রোগীলিপি। ডাক্তার এ আলি - রোগী পর্যবেক্ষণ -- বই থেকে। শরীরের বিভিন্ন প্রকার স্বাভাবিক স্রাব বন্ধ হইয়া বা চাপা পড়িয়া বা বাধাপ্রাপ্ত হইয়া অসুস্থতা।

নাম : আসমা রহমান, 
বয়স ২৩ বৎসর, 
বিবাহিতা, 
খালিশপুর, খুলনা।

১৮-১২-৯৪ তারিখে উভয় স্তনের গ্রন্থিফোলা চিকিৎসার জন্য আমার  ( ড: এ. আলী ) কাছে আসে। 

কেস রের্কড ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পেলাম

৩ বৎসর হলো তার স্তনে গ্রন্থিফোলা দেখা দিয়েছে।  
প্রথমে ডান স্তন আক্রান্ত হয়, পরে বাম স্তনে সম্প্রসারিত হয়। 
বর্তমানে ডান স্তনে বেশী। 
আক্রান্ত স্থানে কাঁটা ফোঁটার মত ব্যথা,। 
ব্যথা মাসিকের পূর্বে এবং ঠাণ্ডায় বৃদ্ধি পায়। আক্রান্ত স্থানদ্বয় স্পর্শকাতর। 
কোনরূপ নড়াচড়া করা যায় না। 
বিশ্রামে ও তাপে উপশম।

কারন : 
৩ বৎসর পূর্বে রোগিণী সন্তান প্রসব করে কিন্তু ঐ সন্তানের স্তন্যপানে অনীহা ছিল, তাই স্তন্য পান না করে কৃত্রিম খাদ্য খাবার খেয়ে বড় হয়। 

আর স্তন্য পান না করার ফলে ওর স্তনপ্রদাহ দেখা দেয় । এবং 
স্তনের মধ্যে শক্ত ছোট ছোট গুটলি দেখা দেয়।

অতীত রোগ ভোগ : 
অতীতে হাম, বসন্ত ও চুলকানি হয়েছিল।

বংশগত রোগ :
বংশে মা সুস্থ। 
বাবা কিডনী নষ্ট হয়ে মারা গেছে। 

ভাইবোন :
এক ভাই, দুই বোন। 
ছোটবেলায় দুই ভাই বোন মারা গেছে। রোগিণীর এক মেয়ে।

ব্যক্তি কেন্দ্রিক লক্ষণ :
প্রতিদিন গোসল করে, বাদ দিলে খারাপ লাগে। 
রোদ ও গরম সহ্য হয় না। 
বাসে চড়লে মাথা ঘোরে এবং বমি হয়। 
হাত-পায়ের তালু জ্বালা করে। 
মাঝারী বালিশে ডান কাতে শু'য়ে থাকে।

খাবার : 
হালকা গরম ভালবাসে। 

পছন্দ : ডিম, মাছ, মাংস, ঝাল, টক ও মিষ্টি ভালবাসে। 

 অপছন্দ : লবণ, দুধ ও রুটি অপছন্দ। 

 ক্ষুধা : ক্ষুধা বেশী সহ্য হয় না। 

পিপাসা : বেশী।

প্রস্রাব : দৈনিক ৪/৫ বার হয়। পরিষ্কার হয়।

পায়খানা : পরিষ্কার হয়। পায়খানা দৈনিক ১ বার হয়। পূর্বে শক্ত ছিল। 
যার জন্য মলদ্বার চিরে রক্ত পড়েছে। 

 মাসিক : মাসিক নিয়মিত হয়, ৪ দিন স্থায়ী।
 রঙ কালচে। 
দাগ সহজে ওঠে না। 

ঘুম : ভাল হয়।


মানসিক : 
চঞ্চল প্রকৃতির, 
রাগ বেশী। 
সহজে কমে। 
লোকজন, গান-বাজনা পছন্দ। 
কাজকর্ম দ্রুততার সঙ্গে করে। 
সঞ্চয়ী মন।

 হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা  :

যদিও রোগিণীর মধ্যে  ধাতুগত লাইকোর ছবি বিদ্যমান তথাপি স্রাব অবরুদ্ধহেতু রোগ৷  তাই লাইকোকে হাতে রেখে.........

কারণের উপর ভিত গেড়ে, 

Rubric :
Complete - Generalities- Discharge - Secretion : Suppressed -----( 505) Remedy. 

১৮-১২-৯৪ তারিখে, 
 জিঙ্কাম মেট ১ এম. ২ দাগ পরিবর্তনশীল প্রথায় ২' দিন সকালে সেবন করতে বলে একমাস পর সংবাদ দিতে বলি। 

 ১৮-২-৯৫ তারিখে, দুই মাস পর...
সংবাদ পাই রোগিণী আরোগ্যের পথে এগিয়ে যাচ্ছে তবে ৪/৫ দিন হলো আবার খারাপ লাগছে। 

তাই ঐ তারিখে জিঙ্কাম- মেট ১ এম. এর ১টি বড়ি পানির সংগে ড্রামে দিয়ে ১০ বার ঝাঁকি দিয়ে সকালে একবারে সবটুকু সেবন করতে বলি এবং এক মাস পর সংবাদ দেয়ার কথা বলে বিদায় দেই।

তারিখ ৩১-৭-৯৫ : 
কিন্তু রোগিণী এক মাস পর না এসে ৩১-৭-৯৫ তারিখে আমার কাছে আসে। আমি এত দেরী করার কারণ জিজ্ঞাসা করায় রোগিণী বললো-ডাক্তার সাহেব, আপনার ঔষধ খেয়ে আমি দীর্ঘ কয়েক মাস ভাল ছিলাম কিন্তু ক'দিন হলো আবার খারাপ লাগছে। 
যাহোক আমি ঐ তারিখে জিঙ্কাম-মেট ১০ এম, উপরোল্লিখিত প্রথায় সেবন করতে বলে আবার দেড় মাস পর সংবাদ দিতে বলি। 

তারিখ : ৪-৯-৯৫ 
৪-৯-৯৫ তারিখে সংবাদ পাই, রোগিণী ভাল। অর্থাৎ গ্রন্থিফোলা বেশ কমে এসেছে এবং নরম হয়ে গেছে তবে মাঝে মাঝে সামান্য ব্যথানুভব হয়। 
তাই ঐ তারিখে জিঙ্কাম-মেট 
 ৫০-এম, উপরোল্লিখিত প্রথায় সেবন করতে বলে রোগিণীকে বিদায় দেই। 

এরপর ঐ রোগিণীর জন্য আর কোন ঔষধের প্রয়োজন হয়নি।

Ok, এবার আসুন রোগীলিপি এনালাইসিস করে বুঝিয়ে বলছি....


ডাক্তার নরেন্দ্র নাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,

জিঙ্কাম মেটের তৃতীয় কথা : -  অবরোধ উপচয় (বৃদ্ধি)। এ সম্বন্ধে অবশ্য পূর্বেই বলিয়াছি। কিন্তু পুনরুল্লেখ দোষের নহে।

অতএব মনে রাখিবেন, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের দাঁত উঠিবার বয়সে দাঁত না উঠিয়া অসুস্থতা ঋতুর উদয়কালে ঋতু না হইয়া কুমারী মেয়েদের অসুস্থতা, হামের উদ্ভেদ বা পায়ের ঘাম  বা শরীরের বিভিন্ন প্রকার স্বাভাবিক স্রাব বন্ধ হইয়া বা  চাপা পড়িয়া  বা বাধাপ্রাপ্ত হইয়া অসুস্থতা, জিঙ্কামের বিশিষ্ট পরিচয়। এই সঙ্গে তাহার পদদ্বয়ের অস্থিরতা সামান্য শব্দে অথবা সামান্য স্পর্শে চমকাইয়া ওঠা, বেলা ১০/১১ টার সময় ক্ষুধা, প্রত্যেক প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করিয়া উত্তর দেওয়া ইত্যাদি বর্তমান থাকিলে অবরুদ্ধ উদ্ভেদজনিত রোগে বা বাধাপ্রাপ্ত স্রাবজনিত রোগে জিঙ্কাম অদ্বিতীয়। এইজন্য ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের দাঁত উঠিবার সময় দাঁত উঠিয়া আক্ষেপ, হাম বসিয়া গিয়া মেনিন- জাইটিস অথবা কানের পুঁজ বাধা পাইয়া আক্ষেপ বা মেনিনজাইটিস ইত্যাদি রোগে এবং স্ত্রীলোকেরা ঋতুমতী হইবার সময় ঋতুস্রাব প্রকাশ না পাইয়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নর্তন বা কম্পন, পায়ের ঘাম বাধাপ্রাপ্ত হইয়া পক্ষাঘাত ইত্যাদি যাবতীয় রোগে অর্থাৎ অবরুদ্ধ উদ্ভেদ বা বাধাপ্রাপ্ত স্রাবজনিত যে কোন রোগেই আমরা জিঙ্কামের কথা মনে করিতে পারি।

++++

ডাক্তার আবু হোসেন সরকার বলেন, 

৪। শরীরস্থ স্বাভাবিক স্রাব চাপা পড়িয়া নানা প্রকার রোগাক্রমণ এবং বাধাপ্রাপ্ত দন্তেদগম হেতু প্রধানতঃ মস্তিষ্ক প্রদাহ।


+++++

 ডাক্তার রাধারমন বিশ্বাস বলেন,
 
মন্তব্য- 
কোনও অবরুদ্ধ পীড়কা হেতু যে কোনও মন্দ লক্ষণে 'ইহা অমৃততুল্য ঔষধ। তড়কা, মস্তিষ্ক-ঝিল্লি-প্রদাহ, তান্ডবরোগ, মস্তকশোথ, কটিবাত (চলাফেরায় কমে, বসে থাকলে বাড়ে), পক্ষাঘাত, কম্পন ইত্যাদি রোগে ব্যবহার্য। 
++++((+


William BOERICKE, M.D. বলেন...

HOMŚOPATHIC MATERIA MEDICA
by William BOERICKE, M.D.

ZINCUM METALLICUM
Zinc
(ZINC)

The provings picture cerebral depression. The word "fag" covers a large part of zinc action. Tissues are worn out faster than they are repaired. Poisoning from suppressed eruptions or discharges. (চাপা বিস্ফোরণ বা চাপা স্রাব থেকে বিষক্রিয়া )  The nervous symptoms of most importance. Defective vitality. Impending brain paralysis. Period of depression in disease. Spinal affections. Twitchings. Pain, as if between skin and flesh. Great relief from discharges. Chorea, from fright or suppressed eruption. Convulsions, with pale face and no heat. Marked anćmia with profound prostration. It causes a decrease in the number, and destruction of red blood corpuscles. Repercussed eruptive diseases. In chronic diseases with brain and spinal symptoms, trembling, convulsive twitching and fidgety feet are guiding symptoms.


জিঙ্কাম মেটালিকাম (Zincum Metallicum)

জিঙ্কাম মেটালিকাম (Zincum Metallicum) একটি গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ, যা সাধারণত স্নায়বিক দুর্বলতা এবং চাপা-প্রাপ্ত অবস্থার কারণে সৃষ্ট সমস্যায় ব্যবহৃত হয়। এটি বিশেষভাবে কার্যকর যখন শরীরের কোনো স্বাভাবিক ক্রিয়া বা নিঃসরণ বন্ধ হয়ে গিয়ে স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে।

জিঙ্কাম মেটালিকামের প্রয়োগক্ষেত্র (চাপা পড়ার ক্ষেত্রে):

1. ঘাম বন্ধ হয়ে স্নায়বিক সমস্যা:

শরীরের ঘাম বন্ধ হয়ে গিয়ে স্নায়ুর অস্বস্তি বা শিরশির অনুভূতি।

রোগী অত্যন্ত অস্থির থাকে, বিশেষত পায়ের নড়াচড়া বন্ধ রাখতে পারে না (Restless legs syndrome)।

2. ত্বকের স্রাব চাপা পড়া:

ত্বকের কোনো স্রাব (যেমন ফোড়ার পুঁজ) বন্ধ হয়ে গিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যার সৃষ্টি।

ত্বকে শুষ্কতা এবং খসখসে ভাব।

3. মাসিক বন্ধ বা বাধাগ্রস্ত হওয়া:

ঋতুস্রাব ঠিকমতো না হলে এবং তার ফলে স্নায়বিক উত্তেজনা, মাথাব্যথা বা মনের অস্থিরতা।

4. শিশুদের সমস্যা:

শিশুদের ত্বকের র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি চাপা পড়ে যাওয়ার পর শারীরিক অস্থিরতা।

ঘুমের মধ্যে চিৎকার করা বা স্নায়বিক খিঁচুনি।

5. প্রস্রাবের স্রাব বাধাপ্রাপ্ত:

প্রস্রাব বের হতে সমস্যা এবং স্নায়বিক উত্তেজনা।

প্রস্রাবের চাপ অনুভূত হলেও তা পুরোপুরি বের হতে না পারা।

6. দুধ চাপা পড়া:

স্তনে দুধ জমে গিয়ে বা নিঃসরণ বন্ধ হয়ে স্নায়বিক অস্থিরতা।

স্তনে ফোলাভাব এবং স্নায়ুতন্ত্রের ওপর চাপ।

7. মনে চেপে রাখা আবেগ:

দীর্ঘদিন ধরে দুঃখ বা রাগ চেপে রাখার কারণে মানসিক চাপ এবং স্নায়বিক দুর্বলতা।

রোগী প্রায়ই বিষণ্ণ থাকে এবং ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

8. মলদ্বারের স্রাব চাপা:

পায়খানা বা অন্যান্য স্রাব বাধাপ্রাপ্ত হয়ে মাথাব্যথা বা স্নায়বিক সমস্যা।

পেটে গ্যাস এবং অস্বস্তি।


কাজী সাইফ উদদীন আহমেদ। 
>Share by:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন