ঔষধ নির্বাচন বিদ্যা রোগীলিপি সহ, ডাঃ পরেশ সরকারের বই থেকে নেয়া।

রোগলিপি # ১
Pyelo-nephritis (পাইলোনেফ্রাইটিস)

রোগিবিবরণীটি ডাঃ জর্জ ডি কেলারের। 
(ডাঃ জর্জ ডি কেলার (Dr. Georg von Keller) ছিলেন একজন প্রখ্যাত জার্মান হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, যিনি ১৯১৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।)

নবছরের ফর্সা, চঞ্চল, বুদ্ধিমতী মেয়ে। 
গত সাত বছর যাবৎ মৃত্রযন্ত্রের সংক্রমণজাতরোগে বারবার ভুগছে। 
তার পাইলোনেফ্রাইটিস (pyelo-nephritis) হয়েছে। 
আক্রমণের সময় বাঁ বৃক্কে ব্যথা হয়। সেখানে চাপ দিলে ব্যথা দারুণ বেড়ে যায়। এছাড়া খুব জ্বর এবং বারবার প্রস্রাবের বেগ ও মূত্রনালীতে জ্বালা হয়। 
নানারকম চিকিৎসাতেও কিছুমাত্র উপকার হয়নি। 
পরে মেয়ের মা জানায়, প্রস্রাব শেষ হলেও মেয়ে প্রস্রাবাগার ছেড়ে আসতে পারে না কারণ পরক্ষণেই আবার ভয়ানক যন্ত্রণাদায়ক প্রস্রাবের বেগ আসে। প্রস্রাবের পর মূত্রনালীতে এত জ্বালা হয় যে মেয়েটিকে গরম হিটারের ওপর বসতে হয়।

এখানে পরিচায়কলক্ষণ হলো: 
(১) বাঁ বৃদ্ধ আক্রান্ত, 
(২) বারবার প্রস্রাবের বেগ ও প্রস্রাবের পরক্ষণেই আবার নতুন করে যাতনাদায়ক তীব্র বেগ ও
(৩) প্রস্রাবের পর মূত্রনালীতে ভয়ানক জ্বালা। সেই জ্বালা উত্তাপে কমে।

লক্ষণ নিশ্চিতভাবে গুয়েয়িকাম ঔষয়টিকে নির্দেশ করে। 
গুয়েয়িকাম এই ছোট্ট মেয়েটির প্রাণচাঞ্চল্য আবার ফিরিয়ে দেয়। আমাদের মেটিরিয়া মেডিকায় যে কত অমূল্যরত্ন রয়েছে এই রোগিবিবরণীটি তার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
-------

Pyelonephritis (পাইলোনেফ্রাইটিস) হলে কিডনির ক্রিয়েটিন লেভেল সাধারণত রোগের তীব্রতা ও কিডনির পূর্ববর্তী অবস্থার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। সাধারণভাবে:

হালকা বা অপরিকল্পিত (uncomplicated) পাইলোনেফ্রাইটিসে:
কিডনির কার্যকারিতা খুব বেশি প্রভাবিত না হলে ক্রিয়েটিন লেভেল সাধারণ অবস্থায় (0.6 – 1.3 mg/dL) থাকতে পারে।

তীব্র (acute severe) বা জটিল (complicated) পাইলোনেফ্রাইটিসে:
কিডনিতে ইনফ্লামেশন ও ফাংশনাল ডিস্টার্ব্যান্স হলে ক্রিয়েটিন লেভেল বেড়ে যেতে পারে – সাধারণত 1.5 mg/dL বা তার বেশি।

দীর্ঘমেয়াদি বা বারবার হলে (chronic pyelonephritis):
কিডনিতে স্থায়ী ক্ষতি হলে ক্রিয়েটিন লেভেল অনেক বেড়ে যায় (2 mg/dL, 3 mg/dL বা তার বেশি), যা কিডনি ফেইলিউরের ইঙ্গিত হতে পারে।


রোগলিপি # ২

একজন কারারক্ষী। 
তাঁর প্রস্রাবের খুব কষ্ট ছিল। 
বারবার প্রস্রাবের বেগ হতো। 
কিন্তু প্রতিবারে কয়েকফোঁটামাত্র প্রস্রাব হতো। 
অসাড়ে প্রস্রাব হয়ে কাপড়ে লাগলে সেখানে হলদে দাগ পড়ত।

কারন : বিকালের দিকে এবং ঠাণ্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়া দেখা দিছেছ এবং  ঠাণ্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়ায় বাড়ত। 

বাঁ বৃক্ক ও বাঁ কুঁচকিতে ব্যথা হতো। 
হাঁটাচলা করলে বা গরম আবহাওয়ায় কম থাকতো। 
রোগীর অন্যান্য লক্ষণ হলো: 
সহজেই ঘাম হয়, প্রায়ই সর্দিকাশি লাগে এবং 
সর্দিকাশি হলে গলায় ক্ষতবোধ ও বেদনা। 
রোগী মিষ্টি একদম পছন্দ করে না।

লক্ষণসমষ্টি নিঃসন্দেহে ডালকামরা নির্দেশ করে। ডালকামরাই একে আরোগ্য করে।

নোট : Dulcamara ওষুধটি ডালকামরা (প্রস্রাব আটকে যাওয়া)–এই অবস্থায় দেওয়া যেতে পারে যদি লক্ষণগুলো ঠান্ডা বা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় শুরু হয় বা বেড়ে যায়।




রোগলিপি (৩)

এক কিশোরের ঠান্ডা লেগে বাতজ্বর (Rheumatic Fever)  হয়েছে।
সমস্ত শরীরে অসহ্য ব্যথা। 
উচ্চ গাত্রোত্তাপ (রাত্রের দিকে তাপমাত্রা বাড়ে।) 
প্রচুর ঘাম হয়। (তাতে উপশম না হওয়া)
মনে হয় জ্বর ছেড়ে যাবে কিন্তু ছাড়ে না; 
ঘাম যত বেশি হয় গাত্রোত্তাপ ও ব্যথা তত বাড়ে। 
ঘামের গন্ধ দুর্গন্ধযুক্ত। 
বিছানার গরমে ব্যথার কষ্ট বাড়ে - তাই গায়ের ঢাকা ফেলে দেয়। 
এতে সাময়িক আরাম পায়। 
কিন্তু শরীর ঠাণ্ডা হওয়ামাত্র আবার ঐ ব্যথা তীব্র হয়। তখন আবার ঢাকা নেয়। 
এভাবে সারারাত্রি চলে। 
সকালের দিকে কিছুটা উপশম বোধ করে।

এখানে পরিচায়ক লক্ষণ হলো: 
রাতে বৃদ্ধি, 
ঠাণ্ডা ও গরমে বৃদ্ধি, 
প্রচুর ঘাম এবং তাতে উপশম না হওয়া। 

মার্কিউরিয়াস সল
একে শীঘ্রই রোগমুক্ত করে।

মার্কিউরিয়াস সল- এর প্রোফাইল ও উপযুক্ততা:

Mercurius solubilis মূলত সে অবস্থায় কার্যকর যেখানে শরীরে টক্সিন ছড়িয়ে পড়ছে এবং তাপমাত্রা, ঘাম ও ব্যথা অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করছে।

মার্কিউরিয়াস সল-এর প্রধান লক্ষণসমষ্টি:

1. উচ্চ তাপমাত্রা, রাত্রে বৃদ্ধি পায় – Merc. sol.-এ জ্বর সাধারণত রাত্রে বাড়ে।

2. প্রচুর ঘাম, তবু উপশম হয় না – ঘাম রোগীর তাপমাত্রা কমায় না বরং অস্বস্তি বাড়ায়।

3. ঘামে দুর্গন্ধ – এটি Merc. sol.-এর গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।

4. গরমে ও ঠান্ডায় উভয়েই অস্বস্তি হয় – রোগী গরম সইতে পারে না, আবার ঠান্ডা লাগলে ব্যথা বাড়ে।

5. শরীরের গভীর জয়েন্ট ও মাংসপেশিতে ব্যথা – Merc. sol. rheumatic ব্যথায় কার্যকর।

6. রাত্রে অধিক কষ্ট – Merc. রোগীরা সাধারণত রাতেই বেশি ভোগে।

7. সারারাত ঢাকনা দেওয়া ও খুলে ফেলা চলে – গরমে ও ঠান্ডায় অস্থিরতা দেখা দেয়, ক্লাসিক Merc. চিত্র।


রোগলিপি (8)

জার্মানিতে একবার হুপিং কাশি মহামারী আকারে দেখা দেয়। 
তখন এরোগে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীর লক্ষণ ছিল: 
শুকনো কষ্টকর ও আক্ষেপিক কাশি, 
কাশতে কাশতে দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম, 
বমি, বমিতে রক্তমিশ্রিত শ্লেষ্মা, 
নাক দিয়েও রক্ত পড়ে, 
মুখচোখ রক্তিমবর্ণ এবং
 জ্বর 
নিচে ও চোখের পাতার ওপরের অংশ থলের মতো ফুলে ওঠে।

বোনিংহাউসেন এই লক্ষণসমষ্টির ভিত্তিতে কেলি কার্ব  (Kali Carb) নির্বাচন করেন। 
এতে বহু রোগীকে তিনি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তোলেন।



রোগলিপি (৫)

এক মহিলা, বয়স ২০। 
দীর্ঘকাল মাথাব্যথায় ভুগে ভুগে হতাশ হয়ে পড়েছে, দেখা দিয়েছে স্নায়ুদৌর্বল্য। 
সে এক বধির মহিলার সঙ্গী হিসাবে কাজ করে।
সেই মহিলা অতি উচ্চস্বরে কথা বলতো। 
একেও তার সঙ্গে খুব জোরেই কথা বলতে হতো। এতে তার স্বরযন্ত্রের ওপর খুব চাপ পড়তো। ফলে তার মাথায় ব্যথা হয়। 
কপালের দুপাশে অত্যন্ত ব্যথা। মাথা খুব জোরে জোরে নাড়ালে কমে। 
কোন কাজে বাইরে বেরোলেই প্রচণ্ড চাপবোধ হয়। 
কেবল ঢেকুর উঠলে কিছুটা কমে। 
সহজেই ঠাণ্ডা লাগে। 
কোষ্ঠকাঠিন্য। 
প্রতি পনেরদিন অন্তর ঋতুস্রাব দেখা দেয়। তখন প্রচণ্ড কোমরবেদনা ও অবসাদবোধ হয়।

এখানে পরিচায়ক লক্ষণ হলো: 
(১) স্বরযন্ত্রের ওপর অত্যধিক চাপ ও সেজন্য মাথাব্যথা, মাথা জোরে নাড়ালে ব্যথার উপশম; 
(২) বাইরে বেরোলেই বুকে প্রচণ্ড চাপবোধ, ঢেকুর উঠলে উপশম; 
(৩) ঋতুস্রাব প্রতি পনের দিন অন্তর হয়, সঙ্গে কোমরবেদনা ও অবসাদ; 
(৪) হতাশা ও স্নায়ুদৌর্বল্য।

লক্ষণসমষ্টি নিশ্চিতভাবে ক্যাল্কেরিয়া কার্ব নির্দেশ করে।
 আলেকজান্ডার ভিলার্স ক্যাল্কেরিয়া কার্ব দিয়ে এই ভদ্রমহিলাকে সম্পূর্ণ আরোগ্য করেন।





রোগলিপি (৬) 

এক তরুণী, বয়স ১৮। হাঁপানিতে অত্যন্ত কষ্ট পাচ্ছে।  গত তিন বছর যাবৎ হাঁপানি চলছে। শীতকালে লেবুর রস খাওয়ার পর থেকে শুরু হয়। প্রথমে দুতিন মাস অন্তর হতো, দুতিন দিন থাকতো। গত তিন মাস যাবৎ রোজই হয়।

ফর্সা, সুন্দর চেহারা। হাঁপানির জন্য লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

বর্তমান উপসর্গ: 
(১) প্রায়ই ঠাণ্ডা লাগে, ঠাণ্ডা লাগলেই সর্দি হয়।
প্রচুর সর্দি ঝরে, অনবরত হাঁচি হয়। তিনচার দিন এরকম থাকার পর সর্দি শুকিয়ে গিয়ে হাঁপানির মতো টান হয়। 
প্রচণ্ড কাশি। কাশতে কাশতে ঘন হলদে শ্লেষ্মার ডেলা বেরোয়। তখন কাশি কমে। 
দমবন্ধকর কাশি। দিনরাত সব সময়েই হয়।
তবে রাতে বেশি।
শ্বাস নিতে কষ্ট বেশি, ছাড়তে কষ্ট কম। হাঁপানির সময় শুয়ে থাকলে দমবন্ধভাব হয়। তখন উঠে বসে থাকতে হয়। 
বুকের মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ। 
হাঁপানির টান শুরু হওয়ার আগে শীতশীতবোধ। 
প্রত্যেকবারই আগে সর্দি পরে হাঁপানি হয়। শীতকালে বেশি, গ্রীষ্মকালে কম। 
সকালে বেশি। 
ঋতুর সময় কষ্ট বাড়ে। 
অমাবস্যাতেও বাড়ে।

(২) প্রায়ই টনসিল ফোলে, গলায় ব্যথা হয়।
(৩) সারা দেহে প্রায়ই ব্যথা হয়, গা টিপে দিলে আরাম লাগে। অমাবস্যাপূর্ণিমায় ব্যথা বাড়ে।

সার্বদৈহিক লক্ষণ: 
শীতকাতর। শীতকালে বেশি জামাকাপড় লাগে।
গরমকালে ভালো থাকে।
ঠাণ্ডা খাদ্যপানীয় পছন্দ করে। 
গরম খেতে পারে না।
দুধ ভালোবাসে। মিষ্টি, নোনতা পছন্দ। নিরামিষাশী। 
ঘাম খুব বেশি। ঘাম লেগে জামাকাপড়ে হলদে ছোপ পড়ে। 
পিপাসা বেশি।
স্নান করতে ভালোবাসে তবে গরমজলে। ঠাণ্ডা জলে স্নান করলেই কষ্ট বাড়ে। 
ঋতুস্রাব :
ঋতুস্রাব ১৩ বছরে শুরু হয়। 
আগে আগে হয়। পাঁচ ছ দিন থাকে। 
প্রচুর হয়। 
রঙ কালচে লাল। 
আরম্ভ হওয়ার আগে খুব বেদনা হয়। আরম্ভ হওয়ার পর ধীরে ধীরে তা কমে আসে।
তখন শীতশীত করে। 
শ্বেতপ্রদর :
ঋতুর আগে ঘন দুধের মতো সাদা শ্বেতপ্রদর হয়। 
কোন জায়গা কেটে গেলে পেকে যায়। 
কোষ্ঠকাঠিন্য।
শিশু অবস্থায় রোগসমূহ :
হাঁটাচলা, কথা বলা তাড়াতাড়ি শিখেছে। দাঁত দেরিতে উঠেছে। 
ছেলেবেলায় হাম হয়েছিল।
সর্দিকাশি ছাড়া অন্য বিশেষ কোন রোগ হয়নি।
টিকা :
টিকা কয়েকবার নিয়েছে। শুধু প্রথমবার উঠেছিল।

মানসিক লক্ষণ: 
শান্ত, বিমর্ষ, উদ্বিগ্ন ও ভীত। 
কাঁদুনে স্বভাব। 
দৈহিক ও মানসিক উদ্যমের অভাব। 
যে কোন কাজ করার আগে খুব আশঙ্কায় ভোগে। তবে একবার শুরু করলে তা ভালোভাবে শেষ করে।

বংশগত রোগ: 
হাঁপানি, বাত, শ্বেতি।

রোগিলিপি বিশ্লেষণ করে রোগীর যে সব পরিচায়ক লক্ষণ পাওয়া গেল সেগুলি হলো:

(১) শীতকাতর। সব উপসর্গ ঠাণ্ডায় ও শীতকালে বাড়ে।

(২) সর্দিকাশির প্রবণতা।

(৩) সর্দি শুকিয়ে কাশি ও হাঁপানি হয়। হাঁপানি শুরুর আগে শীতশীতভাব। কাশি রাতে শুলে ভয়ানক বাড়ে। হাঁপানি শীতকালে বেশি, সকালে বেশি। ঋতুর সময় ও অমাবস্যায় বাড়ে।

(৪) রোগলক্ষণ নির্দিষ্ট সময়ান্তর ঘুরে ঘুরে আসে।

(৫) দৈহিক ও মানসিক উদ্যমের অভাব। যে কোন কাজ শুরুর আগে ভীতি। কাজ একবার শুরু করে দিলে ভালোভাবে তা শেষ করে।

(৬) কোন জায়গা কেটে গেলে পেকে যায়।

(৭) ঋতু আগে আগে হয়। প্রচুর হয়। ঋতুর আগে শীতবোধ, বেদনা ও শ্বেতপ্রদর।

(৮) টিকা নেওয়ার ইতিহাস।

ওপরের লক্ষণসমষ্টি নিঃসন্দেহে সাইলেসিয়া নির্দেশ করে। সাইলেসিয়া একে রোগমুক্ত করে।




রোগলিপি (৭)

এক ভদ্রমহিলা, বয়স ৩৫ বছর। পিত্তপাথরিতে ভুগছেন। 

appearance (চেহারা) :  
শ্যামবর্ণ। মাঝারি গড়ন। অনমনীয় শরীর, শক্ত পোক্ত শরীরের মাংসপেশি,  "Face, chlorotic" বোঝায়:
(রোগীর মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে, হালকা সবুজাভ বা হলদে রঙের, যা সাধারণত রক্তাল্পতার কারণে হয়ে থাকে।) 

মুখ মন্ডলে মাকড়সার জালে ন্যায় অনুভূতি, কিছুক্ষণ বাদে বাদে রোগীনি মুখ মন্ডলে হাত দিয়ে কি যেন মুছে,

 ইদানীং মোটা হওয়ার লক্ষণ দেখা দেওয়ায় খাওয়া দাওয়ায় নানারকম নিয়মকানুন মেনে চলছেন।

বর্তমান উপসর্গ: 
(১) গত দুবছর যাবৎ পিত্তপাথরিতে ভুগছেন।
তারও কিছুকাল আগে থেকে যকৃৎপ্রদেশে মাঝে মাঝে ব্যথা হতো, কখনও কখনও সেই ব্যথা অত্যন্ত তীব্র হতো। 
যকৃৎ শক্ত ও বড়। বেদনা ক্রমে ডান বুক, পিঠ ও অংসফলকের (scapula) নিচে প্রসারিত হয়। 
মাঝে মাঝে পিত্তবমি হতো। 
খাওয়ায় রুচি ছিল না। 
অম্বল ও বায়ু হতো। 
এ অবস্থায় তার তৃতীয় সন্তানটি হয় অস্ত্রোপচার করে। 
এরপর তাঁর মারাত্মক রক্তহীনতা দেখা দেয়। 
সঙ্গে পেটব্যথা, কিছু খেলেই বমি হতো। বমি প্রায়ই সবুজ রঙের হতো। 
ব্যথা অসহ্য হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। 
তখন এক্স-রে করে পিত্তথনিতে অনেকগুলি পাথরি ধরা পড়ে। 
অস্ত্রোপচার করার পরামর্শ দেওয়া হয় কিন্তু তাতে প্রচণ্ড ভয়। 
সেজন্য হোমিওপ্যাথি করা সাব্যস্ত হয়। 
গত চার মাসে চেলিডোনিয়াম, বারবেরিস ভাল, কার্টুয়াস, চায়না ইত্যাদি ঔষধে সাময়িক উপশম হয় কিন্তু স্থায়ী সুফল হয়নি। 
মাঝেমাঝেই যকৃৎপ্রদেশে ব্যথা হয়।

(২) বছরতিনেক হলো ডান হাতের কব্জির ওপরে ছোট একটি অর্বুদ হয়েছে। দিনদিন তা বাড়ছে। ঠাণ্ডা লাগলে চিনচিনে ব্যথা হয়। অন্য সময় বিশেষ কোন উপসর্গ নেই।

(৩) পা ঝুলিয়ে বসলে ফুলে যায়। এ ছাড়াও মাঝেমাঝেই পা ফালে

(৪) চামড়া খসখসে, শুকনো, প্রায়ই ফেটে যায়, দেখতে সাপের চামড়ার মতো। ভ্যাসলিনজাতীয় কোন জিনিস প্রায়ই মাখতে হয়। জল লাগলে এবং সাবান দিলে হাত খসখসে হয়ে ফেটে যায়। ক্ষতের মতো হয়। কোন জায়গা কেটে গেলে বিষিয়ে যায়, সহজে সারতে চায় না। এজন্য কাজের সময় হাতে দস্তানা পরতে হয়। ঠোটের কোণ ও স্তন্য বোঁটা ফাটে। সব সময় ভ্যাসলিন ব্যবহার করতে হয়।

(৫) হাতপা ও মাথার তালুতে প্রচণ্ড জ্বালা। গরমকালে যেন আগুনের হষ্কার মতো বেরোয়।

(৬) প্রচণ্ড 'কোষ্ঠকাঠিন্য। মলত্যাগের বেগই হয় না। অত্যন্ত শুকনো, দুর্গন্ধযুক্ত গুটলে আমজড়ানো মল। মলত্যাগে কষ্ট। রক্তস্রাবী অর্শ, জ্বালাকর রক্তস্রাব।

(৭) প্রায়ই সর্দিকাশি লাগে। টনসিলের প্রদাহ হয়।

(৮) প্রস্রাবের বেগ সহ্য করতে পারে না। অনেক সময় অনিচ্ছাকৃত প্রস্রাব হয়ে যায়।

পূর্ব রোগভোগের ইতিহাস: 
পাচৃঁ বছর বয়সে দুপায়ে মারাত্মক একজিমা হয়েছিল। অনবরত রস ঝরতো। রস ঘন আঠার মতো। পনের ষোল বছর অবধি ছিল। চর্মরোগবিশেষজ্ঞের দীর্ঘ চিকিৎসার পর তা সারে। 
এর কিছুকাল পর পেট ও কোমরের ডান দিকে ব্যথা হয়। ব্যথা পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত যায়। হাঁটাচলা করতে পারে না। ইঞ্জেকশন নিতে হয়। 
পরে জরায়ুতে ক্ষত হয়। কটারাইজ (cauterise) করতে হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে হাতে অর্বুদ, অর্শ, অম্ল ও অদীর্ণ হয়। সব শেষে এই পিত্তপাথরি

ব্যক্তিগত ইতিহাস:  বিষন্ন, উদ্বিগ্ন। অহেতুক দুশ্চিন্তা। প্রায়ই কান্না পায়। সবরকমের কাজ বা শ্রমে ভীতি, অলস জীবনযাপনে ইচ্ছা। প্রচণ্ড অবসাদ।

গরম ও পরিশ্রমে খুব কষ্ট। আবার শীতকালের ঠাণ্ডাও সহ্য হয় না।

স্নান করতে ভালো লাগে না। গরম খাবার খেতে পারে না। ঘাম প্রধানত বগলে ও পায়ে হয়। ঘামে দুর্গন্ধ। জামাকাপড়ে ঘামের হলদে দাগ পড়ে। পিপাসা যথেষ্ট।

প্রথম ঋতুস্রাব : চোদ্দ বছর বয়সে হয়। তারপর ছমাস বন্ধ থাকে।
ঋতু অনিয়মিত। সাধারণত দেরিতে হয়। ঋতুর আগে ও সময়ে অত্যধিক আক্ষেপিক বেদনা হয়। ঘন চাপচাপ স্রাব হয়। 

শ্বেতপ্রদর : পাতলা, সাদা, * প্রচুর ও হাজাকর। প্রাতঃকালীন দুর্বলতা।

বংশগতরোগের ইতিহাস: 
বহুমূত্র, আলসার, চর্মরোগ ও বাত।

লক্ষণরাজির বিশ্লেষণ: 
সব বিচিত্র লক্ষণ বিশ্লেষণ করলে সহজেই বোঝা যায় যে, রোগীতে সোরাদোষ প্রবলভাবে ক্রিয়াশীল। এর সঙ্গে সিফিলিস ও সাইকোসিসদোষের সংমিশ্রণ ঘটেছে। কাজেই রোগীর ঔষধও অতি অবশ্যই অ্যান্টিসোরিক, অ্যান্টিসিফিলিটিক ও অ্যান্টিসাইকোটিক হবে যাতে অ্যান্টিসোরিক ধর্মই প্রধান থাকবে।

রোগীর বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক পরিচয় এই লক্ষণের মাধ্যমে ধরা পড়ে:

(১) শৈশব থেকেই একজিমা এবং তা অবদমনে নিম্নাঙ্গে বেদনা, জরায়ুতে ঘা, হাতে অর্বুদ, রক্তস্রাবী অর্শ, রক্তহীনতা এবং পিত্তপাথরি।

(২) অস্বাস্থ্যকর শুকনো চামড়া। চামড়া ফেটে যায় ও তাতে ঘা হওয়ার প্রবণতা।

(৩) ঘাম শুধু বগলে ও নিম্নাঙ্গে। ঘামে দুর্গন্ধ ও হলদে দাগ পড়ে।

(৪) প্রচণ্ড কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তস্রাবী অর্শ।
Rectum, constipation.
Stool, hard 
Stool, knotty, nodular, lumpy.
Stool, odor, offensive

(৫) সব স্রাবে অত্যন্ত দুর্গন্ধ।

৬) প্রথম ঋতুস্রাব দেরিতে। অবরুদ্ধ ঋতুস্রাব। ঋতুস্রাব দেরিতে ও বেদনাদায়ক। প্রাতঃকালীন দুর্বলতা।
Genitalia female, menses, delayed in girls, first menses.

Genitalia female, menses, suppressed.

Genitalia female, menses, painful, dysmenorrhœa.
 
Generalities, weakness, morning.

(৭) গরমে ও পরিশ্রমে বাড়ে। ঠাণ্ডায় সব উপসর্গ বাড়ে।

(৮) উৎকণ্ঠা, বিষাদ, ক্রন্দনশীলতা, সব রকমের কাজ বা শ্রমে অনীহা।

(৯) মোটা হওয়ার প্রবণতা।মারাত্মক রক্তহীনতা। 
Generalities, obesity.
Generalities, anæmia.

(১০) Face, cobwebs, sensation of.

(১১)  Chest, cracks of nipples.

লক্ষণসমষ্টি নিঃসন্দেহে গ্র্যাফাইটিস ঔষধটিকে নির্দেশ করে। 
মেটিরিয়া মেডিকা থেকে আমরা জানতে পারি যে, গ্র্যাফাইটিসের শুধুমাত্র যে রোগীতে প্রকাশিত লক্ষণসমূহই আছে তা নয় বরং রোগীও গ্র্যাফাইটিসের। 

গ্র্যাফাইটিস একটি দীর্ঘক্রিয় ত্রিদোষনাশক ঔষধ যার সোরাদোষ প্রতিকারের ধর্মই প্রধান। 

অতএব গ্র্যাফাইটিসই এক্ষেত্রে নির্বাচিত ঔষধ। গ্র্যাফাইটিস এই রোগীকে সম্পূর্ণ আরোগ্য করে। 



-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ
বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি, 
ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা    
প্রভাষক, 
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ। 

আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। 

>Share by:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন