ঔষধ নয়, বরং খাদ্যকেই ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত

ঔষধ নয়, বরং খাদ্যকেই ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

আল কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী - "ঔষধ নয়, বরং খাদ্যকেই ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করা" এই ধারণাটি ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও সমর্থিত। আল কোরআন ও সুন্নাহতে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এবং সুস্থতা বজায় রাখার জন্য প্রকৃতির নানা উপাদান ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।  ইসলামি জ্ঞানে খাদ্যকে শুধু শরীরের পুষ্টি নয়, বরং রোগ প্রতিরোধ এবং নিরাময়ের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

কোরআনের আলোকে:
১. সুস্থ ও হালাল খাদ্য গ্রহণ: আল কোরআনে আল্লাহ বারবার হালাল ও পবিত্র খাদ্য গ্রহণ করার কথা বলেছেন। হালাল খাদ্য শুধুমাত্র ধর্মীয় বিধানের অংশ নয়, এটি স্বাস্থ্যকরও বটে। যেমন: সুরা আল-বাকারা (2:168): "হে মানবজাতি, পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র, তা খাও, এবং শয়তানের পথ অনুসরণ করো না।" এই আয়াতে পবিত্র এবং হালাল খাদ্য গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা দেহকে সুস্থ রাখার জন্য অপরিহার্য।
২. শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় পরিমাণে খাওয়া: আল কোরআন অতিভোজন থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে, কারণ অতিরিক্ত খাওয়া বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করতে পারে। যেমনঃ সুরা আরাফ (7:31): "তোমরা খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় করো না; নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।" এই আয়াতটি আমাদের খাবারের পরিমাণের প্রতি সংযমের শিক্ষা দেয়, যা স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক।

সুন্নাহর আলোকেঃ 
১. সুন্নাহ অনুসারে খাদ্যের গুরুত্ব: হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, দেহের যত্ন নেওয়া একটি দায়িত্ব এবং সুস্থ থাকার জন্য সঠিক খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন: "মানুষের পেট ভরাতে কয়েক টুকরা খাদ্যই যথেষ্ট, যা তাকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। যদি বেশি খেতে হয়, তবে এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য, এক-তৃতীয়াংশ পানি এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাসের জন্য রাখো।" (তিরমিজি) এই হাদিসটি আমাদের শেখায় কীভাবে ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ করতে হয়, যা অতিভোজন থেকে বাঁচিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে।
২. প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে খাদ্যের ব্যবহার: প্রিয় নবী (সা.) বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাদ্যকে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করতেন। কিছু উদাহরণ: 
মধু: নবী (সা.) বলেছেন, "মধুতে আরোগ্য রয়েছে।" (বুখারি, মুসলিম) মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ রয়েছে যা শরীরের বিভিন্ন সমস্যা নিরাময়ে সহায়ক।
কালোজিরা: হাদিসে বলা হয়েছে, "এই কালোজিরাতে সব রোগের ওষুধ রয়েছে, তবে মৃত্যু ছাড়া।" (বুখারি, মুসলিম) কালোজিরার বহু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে এবং এটি ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
খেজুর: নবী (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি সকালে আজওয়া খেজুরের সাতটি খেজুর খায়, তাকে সেই দিন বিষ ও জাদু ক্ষতি করতে পারবে না।" (বুখারি, মুসলিম) খেজুরে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা শরীরের শক্তি বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ইসলামী জীবনধারা ও স্বাস্থ্য:
ইসলামে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে, যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।  সুন্নাহ অনুসারে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংযম এবং মধ্যপন্থা অবলম্বন করা উচিত, যার মধ্যে খাদ্যাভ্যাসও অন্তর্ভুক্ত। অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ বা অপুষ্টি দুই-ই শরীরের ক্ষতির কারণ হতে পারে, তাই ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য।

উপসংহার: আল কোরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিকোণ থেকে খাদ্যকে ঔষধ হিসেবে বিবেচনা করা একটি স্বীকৃত ধারণা। সঠিক খাদ্য গ্রহণ, সংযম, এবং প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে স্বাস্থ্যকে রক্ষা করা ইসলামিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এইভাবে খাদ্য আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ঔষধ নয়, বরং খাদ্যকেই ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

আধুনিক  চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর গুরুত্ব :
"ঔষধ নয়, বরং খাদ্যকেই ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করা" একটি প্রাচীন ধারণা যা আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানেও গুরুত্ব পাচ্ছে।  এই নীতির মূল প্রতিপাদ্য হল, আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং শক্তি খাদ্য থেকেই আসে, এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

খাদ্য ও ঔষধের সম্পর্ক:
১. প্রতিরোধ ও প্রতিকারঃ অনেক রোগের মূল কারণ সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাব। যেমন, ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি, আয়রনের অভাবে রক্তাল্পতা ইত্যাদি। যখন আমরা এই উপাদানসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করি, দেহ সেই অভাব পূরণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ করে।
২. শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা: রোগের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য অপরিহার্য। যেমন, ভিটামিন সি এবং ই শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
৩. প্রাকৃতিক ঔষধঃ আদা, রসুন, হলুদ, তেজপাতা, মধু ইত্যাদি খাদ্য উপাদান বহুদিন ধরেই প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলোতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণাগুণ রয়েছে, যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ এবং নিরাময়ে সহায়তা করে।

খাদ্য অভ্যাস ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ:
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ: এইসব দীর্ঘস্থায়ী রোগ অনেকাংশেই অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের ফল। চিনি, অতিরিক্ত লবণ, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, এবং ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বেশি হলে এই রোগগুলো দেখা দিতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, যেমন প্রচুর শাকসবজি, ফল, মাছ, এবং স্বাস্থ্যকর চর্বির ব্যবহার এই রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। 
ক্যান্সার প্রতিরোধে খাদ্যের ভূমিকা: গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, কিছু খাবারে ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণাবলি রয়েছে। ব্রকোলি, গাজর, টমেটো, এবং সবুজ শাকসবজিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে, যা শরীরের কোষগুলোর ক্ষতি প্রতিরোধ করে।

খাদ্যের মাধ্যমে মানসিক সুস্থতা: সঠিক খাদ্য কেবল শারীরিক নয়, মানসিক সুস্থতাও নিশ্চিত করতে পারে। যেমন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত মাছ (যেমন স্যামন) মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। ফল, বাদাম, এবং শাকসবজি সেরোটোনিন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়, যা মেজাজ উন্নত করে।

উপসংহার: সঠিক খাদ্যাভ্যাস আমাদের রোগমুক্ত রাখতে এবং সুস্থতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও স্বীকার করে যে খাদ্য সঠিকভাবে গ্রহণ করলে অনেক রোগের ঝুঁকি কমানো যায়।

"ঔষধ নয়, বরং খাদ্যকেই ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত" এই ধারণাটি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে, এবং এটি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। কোরআন ও সুন্নাহতে খাদ্যের গুরুত্ব, স্বাস্থ্য সুরক্ষার নীতি এবং প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমান গবেষণাগুলোও এই চিন্তাধারার সাথে একমত, এবং খাদ্যকে প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে ব্যবহারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করছে।

আল কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে:
১. আল্লাহর নির্দেশ ও হালাল খাদ্য:
আল কোরআন: কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে হালাল ও পবিত্র খাদ্য গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হালাল খাদ্য মানে শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা নয়, বরং এটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অংশ। সুরা আল-বাকারা (2:168): "হে মানবজাতি, যা কিছু পৃথিবীতে হালাল ও পবিত্র আছে তা খাও, এবং শয়তানের পথ অনুসরণ করো না।" এই আয়াতে স্বাস্থ্যকর, পবিত্র এবং প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে, যা আমাদের দেহকে পুষ্টি ও রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।

২. সংযমের শিক্ষা: নবী (সা.) এর শিক্ষা অনুযায়ী, খাদ্য গ্রহণে সংযম ও ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত খাওয়া বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়।
হাদিস: "মানুষের জন্য পেট ভরাতে কয়েক টুকরা খাদ্যই যথেষ্ট। যদি বেশি খেতে হয়, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য, এক-তৃতীয়াংশ পানি এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাসের জন্য রাখো।" (তিরমিজি) এই হাদিসে খাদ্য গ্রহণে সংযমের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা দেহকে সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখার অন্যতম উপায়।

৩. প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে খাদ্যের ব্যবহার: নবী (সা.) প্রাকৃতিক খাদ্যকে ঔষধ হিসেবে ব্যবহারের অনেক উদাহরণ রেখেছেন। যেমন:
মধু: কোরআনে উল্লেখিত, এবং নবী (সা.) বলেছেন, "মধুতে আরোগ্য রয়েছে।" (বুখারি, মুসলিম) 
কালোজিরা: "কালোজিরাতে সব রোগের জন্য ওষুধ আছে, মৃত্যু ছাড়া।" (বুখারি, মুসলিম)

৪. রোগ প্রতিরোধে খেজুরের ভূমিকা: নবী (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি সকালে আজওয়া খেজুরের সাতটি খায়, সেদিন বিষ ও জাদু তার ক্ষতি করতে পারবে না।" (বুখারি, মুসলিম) খেজুরে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে যা শরীরের শক্তি বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে।
আধুনিক গবেষণার আলোকে:
A. ফাংশনাল ফুড এবং রোগ প্রতিরোধ: আধুনিক গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, কিছু খাদ্যশস্য, ফলমূল, শাকসবজি, এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক খাদ্য রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। বিশেষ করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
উদাহরণ: শাকসবজি, বিশেষ করে ব্রকলি, গাজর, টমেটো এবং বীজ জাতীয় খাদ্য ফাইটোকেমিক্যাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।
B. ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ প্রতিরোধে খাদ্য: গবেষণা দেখিয়েছে, সম্পূর্ণ শস্য, শাকসবজি এবং ফলমূল নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। প্রক্রিয়াজাত এবং চিনি-সমৃদ্ধ খাদ্য এসব রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
উদাহরণ: ওটস, বাদাম এবং মাছের তেলে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগের জন্য উপকারী।
C. গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল স্বাস্থ্যঃ প্রোবায়োটিক এবং প্রিবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। যেমন দই এবং ফারমেন্টেড খাবার অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যা হজম এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে, অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে অনেক রোগ, যেমন স্থূলতা, ডায়াবেটিস, এবং মানসিক চাপ কমানোর সম্ভাবনা থাকে। 
D. মেডিটেরানিয়ান ডায়েট এবং দীর্ঘায়ুঃ একটি প্রচলিত গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, মেডিটেরানিয়ান ডায়েট (যাতে শাকসবজি, ফল, অলিভ অয়েল, এবং সামুদ্রিক মাছ বেশি থাকে) দীর্ঘায়ু এবং রোগমুক্ত জীবনের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিছু ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়ক।

খাদ্যকে ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করার প্রয়োজনীয়তা:
১. প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার: কোরআন ও সুন্নাহতে উল্লেখিত প্রাকৃতিক খাদ্য যেমন মধু, কালোজিরা, খেজুর ইত্যাদি আধুনিক বিজ্ঞানেও সমর্থিত। এইসব খাদ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, হজম শক্তি উন্নত করা এবং দেহকে বিষমুক্ত করার ক্ষমতা রয়েছে।
২. প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের ঝুঁকি: আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি এবং ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার নানা ধরনের দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণ হয়ে উঠছে। ইসলামিক শিক্ষা প্রাকৃতিক এবং তাজা খাদ্য গ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে, যা এসব ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে সহায়ক।

উপসংহার: আল কোরআন, সুন্নাহ এবং আধুনিক গবেষণার আলোকে বলা যায় যে, খাদ্যকে ঔষধ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। সঠিক খাদ্যাভ্যাস রোগ প্রতিরোধ, সুস্থতা বজায় রাখা এবং মানসিক শান্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে যেমন সঠিক ও হালাল খাদ্য গ্রহণের নির্দেশ রয়েছে, আধুনিক বিজ্ঞানও খাদ্যকে প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

"""'ঔষধ নয়, বরং খাদ্যকেই ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করা  উচিত"""",

হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক এবং অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা অনুযায়ী  আলোচনা: 

"ঔষধ নয়, বরং খাদ্যকেই ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত" – এই ধারণাটি বহু প্রাচীন এবং বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতিতে উল্লেখযোগ্য স্থান পায়। হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক এবং অ্যালোপ্যাথি এই তিনটি চিকিৎসা শাস্ত্রের মধ্যে খাদ্য ও পুষ্টির গুরুত্ব নিয়ে একটি গভীর আলোচনা করা যাক:

হোমিওপ্যাথি: হোমিওপ্যাথির মূল বিশ্বাস হল, শরীর নিজেই নিজেকে সুস্থ করে তুলতে সক্ষম। হ্যানিম্যানের এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে বলা হয়, সমধর্মী দ্বারা সমধর্মী নিরাময় সম্ভব। এখানে খাদ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ খাদ্য শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। হোমিওপ্যাথির মূলনীতি অনুযায়ী, প্রাকৃতিক উপায়ে খাদ্যকে শরীরের শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথরা রোগীর খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করার পরামর্শ দেন, যাতে শরীর তার নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে নেয়।

আয়ুর্বেদিকঃ আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে খাদ্যকে ওষুধ হিসেবে গ্রহণ করার বিষয়টি খুবই প্রাচীন। চার হাজার বছরের পুরনো এই শাস্ত্র অনুযায়ী, শরীরের তিনটি দোষ—ভাত, পিত্ত এবং কফের ভারসাম্য বজায় রাখতে খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীর ও মনের স্থিতি রাখতে উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ জরুরি। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় নির্দিষ্ট রোগের জন্য নির্দিষ্ট ধরনের খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়, যা শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করে। 
উদাহরণস্বরূপ, আয়ুর্বেদে এমন অনেক খাবার আছে যেগুলো রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অ্যালোপ্যাথি: অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা মূলত রোগের লক্ষণ নিরাময়ের জন্য দ্রুত কার্যকর ওষুধ প্রয়োগের ওপর নির্ভরশীল। তবে আধুনিক মেডিসিনেও খাদ্যের গুরুত্ব কম নয়। সঠিক পুষ্টি না থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়, এবং অনেক রোগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাসের প্রয়োজন হয়। অ্যালোপ্যাথিতে সঠিক খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

সারসংক্ষেপঃ খাদ্যকে ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করা প্রত্যেক চিকিৎসা পদ্ধতিতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা খাদ্যকে একটি প্রতিরোধমূলক ও নিরাময়মূলক পদ্ধতি হিসেবে দেখে, যেখানে অ্যালোপ্যাথিও এর গুরুত্ব স্বীকার করে, বিশেষ করে রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে।

-- কাজী সাইফ উদদীন আহমেদ। 
>Share by:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন