১২, ২৪, ৩৬ ও ৪৮ ঘন্টা না খেয়ে থাকার শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ও উপকারিতা।
১২ ঘন্টা না খেয়ে থাকা:
প্রাথমিক ফাস্টিং স্টেজ।
১. শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন:
গ্লাইকোজেন ব্যবহৃত হয়:
প্রথম ১২ ঘন্টায়, শরীরের প্রধান শক্তি উৎস হলো লিভারে সঞ্চিত গ্লাইকোজেন।লিভারে প্রায় ১০০-১২০ গ্রাম গ্লাইকোজেন থাকে।এই গ্লাইকোজেন ভেঙে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয় এবং তা রক্তে মিশে শক্তি সরবরাহ করে।
ইনসুলিনের মাত্রা কমে:
খাওয়া বন্ধ করার প্রায় ৩-৪ ঘন্টা পর থেকে ইনসুলিনের স্তর কমতে শুরু করে।এতে শরীর ধীরে ধীরে ফ্যাট বার্নিং মোডে প্রবেশ করে।
উপকারিতা:
শরীরের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ: ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
হজম প্রক্রিয়ার বিশ্রাম: হজম প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে, ফলে অন্ত্রের কোষগুলো নিজেকে মেরামত করার সময় পায়।
অটোফ্যাগির সূচনা:
কোষগুলো নিজ নিজ বর্জ্য অপসারণ প্রক্রিয়া শুরু করে।
![]() |
২৪ ঘন্টা না খেয়ে থাকা:
গ্লাইকোজেন নিঃশেষিত হওয়া ও কিটোসিসের সূচনা ।
১. শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন:
গ্লাইকোজেন শেষ হয়:
২৪ ঘন্টা পর লিভারের সমস্ত গ্লাইকোজেন শেষ হয়ে যায়।
এখন শরীর শক্তির জন্য ফ্যাট টিস্যু ভাঙতে শুরু করে।
লিপোলাইসিস প্রক্রিয়া:
চর্বি (Triglycerides) ভেঙে ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারল তৈরি হয়।
ফ্যাটি অ্যাসিড থেকে লিভারে কিটোন উৎপন্ন হয়।
গ্লুকোনিওজেনেসিস:
লিভার এখন আমিনো অ্যাসিড ও ল্যাকটেট থেকে গ্লুকোজ তৈরি করে।
এটি মস্তিষ্ক ও লোহিত কণিকার জন্য শক্তি সরবরাহ করে।
উপকারিতা:
ফ্যাট বার্নিং শুরু: শরীর সঞ্চিত চর্বি ব্যবহার শুরু করে।
কিটোন উৎপন্ন হওয়া: মস্তিষ্ক কিটোনকে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে।
কোষীয় পুনর্গঠন: অটোফ্যাগি আরও শক্তিশালী হয়।
প্রদাহ কমানো: প্রদাহজনিত উপাদানগুলো কমতে থাকে।
৩৬ ঘন্টা না খেয়ে থাকা:
গভীর কিটোসিস ও কোষ পুনর্গঠন
১. শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন:
কিটোসিসের গভীরতা বৃদ্ধি:
কিটোনের স্তর ১.৫-৩.০ mmol/L এ পৌঁছায়।
শরীরের প্রায় ৭৫% শক্তি এখন কিটোন থেকে আসে।
লিউকোসাইট রিসাইক্লিং:
শরীর পুরনো, ক্ষতিগ্রস্ত ও নিষ্ক্রিয় সাদা রক্তকণিকাগুলোকে পুনঃব্যবহার করে।
নতুন সাদা রক্তকণিকা উৎপন্ন হয়।
অটোফ্যাগির সর্বোচ্চ বিন্দু:
কোষগুলোতে জমে থাকা ক্ষতিকর প্রোটিন ও মিটোকন্ড্রিয়া অপসারণ হয়।
উপকারিতা:
ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ: ক্যান্সার কোষগুলোর গ্লুকোজ নির্ভরতা থাকায়, কিটোসিসে তারা দুর্বল হয়ে পড়ে।
ইমিউন সিস্টেম পুনর্গঠন: নতুন ইমিউন কোষ উৎপন্ন হয়।
মানসিক স্বচ্ছতা: কিটোন মস্তিষ্কের নিউরনগুলোকে শক্তি সরবরাহ করে, ফলে কগনিটিভ ফাংশন উন্নত হয়।
৪৮ ঘন্টা না খেয়ে থাকা:
সর্বোচ্চ কিটোসিস ও গ্রোথ হরমোনের বিস্ফোরণ
১. শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন:
গ্রোথ হরমোন বৃদ্ধি:
৪৮ ঘন্টা পর গ্রোথ হরমোনের মাত্রা ৩-৫ গুণ বৃদ্ধি পায়।
এটি পেশি রক্ষণাবেক্ষণ ও চর্বি পোড়াতে সহায়ক।
ইনসুলিনের স্তর অত্যন্ত কম:
এটি ফ্যাট বার্নিংকে ত্বরান্বিত করে।
মেটাবলিজমে কিটোনের ব্যবহার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে।
অটোফ্যাগির পরিপূর্ণতা:
মিউট্যান্ট কোষ ও ড্যামেজড প্রোটিন অপসারণ হয়।
উপকারিতা:
কোষ মেরামত ও পুনঃগঠন: ক্যান্সার কোষ ধ্বংস হতে শুরু করে।
ডায়াবেটিস ঝুঁকি হ্রাস: ইনসুলিন সংবেদনশীলতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে।
ব্রেন ডেরাইভড নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (BDNF) বৃদ্ধি: স্মৃতি ও শিক্ষণ ক্ষমতা বাড়ে।
সতর্কতা:
৪৮ ঘন্টা বা তার বেশি সময় না খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা কিডনি সমস্যায় ভুগলে ফাস্টিং এড়ানো উচিত।
ফাস্টিং চলাকালে পর্যাপ্ত পানি, লবণ ও ইলেক্ট্রোলাইট গ্রহণ করা জরুরি।
দীর্ঘস্থায়ী ফাস্টিংয়ের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ
বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি,
ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা
প্রভাষক,
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ।
আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।
>Share by:
Make a comments as guest/by name or from your facebook:
Make a comment by facebook: