তৈরি এবং তা থেকে => লক্ষণ সমষ্টি নির্ধারণ ও => ওষুধ নির্বাচন প্রথম প্রথম একটু কঠিন মনে হলেও কিছুদিন নিষ্ঠার সঙ্গে অনুশীলন করলে => কাজটি নিশ্চিত অনেক সহজ ও আনন্দদায়ক হয়ে উঠবে। ইনশাল্লাহ।



-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ
বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি, 
ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা    
প্রভাষক, 
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ। 

আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।


>Share by:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন