একজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত যুবকের চিকিৎসার কেস এনালাইসিস।



এক পক্ষাঘাতগ্রস্ত যুবক case Analysis by Homoeopathic Treatment.

 নাম : পরাগ সেন। 
এক যুবক, বয়স ২৪,  
ব্লাড গ্রুপ :  O+ (পজেটিভ)। 

কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত পক্ষাঘাতগ্রস্ত। পায়ের মাংসপেশীতে সুড়সুড় ভাব। অসহ্য ব্যথায় দিন-রাত্রি চিৎকার করছে। পায়ের আঙুল ও নাড়াতে পারছেনা। দেহের ঊর্ধাংশে বিশেষ ব্যথা নেই। 

অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসায় কোন সুফল পাওয়া যায়নি।

গঠন
রোগা লম্বা চেহারা। বয়সের তুলনায় একটু বেশী লম্বা। শরীরের হাড়গুলো দুর্বল। হাত দিয়ে চাপ দিলেও ব্যথা লাগে।

 শৈশব : 
শৈশব থেকেই ও দুর্বল, পুষ্টির অভাবে প্রথম থেকে ভুগছে। সর্দি, কাশি, জ্বর, পেটের অসুখে ভুগছে।

হাঁটাচলা কথাবলা, দাঁত ওঠা দেরীতে। 

পড়াশুনায় ভাল। কিন্তু বেশীক্ষণ পড়তে পারে না একটু পড়লেই মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়।

মানসিক : 
অত্যন্ত চঞ্চলমতি, 
কোন কাজে বেশীক্ষণ মনঃসংযোগ করতে পারে না। 
এক জায়গায় বশীক্ষণ থাকতে পারে না। 
অত্যন্ত খিটখিটে। 
সাহস ও শক্তির অভাব। 


খাবার : 
প্রচুর ক্ষুধা ও তৃষ্ণা আছে। 
কিন্তু পরিপাক শক্তি দুর্বল। 
দুধ সহ্য হয় না। 
নোস্তা, মাছ, মাংস পছন্দ। 



ছেলেবেলা থেকে সর্দি কাশি জ্বর ও পেটের অসুখ রক্ত আমাশা হয়েছিল, অ্যালোপ্যাথিক ঔষধ এন্টিবায়োটিক খাওয়ার পর আমাশা সেরে যায়, কিন্তু পক্ষাঘাতে নিম্নাঙ্গ অবশ হয়ে যায়। ছেলেবেলা থেকে যৌন উত্তেজনা খুব বেশী। প্রচুর হস্তমৈথুনের অভ্যাস ছিল। কুড়ি বছর বয়স থেকে এক অবৈধ যৌন সম্পর্কে লিপ্ত আছে।

বংশগত :
 বংশে বাত, হাঁপানি ও রক্তস্রাবী অর্শের ইতিহাস আছে।


Rx, হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ক্যালকেরিয়া ফস ১ হাজার ২ মাত্রা দুই দিন দুই সকাল।

একমাস পরে, 
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ক্যালকেরিয়া ফস ১০ হাজার ১ মাত্রা প্রয়োগে করা হয়। 

চার মাস পর...... 

রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে এবং নতুন জীবন লাভ করে।

ছয় মাস পর রোগী আবার আসেন এবং বলেন, ছোটবেলার সর্দি, কাশি, জ্বর দেখা দেয়, 

অতএব, রোগীর ছোটবেলার সর্দি, কাশি, জ্বর, এবং তার বংশগত কারণেই তার শারীরিক অবস্থা বারবার ভালো ছিল না তাই হোমিওপ্যাথিক ঔষধ টিউবারকুলিনাম  ২০০ এক মাত্র এক সকাল সেবন এর জন্য  দেওয়া হয়। 

 পরবর্তী তিন মাস পরে জানা গেল তার ঠান্ডা কাশি আর তেমন একটা লাগেনা বর্তমান সে ভালোই আছে। 


চিকিৎসার বিশ্লেষণ :

প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, 
রোগীর ব্লাড গ্রুপ O+ (পজেটিভ)।

যদিও ব্লাড গ্রুপ সাধারণত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরাসরি প্রভাব ফেলে না, তবে এটি রোগীর সামগ্রিক শারীরিক, মানসিক এবং পুষ্টির তথ্য বিশ্লেষণে সহায়ক হতে পারে।

 ব্লাড গ্রুপ O+ এর লোকেদের সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ বৈশিষ্ট্য:

O+ ব্লাড গ্রুপের বৈশিষ্ট্যসমূহ:

1. পরিপাক শক্তি:

প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার (যেমন মাছ, মাংস) সহজে হজম করতে পারে।

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার অনেক সময় সহ্য করতে সমস্যা হয়।

2. ইমিউন সিস্টেম:

তুলনামূলক শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে ইনফ্ল্যামেটরি রেসপন্স প্রবণতা থাকতে পারে।

3. মানসিক গঠন:

সাধারণত মানসিক চঞ্চলতা এবং অ্যাড্রিনাল রেসপন্স প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

4. স্বাস্থ্য ঝুঁকি:

সংক্রমণ, সংবেদনশীল পরিপাকতন্ত্র এবং প্রদাহজনিত অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

পুষ্টির অভাব এবং ভারসাম্যহীন খাদ্যাভ্যাসের কারণে হাড়ের সমস্যার ঝুঁকি থাকে।

প্রাথমিক ওষুধ: Calcarea Phos 1M

নির্বাচনের কারণ:

রোগীর দুর্বল শারীরিক গঠন, হাড়ের নরম ভাব, এবং বিকাশের বিলম্ব।

রোগীর মনের অতিরিক্ত চঞ্চলতা ও সাহসের অভাব।

পুষ্টির ঘাটতি।


উপকার:

রোগী পক্ষাঘাত থেকে ধীরে ধীরে সেরে ওঠেন।

পায়ের ব্যথা কমে যায় এবং নড়াচড়া শুরু হয়।


পুনরায় Calcarea Phos 10M

রোগীর উন্নতির ধারা বজায় রাখতে উচ্চ শক্তির ডোজ প্রয়োগ করা হয়।


পরবর্তী লক্ষণ:

চার মাস পরে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে ছোটবেলার সর্দি, কাশি এবং জ্বর ফিরে আসে।

নতুন ওষুধ: Tuberculinum 200

নির্বাচনের কারণ:

রোগীর ছোটবেলার বারবার সর্দি, কাশি, জ্বর এবং দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা।

রোগীর বংশগত ইতিহাস (বাত ও হাঁপানি)।

সঠিক মিয়াজম্যাটিক চিকিৎসার জন্য।


উপকার:

রোগী তিন মাসের মধ্যে সর্দি, কাশি থেকে মুক্তি পায় এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে শুরু করে।

গভীর বিশ্লেষণ:

১. শারীরিক এবং মানসিক প্যাটার্নের মূল্যায়ন:

পরাগের কেসটি মূলত ক্যালকেরিয়া ফসফোরিকা কনস্টিটিউশনাল রেমেডির মধ্যে পড়ে।

রোগীর বিকাশের বিলম্ব, দুর্বল হাড়, এবং পুষ্টিহীনতার লক্ষণ ক্যালকেরিয়া ফসফোরিকার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।

Tuberculinum রোগীর টিউবারকুলার মিয়াজম সম্বন্ধীয় সমস্যাগুলি দূর করে।


২. যৌন ইতিহাসের প্রভাব:

অতিরিক্ত যৌন উত্তেজনা এবং হস্তমৈথুন রোগীর শারীরিক দুর্বলতার প্রধান কারণগুলোর একটি। তবে মূল সমস্যা রোগীর কনস্টিটিউশন এবং মিয়াজম্যাটিক প্রকৃতির।

৩. পুনরাবৃত্তি হওয়া সর্দি-কাশি:

রোগীর শৈশবকালীন সংক্রামক রোগ এবং পুষ্টিহীনতা রোগীর প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে তোলে। Tuberculinum এই পুনরাবৃত্তি সমস্যার জন্য একদম যথাযথ।

উপসংহার:

পরাগ সেনের চিকিৎসায় সঠিক রেমেডি এবং ধৈর্যশীল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে রোগটি সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করেছে।

 চিকিৎসার মূলমন্ত্র ছিল:

রোগীর কনস্টিটিউশন বুঝে চিকিৎসা।

সঠিক মিয়াজম্যাটিক ওষুধ প্রয়োগ।

ধাপে ধাপে উচ্চ শক্তির ওষুধ প্রয়োগ এবং পর্যবেক্ষণ।

রোগী বর্তমানে সুস্থ এবং একটি পূর্ণ জীবনযাপন করছে।



-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ
বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি, 
ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা    
প্রভাষক, 
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ। 



আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। 


>Share by:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন