পাইরোজেন (Pyrogen)
পাইরোজেন ঔষধটি কারন ভিওিক ।
এই ওষুধের ভিতর ব্যক্তি কেন্দ্রিক অর্থাৎ ধাতু গত কোন লক্ষণ নেই, সুতরাং ইহা একটি কারন ভিওিক লক্ষণ সর্বোচ্চ ওষুধ।
প্রস্তুত প্রণালী-
রাধারমন বিশ্বাস মন্তব্য করেন যে,ইহা একটি নোসোড। রক্ত বিষাক্ত হইয়া সেপ্টিক বিষ দেহ মধ্যে উৎপাদিত হয়,- তাহারই বীজ হইতে পাইরোজেনাম প্রস্তুত হয়।পচনশীল পেশীময় গোমাংস দুই সপ্তাহ ধরিয়া রৌদ্রে রাখিবার পর তাহা শক্তিকৃত করা হয়।
-ইহা হোমিওপ্যাথির একটি প্রধান অ্যান্টিসেপ্টিক বা পঁচন নিবারক ঔষধ।
কারন:
দূষিত জ্বর অবরুদ্ধ অথবা লোকিয়া স্রাব অবরুদ্ধ হেতু জ্বর।কয়েক বৎসর পূর্বে রোগিনীর একবার সূতিকা জ্বর হইয়াছিল। তারপর হইতে আর পূর্বস্বাস্থ্য লাভ করিতে পারেন নাই ইহা সিদ্ধিপ্রদ লক্ষণ।
Allens Keynotes এর লেখক Henry Clay Allen, M. D. বলেন,
উপযোগীতা-
বিবিধ প্রকার কঠিন পীড়ায় এই ঔষধ উপকারী,
টাইফয়েড জ্বর,সেপ্টিক জ্বর,সেপটিমিসিয়া হেতু প্রসূতি জ্বরে,এই ঔষধ বিশেষ উপযোগী।পচা দুর্গন্ধ বা নর্দমার পচা গন্ধের সংস্পর্শে বা সংক্রমণে, বাদূষিত গ্যাস সংক্রমণে,
যে কোন পীড়া বা (জ্বর; ডিপথেরিয়া, টাইফয়েড ও টাইফাস জ্বর ভোগকালে) রক্ত বিষাক্ততায় যখন সুনির্বাচিত ঔষধ ব্যর্থ হয় বা স্থায়ীভাবে সারিয়ে তুলতে পারে না সেক্ষেত্রে উপযোগী।
ক্রিয়া-
রক্তহৃদপিণ্ড ওমাংসপেশীতে
ইহার ক্রিয়া দৃষ্ট হয়।
বিশিষ্ট লক্ষনাবলী-
(১) উত্তাপ ও ঘর্মের সহিত মিশ্রিত তীব্র শীত অথবা শুষ্ক উত্তাপের সহিত স্পষ্ট অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কামড়ানি, সঞ্চালনে ও উত্তাপে উপশম।(২) দপদপানি সহ মাথাব্যথা।(৩) বিছানা ও বালিশ খুব শক্ত বোধ হয়।(৪) শরীরে টাটানি ও যে পাশে শয়ন করে সেই দিকেই খুব ব্যথা বোধ হয়।(৫) রোগ হইবার ২/১ দিনের মধ্যেই রোগী শয্যাগত হইয়া পড়ে।(৬) রোগীর (শরীর, শ্বাস প্রশ্বাস, ঘাম, মলমূত্র ও অন্যান্য) স্রাব হইতে পচা মাংসের মত ভয়ানক দুর্গন্ধ বাহির হয়।(৭) ঠাণ্ডা পানি পান করিলে উহা পাকস্থলীতে গরম হইবা মাত্র বমি হইয়া উঠিয়া যায় (ফসফোরাস)।(৮) ব্যাপ্টিসিয়া ও আর্নিকায় যেরূপ ক্ষততা ও থেঁতলাইয়া যাওয়ার ন্যায় অবস্থা থাকে তদ্রুপ অবস্থা, ইউপেটোরিয়ামের ন্যায় হাড়ের মধ্যে কনকনানি, রাসটক্সের ন্যায় সঞ্চালনে ও উত্তাপে উপশমিত অস্থিরতা।(৯) বসিয়া থাকিলে সকল যন্ত্রণা বাড়ে।(১০) ঘাড়ের শিরা দপদপকরে, হৃদপিণ্ডে প্রচণ্ড দপদপানি।(১১) কয়েক বৎসর পূর্বে রোগিনীর একবার সূতিকা জ্বর হইয়াছিল। তারপর হইতে আর পূর্বস্বাস্থ্য লাভ করিতে পারেন নাই ইহা সিদ্ধিপ্রদ লক্ষণ।(১২) শরীরে মৃদু তাপের অনুপাত্মাড়ীর গতি খুব দ্রুত।(১৩) তাপের হঠাৎ বৃদ্ধি বা হ্রাস।(১৪) জিভটি বার্নিশ করার মতো মসৃণ লাল টকটকে।(১৫) লাইকোর মতো নাকের পাখনা ওঠে নামে। Noe, Motion of wings, Fau-like.
সেপটিমিসিয়া, হেকটিক ফিভার প্রভৃতি জাতীয় জ্বর-
ঠাণ্ডা লাগিলে অথবা ঠাণ্ডা আর্দ্র আবহাওয়া হইতে রোগগুলি উপস্থিত হয়। এইরূপ অবস্থা যক্ষ্মারোগের শেষ অবস্থার বিলেপী জ্বরে এবং রক্তদুষ্টিজনিত জ্বরে দেখা যায়।স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট হইলে ইহা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রসবান্তিক জ্বরকে বিনাশ করে।টাইফয়েড জ্বরে যখন 'ব্যাপটিশিয়ায়' যেরূপ মানসিক বিশৃংখলা দেখা যায় তদ্রুপ বিশৃংখলা থাকে এবং যখন গাত্রতাপ ঐ ঔষধের পক্ষে অত্যধিক হয়, তখন পাইরোজেনের কথা বিবেচনা করিতে হয়যখন গাত্র তাপ ১০৬ ডিগ্রীতে গিয়া পৌছায় এবং তৎসহ ক্ষততা বোধ ও কনকনানি থাকে, এই ঔষধ একদিনের মধ্যেই যথেষ্ট পরিবর্তন আনিবে এবং যদি সঞ্চালনে ও উত্তাপে যন্ত্রণার উপশম থাকে, তাহা হইলে জ্বরকে ছাড়াইয়া দিবে।
যখন নাড়ী খুব দ্রুত থাকে এবং গাত্রতাপও অনুরূপ ভাবে অধিক হয়, (গাত্র তাপ ১০৬ ডিগ্রীতে) তখন এই ঔষধটি উপযোগী হইবে।আবার যখন নাড়ী ও গাত্র তাপ দুই ভাবের হয়, উহাদের মধ্যে কোনরূপ সামঞ্জস্য থাকে না এবং জ্বরটি রক্তদুষ্টিজনিত হয়, তখনও এই ঔষধটিকে বিবেচনা করিতে হইবে।
দুর্গন্ধ :
ব্যাপকভাবে দুর্গন্ধ থাকে, দেহ হইতে পচা গন্ধ এমনকি মৃতের ন্যায় গন্ধ বাহির হয়।
( নিঃশ্বাস দুর্গন্ধ ,
ঘর্মে দুর্গন্ধ, এবং
স্রাবে দুর্গন্ধ,
মলেও ভয়ানক দুর্গন্ধ।)
ঐরূপ দুর্গন্ধ নর্দমার গ্যাস হইতে বিষাক্ত হইয়া জ্বর বিষাক্ততার ফলে ইরিসিপেলাস একই অস্ত্রোপচারের পরবর্তী ছুরি দ্বারা রক্ত বিষাক্ত হইয়া রক্তদুষ্টিজনিত জ্বর।রোগিনী বহু বৎসর পূর্বেকার সুতিকা জ্বরের পর আর ভাল হইতে পারেন নাই। ইহা পাইরোজেন সম্বন্ধে চিন্তা করিবার একটি উৎকৃষ্ট ক্ষেত্র।সূতিকা জ্বরে তলপেট বা উদরে ব্যথা থাকে।
পারোজেনাম এর টাইফয়েডে রোগী মনে করে, সে সারা বিছানা জুড়িয়া রহিয়াছে।
অনুভব করে যে মাথাটি বালিশের উপর আছে কিন্তু দেহের অন্যান্য অংশ যে কোথায় আছে তাহা বুঝিতে পারে না।
পারোজেনাম রোগী মনে করে তাহার অনেকগুলি করিয়া হাত-পা গজাইয়াছে। সর্বদা পার্শ্ব পরিবর্তন করে।
মাথায় : ভয়ানক রক্ত সঞ্চয়, তৎসহ চাপনবৎ বেদনা এবং দপদপানি। চাপে উপশমিত হয়। মাথায় প্রচুর ঘর্ম। কাশিতে গেলে মাথার পশ্চাৎ ভাগে বেদনা-প্রাতে জাগিয়া উঠিলে অনুরূপ যন্ত্রণা। চক্ষু তারকাদ্বয় স্পর্শ কাতর, উপর দিকে অথবা বহির্দিকে ঘুরাইলে ক্ষততাবোধ হয়।
মুখমণ্ডল : বিষন্ন, নিমগ্ন এবং শীতল ঘর্মে আবৃত। গণ্ডদ্বয় আরক্তিম এবং উত্তাপ বিশিষ্ট। মুখে দুর্গন্ধ, স্বাদ পচা,। মুখে অত্যন্ত দুর্গন্ধ: স্বাদ পুঁজের মত,।
দাঁতে : দন্ত মল, মুখ হইতে পঁচা গন্ধ বাহির হয়।
জিহ্বা : লেপাবৃত এবং বাদামী বর্ণ। মাঝখান দিয়া কাল ডোরা, । পাইরোজেনের জিহ্বা সাধারণত মসৃণ, লালবর্ণ ও শুষ্ক অথবা জিহ্বার ৭ মদি বৃহৎ ও পুরু দেখায়। স্পষ্ট করিয়া অগ্রভাগ লালবর্ণ, মধ্যভাগ লেপাবৃত বা ডোরা কাটা। জিহ্বা অস্বাভাবিক - কথা বলিতে পারে না।
জ্বরে নিম্নলিখিত লক্ষণ থাকিলে পাইরোজেন বিশেষ উপযোগী।
কোন সুনির্বাচিত ঔষধেই ফল হয় না।শরীরে খুব উত্তাপ ও ঘাম হয় সেই সঙ্গে কাঁপুনি।ঘাম হইলেও উত্তাপ কমেনা।রোগী ভয়ানক ছটফট করে।সমন্ত শরীরে ব্যাথা,হাড়ের ভিতর ব্যথা এবং গরমে নড়াচড়ার ব্যথার উপশম।
পেটের পীড়া-
উদরাময় :
প্রচুর তরল, দুর্গন্ধযুক্ত উদরাময়,অসাড়ে মলত্যাগ,বেদনাহীন মল,পঁচা মাংসের ন্যায় দুর্গন্ধযুক্ত ,
কোষ্ঠবদ্ধতা :
কষ্টকর কোষ্ঠবদ্ধতার মলও পচা মাংসের ন্যায় গন্ধ দুর্গন্ধযুক্ত বিশিষ্ট,শক্ত,শুষ্ক,কাল,পচা গন্ধ কোষ্ঠবদ্ধতার মল,জলপাইয়ের আকারে কাল কাল বলের ন্যায় মল,পচা গন্ধ,রক্তাক্ত মল,নরম সরু মলের সহিতঅত্যন্ত কোঁথানি। হঠাৎ দাস্তের আক্রমণ ইহা ম্যাজিকের মত কাজ করে।
প্রস্রাব- :
মূত্র স্বল্প অথবা অবরুদ্ধ,মূত্রে লাল তলানি,ধুইয়া ফেলা কঠিন,এলবুমেনযুক্ত মূত্র,জ্বর আসিলে ঘন ঘন মূত্র প্রবৃত্তি।
জরায়ুর রক্তস্রাব-
জরায়ু হইতে রক্তস্রাব,পচা গন্ধ,স্বল্প প্রসবাম্ভিক স্রাব।প্রসবাস্তিক স্রাব লোপ।প্রবল শীত, প্রসবাস্তিক জ্বর।ঋতুস্রাব মাত্র একদিন থাকে, তারপর রক্তাক্ত প্রচুর স্রাব।গর্ভস্রাবের পরবর্তী রক্তদুষ্টিজনিত জ্বর,জরায়ু নির্গমন।
জরায়ু অংশ-
জরায়ুতে প্রসব ব্যথা।শ্বাস বন্ধ করিলে ও জরায়ুতে চাপ দিলে উপশম বোধ।নাভি বা তাঁহার ঠিক উপর হইতে ব্যথা আরম্ভ হইয়া জরায়ু পর্যন্ত নামে আবার কখন কখন জরায়ুতে ব্যথা আরম্ভ হইয়া উপরের দিকে উঠে।
শ্বাসযন্ত্রের পীড়া-
শ্বাসত্যাগ কালে সাঁই সাঁই শব্দ।
ক্ষীণ গলা ভাঙ্গার ন্যায় স্বর এবং
স্বরভঙ্গ।কণ্ঠনালী হইতে শেম্মার বড় বড় চাপযুক্ত গয়ার উঠে,সঞ্চালনে ও গরম ঘরে বৃদ্ধি।কাশিতে কণ্ঠনালী ও বায়ুনালীতে জ্বালা জন্মে।পচা গন্ধ ঘন পুঁজের ন্যায় গয়ের,কাশি শুইলে বৃদ্ধি, উঠিয়া বসিলে উপশম ।রক্তাক্ত ও লোহার মরিচার ন্যায় গয়ের।কাশির সহিত প্রচুর দুর্গন্ধ নিশাঘর্ম।
ইহা যক্ষ্মারোগের শেষ কয়েক সপ্তাহে উৎকৃষ্ট উপশমদায়ক।
অন্যান্য পীড়া-
গ্রীবা দেশে রক্তবহা নলীগুলিতে দপদপানি।হস্ত-পদ ও বাহুর অসারতা,যাবতীয় প্রত্যঙ্গ এবং অস্থিতে কনকনানি ব্যথা,শয্যা অতিশয় কঠিন বোধ হয় পচনশীল দূষিত অবস্থা হইতে উৎপন্ন দ্রুতগামী শয্যাক্ষত।ভগন্দর,ডিম্বকোষে ফোঁড়া,আমাশয়,কোষ্ঠবদ্ধতা প্রভৃতি।
নিদ্রা-
অর্ধ নিদ্রিত অবস্থায় রহিয়াছে বলিয়া মনে হয়,সারা রাত্রি স্বপ্ন দেখে।
উপশম- নড়াচড়ায়।
সম্বন্ধ-
এচিনেসিয়া,কার্বোভেজ,আর্সেনিক,ল্যাকেসিস,রাসটক্স,ব্যাপটিসিয়া।
অনুপূরক-
ফলতঃ সেপটিক্ কারণ-হেতু পীড়ায়ব্রায়োনিয়া।
আর্সেনিক্,এনথ্রাসিনাম,পাইরোজিনাম নির্দিষ্ট;
এই সঙ্গে ভয়ানক জ্বালা-
পাইরোজিনে, ছট্ফটানি অত্যন্ত নিদ্দিষ্ট এবং সকল স্রাব আর্সেনিকের ন্যায় দুর্গন্ধযুক্ত।এনথ্রাসিনাম,আর্সেনিক এলবা, নিদ্দিষ্ট।
*****----++++++
অতুল কৃষ্ণ দত্ত (এম. ডি.,এম. এইচ.) বলেন,
অসাড়ে বাহ্যে-
সেপ্টিক-প্রসূতি-সেই সঙ্গে কোন বেদনা পেটে থাকে না-বায়ু নিঃসরণকালে মলত্যাগ।
জ্বরে এই ঔষধে আমরা কয়েকটি নিতান্ত কঠিন রোগ-
এই সকল লক্ষণ আমাদের রোগীর পীড়া- লক্ষণে বিশিষ্টরূপে লক্ষিত হইয়াছিল।যখন তাহাদের জীবনের আশা ত্যাগ করিয়া চিকিৎসক চলিয়া গিয়াছেন-তাহাও আরোগ্য করিয়াছি।ভয়ানক জ্বর,রোগী অজ্ঞান অচৈতন্য,ভয়ানক ছটফটানি-মধ্যে মধ্যে চুপ করিয়া থাকা এবংদিনের মধ্যে ৩/৪ বার শীত ও কম্প হইয়া জ্বর আসা-
******------+++++++
ডা: নরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন :---++
পাইরোজেনের প্রথম কথা-
দ্রুততর নাড়ী, বা নাড়ী ও গাত্রতাপের মধ্যে সামঞ্জস্যের অভাব।
দ্রুততর বাক্যটি তুলনামূলক। অতএব কাহার সহিত তুলনা করিয়া এ কথা বলা হইয়াছে তাহার একটু আলোচনা করা উচিত।
নোট : আপনারা সকলেই জানেন, সাধারণত একটি পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির সুস্থাবস্থায় গাত্রতাপ থাকে ৯৮.৪ ডিগ্রী এবং নাড়ীর গতি থাকে মিনিটে ৭২ বার।
অসুস্থ অবস্থায় গাত্রতাপ যত বৃদ্ধি পাইতে থাকে, নাড়ীর গতিও তত বৃদ্ধি পাইতে থাকে।
কিন্তু এই উভয় বৃদ্ধির মধ্যে সামঞ্জস্য থাকে যে, প্রত্যেক চিগ্রী উত্তাপ বৃদ্ধিতে নাড়ীর গতি বৃদ্ধি পায় ১০ বার, যেমন গাত্রতাপ যদি হয় ১০০.৪ ডিগ্রী নাড়ীর গতি হইবে ৯২ বার।
কিন্তু দূষিত জ্বর বা বিষাক্ত জুরে ইহার ব্যতিক্রম ঘটে। তখন গাত্রতাপ এবং নাড়ীর গতির মধ্যে কোন সামঞ্জস্য থাকে না। তখন গাত্রতাপ যতই প্রচণ্ড হউক না কেন, নাড়ীর গতি তাহা অপেক্ষা প্রবল হইয়া ওঠে যেমন গাত্রতাপ যদি হয় ১০০.৪ ডিগ্রী নাড়ীর গতি হইবে ১২০ বা ১৩০ বার।
এইরূপ দ্রুততর নাডী যেমন দূষিত জ্বর বা বিষাক্ত জুরের বিশেষত্ব তেমনই ইহা দ্রুততর পাইরাজেনেরও বিশেষত্ব। অবশ্য এরূপ একটি লক্ষণের উপর নির্ভর পারিয়াই পাইরোজেন ব্যবহার যে যুক্তিবিরুদ্ধ তাহা বলাই বাহুল্য।
তথাপি আমি বলিতে চাই যে,
প্রসবের পর স্বাভাবিক স্রাব বাধাধান্ত হইয়া,
ফোড়া বা কার্বাঙ্কলের স্রাব বাধাপ্রাপ্ত হইয়া,শরীরের রক্ত দূষিত হইবার ফলে, কিম্বাঅস্ত্রোপচারের দ্রুততর হইলে,
পাইরোজেন বেশ উপকারে আসে।
প্লেগ,ডিপথিরিয়া,ম্যালেরিয়া,ডিপথিরিয়াদুষ্টব্রণ প্রভৃতি
যে কোন রোগ বা যে কোন প্রদাহে পাইরোজেন যে কত সুফল প্রদ তাহা চিকিৎসক মাত্রেই বিদিত আছেন।
গর্ভস্থ সন্তান মরিয়া পচিয়া গিয়া প্রসূতির শরীরের রক্ত দূষিত হইয়া পড়িলেও পাইরোজেনকে ভুলিবেন না।
আবার প্রসবের পর ফুল আটকাইয়া থাকিলে আমরা কতই না বিব্রত হইয়া পড়ি, কিন্তু পাইরোজেন সম্বন্ধে পূর্বেই অবহিত থাকিলে এরূপ দুর্যোগ অচিরে অতিক্রম করা যায়।
অতএব সর্বত্র লক্ষ্য রাখা উচিত,
গাত্রতাপের তুলনায় নাড়ীর গতি কিরূপ।
মনে রাখিবেন, পাইরোজেনের নাড়ী গাত্রতাপের তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত। তবে একথাও মনে রাখিবেন যে, পাইরোজেনে গাত্রতাপ কম থাকে না।
সাংঘাতিক ম্যালেরিয়া, ডিপথিরিয়া বা দুষ্টব্রণে প্রবল শীত ও কম্প দিয়া জ্বর আসিবার পর উত্তাপ যেমন ঘন্টায় ঘন্টায় বৃদ্ধি পাইয়া অকস্মাৎ হিমাঙ্গ অবস্থা দেখা দেয়, পাইরোজেনেও তাহা আছে। পাইরোজেনে শীতও যেমন প্রবল, উত্তাপ ও তেমনই প্রবল কিন্তু জ্বর বেশি থাকুক বা কম থাকুক, গাত্রতাপ প্রচণ্ড হউক বা নাই হউক উত্তাপের অনুপাতে নাড়ী অতিরিক্ত দ্রুতগামী হইলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হইবার সম্ভাবনা দেখা দিলে একবার পাইরোজেনকে স্মরণ করিবেন।
আচার্য কেন্ট বলেন,
প্রবল জ্বরের সহিত মন্দগতি নাড়ী বা দ্রুততর নাড়ীর সহিত সামা্য জ্বর-উভয় ক্ষেত্রেই পাইরোজেন ব্যবহৃত হইতে পারে। তবে তবে প্রবল উত্তাপ ও কম্পনের অনুপাতে দ্রুততর নাড়ী ইহার বৈশিষ্ট্য।
পাইরোজেনের দ্বিতীয় কথা-
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যথা ও অস্থিরতা। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যথা পাইরোজেনের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য।
প্রবল শীত ও কম্প দিয়া অকস্মাৎ জ্বরাক্রমণ এবং তৎসঙ্গে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যথা; ব্যথায় একদও স্থির থাকিতে পারে না, ক্রমাগত ছটফট করিতে থাকে, অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ টিপিয়া দিতে বলে, উত্তাপ প্রয়োগ করিতে থাকে।
রোগী সর্বদা আবৃত থাকিতে চায়। উত্তাপ বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও আবরণ উন্মোচন করিতে চাহে না। ঘর্মাবস্থায়ও আবৃত থাকিতে চায়, শীত এত অধিক।
পূর্বে যে দ্রুততর নাড়ীর কথা বলিয়াছি তাহা পাইরোজেনের যেমন আাত্রেই বৈশিষ্ট্য, শীত ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যথাও ঠিক তদ্রূপ অর্থাৎ যেখানে শীত এবং ব্যথা নাই সেখানে কখনও পাইরোজেন হইতে পারে না। ব্যথার জন্য রোগী অনেক সময় বিছানা শক্ত বলিয়া বোধ করে এবং ক্রমাগত পার্শ্ব-পরিবর্তন করিতে ভালবাসে। নড়াচড়ায় উপশম।
এরূপ লক্ষণ আছে বটে, কিন্তু - পার্থক্য হল :-আর্নিকা,রাস টক্স এবংব্যাপটিসিয়ায়
আর্নিকা রোগীর মস্তক দেহ অপেক্ষা অনেক বেশি উত্তপ্ত,
রাস টক্সের ত্রিকোণাকার লালবর্ণ জিহবাগ্র অতি বিচিত্র,
ব্যাপটিসিয়ায় জ্বরের প্রাবল্য অপেক্ষা সংজ্ঞাহীনতা প্রবল।
পাইরোজেন রোগী জ্বরের উত্তাপ অবস্থায় ঘন ঘন প্রস্রাব করিতে থাকে।
জলপান করিবার কিছুক্ষণ পরে বমি।
পাইরোজেনের তৃতীয় কথা-
বাচালতা ও শীতার্ততা।
বাচালতা :
যেখানে যে কোন রোগে আমরা লক্ষ্য করিব যে, রোগী অত্যন্ত বাচাল হইয়া পড়িয়াছে, সেইখানেই আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত য, রোগটি বড় সহজ নয়।
রোগী একদণ্ড চুপ করিয়া থাকিতে পারে না, সহস্র নিষেধ সত্ত্বেও অবিরত কথা কহিতে চায় এবং স্বাভাবিক অবস্থা অপেক্ষা অত্যন্ত তাড়াতাড়ি কথা কহিতে থাকে।
নোট :
বাচালতা ক্ষয়দোষের একটি প্রধান নিদর্শন।
অবশ্য বলা বাহুল্য যে,
পাইরোজেনের অবস্থা এবং যক্ষ্মা প্রায় একই কথা।
ইহার প্রত্যেক আক্রমণ, প্রত্যেক অভিব্যক্তি যেন সাক্ষাৎ ধ্বংসস্বরূপ।
বিকার (প্রলাপ) অবস্থায় সে মনে করে, তাহার অনেকগুলি হাত-পা হইয়াছে, তাহার মাথা দেহ হইতে বিছিন্ন হইয়া গিয়াছে, পার্শ্ব-পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সে ভিন্ন লোক হইয়া যাইতেছে, ইত্যাদি।
শীতার্ততা :
শীতার্ততা সম্বন্ধে পূর্বেই বলিয়াছি যে,
সে সর্বদাই আবৃত থাকিতে ভালবাসে, এমন কি ঘর্মাবস্থায়ও আবরণ উন্মোচন করিতে চাচ্ছে না। পূর্বে যে গাত্রতাপ এবং নাড়ীর মধ্যে অসামঞ্জস্যের কথা বলিয়াছি তাহার সহিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যথা থাকিলে পাইরোজেন সকল জ্বরেই ব্যবহৃত হইতে পারে, এমন কি
( সালফার, ব্যাসিলিনাম, পাইরোজেন) বোধ করি একদিন শ্রেষ্ঠ ঔষধ বলিয়া গ্রাহ্য হইবে।ম্যালেরিয়া জ্বর,পার্নিসাস বা ম্যালিগ্ল্যান্ট ম্যালেরিয়া জ্বরে -
পাইরোজেনের চতুর্থ কথা-
দুর্গন্ধ ও জ্বালা।
জ্বালা :
কার্বাঙ্কল, ইরিসিপেলাস প্রভৃতি রোগে প্রদাহ অত্যন্ত জ্বালা করিতে থাকে।
এরূপক্ষেত্রে আমরা প্রায়ই,
( ল্যাকেসিস, আর্সেনিক ) প্রভৃতি ব্যবহার করি।
পার্থক্য :
ল্যাকেসিস রোগী অত্যন্ত বাচাল হয়, ল্যাকেসিসের বৃদ্ধি নিদ্রায়। ফোড়া হইতে যথেষ্ট পুঁজ বাহির না হওয়ার জন্য যন্ত্রণা।
দুর্গন্ধযুক্ত ;আর্সেনিক বাচাল নহে। আর্সেনিকেও দুর্গন্ধ আছে এবং আর্সেনিকেও নাড়ী খুব দ্রুত চলিতে থাকে কিন্তু আর্সেনিকের মধ্য দিবায় বা মধ্যরাত্রে বৃদ্ধি।
পাইরোজেনের সকল স্রাবই দুর্গন্ধযুক্ত।
বমি দুর্গন্ধযুক্ত;
দুর্গন্ধ পাইরোজেনের একটি বিশিষ্ট লক্ষণ।মূত্র দুর্গন্ধযুক্ত,ঘর্ম দুর্গন্ধযুক্তশ্বাস-প্রশ্বাস দুর্গন্ধযুক্ত,শ্লেষ্মা দুর্গন্ধযুক্ত,ঋতুস্রাব দুর্গন্ধযুক্ত।
পাইরোজেনের বিছানা শক্তবোধ হওয়া মনে রাখা উচিত।
লাইকোপোডিয়াম : নাক দিয়া রক্তস্রাব, নাকের পাতা নড়িতে থাকে (লাইকোপোডিয়াম) পেটের মধ্যে অতিরিক্ত বায়ু, শ্বাস-গ্রহণেও কষ্টবোধ, জলপান করিতেও কষ্টবোধ, বায়ু নিঃসরণে উপশম।
রক্তবমি, জলপান করিবার কিছুক্ষণ পরে বমি (ফসফরাস); বমির সহিত মল নির্গত হইতে থাকে (গ্যামাস), ক্রমাগত বমি, গরম জল খাইলে বমির উপশম। জ্বরের শীত ও উত্তাপ অবস্থায় পিপাসা।
জরায়ু হইতে রক্তস্রাব ও জরায়ুর শিথিলতা।
উদরাময়, অসাড়ে মলত্যাগ, রক্তভেদ, কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয়, ভগন্দর।
মূত্রস্বল্পতা: ২৪ ঘন্টায় মাত্র দুইবার প্রস্রাব; প্রস্রাবের জন্য প্রবল কুন্থন। অসাড়ে মূত্রত্যাগ। জ্বরের উত্তাপ অবস্থায় ঘন ঘন প্রস্রাব।
প্রস্রাবের বেগ দেখিতে রোগী বুঝিতে পারে তাহার জ্বর আসিতেছে।
শোথ,উদরী।অ্যাপেন্ডিসাইটিস।
প্লেগ,ম্যালিগ্ন্যান্ট ম্যালেরিয়া এবংব্যাসিলারী ডিসেন্টেরীতে মারাত্মক জাতীয় আমাশয়ে পাইরোজেনের কথা ভুলিবেন না।বিশেষত ম্যালিগ্রান্ট বা পার্নিসাস ম্যালেরিয়া সম্বন্ধে
বন্ধুগণ, আমার অনুরোধ আপনারা (পাইরোজেন এবং ব্যাসিলিনামকে ) একবার ব্যবহার করিয়া দেখিবেন। এবং ঔষধটিকে ক্রমবর্ধমান শক্তিতে প্রতিদিন বিহার অবস্থায় প্রয়োগ করিবেন। তবে এইরূপ ক্রমবর্ধমান শক্তিতে ঔষধ প্রয়োগ করিবার কালে তাহার নির্বাচন সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হওয়া উচিত নতুবা ইহাতে ক্ষতি হইবারই সম্ভাবনা অধিক।
বিষাক্ত খাদ্যদ্রব্যে বা দুর্গন্ধ নালা-নর্দমার দূষিত বাষ্পজনিত অসুস্থতা।
কাশি শুইলে বৃদ্ধি, উঠিয়া বসিলে নিবৃত্তি; যক্ষ্মার শেষ অবস্থায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বেদনার সহিত কাশি।
ফুসফুসের মধ্যে ফোড়া।
নিদারুণ জ্বালাযুক্ত ফোড়া-আঙ্গুলহাড়া।
অস্ত্র-প্রদাহ, জরায়ু-প্রদাহ, ফুসফুস-প্রদাহ।
পেটের দক্ষিণ পার্শ্ব বা আক্রান্ত স্থান চাপিয়া শুইলে উপশম।
মস্তিষ্ক-প্রদাহে দক্ষিণ হস্ত এবং দক্ষিণ পদের সঞ্চালন।
উপযুক্ত ঔষধের ব্যর্থতা :
রোগীর দেহে যদি সুপ্ত অবস্থায় পুঁজ তৈরীর প্রক্রিয়া চলমান থাকে তাহলে অনেক সময় লক্ষণ সদৃশ ঔষধ দিয়েও যখন আরোগ্য করতে ব্যর্থ হলে পাইরোজেন রোগীকে আরোগ্য করে।
সেপসিস-জনিত যে কোন উপসর্গের পর ভগ্ন-স্বাস্থ্য।
যক্ষ্মার শেষ অবস্থাতে প্রায়ই প্রয়োজনীয়।
পাইরোজেন সম্বন্ধে আমরা যতটুকু জানি তাহাপেক্ষা আরও অনেক জানা উচিত।
-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ
বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি,
ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা
প্রভাষক,
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ।
আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।
>Share by:
Make a comments as guest/by name or from your facebook:
Make a comment by facebook: