Undescended Testicle (Cryptorchidism)
পরিচিতি ও সংজ্ঞা:
Undescended testicle (ক্রিপটোরকিডিজম) একটি জন্মগত সমস্যা। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে একটি বা উভয় অণ্ডকোষ জন্মের সময় অণ্ডথলিতে (scrotum) থাকে না। এটি সাধারণত পেট বা তলপেটের কাছাকাছি আটকে থাকে।
এটি ছেলেশিশুদের জন্মগত সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা এবং প্রায় ৩-৫% পূর্ণ-মেয়াদী জন্ম নেওয়া শিশুদের মধ্যে এবং প্রিম্যাচিউর বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ৩০% পর্যন্ত হতে পারে।
আবিষ্কার ও ইতিহাস
ক্রিপটোরকিডিজম শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ "kryptos" (লুকানো) এবং "orchis" (অণ্ডকোষ) থেকে।
প্রথম চিকিৎসাগত নথি প্রাচীন গ্রীসে পাওয়া যায়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ সমস্যার কারণ, প্রভাব এবং চিকিৎসা সম্পর্কিত গবেষণা বিংশ শতাব্দীতে ব্যাপকভাবে শুরু হয়।
অন্য নাম:
- Cryptorchidism
- Retained Testicle
- Hidden Testicle
- Maldescended Testicle
1. হরমোনজনিত সমস্যা:
টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে ত্রুটি।
হরমোনের অপ্রতুলতা যার ফলে অণ্ডকোষ অণ্ডথলিতে নেমে আসতে পারে না।
2. জেনেটিক ত্রুটি:
GATA4 এবং INSL3 জেনেটিক মিউটেশন।
3. গর্ভকালীন প্রভাব:
অকাল প্রসব (প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি)।মায়ের গর্ভাবস্থায় ধূমপান, অ্যালকোহল গ্রহণ বা মাদক সেবন।
4. শারীরিক বাধা:
অণ্ডকোষের পথে টিস্যু বা শারীরিক গঠনগত কোনো বাধা।
প্রকারভেদ
1. Palpable (অনুভবযোগ্য):
হাত দিয়ে স্পর্শ করলে অণ্ডকোষ টের পাওয়া যায়, যদিও এটি অণ্ডথলিতে অবস্থান করে না।
2. Non-palpable (অনুভবযোগ্য নয়):
হাত দিয়ে স্পর্শ করলে অণ্ডকোষ পাওয়া যায় না।
3. Ectopic Testicle:
অণ্ডথলির পরিবর্তে অন্য জায়গায় যেমন উরু বা তলপেটের কোনো অস্বাভাবিক স্থানে অবস্থান করে।
4. Retractile Testicle (প্রত্যাহৃত):
অণ্ডকোষ মাঝে মাঝে অণ্ডথলিতে ফিরে আসে এবং আবার উপরে চলে যায়।
লক্ষণাবলী
1. অণ্ডথলিতে একটি বা উভয় অণ্ডকোষের অনুপস্থিতি।2. অণ্ডথলির অসমান আকার।3. শৈশব বা বয়ঃসন্ধিতে যৌনাঙ্গের বৃদ্ধি সঠিক না হওয়া।4. পেটের ব্যথা বা অস্বস্তি (বিরল ক্ষেত্রে)।5. যৌনতার প্রতি মনোযোগে ঘাটতি (যদি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা থাকে)।
ইনভেস্টিগেশন (পরীক্ষা-নিরীক্ষা)
1. শারীরিক পরীক্ষা:
চিকিৎসক অণ্ডথলি ও আশেপাশের এলাকা পরীক্ষা করেন।
2. ইমেজিং টেস্ট:
আল্ট্রাসনোগ্রাফি:
অণ্ডকোষের অবস্থান সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।
MRI বা CT স্ক্যান:
জটিল বা অস্বাভাবিক ক্ষেত্রে।
3. হরমোন পরীক্ষা:
রক্তে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ পরীক্ষা করা হয়।
4. ল্যাপারোস্কপি:
অণ্ডকোষের অবস্থান চিহ্নিত করার জন্য একটি ছোট ক্যামেরা ব্যবহার।
জটিলতা (Complications) :
1. বন্ধ্যত্ব (Infertility):
সঠিকভাবে চিকিৎসা না হলে শুক্রাণুর উৎপাদন কম হতে পারে।
2. টেস্টিকুলার ক্যান্সার:
অণ্ডকোষ না নামলে এ ঝুঁকি বেড়ে যায়।
3. টেস্টিকুলার টরশন:
অণ্ডকোষের মোচড়, যা রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করে।
4. ইনগুইনাল হার্নিয়া:
অণ্ডকোষের সাথে তলপেটের অংশ বাইরে চলে আসে।
5. মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব:
শিশুর মধ্যে হীনমন্যতা বা আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিতে পারে।
ভাবিফল (Prognosis) :
সময়মতো চিকিৎসা করা হলে শিশুর স্বাভাবিক যৌন ও প্রজনন ক্ষমতা বজায় থাকে।চিকিৎসা বিলম্বিত হলে বন্ধ্যত্ব ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
প্রতিরোধ (Prevention) :
গর্ভাবস্থায় মায়েদের সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা।ধূমপান, মদ্যপান, এবং অন্যান্য মাদক দ্রব্য এড়িয়ে চলা।প্রাকৃতিকভাবে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা।
ঘরোয়া চিকিৎসা:
কোনো প্রমাণিত ঘরোয়া চিকিৎসা নেই। তবে শিশুর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করা এবং নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেওয়া যেতে পারে।
ব্যবস্থাপনা (Management):
1. হরমোন থেরাপি (Hormonal Therapy):
HCG (Human Chorionic Gonadotropin) ইনজেকশন দিয়ে অণ্ডকোষকে নেমে আসতে সাহায্য করা।
2. অপারেশন (Surgical Treatment):
Orchiopexy: অণ্ডকোষকে অণ্ডথলিতে স্থাপন করা।
এটি ৬ মাস থেকে ১২ মাস বয়সের মধ্যে সম্পন্ন করা উত্তম।
3. প্রতিস্থাপন (Testicular Prosthesis):
অনুপস্থিত অণ্ডকোষ কৃত্রিমভাবে স্থাপন।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন:
1. শিশুর জন্মের ৬ মাস পরও অণ্ডকোষ না নামলে।2. টিনেজ বা বয়ঃসন্ধিকালে অণ্ডথলিতে স্বাভাবিক পরিবর্তন না হলে।
3. পেটে ব্যথা বা অণ্ডকোষের ব্যথা অনুভূত হলে।
খাদ্যতালিকা:
যা খাওয়া যাবে:
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার (মাছ, মাংস, ডিম)।শাকসবজি (পালং শাক, বাঁধাকপি)।ফলমূল (পেঁপে, আপেল, কমলা)।বাদাম এবং দুধ।পর্যাপ্ত পানি পান।
যা খাওয়া যাবে না:
অতিরিক্ত চর্বি বা তেলযুক্ত খাবার।ফাস্ট ফুড এবং জাঙ্ক ফুড।অতিরিক্ত চিনি বা প্রসেসড খাবার।মদ্যপান বা ধূমপান।
Undescended Testicle (Cryptorchidism) এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
হোমিওপ্যাথির দৃষ্টিভঙ্গি:
হোমিওপ্যাথি এই অবস্থাকে দেহের সামগ্রিক ভারসাম্যের (vital force) ব্যাঘাত হিসেবে বিবেচনা করে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা রোগীর শারীরিক, মানসিক এবং সংবেদনশীল অবস্থার উপর ভিত্তি করে প্রয়োগ করা হয়।
প্রতিটি রোগীর আলাদা উপসর্গ এবং কারণ থাকায় ব্যক্তিগতকৃত চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উল্লেখযোগ্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধ:
নিম্নে কিছু ঔষধ দেওয়া হলো যা রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী প্রয়োগ করা হয়।
1. Aurum Metallicum:
অণ্ডকোষ বিকাশে সাহায্য করে।রোগী মানসিক অবসাদগ্রস্ত বা আত্মবিশ্বাসের অভাব অনুভব করলে উপযোগী।সঠিকভাবে অণ্ডকোষ না নামা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যথায় কার্যকর।
2. Calcarea Carbonica:
যদি রোগী মোটা, অলস এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হয়।
3. Calcarea Phosphoricum :হরমোনজনিত সমস্যায় ব্যবহৃত।
প্রিমিচিওর শিশুদের ক্ষেত্রে ক্যালকেরিয়া ফস অধিকতার কার্যকরী একটি ওষুধ এবং শিশুদের ডেভেলপমেন্ট অ্যারেস্টেড এর ক্ষেত্রে ক্যালকেরিয়া কাব, ক্যালকেরিয়া ফস সর্বোচ্চভাবে কার্যকরী ঔযধ।
4.. Conium Maculatum:
অণ্ডকোষে ব্যথা বা অস্বস্তি থাকলে।
টিস্যুর স্থবিরতা বা কঠোরতা দূর করতে ব্যবহৃত।
5. Clematis Erecta:
অণ্ডকোষ ফোলা, ব্যথা এবং অস্বাভাবিক অবস্থায় কার্যকর।
6. Baryta Carbonica:
যদি শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধি স্বাভাবিকের তুলনায় ধীর হয়।
টেস্টোস্টেরনের অভাব থাকলে উপযোগী।
7. Rhododendron:
ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সমস্যার বৃদ্ধি হলে।
অণ্ডকোষে ব্যথা বা অস্বস্তি থাকলে।
8. Silicea:
দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং বৃদ্ধি সংক্রান্ত জটিলতায়।
8. Thuja Occidentalis:
জন্মগত বা জেনেটিক সমস্যার ক্ষেত্রে কার্যকর।
অণ্ডকোষের বিকাশ না হলে বা ত্বকের ফোলাভাব থাকলে।
প্রয়োগের পদ্ধতি:
ঔষধ সঠিক শক্তি এবং মাত্রায় ব্যবহার করা হয়। সাধারণত 30C বা 200C বা ০/২, ০/৩ উপরে শক্তি বেশি কার্যকর। তবে রোগীর অবস্থা ও শারীরিক প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী পটেন্সি পরিবর্তন করা হয়।
দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে উচ্চ পটেন্সি ও গভীর ক্রিয়াশীল ঔষধ প্রয়োগ করা হয়।
বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথদের মতামত:
1. ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান:
হ্যানিম্যানের মতে, জন্মগত সমস্যার চিকিৎসায় গভীর ক্রিয়াশীল ঔষধ যেমন Calcarea Carbonica বা Sulphur ব্যবহার করা উচিত।তিনি এই অবস্থাকে শরীরের জীবনীশক্তির প্রাকৃতিক প্রবাহে বিঘ্ন বলে চিহ্নিত করেন।
2. ডাঃ জে টি কেন্ট:
কেন্টের মতে, Aurum Metallicum এবং Baryta Carbonica শিশুর দেরিতে বৃদ্ধি ও বিকাশে অত্যন্ত কার্যকর।তিনি মানসিক এবং শারীরিক দিকের ভারসাম্যের উপর জোর দেন।
3. ডাঃ ক্লার্ক:
ক্লার্ক এই অবস্থার জন্য গভীর ক্রিয়াশীল পলিক্রেস্ট ঔষধ যেমন Silicea ও Thuja ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, সংবেদনশীল ও পরিবেশগত কারণ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।
4. ডাঃ বোরিক:
বোজর্জের মতে, জন্মগত সমস্যাগুলো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ এবং ধৈর্যের সঙ্গে সমাধান করা যায়।
চিকিৎসার লক্ষণ:
1. হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখা।2. অণ্ডকোষ সঠিক স্থানে নেমে আসতে সাহায্য করা।3. সংশ্লিষ্ট ব্যথা ও ফোলাভাব কমানো।4. মানসিক এবং শারীরিক শক্তি উন্নত করা।
সতর্কতা:
রোগীর সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে ।চিকিৎসা বিলম্বিত না করা।চিকিৎসকের নির্দেশ ব্যতীত উচ্চ পটেন্সি ব্যবহার এড়িয়ে চলা।
Undescended Testicle (Cryptorchidism) - হোমিওপ্যাথিক রোগলিপি
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগলিপি তৈরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নির্ধারণ করে যে রোগীর শারীরিক, মানসিক এবং সংবেদনশীল অবস্থা অনুযায়ী কোন ঔষধটি সর্বাধিক কার্যকর হবে। নিম্নে এই অবস্থার হোমিওপ্যাথিক রোগলিপি বিশদভাবে আলোচনা করা হলো।
১. রোগীর সম্পূর্ণ ইতিহাস সংগ্রহ
জন্মকালীন এবং প্রারম্ভিক ইতিহাস:
গর্ভাবস্থায় কোনো জটিলতা ছিল কি।শিশুর প্রসবকালীন সময় (স্বাভাবিক না সিজারিয়ান?)।অণ্ডকোষের অবস্থান প্রসবের সময় কেমন ছিল?পরিবারে জন্মগত সমস্যার ইতিহাস।
শারীরিক গঠন ও বৃদ্ধি:
শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়েছে কি না।ওজন এবং উচ্চতার বৃদ্ধির ধারা।অণ্ডকোষে কোনো ব্যথা বা অস্বস্তি আছে কি?কুঁচকির এলাকায় ফোলাভাব বা চাপ অনুভব।
মানসিক এবং আবেগিক লক্ষণ:
রোগীর স্বাভাবিক আচরণ (লজ্জাশীল, আত্মবিশ্বাসহীন, বা জেদি)।শিশুর মানসিক বৃদ্ধি এবং স্কুলের পারফরম্যান্স।অপমানের ভয় বা অবজ্ঞা অনুভব।
অতিরিক্ত লক্ষণ:
অন্য কোনো হরমোনজনিত সমস্যা (যেমন: থাইরয়েড বা বৃদ্ধি সমস্যা)।ত্বকের অবস্থা, ঘামের ধরণ, এবং রক্ত সঞ্চালনের গতি।ঠাণ্ডা বা গরম আবহাওয়ার প্রতি সংবেদনশীলতা।
২. শারীরিক লক্ষণ এবং পরীক্ষা
অণ্ডকোষের স্থান এবং অবস্থান:
অণ্ডকোষ কোথায় অবস্থান করছে (কুঁচকির পথে, তলপেটে, নাভির কাছাকাছি)?অণ্ডকোষ অনুভব করা যায় কি না?
ব্যথার ধরণ এবং সময়কাল:
ব্যথা হলে তা টান বা চাপের মতো, অথবা শীতল অনুভূতি?ব্যথা কী কোনো বিশেষ কার্যক্রমে বাড়ে বা কমে?ফোলাভাব এবং গঠনগত বৈশিষ্ট্য:অণ্ডকোষে ফোলাভাব আছে কি না।চামড়ার রঙ এবং অণ্ডথলির তাপমাত্রা।
৩. হোমিওপ্যাথিক রোগলিপির মূল বিষয়সমূহ
মিয়াজম (Miasm):
জন্মগত সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে Psoric এবং Syphilitic মিয়াজমের প্রভাব থাকতে পারে।যদি রোগীর পরিবারে জেনেটিক সমস্যা থাকে, তবে Sycotic Miasm বিবেচনা করা হয়।
লক্ষণগত বিবরণ (Symptomatology):
1. শারীরিক লক্ষণ:
অণ্ডকোষের সঠিক স্থানে না নামা।স্থানীয় ব্যথা, ফোলাভাব বা জ্বালাপোড়া।কুঁচকির অঞ্চলে ভারী অনুভূতি।
2. মানসিক লক্ষণ:
অপমানবোধ এবং নিরাপত্তাহীনতা।সামাজিক পরিস্থিতিতে অস্বস্তি।নিজেকে অন্যদের তুলনায় দুর্বল মনে করা।
3. Modalities (প্রভাবশালী কারণ):
ঠাণ্ডায় অবস্থার অবনতি।চাপে বা কুঁচকির এলাকায় চাপ দিলে ব্যথা বৃদ্ধি।সকালের তুলনায় বিকেলে বেশি অস্বস্তি।
৪. হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্ধারণের ধাপ
প্রধান লক্ষণ অনুযায়ী ঔষধ নির্বাচন:
যদি রোগীর বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয় এবং সে মোটা বা অলস হয়, তবে Calcarea Carbonica।যদি মানসিক অবসাদ বা আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে, তবে Aurum Metallicum।যদি ব্যথা এবং টিস্যুর শক্ত হওয়ার লক্ষণ থাকে, তবে Conium Maculatum।যদি অণ্ডকোষের স্থানীয় ফোলাভাব থাকে, তবে Clematis Erecta।
মিয়াজম সংশোধনের জন্য ঔষধ:
Psoric Miasm: Sulphur।
Sycotic Miasm: Thuja Occidentalis।
Syphilitic Miasm: Mercurius Solubilis।
ব্যক্তিগত লক্ষণ অনুযায়ী নির্বাচন:
শারীরিক এবং মানসিক উপসর্গ সমন্বিত করে পলিক্রেস্ট ঔষধ নির্ধারণ করা হয়।
রোগলিপি: একটি বাচ্চার Undescended Testicle (Cryptorchidism)।
রোগীর সাধারণ বিবরণ :
নাম: করিমবয়স: ১ বছর ৭ মাসলিঙ্গ: পুরুষ শিশু।ওজন: [উল্লেখ করুন]উচ্চতা: [উল্লেখ করুন]
অবস্থার স্থিতি:
জন্ম থেকেই অণ্ডকোষ অণ্ডথলিতে নামেনি।
রোগের ইতিহাস
জন্মকালীন ইতিহাস:
প্রসবকাল: সিজারিয়ান ডেলিভারি।
৩৭ সপ্তাহ এ জন্ম।
প্রিমিচিওর শিশু।শিশু ইনকিউবেটরের ছিল ৫ দিন ।
নোট : হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের উচিত হবে , শিশুর "বার্থ ডেলেভারি সার্টিফিকেট" রোগীর অভিভাবকের দের কাছ থেকে চেয়ে নিতে হবে, সেখানে শিশুর জন্মকালীন সমস্ত তথ্য তাতে উল্লেখ থাকে।
প্রসবকালীন সময় কোনো জটিলতা ছিল কি? হ্যাঁ, গর্ভকালীন মায়ের ডায়াবেটিস এবং এনিমিয়া ছিল।
বাচ্চার জন্মের ওজন: ২.৫ কেজি।
শারীরিক বৃদ্ধি:
ওজন এবং উচ্চতার বৃদ্ধি স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা কম।
দাঁত ওঠা এবং হাঁটতে শেখা দেরিতে হয়েছে।
অণ্ডকোষের সঠিক অবস্থান নির্ধারণ করতে কুঁচকির অঞ্চল পর্যবেক্ষণে পাওয়া যায়নি।
অন্য কোনো জন্মগত সমস্যা:
মায়ের গর্ভকালীন সময় উচ্চ রক্তচাপ এবং পুষ্টির অভাব ছিল।
বর্তমান সমস্যা এবং লক্ষণসমূহ
1. অণ্ডকোষের অবস্থান:
ডান পাশের অণ্ডকোষ অণ্ডথলিতে অনুপস্থিত।অনুভূত হলে, এটি তলপেটের কুঁচকির দিকে পাওয়া যায়।বাম পাশের অণ্ডকোষ সঠিক স্থানে আছে।
2. ফোলাভাব বা ব্যথা:
মাঝে মাঝে কুঁচকির দিকে টান অনুভব করে।কোনো চর্ম সমস্যা বা রঙ পরিবর্তন নেই।
3. স্নায়বিক উপসর্গ:
ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় অস্বস্তি বেড়ে যায়।হঠাৎ নড়াচড়া বা খেলাধুলার সময় কুঁচকিতে অস্বস্তি।
4. শারীরিক উপসর্গ:
রাতে ঘাম বেশি হয়।ঠাণ্ডায় খুব সংবেদনশীল।খাওয়া-দাওয়ার প্রতি আগ্রহ কম।
5. মানসিক উপসর্গ:
বাচ্চা লাজুক এবং সহজে মেজাজ হারায়।অন্যদের তুলনায় নিজেকে দুর্বল মনে করে।মায়ের সঙ্গে বেশি নির্ভরশীল।
টিকা দেওয়ার ইতিহাস :
জন্মের পর থেকে এক বছর পর্যন্ত সকল প্রকার টিকা বাচ্চাকে দেওয়া হয়েছে তার টিকার কার্ডে টিকার নাম উল্লেখ আছে।
পরিবারের ইতিহাস :
পিতামাতার স্বাস্থ্য:
বাবা: উচ্চ রক্তচাপ এবং চুল পড়ার সমস্যা।
মা: ডায়াবেটিস এবং গর্ভকালীন অপুষ্টি।
পরিবারে জেনেটিক ইতিহাস:
মা বা বাবার কোনো পরিবারে জন্মগত সমস্যার ইতিহাস নেই।দাদা : ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ,দাদী : বাতের বেদনা,নানা : অ্যাজমাটিক সমস্যা,নানী : রক্তশূন্যতা, নিম্ন রক্তচাপ।
পরীক্ষার ফলাফল (Investigation)
আল্ট্রাসাউন্ড (Pelvic Ultrasound):ডান পাশের অণ্ডকোষ কুঁচকিতে অবস্থান করছে।
হরমোনাল পরীক্ষা:
টেস্টোস্টেরন লেভেল কিছুটা কম।
স্ক্রোটাল থার্মোগ্রাফি:
রক্ত সঞ্চালনের ত্রুটি নির্ধারণ।
মিয়াজম এবং রোগলিপির মূল্যায়ন :
প্রাথমিক মিয়াজম: Psoric
দ্বিতীয় মিয়াজম: Sycotic
জন্মগত সমস্যাগুলোতে মিয়াজম সংশোধনের জন্য গভীর ক্রিয়াশীল ঔষধ প্রয়োজন।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পরিকল্পনা
1. Sulphur ২০০C:
2. Calcarea Posphoricum :রোগের গভীর ক্রিয়া সংশোধনের জন্য।বাচ্চার ঠাণ্ডায় সংবেদনশীলতা এবং রাতের ঘাম কমানোর জন্য।
খাদ্যের পুষ্টি সঠিকভাবে পরিপোষণের জন্য।
3. Calcarea Carbonica :
শারীরিক বৃদ্ধি ও হাড়ের বিকাশে সাহায্য করতে।স্থূলতা এবং অলসতার জন্য কার্যকর।
4. Baryta Carbonica :
মানসিক বিকাশ এবং লাজুক স্বভাব দূর করতে।টেস্টিকুলার বৃদ্ধিতে সহায়ক।
5. Clematis Erecta :
অণ্ডকোষ সঠিক স্থানে নামাতে সাহায্য করবে।টিস্যু শক্ত হলে কার্যকর।
ব্যবস্থাপনা এবং জীবনধারা নির্দেশনা
1. বাচ্চার সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করুন।2. ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করার জন্য পর্যাপ্ত উষ্ণ পোশাক পরান।3. ফিজিওথেরাপি বা কুঁচকির অঞ্চল ম্যাসাজ করার পরামর্শ নিতে পারেন।
4. চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রাখুন এবং প্রয়োজনে শল্য চিকিৎসা বিবেচনা করুন।
উপসংহার:
Undescended testicle-এর চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি কার্যকর একটি পদ্ধতি। এটি রোগীর সার্বিক অবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে অণ্ডকোষের স্বাভাবিক অবস্থান নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। তবে, এই চিকিৎসার জন্য একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথের সঙ্গে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Undescended testicle চিকিৎসাযোগ্য একটি সমস্যা। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিলে জটিলতা এড়ানো যায় এবং সন্তানের স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব।
-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ
বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি,
ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা
প্রভাষক,
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ।
আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।
আসছে পরবতি আলোচনা :
>Share by:
Make a comments as guest/by name or from your facebook:
Make a comment by facebook: