(Introduction)
প্রশ্ন-০১.০১। সার্জারী বা শল্যবিদ্যা কাহাকে বলে?
উত্তর : চিকিৎসাবিজ্ঞানের যে শাখায় অস্ত্রোপচার দ্বারা - রোগীদের বাস্তব এবং মৌলিক আরোগ্য সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়, তথা দেহের কোন পীড়িত কোষের মেরামত, প্রতিস্থাপন, অপসারণ প্রভৃতি বিষয়ে আলোকপাত করিয়া রোগীকে রোগমুক্তির পথে আনয়ন করা হয়, তাহাকে সার্জারী বা শল্যবিদ্যা বলে।
প্রশ্ন-০১.০২। হোমিওপ্যাথিতে সার্জারী বা শল্যবিদ্যা পাঠের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব লিখ।
উত্তর: হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের সার্জারী বা শল্যবিদ্যা সম্পর্কিত জ্ঞান থাকা একান্তই আবশ্যক। প্রত্যেক চিকিৎসকেরই উদ্দেশ্য রোগীর আরোগ্য সাধন। রোগযন্ত্রণাক্লিষ্ট রোগী চিকিৎসকের নিকট আসে চিকিৎসার জন্য।
চিকিৎসক সাধারণতঃ দুইটি পদ্ধতিতে রোগ নিরাময় করিয়া থাকেন। যথা-
ক) ঔষধ প্রয়োগ পদ্ধতি বা কনজারভেটিভ পদ্ধতি।."
খ) শল্য চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচার পদ্ধতি।
কনজারভেটিভ পদ্ধতিতে ঔষধের সাহায্যে রোগীর চিকিৎসা করা হয়।
এবং
অস্ত্রোপচার পদ্ধতিতে সার্জাবীর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
চিকিৎসকের প্রথম কর্তব্য হইল রোগ নির্ণয় করিয়া চিকিৎসা শুরু করা।
সদৃশবিধান মতে চিকিৎসা • সম্ভবপর হইলে চিকিৎসক ঔষধ দ্বারাই রোগীর চিকিৎসা করেন। যদি ঔষধ প্রয়োগ দ্বারা চিকিৎসা সম্ভবপর না হয় তবে ক্ষেত্র বিশেষে চিকিৎসককে সার্জারীর আশ্রয় গ্রহণ করিতে হয় এবং সার্জনের নিকট রোগীকে প্রেরণ করিতে হয়। চিকিৎসকের যদি শল্যবিদ্যা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকে তবে তিনি সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হইতেই পারিবেন না যে কোন্ রোগীর জন্য অস্ত্রোপচার পদ্ধতিতে চিকিৎসা করিতে হইবে।
অস্ত্রোপচারের রোগীকে ঔষধ পদ্ধতিতে ব্যর্থ চিকিৎসার চেষ্টা করিলে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হইয়া পড়িবে। এমনকি রোগীকে বাঁচাইয়া রাখাই কষ্টকর হইবে।
যেমন হাড় ভাঙ্গিয়া গেলে অস্ত্রোপচারের দ্বারা হাড় জোড়া না লাগাইলে শুধু ঔষধ দ্বারা কোন কাজ হইবে না। তাই চিকিৎসক হিসাবে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান লাভ করিতে হইলে সার্জারী সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন এবং চিকিৎসককে শল্যবিদ্যায় পারদর্শী হইতে হইবে।এ সকল কারণেই হোমিওপ্যাথিতে সার্জারী পাঠের প্রয়োজনীয়তা রহিয়াছে।
প্রশ্ন-০১.০৩। হোমিওপ্যাথিতে সার্জারী বা শল্যবিদ্যার স্থান সম্পর্কে আলোচনা কর।
বা, প্রমাণ কর যে, সার্জারীর একটি পৃথক সত্ত্বা আছে।
উত্তর: সার্জারী বা শল্যবিদ্যা কোন চিকিৎসা পদ্ধতির একক সম্পদ নয়। যে কোন চিকিৎসা পদ্ধতিতেই সার্জারীর প্রয়োজন হইতে পারে। চিকিৎসক যখন সদৃশ ঔষধ প্রয়োগ করিয়া রোগ নিরাময়ে ব্যর্থ হইবেন এবং বিষয়টি সার্জারী সম্পর্কিত তখন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকও বাধ্য হইয়া সার্জারীর আশ্রয় গ্রহণ করিতে হইবে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে সার্জারীর স্থান সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হইল।
১) সার্জারীর তিনটি অবস্থা,
যথা-প্রি-অপারেটিভ (pre-operative),পার অপারেটিভ (per-operative) এবংপোস্ট অপারেটিভ (post-operative)।
প্রি-অপারেটিভ ও পোস্ট-অপারেটিভ অবস্থায় ঔষধের আবশ্যক হয়।
কিন্তু পার-অপারেটিভ অবস্থায় ঔষধের কোন ভূমিকা নাই।
যেমন, ইনটেস্টাইনাল অবস্ট্রাকশন, যেখানে সার্জারীই একমাত্র চিকিৎসা।
২) সার্জারীর দ্রব্যাদি ও যন্ত্রপাতি বিশেষ কোন চিকিৎসাবিজ্ঞান দ্বারা সরবরাহকৃত নয়। যে কোন চিকিৎসাবিজ্ঞানেই ইহা ব্যবহৃত হইতে পারে।
৩) বিভিন্ন রোগ ও অবস্থার ক্ষেত্রে সার্জারীর উপযুক্ত দ্রব্য ও সরঞ্জামাদি বিশেষ ঊিপায় গ্রহণ করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
৪) হোমিওপ্যাথিক বা এলোপ্যাথিক যে কোন চিকিৎসায় কনজারভেটিও পদ্ধতিতে ঔষধ দ্বারা চিকিৎসক অকৃতকার্য হইলে সার্জারীর পর্যায় হইলে সার্জারীর সাহায্য নিতেই হয়।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে ইহা প্রতীয়মান হয় যে, সার্জারীর একটি নিজস্ব ত্বা আছে। কোন চিকিৎসা প্যাথিই চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই শাখার সম্পূর্ণ ব্যবহার চিকিৎসকদেরও সার্জারীর আশ্রয় গ্রহণ করিতে আপত্তি নাই।
প্রশ্ন-০১.০৫। সার্জারীর ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক ও এলোপ্যাথিক দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য আলোচনা কর।
উত্তর : হোমিওপ্যাথিক ও এলোপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় সার্জারীর
হোমিওপ্যাথিক দৃষ্টিভঙ্গি
১। হোমিওপ্যাথি জীবনীশক্তি ধারণার উপর নির্ভরশীল। তাই জীবনী শক্তির উপর নির্ভর করিয়াই সার্জারী প্রয়োগ করা হয়।
২। এখানে রোগ নয়, রোগীর চিকিৎসা করা হয়। তাই সার্জারীর ভূমিকা গৌণ।
৩। হোমিওপ্যাথিতে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সার্জারীর প্রয়োজন হয় না।
৪। বাহ্যিক বস্তু প্রবিষ্ট, বাহ্যিক আঘাতাদির কারণে সৃষ্ট পীড়ার ক্ষেত্রে সার্জারীর আশ্রয় গ্রহণ করিতে হয়।
৫। পীড়া সৃষ্টি করিতে পারে এই ধরনের কোন স্কুল বস্তুর অস্তিত্ব দেহের মধ্যে আছে বলিয়া স্বীকার করা হয় না বলিয়া সার্জারীর ভূমিকা মুখ্য নয়।
৬। টিউমার, ক্যান্সার, অর্বুদ প্রভৃতিকে স্থানীয় পীড়া হিসাবে গণ্য করা হয় না, তাই সদৃশ বিধান মতে শক্তিকৃত ঔষধ প্রয়োগে রোগ নিরাময় হয়, সার্জারীর দরকার হয় না।
৭। অত্যন্ত উন্নত আভ্যন্তরীণ চিকিৎসা আছে বিধায় বাহ্যিকভাবে সার্জারীর দরকার হয় না।
এলোপ্যাথিক দৃষ্টিভঙ্গি
১। এলোপ্যাথিতে জীবনী শক্তিকে স্বীকার করা হয় না। তাই জীবনী শক্তির উপর নির্ভর করিয়া সার্জারী প্রয়োগ করা হয় না।
২। এখানে রোগের নাম ধরিয়া চিকিৎসা করা হয়। তাই সার্জারীর স্থান মুখ্য।
৩। এলোপ্যাথিতে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই সার্জারীর উপর নির্ভর করিতে হয়।
৪। আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সকল কারণে সৃষ্ট পীড়ার চিকিৎসায় এলোপ্যাথরা সার্জারীর আশ্রয় গ্রহণ করেন।
৫। কোন স্কুল বস্তুকে দেহাভ্যন্তর হইতে কাটিয়া বাদ দিলে রোগ নিরাময় হইবে এই ধারণার জন্যই এখানে সার্জারীর স্থান মুখ্য।
৬। টিউমার, ক্যান্সার, অর্বুদ প্রভৃতিকে স্থানীয় পীড়া হিসাবে গণ্য করিয়া সার্জারীর দ্বারা কাটিয়া বাদ দিয়া অনেক ক্ষেত্রেই পরিণাম ফল জটিল করিয়া তোলে।
৭। উন্নত বলিয়া দাবী করিলেও এলোপ্যাথিতে অতি উন্নত আভ্যন্ত রীণ চিকিৎসা না থাকায় কারণে অকারণে সার্জারী আশ্রয় গ্রহণ করিতে হয়।
কাজী সাইফ উদদীন আহমেদ
>Share by:
Make a comments as guest/by name or from your facebook:
Make a comment by facebook: