একজিমা কি?
একজিমা বা অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস একটি সাধারণ ত্বকের সমস্যা যা ত্বকে প্রদাহ, শুষ্কতা, চুলকানি এবং র্যাশ সৃষ্টি করে। এটি অনেক সময়ে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যায়।
একজিমার অন্যান্য নাম :
অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস
কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস
আবিষ্কার :
একজিমার নির্দিষ্ট আবিষ্কারকারীর নাম নেই। এটি প্রাচীনকাল থেকেই পরিচিত একটি রোগ।
১৯০০ শতকের শুরুর দিকে এটি অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস নামে পরিচিত হতে শুরু করে।
কারণসমূহ :
১. জিনগত কারণ:পারিবারিক ইতিহাস থাকলে একজিমার ঝুঁকি বেশি।২. অতিরিক্ত ইমিউন প্রতিক্রিয়া:শরীরের ইমিউন সিস্টেমের অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া একজিমা সৃষ্টি করতে পারে।৩. অ্যালার্জি:ধুলো, ফুলের রেণু, খাবারের অ্যালার্জির ফলে একজিমা হতে পারে।৪. আবহাওয়া:শীতকালে এবং শুষ্ক পরিবেশে একজিমা বাড়তে পারে।৫. মানসিক চাপ:মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে একজিমা বাড়তে পারে।
প্রকারভেদ :
১. অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস: সবচেয়ে সাধারণ ধরণ।২. কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস: নির্দিষ্ট কোনো পদার্থের সংস্পর্শে আসার ফলে হয়।৩. ডাইশাইড্রোটিক একজিমা: হাত ও পায়ের তলায় ছোট ফোসকার মত হয়।৪. নিউমুলার একজিমা: মুদ্রার মতো গঠনবিশিষ্ট র্যাশ হয়।৫. স্টেসিস ডার্মাটাইটিস: রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা থেকে পায়ে হয়।
লক্ষণাবলী:
-----তীব্র চুলকানি
-----ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
------লাল বা ফোলা দাগ
-------ত্বক ফেটে যাওয়া বা ফোসকা পড়া
-------ত্বকে ঘষা লাগলে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া
ইনভেস্টিগেশন (পরীক্ষা):
১. ফিজিকাল এক্সামিনেশন: চিকিৎসক ত্বকের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে পরীক্ষা করেন।২. অ্যালার্জি টেস্ট: কোন পদার্থ একজিমা সৃষ্টি করছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়।৩. স্কিন বায়োপসি: জটিল ক্ষেত্রে ত্বকের নমুনা নিয়ে পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়।
জটিলতা:
-------ত্বকের সংক্রমণ (ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাল)
-------ঘুমের সমস্যা
--------মানসিক চাপ বা বিষণ্ণতা
ভাবিফল:
সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে একজিমা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে অনেক সময় এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
প্রতিরোধ:
-------ত্বককে শুষ্ক রাখা থেকে রক্ষা করা
-------ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা
-------অ্যালার্জি বা কেমিক্যাল থেকে দূরে থাকা
--------মানসিক চাপ কমানো
ব্যবস্থাপনা:
১. ময়েশ্চারাইজার: ত্বককে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা।
২. স্টেরয়েড ক্রিম: প্রদাহ কমাতে স্টেরয়েড জাতীয় ক্রিম প্রয়োগ করা।
৩. অ্যান্টিহিস্টামিন: চুলকানি কমাতে।
৪. ইমিউন মডুলেটর: শরীরের ইমিউন সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত হয়।
৫. লাইফস্টাইল চেঞ্জ: ত্বকের যত্নে নিয়মিতভাবে সাবান ব্যবহার বন্ধ করা, সুতির পোশাক পরিধান।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন:
------যদি ঘন ঘন চুলকানি বা ব্যথা অনুভব হয়
-------ত্বকের সংক্রমণ দেখা দিলে
-------ঘুম বা দৈনন্দিন জীবনে বিঘ্ন ঘটলে
কী খাওয়া যাবে:
------জলসমৃদ্ধ শাকসবজি ও ফল
------ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার (মাছ, বাদাম)
-------অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার (বেরি, পালং শাক)
কী খাওয়া যাবে না :
-----প্রক্রিয়াজাত খাবার
-----দুধ, ডিম বা অন্যান্য অ্যালার্জিক খাবার
-----চিনি সমৃদ্ধ খাবার
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা :
হোমিওপ্যাথিতে একজিমার চিকিৎসা ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক লক্ষণের ভিত্তিতে করা হয়।
কিছু জনপ্রিয় হোমিওপ্যাথিক ওষুধ হল:
Sulphur: একজিমার চুলকানি ও শুষ্কতার জন্য।
Graphites: ত্বক ফাটা এবং স্রাবযুক্ত ক্ষেত্রে।
Rhus tox: চুলকানি ও ত্বক লাল হওয়ার জন্য।
Arsenicum album: ত্বকের শুকনো ও ফাটার জন্য।
Calcarea carbonica: অতিরিক্ত ঘাম ও স্থূলতার সাথে একজিমার জন্য।
হোমিওপ্যাথিক বিভিন্ন দার্শনিক ও ডাক্তারদের মতামত :
হোমিওপ্যাথির মতে,
একজিমা শরীরের অভ্যন্তরীণ অস্বাভাবিকতার বহিঃপ্রকাশ।
বিভিন্ন ডাক্তার ও দার্শনিকের মতে,
একজিমা শুধু বাহ্যিক চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে সেরে ওঠা সম্ভব নয়। এটি গভীর থেকে সমাধান করতে হবে, যা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সম্ভব।
হোমিওপ্যাথিতে মনোভাব :
হ্যানিমানের মতে,
একজিমা সারাতে শরীরের ভিতর থেকে ব্যালেন্স ফিরিয়ে আনতে হবে।
+++++
হোমিওপ্যাথির বিভিন্ন দার্শনিক এবং ডাক্তাররা একজিমার চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন মতামত এবং দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছেন।
একজিমা একটি গভীর শারীরিক সমস্যা, যা শুধুমাত্র ত্বকে নয়, শরীরের অভ্যন্তরীণ রোগপ্রবণতাকেও নির্দেশ করে। তাই, এটি পুরোপুরি নিরাময় করতে হলে রোগের মূল কারণগুলির দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
এখানে কিছু হোমিওপ্যাথিক দার্শনিক এবং ডাক্তারদের মতামত নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান (Samuel Hahnemann):
হোমিওপ্যাথির প্রতিষ্ঠাতা স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের মতে, একজিমার মতো ত্বকের সমস্যাগুলি মূলত শরীরের ভেতরের অস্বাভাবিকতাগুলির বহিঃপ্রকাশ।
তিনি একে "Psora" নামে অভিহিত করেছেন, যা শরীরের ভেতরে দীর্ঘস্থায়ী রোগের একটি অভ্যন্তরীণ সংকেত।
হ্যানিম্যানের মতে, একজিমার চিকিৎসার জন্য বাহ্যিক উপসর্গগুলি কেবলমাত্র সারানো উচিত নয়, বরং রোগের মূল কারণেও কাজ করতে হবে।
২. ড. জে টি কেন্ট (Dr. J.T. Kent):
ড. কেন্টের মতে, একজিমার ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত রোগীর সম্পূর্ণ শরীর এবং মনের সমন্বয়ে গভীরভাবে কাজ করা।
তিনি বলেছিলেন, ত্বকের সমস্যা দমন করলে শরীরের অভ্যন্তরে নতুন এবং জটিল রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
তাই বাহ্যিকভাবে প্রদাহ বা চুলকানি সরিয়ে না দিয়ে পুরো শরীরের রোগপ্রবণতা কমানোই আসল সমাধান।
৩. ড. জেমস টেইলর কেন্ট (James Tyler Kent):
ড. কেন্টও হ্যানিম্যানের মতো বিশ্বাস করেন যে একজিমা এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যা শরীরের অভ্যন্তরীণ অস্বাভাবিকতার বহিঃপ্রকাশ।
তিনি রোগীর মন ও শরীরের ব্যালেন্স পুনরুদ্ধারের উপর জোর দেন এবং মানসিক লক্ষণগুলিকে গুরুত্ব দেন।
একজিমা রোগীর মানসিক অবস্থা পরিবর্তন বা শারীরিক স্ট্রেসের কারণে বৃদ্ধি পেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
৪. ড. রবার্টস (Dr. Roberts):
ড. রবার্টসের মতে, একজিমার মতো ত্বকের রোগসমূহের জন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা কার্যকরী হতে হলে এটি ধীরে ধীরে এবং নিয়মিতভাবে দিতে হবে।
ত্বকের সমস্যা বাহ্যিকভাবে চাপা দিলে শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বাড়তে পারে।
তিনি মনে করেন যে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা রোগের মূল কারণ এবং শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সচল করে রোগ নিরাময়ে কাজ করে।
৫. ড. ফারিংটন (Dr. Farrington):
ড. ফারিংটনের মতে, একজিমার মতো ত্বকের রোগসমূহের চিকিৎসা করতে হলে রোগীর সম্পূর্ণ ইতিহাস জেনে সঠিক ওষুধ নির্বাচন করতে হবে।
তিনি একজিমার জন্য বিশেষ কিছু ওষুধের উপর জোর দেন, যেমন Sulphur, Graphites, Rhus tox, ইত্যাদি।
ফারিংটন মনে করেন, রোগীর মানসিক ও শারীরিক লক্ষণের সমন্বয়ে একটি নির্দিষ্ট ওষুধ নির্বাচিত হতে হবে, যা রোগীর সম্পূর্ণ অবস্থার জন্য উপযুক্ত।
৬. ড. এফ ডব্লিউ বার্ট (Dr. F.W. Burt):
ড. বার্ট একজিমা রোগের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন প্রভাবের ওপর জোর দেন।
তিনি মনে করেন যে হোমিওপ্যাথি ত্বকের সমস্যার জন্য প্রাকৃতিক ও নিরাপদ পদ্ধতি, যেখানে রোগীকে দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে মুক্তি দেওয়া যায়।
বার্টের মতে, একজিমার চিকিৎসায় ধৈর্য এবং সময় দরকার কারণ এটি দ্রুত সেরে যাওয়া রোগ নয়।
৭. ড. হেনরি ক্লার্ক (Dr. Henry Clarke):
ড. হেনরি ক্লার্ক একজিমার মতো ত্বকের রোগে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ধীরে ধীরে কাজ করার ক্ষমতাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।
তিনি বিশ্বাস করেন যে সঠিক হোমিওপ্যাথিক ওষুধ রোগীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে পারে এবং ত্বকের সমস্যাকে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করতে পারে।
সারসংক্ষেপ:
হোমিওপ্যাথিক দার্শনিকরা সাধারণত একজিমার চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীর সামগ্রিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে একটি সমন্বিত চিকিৎসার প্রস্তাব দেন।
তাঁরা মনে করেন, বাহ্যিকভাবে একজিমার লক্ষণগুলি চাপা না দিয়ে রোগের মূল কারণটি খুঁজে তা সমাধান করতে হবে।
++++++
হোমিওপ্যাথির দার্শনিক ভিত্তি এবং একজিমার চিকিৎসার আরো বিস্তারিত আলোচনা :
১. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান (Samuel Hahnemann):
হ্যানিম্যান, হোমিওপ্যাথির প্রতিষ্ঠাতা, তাঁর "Psora" তত্ত্বে একজিমার মতো ত্বকের রোগগুলিকে একটি অভ্যন্তরীণ রোগপ্রবণতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ত্বকের রোগগুলি শুধুমাত্র বাহ্যিক নয়, বরং শরীরের গভীর কোন সমস্যার ফল। হ্যানিম্যানের মতে, Psora রোগের গভীর ভিত্তি আছে, যা শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকে এবং উপযুক্ত উদ্দীপনার মাধ্যমে ত্বকের উপর প্রকাশ পায়।
Psora তত্ত্ব অনুসারে, একজিমা হল শরীরের অভ্যন্তরে প্যাথোজেনিক শক্তির ফলে সৃষ্টি হওয়া এক ধরনের "constitutional disorder"। হ্যানিম্যান বলেছিলেন যে ত্বকের সমস্যা বাহ্যিকভাবে দমন করলে শরীরের আরো গভীর এবং বিপজ্জনক রোগ সৃষ্টি হতে পারে, যেমন হাঁপানি বা আর্থ্রাইটিস। তাই, তিনি একজিমার চিকিৎসায় কোষ্ঠগত (constitutional) চিকিৎসাকে গুরুত্ব দিয়েছেন, যা রোগীর শারীরিক এবং মানসিক লক্ষণগুলি বিবেচনা করে করা হয়।
২. ড. জেমস টেইলর কেন্ট (James Tyler Kent):
ড. কেন্ট হ্যানিম্যানের দার্শনিক মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন এবং তাঁর "constitutional approach" অনুসরণ করতেন। কেন্ট মনে করতেন যে ত্বকের রোগগুলি রোগীর শরীরের পুরো জীবনীশক্তি (vital force) বা রোগপ্রতিরোধী ক্ষমতার দুর্বলতা থেকে আসে। একজিমার মতো রোগগুলির ক্ষেত্রে, তিনি বলতেন যে বাহ্যিক চিকিৎসা, যেমন কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার, শুধু লক্ষণগুলো দমন করে এবং রোগীর অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি আরও গভীর করে তোলে। কেন্টের মতে, একজিমার প্রকৃত নিরাময় কেবল তখনই সম্ভব যখন হোমিওপ্যাথিক ওষুধ রোগীর জীবনীশক্তিকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
৩. ড. কনস্ট্যান্টিন হার্নম্যান (Constantine Hering):
ড. হার্নম্যান, হোমিওপ্যাথির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন, তাঁর "Hering’s Law of Cure" দিয়ে রোগ নিরাময়ের একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বোঝানোর চেষ্টা করেন। তিনি বলতেন যে শরীরের প্রকৃত রোগ নিরাময় হলে এটি ভেতর থেকে বাইরে, উপরে থেকে নিচে এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে চলে আসে। একজিমার ক্ষেত্রে, যদি কোনও ওষুধ শুধুমাত্র বাহ্যিক ত্বকের লক্ষণগুলিকে সরিয়ে দেয়, তবে এটি রোগকে শরীরের গভীরে ধাক্কা দেয় এবং আরও গুরুতর রোগ সৃষ্টি করে।
হার্নম্যানের মতে, একজিমা সারাতে হলে এটি ধীরে ধীরে ত্বকের বাইরের স্তরে নিয়ে আসতে হবে এবং এটি রোগীর স্বাস্থ্যের সামগ্রিক উন্নতির সঙ্গে মিলতে হবে।
৪. ড. রবার্টস (Dr. Roberts):
ড. রবার্টস হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ধীর এবং ধৈর্যশীল প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দেন। তাঁর মতে, একজিমার মতো দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের সমস্যাগুলি দ্রুত নিরাময় হয় না এবং হোমিওপ্যাথিক ওষুধ শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করার জন্য ধীরে ধীরে কাজ করে। তিনি বলতেন যে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল এনে দেয়, কিন্তু এর জন্য ধৈর্য ও নিয়মিত চিকিৎসা প্রয়োজন।
৫. ড. জন হেনরি ক্লার্ক (Dr. John Henry Clarke):
ড. ক্লার্ক একজিমার চিকিৎসায় "miasmatic approach" ব্যবহার করতেন, যা হ্যানিম্যানের মিয়াজম তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে তৈরি। তিনি মনে করতেন, একজিমার পিছনে অনেক সময় Psoric বা Sycotic মিয়াজম থাকে, এবং রোগীকে সঠিকভাবে নিরাময় করতে হলে এই মিয়াজমগুলির চিকিৎসা করা প্রয়োজন। ক্লার্কের মতে, একজিমার প্রকৃত নিরাময় কেবল তখনই সম্ভব যখন রোগীর মূল মিয়াজমের উপর কাজ করা হবে। তিনি কিছু হোমিওপ্যাথিক ওষুধের গুরুত্ব দিয়েছেন যেমন, Sulphur, Graphites, Arsenicum Album, ইত্যাদি, যেগুলো মিয়াজম অনুযায়ী রোগ নিরাময়ে কার্যকরী।
৬. ড. ফারিংটন (Dr. E.A. Farrington):
ড. ফারিংটন একজিমার মতো ত্বকের রোগে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী সঠিক ওষুধ নির্বাচন করতে জোর দেন। ফারিংটন বিশেষভাবে বলেছিলেন যে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ একজিমার চিকিৎসায় শরীরের সামগ্রিক ভারসাম্য (balance) ফিরিয়ে আনে, যা ত্বক এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলিকে সুস্থ রাখে। তিনি বলেছিলেন, একজিমার রোগীর মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা এবং শারীরিক উপসর্গগুলির মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক থাকে এবং হোমিওপ্যাথিক ওষুধ এই দুইটির সমন্বয় ঘটিয়ে কাজ করে।
৭. ড. লিপ (Dr. von Lippe):
ড. লিপ একজিমার ক্ষেত্রে "totality of symptoms" বা রোগীর সব লক্ষণ একসঙ্গে বিবেচনা করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, রোগীর শারীরিক ও মানসিক লক্ষণগুলিকে একত্রিতভাবে দেখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ওষুধ নির্বাচন করতে হবে। লিপের মতে, সঠিক ওষুধ ব্যবহার করা হলে রোগীর শরীর ধীরে ধীরে তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং ত্বকের সমস্যাগুলি সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হয়।
উপসংহার:
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শুধু একজিমার বাহ্যিক উপসর্গগুলির উপর কাজ করে না, বরং রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার সমন্বয়ে রোগের মূল কারণ নির্ণয় করে।
এই চিকিৎসা পদ্ধতির মূল দার্শনিক মতবাদগুলো হলো:
1. রোগীকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে সম্পূর্ণ বিবেচনা করে ওষুধ নির্বাচন করা।
2. রোগের মূল কারণ ও মিয়াজম অনুসারে চিকিৎসা করা।
3. রোগের উপসর্গগুলি বাহ্যিকভাবে দমন না করে ভিতর থেকে নিরাময় করা।
4. ধৈর্যশীল ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগের প্রকৃত নিরাময় নিশ্চিত করা।
হোমিওপ্যাথি একজিমার মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে এবং নিরাপদে কাজ করে, যা রোগীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাকে একত্রিত করে।
++++++
একজিমা অরগানন অব মেডিসিন অনুযায়ী :
একজিমা সম্পর্কে হোমিওপ্যাথির মূল গ্রন্থ "অরগানন অব মেডিসিন" (Organon of Medicine) অনুযায়ী রোগের ব্যাখ্যা এবং চিকিৎসার ধরণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
স্যামুয়েল হ্যানিম্যান তাঁর এই গ্রন্থে একজিমার মতো ত্বকের সমস্যাকে একটি গভীর এবং বহিঃপ্রকাশের রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। "অরগানন অব মেডিসিন" এর উপর ভিত্তি করে একজিমার বিশ্লেষণ নিচে দেওয়া হলো:
১. একজিমা: মিয়াজম তত্ত্ব অনুযায়ী ব্যাখ্যা:
"অরগানন অব মেডিসিন" এর ৬ষ্ঠ সংস্করণে হ্যানিম্যান তার মিয়াজম তত্ত্ব (Miasm Theory) উপস্থাপন করেন। তাঁর মতে, একজিমার মতো দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের রোগের পেছনে প্সোরা (Psora) মিয়াজম প্রধান ভূমিকা পালন করে।
Psora হচ্ছে সেই মিয়াজম যা শরীরের অভ্যন্তরে সুপ্তভাবে থাকে এবং সময়ের সাথে সাথে ত্বকে একজিমা বা অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করে। Psora মিয়াজমকে হ্যানিম্যান অভিহিত করেছেন দীর্ঘস্থায়ী এবং বিভিন্ন প্রকার রোগের মূল কারণ হিসেবে। তাঁর মতে, Psora মিয়াজমের চিকিৎসা না করা হলে একজিমা বা ত্বকের রোগগুলি শুধু বাহ্যিকভাবে সেরে উঠলেও শরীরের অন্য কোনো গুরুতর রোগে পরিণত হতে পারে।
২. একজিমার চিকিৎসায় মিয়াজমের গুরুত্ব :
"অরগানন অব মেডিসিন" অনুসারে, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা তখনই কার্যকর হয় যখন রোগের মূল মিয়াজম বা অভ্যন্তরীণ কারণ নিরাময় করা হয়।
হ্যানিম্যানের মতে, একজিমার বাহ্যিক লক্ষণগুলো চাপা দিলে রোগের অভ্যন্তরীণ মিয়াজম বা বিকৃত জীবনীশক্তি আরও গভীরে গিয়ে শরীরের ভেতর প্রবেশ করে এবং এর ফলে গুরুতর রোগ যেমন হাঁপানি, আর্থ্রাইটিস বা স্নায়বিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।
তাই, একজিমার চিকিৎসায় প্রথমে মিয়াজমের চিকিৎসা করতে হবে এবং রোগের গভীর কারণ খুঁজে তা নিরাময় করতে হবে।
৩. ভাইটাল ফোর্স (Vital Force) এবং একজিমা:
হ্যানিম্যান "অরগানন অব মেডিসিন"-এ জীবনীশক্তি বা Vital Force এর ধারণা দেন, যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে।
তাঁর মতে, রোগ তখনই সৃষ্টি হয় যখন জীবনীশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার প্রভাব বাহ্যিকভাবে প্রকাশ পায়।
একজিমার ক্ষেত্রে, ত্বকের উপর এই দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং এটি শুধুমাত্র বাহ্যিক চিকিৎসা দিয়ে সারানো সম্ভব নয়। একজিমার প্রকৃত চিকিৎসা করতে হলে জীবনীশক্তিকে পুনরায় শক্তিশালী করতে হবে।
৪. একজিমা এবং হোমিওপ্যাথির নীতি :
"অরগানন অব মেডিসিন"-এর একটি মূল নীতি হল "Similia Similibus Curentur" অর্থাৎ "Similar should be cured by similar"।
এই নীতি অনুসারে, একজিমার চিকিৎসায় এমন ওষুধ ব্যবহার করা হয় যা রোগীর লক্ষণগুলির মতো উপসর্গ সৃষ্টি করতে সক্ষম।
এই পদ্ধতিতে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে রোগ নিরাময়ে কাজ করে।
উদাহরণস্বরূপ, Sulphur, Graphites, এবং Rhus tox-এর মতো ওষুধ একজিমার বিভিন্ন লক্ষণ অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়।
৫. ধাতুগত চিকিৎসা (Constitutional Treatment):
হ্যানিম্যান একজিমার চিকিৎসায় ধাতুগত চিকিৎসার উপর জোর দিয়েছেন, যা রোগীর সামগ্রিক শারীরিক ও মানসিক লক্ষণের ভিত্তিতে ওষুধ নির্বাচন করে।
একজিমার ক্ষেত্রে শুধু ত্বকের লক্ষণগুলো বিবেচনা না করে, রোগীর শারীরিক অবস্থার পাশাপাশি মানসিক অবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এবং ব্যক্তিগত পরিস্থিতি ত্বকের রোগের প্রকোপ বাড়াতে পারে।
তাই, রোগীর সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে দীর্ঘস্থায়ী নিরাময় করার জন্য কোষ্ঠগত ওষুধ নির্বাচন করা জরুরি।
৬. Hering’s Law of Cure এবং একজিমা:
হ্যানিম্যানের শিষ্য ড. কনস্ট্যান্টিন হেরিং Hering’s Law of Cure অনুসারে, রোগ নিরাময়ের প্রক্রিয়া শুরু হয় ভিতর থেকে বাইরে, উপরে থেকে নিচে, এবং শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের দিকে।
একজিমার ক্ষেত্রে, এটি ত্বকের বাহ্যিক অংশে প্রদাহ দেখা দিলেও রোগের মূল কারণ শরীরের ভেতরে থাকে।
তাই, একজিমার প্রকৃত নিরাময় ত্বকের উপর নয়, শরীরের অভ্যন্তরে থাকা মূল রোগের উপর কাজ করে শুরু করতে হবে।
এই নিয়ম অনুসারে, ত্বকের সমস্যা একবার শরীরের ভিতর থেকে নিরাময় হলে বাহ্যিক লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বাহ্যিকভাবে সমস্যা দমন করা হলে শরীরের অন্য কোনো অংশে সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা দীর্ঘস্থায়ী এবং জটিল রোগের সৃষ্টি করতে পারে।
৭. প্রতিরোধ এবং ব্যালেন্স পুনঃপ্রতিষ্ঠা:
"অরগানন অব মেডিসিন"-এ বলা হয়েছে, একজিমার মতো ত্বকের রোগ প্রতিরোধ করতে হলে শরীরের ভিটাল ফোর্সকে শক্তিশালী করতে হবে এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য (balance) বজায় রাখতে হবে। হ্যানিম্যান বিশ্বাস করেন যে রোগ প্রতিরোধের জন্য রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস, এবং মানসিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৮. জীবনীশক্তির পুনরুদ্ধার এবং স্বাস্থ্যের পুনর্বাসন:
একজিমার মূল চিকিৎসা হল রোগীর জীবনীশক্তি পুনরুদ্ধার করা এবং শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ত্বকের সমস্যার মূল কারণ নিরাময় করা। হ্যানিম্যানের মতে, রোগীর শরীর এবং মন একত্রে কাজ করে এবং হোমিওপ্যাথিক ওষুধের মাধ্যমে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে।
উপসংহার:
"অরগানন অব মেডিসিন" অনুসারে, একজিমা কেবল ত্বকের একটি বাহ্যিক সমস্যা নয়, এটি শরীরের গভীর রোগপ্রবণতার বহিঃপ্রকাশ। এর চিকিৎসায় বাহ্যিক উপসর্গের পরিবর্তে রোগের মূলে থাকা মিয়াজমকে নিরাময় করতে হবে। হ্যানিম্যানের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল রোগীকে সমগ্রভাবে বিবেচনা করা এবং রোগের আভ্যন্তরীণ কারণগুলোতে কাজ করা, যা হোমিওপ্যাথির মূল দার্শনিক ভিত্তি।
+++++
একজিমার ইতিহাস :
একজিমার ইতিহাস দীর্ঘ ও প্রাচীন। ত্বকের এই সমস্যা মানুষের ইতিহাসের শুরু থেকেই ছিল বলে ধারণা করা হয়, তবে একজিমা নিয়ে আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের বিস্তারিত আলোচনা অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক।
একজিমার ইতিহাসের বিভিন্ন ধাপ নিম্নে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:
১. প্রাচীন ইতিহাস:
প্রাচীন সভ্যতায় একজিমা এবং অন্যান্য ত্বকের রোগের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে, ত্বকের সমস্যাগুলি তেমন ভালোভাবে চিহ্নিত বা শ্রেণিবদ্ধ করা হয়নি। বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থে ত্বকের রোগগুলোকে সাধারণত "চর্মরোগ" হিসেবে উল্লেখ করা হত এবং এগুলোকে বাহ্যিক চিকিৎসার মাধ্যমে সারানোর চেষ্টা করা হতো।
মিশরীয় সভ্যতা:
প্রাচীন মিশরের চিকিৎসা পদ্ধতিতে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার জন্য প্রাকৃতিক উদ্ভিদ ও মিশ্রণ ব্যবহার করা হতো। মিশরীয়রা বিভিন্ন ভেষজ দ্রব্যের মাধ্যমে ত্বকের সমস্যা নিরাময়ের চেষ্টা করতেন, তবে তারা একজিমাকে আলাদা করে চিহ্নিত করেননি।
গ্রিক সভ্যতা:
হিপোক্রেটিস (Hippocrates), যিনি গ্রিক চিকিৎসাবিদ্যার জনক হিসেবে পরিচিত, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার বর্ণনা দিয়েছেন।
তবে একজিমা শব্দটি তখনও ব্যবহৃত হয়নি। হিপোক্রেটিসের লেখায় ত্বকের প্রদাহজনিত সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, যা আজকের একজিমার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
২. মধ্যযুগ এবং রেনেসাঁ:
মধ্যযুগেও একজিমা এবং অন্যান্য ত্বকের রোগ সম্পর্কে তেমন বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি হয়নি। তবে রেনেসাঁ সময়ে ত্বকের রোগগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
চিকিৎসকরা তখন ত্বকের রোগগুলোকে সংক্রমণ বা "রক্তের দূষণ" হিসেবে ব্যাখ্যা করতেন এবং তা সারানোর জন্য বিভিন্ন রক্তশোধন পদ্ধতি ব্যবহার করতেন।
৩. একজিমা শব্দের উদ্ভব:
একজিমা শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ "ἔκζεμα" (ekzema) থেকে, যার অর্থ "ফুটে ওঠা"। ১৮শ শতাব্দীতে, গ্রিক চিকিৎসকরা ত্বকের প্রদাহজনিত সমস্যাকে চিহ্নিত করতে একজিমা শব্দটি ব্যবহার শুরু করেন। তখন একজিমা মূলত এমন ত্বকের রোগ বোঝাত, যেখানে ত্বক লাল হয়ে যায়, চুলকায় এবং ফোস্কা পড়ে।
৪. ১৮শ ও ১৯শ শতাব্দীতে একজিমার বিকাশ:
১৮শ শতাব্দীতে ত্বকের রোগগুলোর আধুনিক শ্রেণিবিন্যাস শুরু হয়।
১৮০৮ সালে, ব্রিটিশ চিকিৎসক রবার্ট উইলান (Robert Willan) ত্বকের রোগগুলোর একটি শ্রেণিবিন্যাস তৈরি করেন, যেখানে তিনি একজিমাকে একটি আলাদা রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
তিনি একজিমাকে ত্বকের প্রদাহজনিত সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করেন এবং এর বিভিন্ন প্রকারভেদও তুলে ধরেন।
১৯শ শতাব্দীর শেষের দিকে, একজিমা ত্বকের একটি পরিচিত রোগে পরিণত হয়। টিলবুরি ফক্স (Tilbury Fox), যিনি ১৯শ শতাব্দীর অন্যতম প্রখ্যাত ব্রিটিশ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, ত্বকের রোগগুলোর মধ্যে একজিমা এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত সমস্যার পৃথক শ্রেণিবিন্যাস করেন।
৫. ২০শ শতাব্দীতে একজিমার আধুনিক চিকিৎসা :
২০শ শতাব্দীতে একজিমার গবেষণা এবং এর চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
বিশেষ করে অ্যালার্জি এবং ইমিউনোলজি নিয়ে গবেষণা একজিমার চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
তখন থেকে একজিমাকে "অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস" (Atopic Dermatitis) হিসেবে পরিচিত করা হয়, যা ত্বকের প্রদাহ এবং অ্যালার্জির সঙ্গে সম্পর্কিত।
১৯৩০-এর দশকে, একজিমা এবং অ্যালার্জির মধ্যে সম্পর্ক স্পষ্টভাবে চিহ্নিত হয়। এই সময়ে ইমিউনোলজির বিকাশের ফলে একজিমার কারণ হিসেবে অ্যালার্জি, ইমিউন প্রতিক্রিয়া এবং বংশগত প্রভাব নিয়ে গবেষণা শুরু হয়।
স্টেরয়েড ক্রিমের উদ্ভাবন:
১৯৫০-এর দশকে স্টেরয়েড ক্রিমের উদ্ভাবন একজিমার চিকিৎসায় বিপ্লব ঘটায়। কর্টিকোস্টেরয়েডের মাধ্যমে ত্বকের প্রদাহ এবং চুলকানি কমানোর কার্যকরী পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়, যা আজও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
৬. আধুনিক যুগে একজিমার গবেষণা ও চিকিৎসা:
বর্তমানে, একজিমা এবং এটপিক ডার্মাটাইটিসের চিকিৎসায় প্রচুর গবেষণা চলছে। ইমিউনোলজি, জেনেটিক্স এবং পরিবেশগত কারণগুলো নিয়ে গবেষণা একজিমার আধুনিক চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।
বর্তমানে বায়োলজিক থেরাপি, যা ইমিউন সিস্টেমের নির্দিষ্ট অংশকে লক্ষ্য করে কাজ করে, একজিমার দীর্ঘস্থায়ী এবং গুরুতর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।
একজিমার চিকিৎসায় আধুনিক হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি এবং অন্যান্য বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, যা রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে ব্যবহৃত হয়।
বিশেষ নোট :
স্টেরয়েড ক্রিমের, এবং স্টেরয়েড ওষধ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া :
স্টেরয়েড ক্রিম এবং ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে এর ধরন, ব্যবহার, এবং সময়ের উপর। স্টেরয়েড ক্রিম বা ওষুধ ব্যবহারে কিছু সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে:
১. স্টেরয়েড ক্রিমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া:
ত্বকের পাতলাত্ব: দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে ত্বক পাতলা হয়ে যেতে পারে।
ত্বকের রঙ পরিবর্তন: ত্বকের কালো বা সাদা দাগ দেখা দিতে পারে।
এলার্জিক রিঅ্যাকশন: ত্বকে লালচে বা চুলকানি হতে পারে।
ফোলাভাব: ক্রিম প্রয়োগের স্থানে ফোলা বা স্ফীত দেখা দিতে পারে।
স্ট্রেচ মার্কস: দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে ত্বকে স্ট্রেচ মার্কস তৈরি হতে পারে।
২. স্টেরয়েড ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া:
ওজন বৃদ্ধি: মুখমণ্ডল ও শরীরে ফোলাভাব এবং ওজন বেড়ে যেতে পারে।
ইনফেকশনের ঝুঁকি বৃদ্ধি: স্টেরয়েড শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
হাড় দুর্বলতা (অস্টিওপোরোসিস): দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে হাড় দুর্বল হতে পারে।
পেটের সমস্যা: পেট ব্যথা, আলসার, কিংবা গ্যাস্ট্রিক হতে পারে।
মুড পরিবর্তন: স্টেরয়েড ব্যবহারের ফলে হতাশা, উদ্বেগ, বা আচরণের পরিবর্তন হতে পারে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি: রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
স্টেরয়েড ব্যবহারে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচতে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এবং নির্ধারিত সময় ও মাত্রায় ব্যবহার করা জরুরি।
-- কাজী সাইফ উদদীন আহমেদ,
Lecturer, Federal Homoeopathic Medical College, Dhaka.
আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।
>Share by:
Make a comments as guest/by name or from your facebook:
Make a comment by facebook: