খোস পাচড়া (Scabies) হলো একটি ত্বকের রোগ যা মূলত Sarcoptes scabiei নামক পরজীবী দ্বারা সংক্রমিত হয়। এটি অত্যন্ত সংক্রামক এবং সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে অথবা সংক্রামিত জামা-কাপড় বা বিছানা ব্যবহার করলে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ত্বকের নিচে ঢুকে এবং চুলকানি, লাল দাগ ও ছোট ছোট গুটির সৃষ্টি করে। এই রোগটি সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে আসে।
অন্য নাম:
Scabies
খোসঁ পাচড়া এর আবিষ্কার :
খোসঁ পাচড়া বা স্ক্যাবিস আবিষ্কৃত হয় ১৭শ শতকে, যখন বিজ্ঞানীরা এই রোগের মূল কারণ নির্ধারণ করেন। ১৬৮৭ সালে ইতালির চিকিৎসক জিওভান্নি কস্টা প্রথম স্ক্যাবিস রোগের মূল কারণ হিসেবে পরজীবীকে চিহ্নিত করেন। যদিও স্ক্যাবিস অনেক আগে থেকেই মানুষদের মধ্যে পরিচিত ছিল, কস্টা প্রথম বিজ্ঞানী যিনি এই রোগের পরজীবীকে আবিষ্কার করেছিলেন এবং স্ক্যাবিসকে একটি সংক্রামক রোগ হিসেবে সনাক্ত করেছিলেন।
কারণসমূহ:
Scabies বা খোস পাচড়া মূলত Sarcoptes scabiei পরজীবী দ্বারা সংক্রমিত হয়। এই পরজীবী ত্বকের নিচে গর্ত তৈরি করে এবং ডিম পাড়ে, যার ফলে তীব্র চুলকানি এবং ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
1. ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাল সংক্রমণ:
শরীরের ত্বকে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে খোস-পাচড়া হতে পারে।
2. অ্যালার্জি:
কোনো নির্দিষ্ট খাদ্য বা রাসায়নিকের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়ার কারণে ত্বকে খোস-পাচড়ার সৃষ্টি হতে পারে।
3. আর্দ্রতা ও ঘাম:
অতিরিক্ত ঘাম এবং আর্দ্র ত্বকে দীর্ঘক্ষণ থাকার ফলে খোস-পাচড়া হতে পারে।
4. ইমিউন সিস্টেমের সমস্যা:
শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হলে বা কোনো রোগের কারণে ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, যা খোস-পাচড়ার রূপ নিতে পারে।
প্রকারভেদ:
খোস পাচড়ার বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে, তবে সবচেয়ে সাধারণ দুইটি হলো:
1. সাধারণ স্কেবিজ:
সাধারণভাবে ত্বকের উপরের স্তরে দেখা যায়।
2. নরওয়েজিয়ান স্কেবিজ:
বেশি গুরুতর, যেখানে ত্বক ঘন ও পুরু হয়ে যায়, এবং অনেক বেশি পরিমাণ পরজীবী থাকে।
লক্ষণাবলী:
------তীব্র চুলকানি, বিশেষ করে রাতে।
------ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি।
------ছোট ছোট গর্ত বা টানেলের মত দাগ।
------হাত, আঙুলের ফাঁক, কনুই, কোমর, স্তন, নিম্নপিঠ, গোপনাঙ্গ ইত্যাদি স্থানে বেশি ক্ষত।
ইনভেস্টিগেশন:
রোগীর ইতিহাস এবং লক্ষণ দেখে সাধারণত খোস পাচড়া শনাক্ত করা হয়।
ত্বকের স্ক্র্যাপিং (scraping) পরীক্ষা করে পরজীবী বা ডিম পরীক্ষা করা হয়।
জটিলতা:
--------তীব্র চুলকানির ফলে ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে।
--------ত্বকে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হতে পারে, যেমন Impetigo।
--------দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের ফলে নরওয়েজিয়ান স্কেবিজ তৈরি হতে পারে।
ভাবিফল:
যদি সময়মতো চিকিৎসা না হয়, তবে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ছাড়া, অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও থাকে। দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের ফলে চর্মরোগ বা অন্য জটিলতাও হতে পারে।
প্রতিরোধ:
---------আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
---------সংক্রামিত জামাকাপড় ও বিছানাপত্র গরম পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করা।
---------পরিবার বা একই ঘরে থাকা অন্যান্যদেরও স্কেবিজের চিকিৎসা নেওয়া।
---------ত্বক পরিষ্কার রাখা: প্রতিদিন ভালোভাবে গোসল করা এবং ত্বক শুষ্ক ও পরিষ্কার রাখা।
---------চুলকানি নিয়ন্ত্রণ: তৈল জাতীয় খাদ্য এবং ব্যাকারি বিস্কিট বেকারির যেকোন খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকা।
---------পুষ্টিকর খাদ্য: ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা।
ব্যবস্থাপনা:
প্রাথমিক চিকিৎসা: বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করা হয় যেমন: এলোপাথি ওষধ:
------Permethrin 5% ক্রিম।
------Ivermectin।
------Benzyl benzoate।
সাধারণত একবার প্রয়োগের পর, ১-২ সপ্তাহের মধ্যে আরাম পাওয়া যায়। পরবর্তীতে রোগ লক্ষণ আরো মারাত্মক আকারে বেড়ে যায়।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবে:
-------তীব্র চুলকানি ও ফুসকুড়ি থাকলে।
-------পরিবারের অন্য কেউ আক্রান্ত হলে।
-------চিকিৎসার পরেও লক্ষণগুলো থেকে গেলে বা নতুন সমস্যা দেখা দিলে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:
হোমিওপ্যাথিতে খোস পাচড়ার জন্য বেশ কিছু ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে ওষুধ নির্ধারণ করা হয়।
কিছু সাধারণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ হলো:
1. Sulphur:
তীব্র চুলকানি এবং রাতের দিকে উপসর্গ বৃদ্ধি পেলে। এটি খোশ পাঁচড়ার অন্যতম প্রধান ওষুধ। রোগী যদি চুলকানি বেশি অনুভব করে এবং শরীর গরম হয়ে যায়, বিশেষ করে রাতে বেশি চুলকায়, তবে এটি কার্যকর। ত্বকে শুষ্কতা এবং লালচে ভাব থাকলে এই ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়।
2. Psorinum:
দীর্ঘস্থায়ী খোস পাচড়ায় প্রয়োগ করা হয়। রোগী খুব দুর্বল বোধ করলে এবং খোশ পাঁচড়ার কারণে অত্যধিক চুলকানিতে ভোগালে, বিশেষ করে ঠাণ্ডা বা শীতল পরিবেশে চুলকানি বাড়লে এটি ব্যবহার করা হয়।
3. Mercurius Solubilis:
ত্বকে ফোলা, ক্ষত, এবং চুলকানি থাকলে।
যদি ত্বকে ফোস্কা পড়ে এবং পুঁজযুক্ত হয়, এবং রোগী রাতে বেশি চুলকায়, বিশেষ করে উষ্ণ ঘরে চুলকানি বাড়লে এই ওষুধটি ব্যবহৃত হয়।
৪. Hepar Sulphuris:
যদি ত্বকে ফোস্কা এবং পুঁজ বের হয়, এবং সংক্রমণজনিত ব্যথা থাকে তবে এই ওষুধটি কার্যকর। এছাড়া ঠাণ্ডায় রোগী বেশি অসুস্থ হলে এবং ত্বকে সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পেলে এটি প্রয়োগ করা হয়।
৫. Arsenicum Album:
যদি রোগী খুব দুর্বল বোধ করে এবং চুলকানি রাতের দিকে বা তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে বাড়ে, বিশেষ করে খাওয়ার পর বা শীতল পরিবেশে, তবে এটি ব্যবহৃত হয়। রোগীর ত্বক খুব শুষ্ক এবং অস্থির হলে এই ওষুধটি কার্যকর।
৬. Sepia:
যদি ত্বকের চুলকানি গরমে বেড়ে যায় এবং ঠান্ডা পরিবেশে কিছুটা কমে, এবং ত্বক খুব শুষ্ক বা ফাটা থাকে, তাহলে এই ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়। সাধারণত মহিলাদের ক্ষেত্রে এটির ব্যবহার বেশি দেখা যায়।গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষত উপকারী।
৭. Graphites:
যদি ত্বকে পুরু, ফাটা বা শুকনো ভাব থাকে এবং ফেটে যাওয়া অংশগুলো থেকে তরল বা পুঁজ বের হয়, তবে এই ওষুধটি কার্যকর। বিশেষত, মোটা ত্বকের ক্ষতগুলোর জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
৮. Lycopodium:
যদি ত্বকে খসখসে দাগ হয় এবং চুলকানির সাথে জ্বালা অনুভূত হয়, বিশেষ করে সন্ধ্যার দিকে বা রাতে চুলকানি বাড়ে, তবে এই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়। রোগীর হজমের সমস্যাও
৯.Causticum:
ত্বকের খোশ পাঁচড়ার কারণে যদি দাগ থেকে যায় এবং ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে তবে এই ওষুধটি ব্যবহৃত হয়।
তীব্র চুলকানি এবং রাতের দিকে উপসর্গ বৃদ্ধি পেলে। এটি খোশ পাঁচড়ার অন্যতম প্রধান ওষুধ। রোগী যদি চুলকানি বেশি অনুভব করে এবং শরীর গরম হয়ে যায়, বিশেষ করে রাতে বেশি চুলকায়, তবে এটি কার্যকর। ত্বকে শুষ্কতা এবং লালচে ভাব থাকলে এই ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়।
2. Psorinum:
দীর্ঘস্থায়ী খোস পাচড়ায় প্রয়োগ করা হয়। রোগী খুব দুর্বল বোধ করলে এবং খোশ পাঁচড়ার কারণে অত্যধিক চুলকানিতে ভোগালে, বিশেষ করে ঠাণ্ডা বা শীতল পরিবেশে চুলকানি বাড়লে এটি ব্যবহার করা হয়।
3. Mercurius Solubilis:
ত্বকে ফোলা, ক্ষত, এবং চুলকানি থাকলে।
যদি ত্বকে ফোস্কা পড়ে এবং পুঁজযুক্ত হয়, এবং রোগী রাতে বেশি চুলকায়, বিশেষ করে উষ্ণ ঘরে চুলকানি বাড়লে এই ওষুধটি ব্যবহৃত হয়।
৪. Hepar Sulphuris:
যদি ত্বকে ফোস্কা এবং পুঁজ বের হয়, এবং সংক্রমণজনিত ব্যথা থাকে তবে এই ওষুধটি কার্যকর। এছাড়া ঠাণ্ডায় রোগী বেশি অসুস্থ হলে এবং ত্বকে সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পেলে এটি প্রয়োগ করা হয়।
৫. Arsenicum Album:
যদি রোগী খুব দুর্বল বোধ করে এবং চুলকানি রাতের দিকে বা তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে বাড়ে, বিশেষ করে খাওয়ার পর বা শীতল পরিবেশে, তবে এটি ব্যবহৃত হয়। রোগীর ত্বক খুব শুষ্ক এবং অস্থির হলে এই ওষুধটি কার্যকর।
৬. Sepia:
যদি ত্বকের চুলকানি গরমে বেড়ে যায় এবং ঠান্ডা পরিবেশে কিছুটা কমে, এবং ত্বক খুব শুষ্ক বা ফাটা থাকে, তাহলে এই ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়। সাধারণত মহিলাদের ক্ষেত্রে এটির ব্যবহার বেশি দেখা যায়।গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষত উপকারী।
৭. Graphites:
যদি ত্বকে পুরু, ফাটা বা শুকনো ভাব থাকে এবং ফেটে যাওয়া অংশগুলো থেকে তরল বা পুঁজ বের হয়, তবে এই ওষুধটি কার্যকর। বিশেষত, মোটা ত্বকের ক্ষতগুলোর জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
৮. Lycopodium:
যদি ত্বকে খসখসে দাগ হয় এবং চুলকানির সাথে জ্বালা অনুভূত হয়, বিশেষ করে সন্ধ্যার দিকে বা রাতে চুলকানি বাড়ে, তবে এই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়। রোগীর হজমের সমস্যাও
৯.Causticum:
ত্বকের খোশ পাঁচড়ার কারণে যদি দাগ থেকে যায় এবং ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে তবে এই ওষুধটি ব্যবহৃত হয়।
পরামর্শ:
রোগের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে উপযুক্ত চিকিৎসা প্রয়োজন।
সতর্কতা:
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ওষুধের ডোজ এবং ব্যবহারের পদ্ধতি রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে।
দার্শনিকতার ভিত্তিতে:
খোশ পাচড়া (Scabies) এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে বিভিন্ন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের মতামত এবং দার্শনিকতার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ওষুধের প্রয়োগ করা হয়।
হোমিওপ্যাথিতে, রোগের লক্ষণ ও ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ওষুধ নির্বাচন করা হয়। নিচে কিছু বিখ্যাত হোমিওপ্যাথিক দার্শনিক এবং চিকিৎসকদের মতামত এবং চিকিৎসা প্রণালী তুলে ধরা হলো:
১. স্যামুয়েল হ্যানেম্যান (Samuel Hahnemann):
স্যামুয়েল হ্যানেম্যান হোমিওপ্যাথির প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনিই প্রথম হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিতে খোশ পাচড়ার জন্য চিকিৎসা প্রদান করেন। হ্যানেম্যান মনে করতেন যে খোশ পাচড়ার মতো রোগের মূল কারণ শরীরের ভেতরে থাকা গভীর কিছু সমস্যার ফল। তিনি সোরা (Psora) তত্ত্বের প্রবর্তন করেন, যা তিনি খোশ পাচড়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। হ্যানেম্যানের মতে, খোশ পাচড়া বা সোরা হল মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদী চর্মরোগের একটি মূল কারণ।
প্রধান ওষুধ:
Sulphur:
সোরা অনুযায়ী খোশ পাচড়ার মূল চিকিৎসা হিসাবে "সালফার" ব্যবহৃত হয়। এটি শরীরের গভীরে থাকা রোগের মূল সমস্যাকে সমাধান করতে সাহায্য করে।
Psorinum:
হ্যানেম্যান খোশ পাচড়ার জন্য এই ওষুধকেও অত্যন্ত কার্যকর মনে করতেন, বিশেষ করে যখন প্সোরাটিক অবস্থার কারণে রোগীর দেহ দুর্বল হয়ে পড়ে।
২. কেন্ট (James Tyler Kent):
ড. কেন্ট হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে "অর্গাননের" উপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন। তিনি মনে করতেন, রোগীর শারীরিক লক্ষণ যেমন ত্বকের চুলকানি এবং মানসিক অবস্থা যেমন উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা, উভয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধান ওষুধ:
Hepar Sulphuris:
ড. কেন্টের মতে, খোশ পাচড়া থেকে যদি পুঁজযুক্ত ফোসকা বা সংক্রমণ দেখা দেয়, তবে হেপার সালফুরিস সবচেয়ে কার্যকর।
Graphites:
ত্বক ফেটে গেলে এবং ঘন তরল বের হলে এটি কার্যকর।
৩. বোগার (C.M. Boger):
ড. বোগার তাঁর থিওরি অব প্যাথোজেনেসিস (Theory of Pathogenesis) এর মাধ্যমে খোশ পাচড়া বা চর্মরোগের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি মনে করতেন যে রোগের লক্ষণগুলো সম্পূর্ণভাবে দেখা গেলে ওষুধের নির্বাচন করা উচিত।
প্রধান ওষুধ:
Arsenicum Album:
ড. বোগার খোশ পাচড়ার চিকিৎসায় আরসেনিকাম অ্যালবাম ব্যবহার করতেন যখন রোগী দুর্বল হয় এবং রাতে বেশি চুলকানি অনুভব করে।
Mercurius Solubilis:
চর্মরোগ এবং সংক্রমণের ক্ষেত্রে এই ওষুধ ব্যবহৃত হয়, বিশেষত রাতে বেশি চুলকানি হলে।
৪. হার্বার্ট এ. রবার্টস (Herbert A. Roberts):
ড. রবার্টস খোশ পাচড়ার মতো দীর্ঘমেয়াদী রোগগুলোর জন্য শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে জোর দেন। তাঁর মতে, রোগের উপসর্গগুলো খতিয়ে দেখে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নির্ধারণ করা উচিত।
প্রধান ওষুধ:
Causticum:
ত্বকের ক্ষত থেকে চিরস্থায়ী দাগ পড়লে বা ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হলে এটি কার্যকর।
Lycopodium:
সন্ধ্যা বা রাতে চুলকানি বাড়লে এবং ত্বকের দাগ গাঢ় হয়ে গেলে এই ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়।
চিকিৎসা প্রণালী ও দর্শন:
হোমিওপ্যাথিক দার্শনিকরা সবসময় ব্যক্তিগত লক্ষণ অনুযায়ী ওষুধ নির্ধারণের ওপর জোর দেন।
হ্যানেম্যান এবং তাঁর অনুসারীরা মনে করেন, রোগের মূলে থাকা কারণ এবং মানসিক ও শারীরিক উভয় দিক বিবেচনা করে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
তারা বিশ্বাস করেন যে, দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে রোগ নিরাময় সম্ভব, এবং সঠিক ওষুধ ব্যবহারে শরীর নিজেই তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।
খোস পাচড়া (Scabies) ইতিহাস:
খোস পাচড়া (Scabies) একটি চর্মরোগ, যা স্যারকোপটিস স্ক্যাবিয়ি (Sarcoptes scabiei) নামক এক প্রকার পরজীবী অকপড় দ্বারা সৃষ্ট হয়। এই রোগটি সাধারণত ত্বকে চুলকানি, লালচে দাগ, এবং ফোসকা তৈরির মাধ্যমে প্রকাশ পায়। খোস পাচড়ার ইতিহাস বেশ প্রাচীন এবং মানব ইতিহাসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এখানে খোস পাচড়ার ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. প্রাচীন ইতিহাস:
প্রাচীন মিশর: খোস পাচড়ার প্রমাণ প্রাচীন মিশরের সময়কাল থেকে পাওয়া যায়। মিশরের বিখ্যাত "এজিপ্টিয়ান প্যাপিরাস" (Egyptian Papyrus) এ ত্বকের বিভিন্ন রোগের উল্লেখ পাওয়া যায়, যেখানে খোস পাচড়ার লক্ষণগুলির বর্ণনা রয়েছে।
গ্রীক এবং রোমান সভ্যতা: হিপোক্রেটিস (Hippocrates) এবং অন্যান্য প্রাচীন গ্রীক চিকিৎসকরা ত্বকের প্রদাহজনিত রোগগুলোর মধ্যে খোস পাচড়ার উল্লেখ করেছেন। তারা এই রোগের উপসর্গ এবং চিহ্নগুলো বর্ণনা করেন, তবে রোগের সঠিক কারণ সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন।
২. মধ্যযুগ:
মধ্যযুগে খোস পাচড়ার বিষয়ে বেশি তথ্য পাওয়া যায় না, তবে এই সময়ের চিকিৎসকরা ত্বকের রোগগুলোর চিকিৎসার জন্য প্রাকৃতিক উপাদান এবং উদ্ভিদ ভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করতেন। খোস পাচড়াকে এক ধরনের "চর্মরোগ" হিসেবে গণ্য করা হতো এবং এটি সাধারণত দারিদ্র্য, অপরিচ্ছন্নতা এবং জনস্বাস্থ্যজনিত সমস্যার সাথে যুক্ত ছিল।
৩. ১৮শ ও ১৯শ শতাব্দী
১৮শ শতাব্দীতে, খোস পাচড়ার বিষয়ে কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা শুরু হয়। এই সময়ে, চিকিৎসকরা খোস পাচড়ার নিরাময়ে বিভিন্ন ওষুধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
১৯শ শতাব্দীতে, খোস পাচড়ার রোগের একটি আলাদা পরিচয় তৈরি হয় এবং এটি বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসার মাধ্যমে মোকাবিলা করা শুরু হয়। বিশেষ করে, সালফার (Sulfur) এবং ট্যার (Tar) ভিত্তিক চিকিৎসা তখন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
৪. ২০শ শতাব্দীতে খোস পাচড়ার চিকিৎসা:
২০শ শতাব্দীতে, খোস পাচড়ার চিকিৎসায় ব্যাপক অগ্রগতি ঘটে। পারমেথ্রিন (Permethrin) এবং লিন্ডেন (Lindane) এর মতো আধুনিক পদ্ধতির আবিষ্কার রোগটির চিকিৎসায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
১৯৫০-এর দশকে, খোস পাচড়ার বিরুদ্ধে মিডিকেল টপিক্যাল ক্রিম হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়, যা রোগের নিরাময়ে কার্যকরী প্রমাণিত হয়।
৫. বর্তমান যুগের গবেষণা:
বর্তমানে, খোস পাচড়ার গবেষণায় আধুনিক প্রযুক্তি এবং চিকিত্সা পদ্ধতির ব্যবহার হচ্ছে। বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক (Antiparasitic) ওষুধ এবং চিকিত্সার জন্য আরও নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন হচ্ছে।
খোস পাচড়া সাধারণত অতিরিক্ত জনসমাগম, অপরিচ্ছন্নতা, এবং স্বাস্থ্যহীন পরিবেশে ঘটে, তাই এটির প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার:
খোস পাচড়ার ইতিহাস মানব সভ্যতার সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত এর চিকিৎসা এবং গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। খোস পাচড়া বর্তমানে একটি নিরাময়যোগ্য রোগ, এবং এর প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় আধুনিক বিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
-- কাজী সাইফ উদদীন আহমেদ,
Lecturer, Federal Homoeopathic Medical College, Dhaka.
আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।
>Share by:
Make a comments as guest/by name or from your facebook:
Make a comment by facebook: