বাচ্চাদের সহজেই পড়া শিখতে ও মনে রাখতে না পারার কারণ ও তার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা।

বাচ্চাদের যে কোন রোগের কেস টেকিং এবং কেস এনালাইসিস করার সময়, বাচ্চার বাবা-মা প্রায় একটি কমপ্লেইন করে, আমার বাচ্চা যখন স্কুলে ভর্তি করানো হয়নি তখন সে অতি সহজে মনে রাখতে পারত এবং অল্প সময় যে কোন কিছু শিখতে পারত। কিন্তু এখন স্কুলে ভর্তির পর থেকে ৭ মাস হয়ে গেল, সে এখন তেমন পড়া শিখতে এবং মনে রাখতে পারছে না । গত টার্ম পরীক্ষার রেজাল্ট ভাল করতে পারে নি।

এর কারণ কি ?
এর কারণ হলঃ বাচ্চাকে মানসিক ও শারীরিক ভাবে প্রচন্ড আঘাত করা, অপমানিত করা, সবার সম্মুখে ছোট করে ফেলা।
এর চিকিৎসাঃ
Allopathy ও Ayurvedic মতে এর কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই কিন্তু Homoeopathy তে আছে।
বাচ্চার শরীরের Central Nervous system এবং মাংস পেশীর সেল (cell) আঘাত প্রাপ্ত হয়ে যায়, এই আঘাত প্রাপ্ত সেল (cell) এর যে কোন কিছুই গ্রহন করতে বা বুঝে উঠতে তার কষ্ট হয়। ফলে, মনে রাখা বা মুখস্থ করা বা নিজ থেকে বাচ্চার কোন কিছু ব্যাখ্যা করে বলা এবং নিজ থেকে লেখা তার জন্য কষ্টকর হয়ে যায়।
Homoeopathy তে চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি পিতা-মাতা কে এবং শিক্ষিকগণকে কাউন্সিলিং করে দিতে হবে।
কাউন্সিলিং হলঃ
১। তাদের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করা, তাদের কাছে যেন শয়তান না আসতে পারে।
২। তাদেরকে ভাল থাকার জন্য দোয়া শেখানো।
৩। তাদেরকে যে কোন ব্যাপারে অপমান না করা।
৪। তাদের শরীরে কোন প্রকার (যেমনঃ- স্যান্ডেল, লাঠি, ঘুষি, থাপর, খারাপ কথা ) ইত্যাদি দ্বারা মানসিক ও শারীরিক আঘাত না করা।
৫। তাদেরকে বড় বড় ফোকাস দেখান, যাতে তারা বিভিন্ন প্রকার উৎসাহ পেয়ে থাকে।
৬। তাদের সম্মুখে কখন না-বোধক কথা বলবেন না।
৭। তাদেরকে সব সময় বলতে থাকুন, তুমি পারবেই। তোমার দ্বারা অনেক কিছু হবেই। তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হবেই।
মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের আঘাতের জন্য, প্রচলিত এবং বিকল্প ওষুধ উভয়ই জড়িত একটি সামগ্রিক পদ্ধতির সুপারিশ করা হয়। এখানে কিছু হোমিওপ্যাথিক ওষুধ রয়েছে যা ঐতিহ্যগতভাবে বিভিন্ন মানসিক এবং শারীরিক অবস্থার জন্য ব্যবহৃত হয়:
A. মানসিক স্বাস্থ্য জনিত ওষুধ :
১. অ্যাকোনিটাম নেপেলাস: আকস্মিক উদ্বেগ এবং আতঙ্কের আক্রমণের জন্য দরকারী, বিশেষত শক বা আঘাতের পরে।
২. স্ট্রামোনিয়াম: দুঃস্বপ্নে ভুগছেন এমন শিশুদের জন্য, বিশেষ করে যারা সহিংস বা ভয়-প্ররোচিত বিষয়বস্তু আছে।
৩. স্ট্যাফিসাগ্রিয়া: অপব্যবহার বা অপমানের ফলে মানসিক অবদমন বা আঘাতের জন্য।
৪. আর্সেনিকাম অ্যালবাম: উদ্বেগ এবং অস্থিরতার জন্য, প্রায়ই পেটের সমস্যার মতো শারীরিক লক্ষণগুলির সাথে মিলিত হয়।
৫. Ignatia Amara: বিশেষ করে ব্যক্তিগত ক্ষতির পরে দুঃখ, বিষণ্ণতা এবং মানসিক ধাক্কায় সাহায্য করে।
৬. Natrum muriaticum: যারা দুঃখ বা ক্রোধের মতো আবেগকে দমন করে তাদের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা প্রায়ই মাথাব্যথা বা অনিদ্রার দিকে পরিচালিত করে।
৭. কালি ফসফোরিকাম: স্ট্রেস, নার্ভাসনেস এবং মানসিক ক্লান্তি দূর করার জন্য পরিচিত।
B. শারীরিক স্বাস্থ্য জনিত ওষুধ:
1. Arnica montana: সাধারণত শারীরিক আঘাত, পেশী ব্যথা, এবং আঘাত পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যবহৃত হয়।
2. Rhus টক্সিকোডেনড্রনঃ জয়েন্টের ব্যথা, শক্ত হওয়া এবং শারীরিক স্ট্রেনের জন্য কার্যকর, বিশেষ করে যখন নড়াচড়া ব্যথা কমিয়ে দেয়।
3. Ruta graveolens: টেন্ডন এবং লিগামেন্ট জড়িত আঘাতের জন্য, বা অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে কোনো ক্ষত এবং স্ট্রেন।
4. Hypericum perforatum: স্নায়ু ক্ষতি, আঘাত, বা শুটিং ব্যথার জন্য ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে হাতের অংশ জড়িত ক্ষেত্রে।


হলিস্টিক এবং ইন্টিগ্রেটেড অ্যাপ্রোচ :
খাদ্য এবং পুষ্টি: ভাল পুষ্টি শারীরিক এবং মানসিক উভয় নিরাময় সমর্থন করে। ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ একটি সুষম খাদ্য পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
শারীরিক কার্যকলাপঃ মৃদু শারীরিক কার্যকলাপ (একবার শিশু শারীরিকভাবে প্রস্তুত হলে) সামগ্রিক সুস্থতার প্রচার করতে পারে এবং মানসিক নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।
সহায়ক স্কুল পরিবেশঃ নিরাময় প্রক্রিয়া চলাকালীন সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষক এবং স্কুল পরামর্শদাতাদেরও শিশুর যত্নে জড়িত হওয়া উচিত।
এই ওষুধ গুলি সাধারণত ব্যক্তির নির্দিষ্ট লক্ষণগুলির উপর ভিত্তি করে নির্বাচন করা হয়, তাই সঠিক রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা, পরিকল্পনা পেতে একজন দক্ষ হোমিওপ্যাথের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরো গভীর আলোচনা :
মানসিক ট্রমা নিরাময়ের জন্য হলিস্টিক পদ্ধতি : থেরাপি এবং হোমিওপ্যাথি ছাড়াও, বেশ কিছু সামগ্রিক অনুশীলন শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যকে সমর্থন করতে পারে।
রুটিন এবং গঠন: নিয়মিত রুটিনের সাথে একটি অনুমানযোগ্য পরিবেশ তৈরি করা শিশুদের নিরাপদ এবং নিরাপদ বোধ করতে সাহায্য করে, বিশেষ করে আঘাতের পরে।
মননশীলতা এবং শিথিলতা: শিশুদের মননশীলতার অনুশীলন বা সাধারণ শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া তাদের চাপ এবং উদ্বেগ পরিচালনা করতে সহায়তা করতে পারে।
ইতিবাচক শক্তিবৃদ্ধি: পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে তাদের প্রচেষ্টাকে স্বীকার করে শিশুকে উত্সাহিত করা, তা যতই ছোট হোক না কেন, স্থিতিস্থাপকতা এবং আত্মবিশ্বাস তৈরি করে।
সহায়ক স্কুল পরিবেশ: স্কুলগুলিকে অভিভাবক এবং মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা উচিত যাতে শিশুটি একাডেমিক এবং মানসিকভাবে সমর্থন অনুভব করে।
C. মানসিক এবং শারীরিক নিরাময় একীভূত করা: প্রায়ই, মানসিক এবং শারীরিক আঘাত একে অপরের সাথে জড়িত। একটি গুরুতর শারীরিক আঘাত থেকে পুনরুদ্ধার করা একটি শিশু মানসিক ট্রমাও অনুভব করতে পারে, যেমন পুনরায় আঘাতের ভয় বা দুর্ঘটনা সম্পর্কিত উদ্বেগ। একইভাবে, মানসিক আঘাতে আক্রান্ত শিশুরা মাথাব্যথা, পেটব্যথা বা ক্লান্তির মতো শারীরিক লক্ষণ দেখাতে পারে।
সমন্বিত যত্ন: মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি অ্যাপ্রোচ: পেশাদারদের একটি দল—শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, শারীরিক থেরাপিস্ট, মনোবিজ্ঞানী, হোমিওপ্যাথ—একত্রে কাজ করা শিশুর মানসিক এবং শারীরিক পুনরুদ্ধারের বিষয়ে নিশ্চিত করে। শিক্ষা এবং সচেতনতা: মানসিক এবং শারীরিক উভয় আঘাতের লক্ষণ সম্পর্কে পিতামাতা এবং যত্নশীলদের শিক্ষিত করা তাদের তাড়াতাড়ি কাজ করতে এবং উপযুক্ত যত্ন নিতে সক্ষম করে। জীবনধারা এবং পরিবেশগত সহায়তাঃ সুষম খাদ্য এবং ঘুম: শারীরিক সুস্থতা এবং মানসিক সুস্থতার জন্য উপযুক্ত পুষ্টি এবং পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য। নিরাপদ পরিবেশঃ নিশ্চিত করা যে শিশুর পরিবেশ, বাড়ি এবং স্কুল উভয় ক্ষেত্রেই সহায়ক এবং ট্রমা বা আঘাত মুক্ত।
-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি, ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা প্রভাষক, ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ। আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। 

>Share by:

1 মন্তব্যসমূহ


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন