খোস পাচড়া (Scabies) রোগীর জন্য সঠিক খাদ্যতালিকা।

খোস-পাচড়া (Scabies) একটি চর্মরোগ যা Sarcoptes scabiei নামক মাইটের কারণে হয়। এই রোগ সরাসরি খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে নিরাময় করা না গেলেও, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, চর্মের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং দ্রুত আরোগ্যের জন্য সঠিক খাদ্যতালিকা অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর খাদ্য শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং ত্বকের সংক্রমণ দ্রুত সারতে সহায়তা করে।

নিচে খোস-পাচড়া রোগীর জন্য একটি সঠিক খাদ্যতালিকা দেওয়া হলো:

১. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার শরীরের ক্ষতিকর মুক্ত মৌল (free radicals) দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।

ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবার: লেবু, কমলা, আমলকি, স্ট্রবেরি, বেরি, পেয়ারা।

ভিটামিন E সমৃদ্ধ খাবার: বাদাম, সূর্যমুখী বীজ, পালং শাক, অ্যাভোকাডো।


২. ভিটামিন A সমৃদ্ধ খাবার

ভিটামিন A ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে এবং ত্বককে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

উপকারী খাবার: গাজর, মিষ্টি আলু, কুমড়া, পালং শাক, পেঁপে, ব্রকলি।


৩. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

প্রোটিন ত্বকের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সহায়ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

উপকারী প্রোটিন উৎস: ডিম, মুরগির মাংস, মাছ, মসুর ডাল, চিঁড়া, দুধের সাদা অংশ।

ভেজিটেরিয়ান প্রোটিন: টোফু, সয়াবিন, চীনা বাদাম।


৪. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বককে মসৃণ রাখে।

উপকারী উৎস: স্যামন মাছ, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্সসিড (তিসি বীজ), আখরোট, মাক্রেল।




৫. জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার

জিঙ্ক ত্বকের ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।

উপকারী খাবার: কুমড়ার বীজ, কাজুবাদাম, লাল মাংস (সীমিত পরিমাণে), ডাল।


৬. ভিটামিন D সমৃদ্ধ খাবার

ভিটামিন D শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।

উপকারী উৎস: দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, ডিমের কুসুম, মাশরুম, সূর্যালোক।


৭. হাইড্রেটিং খাবার

ত্বককে হাইড্রেটেড রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন। এছাড়া তরল সমৃদ্ধ খাবারও গ্রহণ করা উচিত।

উপকারী খাবার: শসা, তরমুজ, আঙুর, কমলালেবু, নারকেলের পানি।


৮. প্রো-বায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার

প্রো-বায়োটিকসমৃদ্ধ খাবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

উপকারী উৎস: দই, কেফির, সয়া দই, ফারমেন্টেড খাবার (যেমন: সয়া সস, কিমচি)।


৯. বিরত থাকা খাবার

কিছু খাবার ত্বকের প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে বা রোগের উপসর্গ বাড়াতে পারে। তাই এই ধরনের খাবার থেকে বিরত থাকা উচিত।

এড়ানো খাবার:

----অতিরিক্ত চিনি: চিনি শরীরে ইনফ্ল্যামেশন বাড়াতে পারে।

----প্রক্রিয়াজাত খাবার: প্যাকেটজাত, অতিরিক্ত লবণ বা মসলা যুক্ত খাবার।

----ফাস্ট ফুড: ত্বকের প্রদাহ বাড়িয়ে দেয় এমন ফাস্ট ফুড বা ভাজা খাবার।



১০. হাইড্রেশন এবং পানি পান :

খোস-পাচড়া রোগীর জন্য শরীরকে আর্দ্র রাখা অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীরে টক্সিন বের হয় এবং ত্বককে সজীব রাখতে সাহায্য করে।

প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।


খাদ্যতালিকার উদাহরণ

সকালের নাশতা:

------এক গ্লাস গাজরের জুস

------ওটমিল সঙ্গে বেরি এবং মধু

-----এক মুঠো বাদাম


দুপুরের খাবার:

----গ্রিলড মুরগির মাংস বা মাছ

----সবজি (ব্রকলি, গাজর, ফুলকপি)

----এক কাপ দই


বিকালের নাস্তা:

-----এক মুঠো আখরোট বা কাজুবাদাম

-----এক গ্লাস নারকেলের পানি


রাতের খাবার:

---সবজি এবং টোফু বা মুরগি

----একটি রুটি বা ভাত

----একটি আপেল বা পেঁপে


উপসংহার

খোস-পাচড়া রোগীর জন্য খাদ্যতালিকা এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ত্বক দ্রুত সুস্থ হতে পারে। 
প্রক্রিয়াজাত ও ফাস্ট ফুড এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া রোগীকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে সাহায্য করবে।

-- ডাঃ কাজী সাইফ উদ্দীন আহমেদ
বি এস সি(বায়োকেমিস্ট্রি), ঢা.বি, 
ডি এইচ এম এস (বোর্ড স্ট্যান্ড), ঢাকা    
প্রভাষক, 
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ। 


আমাদের লেখার কোন অংশ রেফারেন্স ছাড়া কপি বা শেয়ার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।

>Share by:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন


Make a comments as guest/by name or from your facebook:


Make a comment by facebook:
নবীনতর পূর্বতন